Saturday, May 16, 2020


নবধা ভক্তি
শ্রী শ্রী গুরু গৌরাঙ্গ জয়তঃ
সকল সাধু,গুরু,বৈষ্ণব ও গৌর ভক্তবৃন্দের শ্রীচরণে আমার অনন্ত কোটি সাষ্টাঙ্গ দণ্ডবৎ প্রণাম I
''হরি - গুরু - বৈষ্ণব তিনিহেঁ স্মরণ।
তিনেহেঁ স্মরণ হইতে বিঘ্ন বিনাশন।।
অনায়াসে হয় নিজ বাঞ্ছিত পূরণ ।।‘’

গুরবে গৌরচন্দ্রায় রাধিকায়ৈ তদালয়ে।
কৃষ্ণায় কৃষ্ণভক্তায় তদ্ভক্তায় নমো নমঃ।।

ভগবদ্গীতায় ভগবান বলেছেন-
ভক্ত্যা মামভিজানাতি যাবান্ যশ্চাস্মি তত্ত্বতঃ।
ততো মাং তত্ত্বতো জ্ঞাত্বা বিশতে তদনন্তরম্।।  (গীতা ১৮/৫৫)
অর্থাৎ,- ভক্তির দ্বারা কেবল স্বরূপত আমি যে রকম হই, সেরূপে আমাকে কেউ তত্ত্বত জানতে পারেন। এই প্রকার ভক্তির দ্বারা আমাকে তত্ত্বত জেনে, আমার ভক্ত আমার ধামে প্রবেশ করতে পারেন। অর্থাৎ, ভক্তির দ্বারাই ভগবানকে পূর্ণরূপে জানা যায়। তাই ভক্তিযোগই হচ্ছে ভগবানকে লাভ করার সর্বশ্রেষ্ঠ পন্থা।

শ্রীমদ্ভাগবতে  নববিধা ভক্তির কথা বলা হয়েছে
শ্রবণং কীর্ত্তনং বিষ্ণোঃ, স্মরণং পাদসেবনং।
অর্চ্চনং বন্দনং দাস্যং সখ্যং আত্মনিবেদনম্।।
ইতি পুংসার্পিতা বিষ্ণুর্ভক্তিচেৎ নবলক্ষণা।
ক্রিয়েত ভগবতীহদ্ধা যন্মন্যেহধীতুত্তমম্।।


) শ্রবণঃ - সাধু মুখ হইতে যথার্থ শ্রোতা হিসেবে ভগবৎ তত্ত্ব শ্রবণ করা উচিত মহারাজ পরীক্ষিত কেবল শ্রবণের মাধ্যমে ভগবদ্ধাম লাভ করেন। তিনি শ্রীল শুকদেবের নিকট থেকে কেবলমাত্র সাত দিন শ্রীকৃষ্ণ মহিমা শ্রবণ করেছিলেন।

) কীর্ত্তন - ভগবানের নাম জপ, নাম কীর্ত্তন, লীলা কীর্ত্তন - সবই কীর্ত্তনের অন্তর্গত

) স্মরণঃ - সর্বক্ষণ ভগবানকে স্মরণ করা।
"কি শয়নে, কি ভোজনে, কিবা রাত্রি জাগরণে ,
অহর্নিশচিন্ত কৃষ্ণ বলহ বদনে।"

"মনের স্মরণ প্রাণ মধুর মধুর ধাম,
যুগল বিলাস স্মৃতি সার।
সাধ্য সাধন সেই ইহা বই আর নাই,
সে তত্ত্ব সর্বসিদ্ধি সার।"  - (প্রেমচন্দ্রিকা /২)
ভগবৎ-লীলা স্মরণ ভক্তের জীবন স্বরূপ। মহামাধুর্যময় রাধা-কৃষ্ণের যুগল বিলাস স্মরণ হচ্ছে সকল ধ্যানের সার নির্যাস। এর থেকে ঊর্ধ্বতর আর কোন সাধ্য নেই, সাধন পন্থাও নেই, এই তত্ত্ব সর্বসিদ্ধির সার স্বরূপ।

) পাদ সেবন - ভগবানের শ্রীপাদপদ্মের আশ্রয় করে তাঁর সেবা করা
"সর্ব্বোপাধি বিনির্ম্মুক্তং তৎপরত্বেন নির্ম্মলম্
হষীকেন হৃষীকেশ সেবনং ভক্তিরুচ্যতে ।।"
সকল প্রকার উপাধি পরিত্যাগ করে, নির্মল হয়ে ( কায়, মন বাক্যে নির্মল হয়ে) সকল  ইন্দ্রিয়াদির দ্বারা শ্রীকৃষ্ণের সেবা করাকে ভক্তি বলে

) অর্চন - শ্রীবিগ্রহের অর্চন করা।
"শুদ্ধন্যাসাদি পূর্বাঙ্গ কর্মনির্বাহ পূর্বকম্।
অর্চনং তুপচারাণাং স্যান্মন্ত্রেণোপপাদনম্।"
ভূতশুদ্ধি ন্যাসাদিরূপ পূর্বাঙ্গ-কর্মাদি অর্থাৎ প্রারম্ভিক শুদ্ধিকরণ প্রক্রিয়াদি সমাপনান্তে মন্ত্র উচ্চারণ সহ উপচারাদি অর্থাৎ পূজার উপকরণ সমূহ অর্পনের নাম অর্চন।

) বন্দন - ভগবানের গুণকীর্ত্তন করা যেমন - ব্রহ্ম সংহিতায় পিতামহ ব্রহ্মা ভগবানের গুণকীর্ত্তন করেছেন।

) দাস্য - ভগবান শ্রীকৃষ্ণের একনিষ্ঠ দাসানুদাসানুদাস হওয়া। কৃষ্ণ দাসের অনুদাসের অনুদাস হিসেবে আত্ম পরিচয় ধারণ করা।

) সখ্য - শ্রীকৃষ্ণকেই একমাত্র সুহৃদ জানা।
"ভোক্তারং যজ্ঞতপসাং সর্বলোক মহেশ্বরম্।
সুহৃদং সর্বভূতানাং জ্ঞাত্বা মাং শান্তিমৃচ্ছতি "   (গীতা /২৯)
আমাকে সমস্ত যজ্ঞ তপস্যার পরম ভোক্তা, সর্বলোকের মহেশ্বর এবং সমস্ত জীবের সুহৃদরূপে জেনে জড় দুঃখ-দুর্দশা থেকে ভক্ত মুক্তি লাভ করেন।

) আত্মনিবেদন - নিজেকে ভগবান শ্রীকৃষ্ণের পাদপদ্মে সমর্পণ করা
"মানস দেহ গেহ - যাহা কিছু মোর,
তুয়া পদে অর্পিলু নন্দ কিশোর।"

অম্বরীষ মহারাজের  ভগবৎ সেবা
" বৈ মনঃ কৃষ্ণপদারবিন্দয়ো-
বর্চাংসি বৈকুন্ঠ গুণানুবর্ণনে।
করৌ হরের্মন্দির মার্জনাদিষু,
শ্রুতিং চকারাচ্যুতসৎকথোদয়ে I I
মুকুন্দ লিঙ্গালয় দর্শনে দৃশৌ,
তদ্-ভৃত্য গাত্রস্পর্শেহঙ্গসঙ্গমম্।
ঘ্রাণং তৎপাদ সরোজ সৌরভে,
শ্রীমত্তুলস্যা রসনাং তদর্পিতে I I
পাদৌ হরেঃ ক্ষেত্রপদানুসর্পণে,
শিরো হৃষীকেশ পদাভিবন্দনে।
কামং দাস্যে তু কামকাম্যয়া,
যথোত্তমশ্লোকজনাশ্রয়া রতি ।।"  (ভাগবত  //১৮-২০)

মহারাজ অম্বরীষ সর্ব প্রথমে তাঁর মনকে ভগবান শ্রীকৃষ্ণের চরণারবিন্দের ধ্যানে মগ্ন করে ছিলেন তারপর ক্রমশ তিনি তাঁর বাণী ভগবান শ্রীকৃষ্ণের অপ্রাকৃত লীলা বর্ণনায় নিয়োজিত করেছিলেন তাঁর হস্ত দ্বারা তিনি মন্দির মার্জন করেছিলেন। শ্রবণ ইন্দ্রিয় দ্বারা ভগবানের অপ্রাকৃত লীলা শ্রবণ করেছিলেন তাঁর চক্ষু দ্বারা ভগবানের অপ্রাকৃত রূপ দর্শন করেছিলেন। ত্বক-ইন্দ্রিয় দ্বারা তিনি ভগবদ্ভক্তের দেহ স্পর্শ করেছিলেন। ঘ্রাণ- ইন্দ্রিয় দ্বারা তিনি ভগবানের শ্রীচরণে অর্পিত পদ্ম ফুলের ঘ্রাণ গ্রহণ করেছিলেন। জিহ্বা দ্বারা ভগবানের শ্রীচরণে অর্পিত তুলসীর স্বাদ গ্রহণ করেছিলেন। তাঁর পদ যুগল দ্বারা তিনি বিভিন্ন তীর্থস্থানে এবং ভগবানের মন্দিরে গমন করেছিলেন। তাঁর মস্তক দ্বারা তিনি ভগবানকে প্রণতি নিবেদন করেছিলেন এবং তাঁর সমস্ত কামনাকে তিনি ভগবানের সেবায় নিয়োজিত করেছিলেন। এই সমস্ত কর্ম্মগুলি শুদ্ধ ভক্তেরই যোগ্য।

ভগবান শ্রীকৃষ্ণ শ্রীমদ্ভগবদ্গীতায় বলেছেন,-
‘’নেহাভিক্রমনাশোহস্তি প্রত্যবায়ো বিদ্যতে।
স্বল্পমপ্যস্য ধর্মস্য ত্রায়তে মহতো ভয়াৎ।।‘’  (গীতা /৪০)
অর্থাৎ, ভক্তিযোগের অনুশীলন কখনও ব্যর্থ হয় না এবং তার কোনও ক্ষয় নেই। তার স্বল্প অনুষ্ঠানও অনুষ্ঠাতাকে সংসাররূপ মহাভয় থেকে পরিত্রাণ করে।

‘’কলের্দোষনিধেরাজন্ অস্তি হ্যেকো মহানগুণঃ I
কীর্ত্তনাদেব কৃষ্ণস্য মুক্তসঙ্গঃ পরং ব্রজেৎ I I‘’ (শ্রীমদ্ভাগবত)
কলি সমস্ত দোষের বটে, তথাপি হে রাজন ! কলির একটি মহানগুণ এই যে, কৃষ্ণকীর্ত্তনে জীব মায়াবদ্ধ হইতে মুক্ত হয়ে শ্রীকৃষ্ণরূপ পরতত্ত্ব লাভ করেন।

‘’নাম - সংকীর্ত্তন যস্য সর্বপাপ প্রণাশনম্।
প্রণামো দুঃখশমনস্তং নমামি শ্রীহরিং পরম্।।‘’
যে হরিনাম সংকীর্ত্তন করিলে ইহকাল ও পরকালের পাপরাশি নিঃশেষে দগ্ধ হয়,আমি সেই নামরূপী পরমাত্মা স্বরূপ শ্রীহরিকে প্রণাম করি।

হরে কৃষ্ণ হরে কৃষ্ণ কৃষ্ণ কৃষ্ণ হরে হরে !
হরে রাম হরে রাম রাম রাম হরে হরে !!
💐💐 জয় শ্রীরাধাকৃষ্ণের জয় 💐💐জয় সকল ভক্তবৃন্দের জয়💐💐

No comments:

Post a Comment

💐🏵️💞🌺🌷🌺💞🏵️💐 🌷বৈষ্ণবের ব্যাস পূজা🌷 💐🏵️💞🌺🌷🌺💞🏵️💐 শ্রী শ্রী গুরু গৌরাঙ্গ জয়তঃ সকল সাধু, গুরু, বৈষ্ণব ও গৌর ভক্তবৃন্দ...