বৈষ্ণব
বিশেষ পোষ্ট
শ্রী শ্রী গুরু গৌরাঙ্গ জয়তঃ
সকল সাধু,গুরু,বৈষ্ণব ও গৌর ভক্তবৃন্দের শ্রীচরণে আমার অনন্ত কোটি সাষ্টাঙ্গ দণ্ডবৎ প্রণাম I
‘’হরি - গুরু - বৈষ্ণব তিনিহেঁ স্মরণ।
তিনেহেঁ স্মরণ হইতে বিঘ্ন বিনাশন।।
অনায়াসে হয় নিজ বাঞ্ছিত পূরণ । I’’
আজানুলম্বিত - ভুজৌ কনকাবদাতৌ,
সংকীর্ত্তনৈকপিতরৌ কমলায়তাক্ষৌ।
বিশ্বম্ভরৌ দ্বিজবরৌ যুগধর্ম্মপালৌ,
বন্দে জগৎপ্রিয়করৌ করুণাবতারৌ।
♥♥বৈষ্ণব কে? বৈষ্ণবের গুণাবলী কি???♥♥
‘’তিতিক্ষবঃ কারুণিকাঃ সুহৃদঃ সর্বদেহিনাম্ ।
অজাতশত্রবঃ শান্তাঃ সাধবঃ সাধুভূষণাঃ ।।‘’ (ভাগবত ৩/২৫/২১)
অজাতশত্রবঃ শান্তাঃ সাধবঃ সাধুভূষণাঃ ।।‘’ (ভাগবত ৩/২৫/২১)
অর্থাৎ,- ভগবদ্ভক্ত সর্বদাই সহিষ্ণু, অত্যন্ত কৃপা পরায়ণ, সর্বজীবের সুহৃদ, শাস্ত্রানুগ, অজাতশত্রু, শান্ত - এই সকল গুণাবলী সাধুর ভূষণস্বরূপ I
যারে দেখ’ তারে কহ “কৃষ্ণ” – উপদেশ।
আমার আজ্ঞায় গুরুবাঞ্ছা তাঁর’ এই দেশ।।
উপাস্যের মধ্যে কোন উপাস্য প্রধান?
শ্রেষ্ঠ-উপাস্য-যুগল রাধাকৃষ্ণ-নাম।।
এক কৃষ্ণনামে করে সর্ব্ব-পাপ ক্ষয়।
নববিধা ভক্তি পূর্ণ, নাম হৈতে হয়।।
অতএব যার মুখে এক কৃষ্ণনাম।
সেই ত’ বৈষ্ণব, করিহ তাহার সম্মান।।
কৃষ্ণনাম নিরন্তর যাহার বদনে।
সেই বৈষ্ণব-শ্রেষ্ঠ, ভজ তাহার চরণে।।
যাহার দর্শনে মুখে আইসে কৃষ্ণনাম।
তাহারে জানিহ ‘বৈষ্ণব-প্রধান।।
অন্তরে নিষ্ঠাকর, বাহ্যে লোকব্যবহার।
অচিরেত কৃষ্ণ তোমায় করিবেন উদ্ধার।।
প্রভু কহে, - মায়াবাদী কৃষ্ণে অপরাধী।
“ব্রহ্ম”, ”আত্মা”, ”চৈতন্য” কহে নিরবধি।।
যেই মূঢ় কহে, - জীব ঈশ্বর হয় ‘সম’।
সেইত ‘পাষণ্ডী’ হয়, দণ্ডে তারে যম।।
কোটিজ্ঞানী-মধ্যে হয় একজন ‘মুক্ত’।
কোটিমুক্ত-মধ্যে ‘দুর্লভ’ এক কৃষ্ণভক্ত।।
ব্রহ্মাণ্ড ভ্রমিতে কোন ভাগ্যবান জীব।
গুরু-কৃষ্ণ-প্রসাদে পায় ভক্তিলতা-বীজ।।
জীবের ‘স্বরুপ’ হয় –কৃষ্ণের ‘নিত্যদাস’।
কৃষ্ণের ‘তটস্থা-শক্তি’, ‘ভেদাভেদ-প্রকাশ’।।
কৃষ্ণ ভুলি যেই জীব- অনাদি-বহির্মুখ।
অতএব মায়া তারে দেয় সংসার-দুঃখ।।
কভু স্বর্গে উঠায়, কভু নরকে ডুবায়।
দণ্ডজনে রাজা যেন নদীতে চুবায়।।
কৃষ্ণ-নিত্যদাস জীব তাহা ভুলি’ গেল।
এই দোষে মায়া তারে গলায় বান্ধিল।।
সেই সে পরমবন্ধু, সেই পিতামাতা।
শ্রীকৃষ্ণচরণে যেই প্রেমভক্তিদাতা।।
সকল জন্মে পিতামাতা সবে পায়।
কৃষ্ণ গুরু নাহি মিলে, ভজহ হিয়ায়।।
♥♥জয়গুরু,জয়গুরু,জয়গুরু♥♥
!!হরে কৃষ্ণ!!
"।বৈষ্ণব ও বৈষ্ণবধর্ম শব্দের অর্থ।" যদি কেউ প্রশ্ন করে, "ভাই, তুমি কি বৈষ্ণব?" একজন প্রকৃত শুদ্ধ বৈষ্ণব কখনোই বলবে না যে হ্যাঁ। এই 'হ্যাঁ' উত্তরে যে সুক্ষ আত্মঅহঙ্কার,
তাতেই বৈষ্ণবের বৈষ্ণবত্ব বিলুপ্ত হয়। বৈষ্ণবদের আচার ও আচরণ থেকে তাঁদের চেনা যায়। বৈষ্ণবদের বাইরের পোষাক দেখে বৈষ্ণবদের চেনা যায় না। যেমন ধরি, কেউ যদি কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধে অর্জুনকে দেখে বলে বৈষ্ণব, তাঁকে যুদ্ধক্ষেত্রে দেখে কি মনে হবে অর্জুন বৈষ্ণব? নিশ্চয়ই না। যমরাজাকে দণ্ডদান করতে দেখে কি মনে হবে তিনি বৈষ্ণব? মহাদেবকে ভূত, প্রেত, পিশাচ পরিবেষ্টিত হয়ে থাকতে দেখে কি মনে হবে বৈষ্ণব? এইজন্য বৈষ্ণব কে, তা জানা বা চেনা বড়ই কঠিন। বৈষ্ণবের রূপটি তাঁর বাইরের বেশ নয়, তাঁর প্রকৃত রূপটি হচ্ছে তাঁর অন্তরের ভাব। সেটি হচ্ছে বৈষ্ণবের প্রকৃত পরিচয়।
অনেক বৈষ্ণব আছেন যাদের আপাত দৃষ্টিতে বৈষ্ণব বলে চেনা যায় না। তার একটি অপূর্ব সুন্দর দৃষ্টান্ত হচ্ছে বৃত্রাসুর, অসুর কিন্তু তিনি বৈষ্ণব; তাঁর আচরণ দেখে আমরা সেটা বুঝতে পেরেছি। দেবরাজ ইন্দ্র যখন বৃত্রাসুরকে সংহার করতে এসেছিলেন তাঁর বজ্র নিয়ে, ভগবানেরই নির্দেশে দধিচীর অস্থি থেকে বজ্র নির্মিত হলো বৃত্রাকে সংহার করার জন্য। বজ্র নিয়ে ইন্দ্র গিয়েছেন বৃত্রাসুরের সঙ্গে যুদ্ধ করতে। কিন্তু সেই যুদ্ধে বৃত্রাসুর ইন্দ্রকে এমন ভাবে আঘাত করলো যে ইন্দ্রের ঐরাবত মূর্ছিত হয়ে গেলো, আর ইন্দ্রের হাত থেকে বজ্র পড়ে গেলো। ইন্দ্রকে তখন বৃত্রাসুর বললেন,
"ইন্দ্র, এখন মূর্ছিত হওয়ার সময় নয়, বজ্র নির্মিত হয়েছে আমাকে সংহার করার জন্য। সুতরাং আমি প্রস্তুত। এটিইই হচ্ছে ভক্তের মনোভাব।
ভগবান যদি আমাকে মারতে চান, আমি মরবো, এতো পরম সৌভাগ্যের! এইটি হচ্ছে ভক্তের মনোভাব বা বৈষ্ণবের মনোভাব। বিশেষ করে উন্নতমার্গের বৈষ্ণবের মনোভাব এই নয় যে ভগবান তুমি আমাকে রক্ষা করো, তাঁর মনোভাব হচ্ছে ভগবান তুমি যেটা ভালো বোঝো সেটাই করো। তুমি যদি আমাকে রক্ষা করতে চাও রক্ষা করতে পারো, তুমি যদি আমাকে সংহার করতে চাও সংহার করতে পারো। আমার ব্যক্তিগত কোনো ইচ্ছা নেই, তোমার ইচ্ছাটাই সব। তোমার ইচ্ছার বশবর্তী হয়ে থাকাটাই আমার জীবনের উদ্দেশ্য। এইটি হচ্ছে বৈষ্ণবের মনোভাব। এইভাবে বৃত্রাসুর প্রস্তুত হলেন। বৃত্রাসুর বললেন, "আমি এখন আমার প্রভুর, সঙ্কর্ষণের ধ্যানে মগ্ন থেকে আমি আমার দেহত্যাগ করবো।" এবং সে তাই করেছিলো। সেই যুদ্ধে ইন্দ্র তাঁর বজ্র দিয়ে তাঁর ডান হাত কেটে ফেললেন, বাম হাত দিয়ে বৃত্রাসুর যুদ্ধ করছিলো, ইন্দ্র তখন তাঁর বাম হাতটিও কেটে দিলেন। তখন সে তাঁর পা দিয়ে যুদ্ধ করছিলো। ইন্দ্র তাঁর পা দুটি কেটে দিলেন। তখন বৃত্রাসুর বিশাল শরীর ধারণ করে ইন্দ্রকে গিলে ফেললো। ইন্দ্র সেই বজ্র দিয়ে তাঁর পেটটা কেটে বেরিয়ে এসে সেই বজ্র দিয়ে তাঁর গলাটা কাটবার চেষ্টা করলো। এক বৎসর লাগল ঐ বজ্রের বৃত্রাসূরের
গলাটা কাটতে।
সেই সূত্রে শ্রীমদ্ভাগবতে বলা হয়েছে, 'ইন্দ্র বৃত্রাসুরকে মারেনি, বৃত্র ইন্দ্রাসুরকে মেরেছে।' বৃত্রাসুর যখন ইন্দ্রকে গিলে ফেললো, তখন বৃত্রাসুর ভাবলো, যাই হোক আমার কাজ শেষ হয়ে গিয়েছে, এবং তখন বৃত্রাসুর তাঁর শরীর ত্যাগ করে চলে গেলো। এই মহাভাগবত ত্রিমুখ বিশিষ্ট মহাবৈষ্ণবকে হত্যার উদ্যোগ গ্রহণ করায় ও ছলনার আশ্রয় নেওয়ায় ইন্দ্রের মহা ব্রহ্ম হত্যার পাপ হয়েছিল এবং এই পাপ থেকে বাঁচতে ইন্দ্র কে পদ্মফুলের নালে সহস্রাধিক বৎসর আত্মগোপন করতে হয়েছিল। অশ্বমেধ যজ্ঞের ফলে তিনি ঐ মহাপাপ থেকে মুক্ত হন। ইন্দ্র যখন বৃত্রাসুরের গলা কেটেছিলেন তখন বৃত্রাসুর তাঁর শরীর থেকে চলে গিয়েছিলো কোথায়? সঙ্কর্ষণের কাছে। এমনই হচ্ছে বৈষ্ণবের মহিমা।
অতএব বৈষ্ণব হওয়াটাই হচ্ছে সকলের জীবনের চরম লক্ষ্য। বৈষ্ণব হওয়াটাই হচ্ছে জীবনের চরম লক্ষ্য, অন্যান্য যে সমস্ত লক্ষ্য, সে লক্ষ্যগুলি হচ্ছে আনুষঙ্গিক বা ক্ষণস্থায়ী। বৈষ্ণব কে? বৈষ্ণব হচ্ছে ভগবানের নিত্য দাস। আর এই জীবের স্বরূপ হচ্ছে এই ভগবানের নিত্য দাসত্ব লাভ করা,
‘‘জীবের স্বরূপ হয় কৃষ্ণের নিত্য দাস।
কৃষ্ণের তঠস্থা শক্তির ভেদাভেদ প্রকাশ I I"
‘’বৈষ্ণবের আবেদনে কৃষ্ণ দয়াময়।
এ হেন পারম প্রতি হবেন সদয়।।‘’
কাজেই গলায় তুলসী মালা, অঙ্গে তিলক ইত্যাদি বৈষ্ণবীয় সাজে না সেজে আমরা আমাদের মানসিকতাকে শুদ্ধভক্তির স্তরে তুলে, সাত্বিক চিন্তা চেতনায় আর কর্মে আত্মস্থ করার চেষ্টা করি। বৈষ্ণব না সেজে এসো আমরা বৈষ্ণব হই। সর্বাঙ্গ দিয়ে আমরা 'হরিনাম' স্মরণ, মনন, চিন্তন করার অভ্যাস করি।
‘’কলের্দোষনিধেরাজন্ অস্তি হ্যেকো মহানগুণঃ I
কীর্ত্তনাদেব
কৃষ্ণস্য মুক্তসঙ্গঃ পরং ব্রজেৎ I I‘’ (শ্রীমদ্ভাগবত)
কলি সমস্ত দোষের বটে, তথাপি হে রাজন ! কলির একটি মহাগুণ এই যে, কৃষ্ণকীর্ত্তনে
জীব মায়াবদ্ধ হতে মুক্ত হয়ে শ্রীকৃষ্ণরূপ পরতত্ত্ব লাভ করে।
‘’নাম-সংকীর্তন যস্য সর্বপাপ প্রণাশনম্।
প্রণামো দুঃখশমনস্তং নমামি শ্রীহরিং পরম্।।‘’
যে হরিনাম সংকীর্ত্তন করিলে ইহকাল ও পরকালের পাপরাশি নিঃশেষে দগ্ধ হয়,আমি সেই নামরূপী পরমাত্মা স্বরূপ শ্রীহরিকে প্রণাম করি।
পরমকরুণাময় গোলোকপতি সচ্চিদানন্দ ভগবান শ্রীকৃষ্ণ ও তাঁর একান্ত হ্লাদিনী শক্তি শ্রীমতী রাধারাণী এবং সকল বৈষ্ণব ভক্ত-পার্ষদদের শ্রীচরণকমলে নিরন্তর প্রার্থনা করি, সকলের জীবন যেনো রাধা-কৃষ্ণময়তায় পূর্ণ হয়ে, মঙ্গলময়, কল্যাণময়, ভক্তিময়, সুন্দরময় আর আনন্দময় হয়ে ওঠে সর্বদা।
"হরে কৃষ্ণ হরে কৃষ্ণ কৃষ্ণ কৃষ্ণ হরে হরে
হরে রাম হরে রাম রাম রাম হরে হরে!!"
!! জয় শ্রীরাধাকৃষ্ণের জয় !! !! জয় সকল ভক্তবৃন্দের জয় !!
No comments:
Post a Comment