💐💞 শ্রীমদ্ভগবদ্গীতা 💞💐

🌹🌻🌺💞💞💐💐💞💞🌺🌻🌹

🌻🌼💐প্রথম অধ্যায়ের মাহাত্ম্য💐🌼🌻

বিশেষ পোষ্ট

শ্রী শ্রী গুরু গৌরাঙ্গ জয়তঃ

সকল সাধু,গুরু,বৈষ্ণব ও গৌর ভক্তবৃন্দের শ্রীচরণে আমার অনন্ত কোটি সাষ্টাঙ্গ দণ্ডবৎ প্রণাম I

''হরি - গুরু - বৈষ্ণব তিনিহেঁ স্মরণ।

তিনেহেঁ স্মরণ হইতে বিঘ্ন বিনাশন।।

অনায়াসে হয় নিজ বাঞ্ছিত পূরণ ।।‘’

গুরবে গৌরচন্দ্রায় রাধিকায়ৈ তদালয়ে।

কৃষ্ণায় কৃষ্ণভক্তায় তদ্ভক্তায় নমো নমঃ।।

''একং শাস্ত্রং দেবকীপুত্রগীতম্,

একো দেবো দেবকীপুত্র এব।

একো মন্ত্রস্তস্য নামানি যানি,

কর্মাপ্যেকং তস্য দেবস্য সেবা।।''

অর্থাৎ,- বর্ত্তমান জগতে মানুষ আকুল ভাবে আকাক্ষা করছে একটি শাস্ত্রের, একক ভগবানের, একটি ধর্মের এবং একটি বৃত্তির, তাই, একং শাস্ত্রং দেবকীপুত্রগীতম্ - সারা পৃথিবীর মানুষের জন্য সেই একক শাস্ত্র হোক ভগবদ্ গীতা ৷ একো দেবো দেবকীপুত্র এব - সমগ্র বিশ্বচরাচরের একক ভগবান হোন ভগবান শ্রীকৃষ্ণ ৷ একো মন্ত্রস্তস্য নামানি - একক মন্ত্র, একক প্রার্থনা, একক স্তোত্র হোক তাঁর নাম কীর্ত্তন -

হরে কৃষ্ণ হরে কৃষ্ণ কৃষ্ণ কৃষ্ণ হরে হরে৷

হরে রাম হরে রাম রাম রাম হরে হরে ।।

এবং কর্মাপ্যেকং তস্য দেবস্য সেবা- সমস্ত মানুষের একটিই বৃত্তি হোক- পরম পুরুষোত্তম ভগবান শ্রীকৃষ্ণের সেবা করা।

🙏🍃ভগবান বিষ্ণু বললেন,- প্রিয়ে লক্ষি! সুশর্মা একজন অতি দুষ্ট প্রকৃতির ও খুবই পাপী লোক। সে একটি ব্রাহ্মণ পরিবারে জন্মগ্রহণ করলেও তার কোন বৈদিক ঞ্জান ছিল না। অন্যকে উৎপীড়ন করেই সে শুধু আনন্দ পেত। সে কখনও আমার নাম জপ করত না, কোন দান-ধ্যান বা কোন অতিথি সৎকার করত না। প্রকৃতপক্ষে, সে কখনও কোন পূণ্যকর্মসম্পাদন করেনি।জীবিকা নির্বাহের জন্য সে বন থেকে পাতা সংগ্রহ করত এবং সেগুলি বাজারে বিক্রি করত। সে মদ, মাংস ভক্ষণ করত। এইভাবে সে জীবন অতিবাহিত করছিল।

একদিন সেই নির্বোধ সুশর্মা এক মুনির তপোবনে পাতা সংগ্রহ করতে গেলে, এক সর্প তাকে দংশন করে এবং তৎক্ষণাৎ সে মারা যায়। মৃত্যুর পর তাকে বিভিন্ন নরকে নিক্ষেপ করা হয়। সেখানে সে বহুদিন কষ্ট ভোগ করে, তারপর একটি বলদের দেহ প্রাপ্ত হয়। জনৈক খেড় লোক ঐ বলদটি কিনে তার কাজে লাগায়। প্রায় সাত-আট বছর সে খুবই ভারী ভারী বোঝা বহন করে। একদিন খোড়া লোকটি তার বলদের পিঠে খুব বেশি করে ভারী বোঝা চাপাল এবং বলদটিকে পিটতে পিটতে জোরে হাঁটতে বাধ্য করায় হঠাৎ বলদটি পড়ে গিয়ে অজ্ঞান হয়ে গেল। অনেক লোক ঘটনাটি দেখতে জড় হল। বলদের জন্য দুঃখ প্রকাশ করে এক পুণ্যবান ব্যক্তি তার কর্মের কিছু ফল বলদটিকে দান করল। তা দেখে দাঁড়িয়ে থাকা অন্যান্য লোকেরাও তাদের পুণ্য কর্মের কথা স্মরণ করতে শুরু করে দিল এবং তাদের কিছু পুণ্য ফল যন্ত্রণাকাতর বলদটিকে দান করল।

সেই ভীড়ের মধ্যে একজন বেশ্যা রমণীও ছিল। সে কখনও কোন পুণ্য কর্ম করেছে বলে মনে করতে পারল না। কিন্তু প্রত্যেককেই মৃত্যুযন্ত্রণাকাতর বলদটিকে তাদের নিজ নিজ পুণ্যফল দান করতে দেখে সেও কখনও যদি কোন পুণ্য কর্ম করে থাকে তবে তার সেই ফল বলদটিকে অর্পণ করল। সঙ্গে সঙ্গে বলদটি মারা গেল। তারপর মৃত্যুর দেবতা যমরাজার আলয়ে তাকে নিয়ে আসা হল। সেখানে যমরাজ বিচার করে তাকে বললেন, “ঐ বেশ্যাটি তার জীবনের বিশেষ পুণ্য ফল তোমাকে দান করায় তুমি এখন পূর্বকৃত পাপকর্মের প্রতিক্রিয়া থেকে মুক্ত।

এরপর তার এক উচ্চ ব্রাহ্মণ পরিবারে জন্ম হল। সে পূর্ব জীবনের কথা স্মরণ করতে পারত। অনেক দিন পর তার নারকীয় অবস্থা থেকে মুক্তির কারণ যে বেশ্যাটি তাকে খুঁজে বের করতে মনস্থ করল। অনেক খোঁজাখুঁজির পরে সে বেশ্যাটির সঙ্গে মিলিত হয়ে তার কাছে নিজের পরিচয় দান করে তাকে জিজ্ঞাসা করল, “কি এমন পুণ্যকাজ তুমি করেছিলে যার ফল আমাকে দেওয়ায় আমি নরক যন্ত্রণা থেকে মুক্তি লাভ করেছি?”

বেশ্যাটি উত্তরে বলল,- “হে ব্রাহ্মণ ঠাকুর! আমার বাড়ীর ভিতর খাঁচার মধ্যে একটি শুক পাখি আছে, সে রোজ কিছু শ্লোক আবৃত্তি করে। তার সেই আবৃত্তি শুনে আমার মন সম্পূর্ণ বিশুদ্ধ হয়েছে, সেই আবৃত্তি শোনার ফল আমি তোমাকে দিয়েছি।‘’  এরপর উভয়েই গেল সেই শুক পাখিটির নিকট আবৃত্তি সম্পর্কে অনুসন্ধান করার জন্য। তখন শুক পাখিটি তার পূর্ব জীবনের কথা স্মরণ করে তার ইতিহাস বর্ণনা করতে শুরু করল।

সে বলল,- “পূর্ব জীবনে আমি এক পণ্ডিত ব্রাহ্মণ ছিলাম কিন্তু অহংকার বশত আমি অন্য সকল পণ্ডিত ব্যক্তিদের বিদ্রুপ করতাম। আমি খুব ঈর্ষাপরায়ণও ছিলাম। মৃত্যুর পর বহু নরকে পতিত হয়ে দীর্ঘকাল যন্ত্রণা ভোগের পর এই পাখি দেহ লাভ করেছি। আমার অতীত পাপ কর্মের জন্য শৈশবেই আমার মাতা-পিতার মৃত্যু হয়। একদিন যখন আমি তপ্ত বালির উপর অসহায় অবস্থায় পড়েছিলাম, তখন কতিপয় ঋষি আমাকে দেখতে পান। আমাকে তারা তাদের আশ্রমে নিয়ে গিয়ে যত্নসহকারে একটি খাঁচার মধ্যে রেখে দেন। সেখানে ঋষিদের ছেলে-মেয়েরা নিয়মিতভাবে শ্রীমদ্ভগবদগীতার প্রথম অধ্যায়ের শ্লোকসমূহ শিখছিলেন। তাঁরা শ্লোকগুলি বারবার আবৃত্তি করতেন এবং আমিও তাদের সঙ্গে বারবার শ্লোকগুলি পুনরাবৃত্তি করা শুরু করলাম। অল্পকাল পরেই এক চোর সেখান থেকে আমাকে চুরি করে এই ধর্মপরায়ণা মহিলার কাছে বিক্রি করে দেয়।

ভগবান বিষ্ণু বলতে লাগলেন- ভগবদগীতার প্রথম অধ্যায় আবৃত্তি করে শুকপাখিটি সম্পূর্ণরূপে শুদ্ধ হয়েছিল, তার কাছ থেকে শ্লোক শুনে সেই বেশ্যাটিও পূর্ণরূপে পরিশুদ্ধ হয়। আর শ্লোক আবৃত্তি শোনার কিছু পুণ্যফল লাভ করে সুশর্মাও সম্পূর্ণরূপে শুদ্ধ হয়ে গেল। কিছুকাল ভগবদগীতার প্রথম অধ্যায়ের মাহাত্ম্য আলোচনার পর সুশর্মা নিজের গৃহে প্রত্যাবর্তন করল এবং তারা তিনজন ব্যক্তিগতভাবে শ্রীমদ্ভগবদগীতার প্রথম অধ্যায়ের অনুশীলনে রত হল। শীঘ্রই

তারা পরম ধাম লাভ করল।

যে কেউ ভগবদগীতার প্রথম অধ্যায়ের শ্লোকসমূহ শ্রবণ বা অধ্যয়ন করবে, সে অনায়াসেই এই জড় দুঃখপূর্ণ ভবসাগর অতিক্রম করে ভগবান শ্রীকৃষ্ণের শ্রীপাদপদ্ম লাভ করবেন।

🙏🍃হরে কৃষ্ণ🍃🙏