Wednesday, May 13, 2020


শ্রীবৈষ্ণব-মহিমা
শ্রী শ্রী গুরু গৌরাঙ্গ জয়তঃ
সকল সাধু,গুরু,বৈষ্ণব ও গৌর ভক্তবৃন্দের শ্রীচরণে আমার অনন্ত কোটি সাষ্টাঙ্গ দণ্ডবৎ প্রণাম I
‘’হরি - গুরু - বৈষ্ণব তিনিহেঁ স্মরণ।
তিনেহেঁ স্মরণ হইতে বিঘ্ন বিনাশন।।
অনায়াসে হয় নিজ বাঞ্ছিত পূরণ ।।‘’

আজানুলম্বিত - ভুজৌ কনকাবদাতৌ,
সংকীর্ত্তনৈকপিতরৌ কমলায়তাক্ষৌ।
বিশ্বম্ভরৌ দ্বিজবরৌ যুগধর্ম্মপালৌ,
বন্দে জগৎপ্রিয়করৌ করুণাবতারৌ।

শ্রীল ভক্তিবিনোদ ঠাকুর তাঁর ভজন গীতিতে বৈষ্ণবের সম্বন্ধে একটি গান  কীর্ত্তন করেছেন,-
শ্রীবৈষ্ণব-মহিমা-গীতি
(ওহে) বৈষ্ণব ঠাকুর        দয়ার সাগর,
দাসে করুণা করি।
দিয়া পদছায়া         শোধহে আমারে,
তোমার চরণ ধরি।।
ছয় বেগ দমি'        ছয় দোষ শোধি,
ছয় গুণ দেহ দাসে।
ছয় সৎসঙ্গ  দেহ হে আমারে,
বসেছি সঙ্গের আশে।।
একাকী আমার     নাহি পায় বল,
হরিনাম সংকীর্ত্তনে।
তুমি কৃপা করি      শ্রদ্ধাবিন্দু দিয়া,
দেহ কৃষ্ণ নাম ধনে।।
কৃষ্ণ সে তোমার   কৃষ্ণ দিতে পার,
তোমার শকতি আছে।
আমি কাঙ্গাল    'কৃষ্ণ কৃষ্ণ' বলি,
ধাই তব পাছে পাছে।।

ছয় বেগ, ছয় দোষ, ছয় গুণ এবং ছয় সৎসঙ্গ কি?
ছয় বেগঃ-
''বাচো  বেগং মনসঃ   ক্রোধবেগং
জিহ্বাবেগমুদরোপন্থবেগম্।
এতান্  বেগান্  যো বিষহিত ধীর
সর্ব্বমপীমাং পৃথিবীং শিষ্যাৎ।।''  (শ্রী উপদেশামৃতম্)

) বাক্য বেগঃ- কৃষ্ণসম্বন্ধীয় কথা ছাড়া জড়জাগতিক কথা, বৃথা গালগল্প, প্রজল্প, অপরের উদ্বেগ দুঃখকর বচন প্রয়োগ।
) মনোবেগঃ- নানা রকমের মনগড়া কার্যকলাপ, সংযমহীন মন যা চায় তাই করা।
) ক্রোধবেগঃ- ইন্দ্রিয় ভোগে ব্যাঘাত হেতু রূঢ় আচরণ রূঢ়বাক্যাদি-প্রয়োগ।
) জিহ্বাবেগঃ- মধুর-অম্ল-কটু-লবণ-কষায়-তিক্তভেদে ষড়বিধ রস-লালসা।
() উদরবেগঃ- অত্যন্ত ভোজন - প্রয়াস।
) উপস্থবেগঃ- স্ত্রী - পুরুষ - সঙ্গ - লালসা।
শাস্ত্রে বলা হয়েছে, এই ছয় প্রকার বেগ যিনি দমন করতে সমর্থ, তিনি সমগ্র পৃথিবীকে শাসন করতে পারেন।
ছয় দোষ-
''অত্যাহারঃ        প্রয়াসশ্চ          প্রজল্পো           নিয়মাগ্রহঃ
জনসঙ্গশ্চ লৌল্যঞ্চ ষড়ভির্ভক্তির্বিনশ্যতি।।''  (শ্রীউপদেশামৃতম্)
) অত্যাহার- প্রয়োজনের থেকে অতিরিক্ত দ্রব্যর সংগ্রহ সঞ্চয়
) প্রয়াস- ভক্তি-বিরোধিচেষ্টা বা বিষয়োদ্যম।
) প্রজল্প- বৃথা বাক্যালাপ, অনাবশ্রক গ্রাম্য কথা।
) নিয়মাগ্রহ- উচ্চাধিকার-প্রাপ্ত-সময়ে নিম্নাধিকারগত নিয়মে আগ্রহ এবং ভক্তিপোষক নিয়মের অগ্রহণ।
) জনসঙ্গ- শুদ্ধভক্ত-জনসঙ্গ ব্যতীত অন্যজনসঙ্গ।
) লৌল্য- চিত্তের চঞ্চলতা; পার্থিব সুখলাভের বাসনায় ব্যাকুলতা এবং তুচ্ছ বিষয়ে আকৃষ্ট হওয়া।
কোন ব্যক্তি যখন উপরোক্ত ছয়টি দোষের দ্বারা আবদ্ধ হয়ে পড়ে তখন তার পারমার্থিক জীবন বিনাশ প্রাপ্ত হয়।
ছয় গুণ-
''উৎসাহান্নিশ্চয়াদ্ধৈর্য্যাত্তত্তৎকর্মপ্রর্বর্তনাৎ।
সঙ্গত্যাগাৎ সতোবৃত্তেঃ ষড়র্ভিভক্তিঃ প্রসিধ্যতি।।''  (উপদেশামৃতম্)
) উৎসাহ- ভজন সাধন অর্থাৎ ভগবৎ সেবা অনুশীলনে উৎসাহ।
) নিশ্চয়তা- পরমেশ্বর শ্রীকৃষ্ণ আমাকে অবশ্যই রক্ষা করবেন এই দৃঢ় বিশ্বাসে কৃষ্ণানুশীলন।
) ধৈর্য- ভগবৎ প্রেম লাভের জন্য ধৈর্য। অভীষ্টলাভে বিলম্ব দেখিয়া সাধনাঙ্গে শৈথিল্য না করা।
) তত্তৎকর্ম প্রবর্তন- শ্রবণ-কীর্তন ইত্যাদি ভক্তি অনুকূল কর্ম সম্পাদন এবং শ্রীকৃষ্ণ জন্য স্বীয় ভোগ-সুখ-পারিত্যাগাদি।
) সঙ্গত্যাগ- অধর্ম্ম, স্ত্রীসঙ্গ, স্ত্রৈণ-ভাবরূপ যোষিৎসঙ্গ, যোষিৎসঙ্গি-সঙ্গ এবং অভক্ত অর্থাৎ বিষয়ী, মায়াবাদী, নিরীশ্বর ধর্ম্মধ্বজীর সঙ্গত্যাগ।
) সতোবৃত্তি- পূর্বতন মহান বৈষ্ণব আচার্যগণের পদাঙ্ক অনুসরণ।
এই ছয়টি বিধি অনুসারে পারমাথির্ক জীবন-যাপন করলে ভক্তিযোগে অবশ্যই সিদ্ধিলাভ করা যাবে।
ছয় সৎসঙ্গ-
প্রীতির সহিত কৃষ্ণভক্তসঙ্গ ছয় প্রকারে সাধিত হয়। তাই এই সঙ্গকে প্রীতি লক্ষণ বা ভক্তিপোষক সঙ্গ বলা হয়।
''দদাতি        প্রতিগৃহ্নাতি             গুহ্যমাখ্যাতি         পৃচ্ছতি।
ভুঙক্তে ভোজয়তে চৈব ষড়বিধং প্রীতিলক্ষণম্।'' (উপদেশামৃতম্)
) ভগবদ্ভক্তকে প্রয়োজনীয় দ্রব্য প্রীতিপূর্বক দান।
) ভক্ত স্নেহ পরবশ হইয়া তাঁর আশীর্বাদ স্বরূপ যে বস্তু দিবেন তাহা আদরের সহিত গ্রহণ।
) ভজন রাজ্যে অগ্রসর হইতে যাইয়া পরিপ্রশ্ন দ্বারা ভজন রহস্য কথা ভক্তের নিকট প্রকাশ।
) ভজন বিষয়ক কথা ভক্তকেই জিজ্ঞাসা।
) ভক্ত আদরের সহিত যে ভগবৎ প্রসাদ দেবেন, তাহা কালাকাল বিচার না করিয়া অত্যন্ত প্রীতির সহিত ভগবৎ প্রসাদ গ্রহণ।
) অনুরূপ ভগবদ্ভক্তকে অত্যন্ত শ্রদ্ধা ভক্তির দ্বারা ভোজন বা সেবা করিতে হইবে
এই ভাবেই ভক্তের স্নেহ ভাজন হইতে পারিলে,-
বৈষ্ণবের আবেদনে কৃষ্ণ দয়াময়।
হেন পামর প্রতি হবেন সদয়।।
এই কথা সর্বক্ষণ স্মরণ রাখতে হবে। যিনি শ্রীভগবান শ্রীগুরুদেব অচলা শ্রদ্ধা-বিশিষ্ট, তাঁরই হৃদয়ে পরমার্থ বিষয়ক সত্য বাক্য প্রকাশিত হয়। কৃষ্ণসেবা ছাড়া নিত্য কৃষ্ণদাস, বৈষ্ণবের অন্য কোনও চেষ্টা নেই। কৃষ্ণবিস্মৃতি থেকেই দেহাত্ম অভিমান উদিত হয়।

সতীর্থদের মধ্যে কাউকেও হরি-গুরু-বৈষ্ণবসেবা থেকে বিচ্যুত হইতে দেখলে, কোন গুরুভাই অধঃপতিত হয়েছে বুঝতে পারলে তাকে সরলভাবে হরিভজনের কথা ভালোভাবে বুঝিয়ে শ্রীগুরু-গৌরাঙ্গের মঙ্গলময় বাণী তার কাছে কীর্ত্তন করে তাকে সর্বক্ষণ হরি-গুরু-বৈষ্ণব সেবায় নিযুক্ত রাখতে হবে। হরিকথা বলে তাদেরকে কৃপা করতে হবে। তাদের অধঃপতনে কটাক্ষ করে আনন্দবোধ করা তাদের মঙ্গল কামনা নয়। এতে আমাদের নিজেদের অপরের মঙ্গল সাধিত হয়ে সত্য সত্যই মঠবাসের সার্থকতা সম্পাদিত হবে। পরস্পরের হরিভজনের সহায়তার জন্যই আমরা একসঙ্গে বাস করছি। জীব যখন নিষ্কপটভাবে শ্রীভগবানের কাছে আত্ম নিবেদন জ্ঞাপন করেন, তখন শ্রীভগবান  গুরুরূপে আবির্ভূত হয়ে জীবের পরম কল্যাণ করেন। Top of Form
💐জয় ভক্তবৎসল শ্রীভগবানের জয়💐💐 জয় সকল ভক্তবৃন্দের জয়💐

No comments:

Post a Comment

💐🏵️💞🌺🌷🌺💞🏵️💐 🌷বৈষ্ণবের ব্যাস পূজা🌷 💐🏵️💞🌺🌷🌺💞🏵️💐 শ্রী শ্রী গুরু গৌরাঙ্গ জয়তঃ সকল সাধু, গুরু, বৈষ্ণব ও গৌর ভক্তবৃন্দ...