🌳🦚💐🏵️🌺🌷🌺🏵️💐🦚🌳

💐শ্রীদামোদর ব্রত মাহাত্ম্য💐

🌳🦚💐🏵️🌺🌷🌺🏵️💐🦚🌳

শ্রী শ্রী গুরু গৌরাঙ্গ জয়তঃ

সকল সাধু,গুরু,বৈষ্ণব ও গৌর ভক্তবৃন্দের শ্রীচরণে আমার অনন্ত কোটি সাষ্টাঙ্গ দণ্ডবৎ প্রণাম I হরে কৃষ্ণ, আগামী ০৬/১০/২০২২ ইং রোজ – বৃহস্পতিবার থেকে উর্জ্জাব্রত, দামোদর ব্রত, কার্ত্তিক ব্রত বা নিয়মসেবা ব্রত আরম্ভ । সকল ভক্তবৃন্দগনকে জানাই কৃষ্ণপ্রীতি এবং শুভেচ্ছা। যাঁহারা কৃষ্ণকৃপা ও কৃষ্ণভক্তি লাভ করতে চান - তাঁহারা অবশ্যই এই ব্রত পালন করিবেন।

 

উর্জ্জা ব্রত কি ?

পরমেশ্বর ভগবান শ্রীকৃষ্ণের পরম প্রিয়তমা শ্রীমতি রাধারাণীর অন্য এক নাম উর্জ্জা I তাই রাধারাণীর নাম অনুসারে এই ব্রতের নাম উর্জ্জাব্রত I 

দামোদর কে ?

পরমেশ্বর ভগবান শ্রীকৃষ্ণের এক নাম দামোদর। দাম শব্দের অর্থ রশি(দেউড়ি) এবং উদর অর্থ পেট । মা যশোদা কর্তৃক যাঁর উদরে দাম বা রশি বন্ধন রয়েছে, তিনিই দামোদর। তাই দামোদর ভগবানের নাম অনুসারে এই ব্রতের নাম দামোদর ব্রত I

 

নিয়মসেবা কি ?

"আশ্বিনস্য তু মাসস্য যা শুক্লৈকাদশী ভবেৎ।

কার্ত্তিকস্য ব্রতানীহ তস্যাং কুর্য্যাদতন্দ্রিতঃ।।"      (পদ্মপুরাণ)

আশ্বিন মাসের শুক্লা একাদশী থেকে নিরলস ভাবে কার্ত্তিক ব্রত সকল পালন করবে।

পদ্মপুরাণে কার্ত্তিক-ব্রতাঙ্গ সকল কীর্তিত আছে,যথা--শ্রীহরির উদ্দেশ্যে নাম-সংকীর্ত্তনাদি সহকারে জাগরণ,প্রাতঃস্নান,তুলসী সেবন,উদ্ যাপন ও দীপদান; অন্ততঃ এই পাঁচটি কর্ম্মের অনুষ্ঠান করলেই কৃষ্ণ চরণে প্রেমভক্তি ফল লাভ হয়ে থাকে।

 

💐দামোদরং প্রপদ্যেহং শ্রীরাধা রমণং প্রভুং ।

প্রভাবাদযস্য তৎ প্রেষ্ঠঃ কার্ত্তিকঃ সেবিতো ভবেৎ।।

অর্থাৎ,- আমি রাধারমণ প্রভু দামোদরের শরণাপন্ন হই । যাঁহার প্রভাব হেতু তদীয় প্রিয়তম কার্তিক মাস সেবিত হইবে ।

 

💐দ্বাদশস্বাপি মাসেষু কার্তিকঃ কৃষ্ণবল্লভঃ ।

তস্মিন্ সংপূজিতো বিষ্ণুরল্পকৈরপ্যুপায়নৈঃ ৷ ৷

অর্থাৎ,- দ্বাদশ মাসের মধ্যে কার্ত্তিক মাস বিষ্ণুর- প্রিয়তম । সেই মাসে যদি অল্প উপায়ন দ্বারা বিষ্ণু পূজিত হয়েন তাহা হইলে তিনি নিশ্চয় বিষ্ণুলোক প্রদান করেন ।

 

💐কার্ত্তিকং খলু বৈ মাসং সৰ্ব্বমাসেষু চোত্তমং।

পুণ্যানাং পরমং পুণ্যং পাবনানাঞ্চ পাবনং ।।

অর্থাৎ,- কার্ত্তিক মাস সকল মাসের মধ্যে উত্তম । পুণ্য সকলের মধ্যে পরম পুণ্য এবং পবিত্র , সকলের মধ্যে পরম পবিত্র ।

 

💐যথা নদীনাং বিপ্ৰেন্দ্ৰ শৈলানাঞ্চৈব নারদ ।

উদধীনাঞ্চ বিপ্রর্ষে ক্ষয়ো নৈবোপপদ্যতে ।।

পুণ্যং কার্ত্তিকে মাসে তু যৎকিঞ্চিৎ ক্রিয়তেমুনে ।

ন তস্যাস্তি ক্ষয়োব্রহ্মন্ পাপস্যাপ্যেবমেব চ ।।  

অর্থাৎ,- হে বিপেন্দ্র! হে নারদ! যেমন নদী, পৰ্বত এবং সমুদ্র সকলের ক্ষয় উপপন্ন হয় না, তদ্রুপ কার্ত্তিক মাসে যে কিছু পুণ্য করুক বা পাপই করুক তাহার কখনই ক্ষয় হয় না ।

💐ন কার্ত্তিক সমো মাস ন কৃতেন সমং যুগং ।

ন বেদসদৃশং শাস্ত্রং ন তীর্থং গঙ্গায়া সমং ।।

অর্থাৎ,- হে ব্ৰহ্মণ ! কার্ত্তিকের সমান মাস নাই , সত্যযুগের সমান যুগ নাই , বেদের সমান শাস্ত্র নাই , গঙ্গার সমান তীর্থ নাই , অতএব বৈষ্ণবদিগের সম্বন্ধে কার্ত্তিক মাস সৰ্ব্বদা প্রিয় ।

 

💐কার্ত্তিকঃ প্রবরো মাসে বৈষ্ণবানাং প্রিয়ঃ সদা ।

কার্ত্তিকং সকলং যন্তু ভক্ত্যা সেবেত বৈষ্ণবঃ ।

পিতৃনুদ্ধরতে সৰ্বান্নরকস্থান্ মহামুনে ।।

অর্থাৎ,- হে মহামুনে ! যে বৈষ্ণব ভক্তি পূৰ্ব্বক সমস্ত- কার্ত্তিক  মাস সেবন করেন , তিনি নরকস্থ সমুদায় পিতৃগণকে উদ্ধার করেন ।।

 

💐একতঃ সৰ্ব্বতীর্থানি সৰ্ব্বে যজ্ঞাঃ সদক্ষিণাঃ ।

একতঃ পুষ্করে বাসঃ কুরুক্ষেত্রে হিমাচলে ।।

মেরুতুল্য সুবর্ণানি সৰ্ব্বদানানি চৈকতঃ ।

একতঃ কার্তিকো বৎস সর্বদা কেশব প্রিয়ঃ ।।

অর্থাৎ,- হে বৎস ! একদিকে সকল তীর্থ , একদিকে দক্ষিণার সহিত সমুদায় যজ্ঞ , একদিকে পুষ্করে , কুরুক্ষেত্রে ও হিমাচলে বাস এবং একদিকে মেরুতুল্য সুবর্ণ ও সৰ্ব্বপ্রকার দান, আর একদিকে সর্বদা কেশব প্রিয় কার্ত্তিক ।।

 

💐যৎ কিঞ্চিৎ ক্রিয়তে পুণ্যং বিষ্ণুমুদ্দিশ্য- কাৰ্ত্তিকে। ।

তদক্ষয়ং ভবেৎ সৰ্ব্বং সত্যোক্তং তব নারদ ।।

অর্থাৎ,- হে নারদ ! সত্যই তোমাকে বলিতেছি বিষ্ণুকে উদ্দেশ্য করিয়া কার্ত্তিক মাসে যে কিছু পুণ্যকর্ম করে তৎসমুদয় অক্ষয় অর্থাৎ তাহার ফল বিনাশ হয় না ।

 

💐স্কন্দপুরাণে ব্রহ্মা নারদকে বলিতেছেন –

অন্যত্র - কার্ত্তিক মাসে , গঙ্গা - যমুনা স্নান , সৎকথা শ্রবণ , সাধুসেবন এবং ব্রহ্মপত্রে ( পলাশ পত্রের মধ্য পত্র বাদ দিয়া ) ভোজন - এই সকল অভীষ্ট প্রদান করে । যে ব্যক্তি কার্তিকের অরুণোদয় বা শেষপ্রহরে দামোদরের অগ্রে জাগরণ করেন বিষ্ণুপদ তাহার করস্থিত । যে নর ভক্তিপূৰ্ব্বক নিয়ম করিয়া বিষ্ণু মন্দির প্রদক্ষিণ , হরির অগ্রে ভক্তিপূর্বকগীত, বাদ্য ও নৃত্য করে, বিষ্ণুর সহস্র নাম, গজেন্দ্রমোক্ষ আখ্যায়িকা পাঠ করে, তাহার পরমপদ প্রাপ্তি হয় । হে মহামুনে ! কেশবের অগ্রে পুণ্যস্বরূপ শাস্ত্রাবতরণ শ্রবণ করিবে ।

 

💐হে মহামুনে ! সযত্নে নিত্য ভাগবত পাঠ কার্ত্তিক মাসে করিলে অষ্টাদশ পুরাণ পাঠের ফলপ্রাপ্তি হয়। যিনি কার্ত্তিক মাসে প্রাতস্নায়ী, ভূমিশায়ী, ব্রহ্মচারী ও জপ পরায়ণ;  বিষ্ণু নৈবেদ্যভোজী হইয়া দামোদরের অর্চনা করেন, ভজনানন্দী হইয়া তাহার হরিসন্নিধানে স্থানলাভ হয় । হরি জাগরণ, প্রাতঃস্নান, তুলসী সেবন , ব্রত উদ্যাপন ও দীপ দান ব্রতী ব্যক্তি কার্ত্তিক মাসে এই পঞ্চব্রত সম্পূর্ণ করিলে ভগবৎ সন্নিধানে স্থানলাভ করেন । 

 

💐যত্র কুত্রাপি দেশে যঃ কার্ত্তিক স্নান দানতঃ ।

অগ্নিহোত্র সমফলঃ পূজায়াঞ্চ বিশেষতঃ ।

কুরুক্ষেত্রে কোটীগুণো গঙ্গায়াঞ্চাপি তৎসমঃ ।

ততোহধিকঃ পুষ্করে স্যাদদ্বারকায়াঞ্চ ভার্গব ।

কৃষ্ণ সালোক্যদো মাসঃ পূজা স্নানৈশ্চ কার্ত্তিকে ।।

অর্থাৎ,- যে কোন স্থানে কার্ত্তিক মাসে স্নান দান করিলে অগ্নিষ্টোম তুল্য ফল হয় এবং পূজায় তদপেক্ষা বিশেষ ফল লাভ হইয়া থাকে, কিন্তু সাধারণ স্থান অপেক্ষা কুরুক্ষেত্রে কোটীগুণ, গঙ্গাতেও তৎতুল্য , আবার তদপেক্ষা পুষ্করে ও দ্বারকায় অধিক ফল হয় । হে শৌনক ! কার্ত্তিক মাস স্নান দান দ্বারা এমন কি কৃষ্ণের সালোক্য দান করিয়া থাকে ।

 

💐অন্যাঃ পূৰ্য্যস্তৎসমানা মুনয়ো মথুরাং বিনা ।

দামোদরত্বং হি হরেস্তত্রৈবাসীদযতঃ কিল ।।  

অর্থাৎ,- হে মুনিগণ ! মথুরা ব্যতিরেকে অযোধ্যা প্রভৃতি অন্যান্য পুরী সকল উল্লিখিত ফলের সমান ফল প্রদান করেন, কিন্তু মথুরা সর্বাপেক্ষা অধিক ফল দিয়াথাকেন, যেহেতু ঐ মথুরায় শ্রীকৃষ্ণের দামোদরত্ব প্রকাশ হইয়াছিল।

 

💐মথুরায়াং ততশ্চোর্জে বৈকুণ্ঠপ্রীতিবৰ্ধনঃ ।

কাৰ্ত্তিকে মথুরায়াং বৈ পরমাবধিরিষ্যতে ।।

অর্থাৎ,- কার্ত্তিকে মথুরায় পূজা ও স্নানাদিতে শ্রীকৃষ্ণের প্রতি প্রীতি বৃদ্ধি হয় । অতএব কার্ত্তিকে মথুরায় ফলের পরমকাষ্ঠা হইয়া থাকে ।

 

💐যথা মাঘে প্রয়াগঃ স্যাদ্বৈশাখে জাহ্নবী যথা ।

কার্ত্তিকে মথুরা সেব্যা ততোৎকর্ষপরো ন হি ৷৷

অর্থাৎ,- যেমন মাঘ মাসে প্রয়াগ ও বৈশাখ মাসে জাহ্নবী সেবনীয়া হয় , তদ্রুপ কার্ত্তিক মাসে মথুরা সেবনীয়া । ইহার তুল্য আর উৎকর্ষ নাই ।

 

💐মথুরায়াং নরৈরূৰ্জে স্নাত্বা দামোদরচ্চিতঃ ।

কৃষ্ণরূপা হি তে জ্ঞেয়া নাত্ৰ কাৰ্য্যা বিচারণা ৷৷

দুরল্লভঃ কার্ত্তিকে বিপ্র মথুরায়াং নৃণামিহ ।

যত্রাৰ্চিতঃ স্বকং রূপং ভক্তেভ্যঃ সংপ্রযচ্ছতি ।।

অর্থাৎ,- যে সকল মনুষ্য মথুরায় কার্ত্তিক মাসে স্নান করিয়া দামোদরের অর্চনা করেন , তাহারা সকল কৃষ্ণরূপী, ইহাতে কোন বিচার নাই । হে বিপ্র ! মনুষ্য সকলের সম্বন্ধে মথুরায় কার্ত্তিক মাস দুর্লভ, যে স্থানে অর্চিত হইয়া শ্রীকৃষ্ণ ভক্তদিগকে স্বীয়রূপ প্রদান করেন ।

 

💐মন্ত্ৰদ্ৰব্যবিহীনঞ্চ বিধিহীনঞ্চ পূজনং ।

মন্যতে কাৰ্ত্তিকে দেবো মথুরায়াং সদরচনং।।

যস্য পাপস্য যুজ্যেত মরণান্তা বিনিষ্কৃতিঃ ।

তচ্ছুদ্ব্যর্থমিদং প্রোক্তং প্রায়শ্চিত্তং সুনিশ্চিতম্ ৷।

অর্থাৎ,- হে বিপ্র ! কার্ত্তিক মাসে মথুরায় মন্ত্রহীন, দ্রব্যহীন ও বিধিহীন যে অর্চন, শ্রীকৃষ্ণ তাহাকে সদৰ্চ্চন বলিয়া মানিয়া থাকেন । যে পাপের মরণ পৰ্য্যন্ত প্রায়শ্চিত্ত, তাহার শুদ্ধির নিমিত্ত কার্তিক মাসে মথুরায় শ্রীদামোদরের অর্চন , ইহাই সুনিশ্চিত প্রায়শ্চিত্ত কথিত হইয়াছে ।

 

💐কার্ত্তিকে মথুরায়াং বৈ পূজোদ্দর্শনাদধ্রবং ।

শীঘ্রং সংপ্রাপ্তবান্ বালো দুর্লভং যোগতৎপরৈঃ ৷ ৷

অর্থাৎ,- কার্ত্তিক মাসের এই যে ফল বলিলাম , ইহা কেবল শাস্ত্র প্রমাণ নহে কিন্তু সাক্ষাৎ অনুভব প্রমাণ, এই অভিপ্রায় বলিতেছেন, কার্ত্তিক মাসে মথুরায় জনার্দনের পূজা করিয়া যোগতৎপর সনকাদি মুনিগণের দুর্লভ যে ভগবৎ দর্শন, তাহা ধ্রুব বালক হইয়াও শীঘ্র অর্থাৎ পাঁচ মাসের মধ্যে সম্যক প্রকারে প্রাপ্ত হইয়াছিলেন ।

ক্রমশ…