Thursday, April 30, 2020


শ্রীমদ্ভাগবতের সর্ব্বশ্রেষ্ঠত্ব
বিশেষ পোষ্ট
শ্রী শ্রী গুরু গৌরাঙ্গ জয়তঃ
সকল সাধু,গুরু,বৈষ্ণব গৌর ভক্তবৃন্দের শ্রীচরণে আমার অনন্ত কোটি সাষ্টাঙ্গ দণ্ডবৎ প্রণাম I
‘’হরি - গুরু - বৈষ্ণব তিনিহেঁ স্মরণ।
তিনেহেঁ স্মরণ হইতে বিঘ্ন বিনাশন।।
অনায়াসে হয় নিজ বাঞ্ছিত পূরণ ।।‘’

আজানুলম্বিত - ভুজৌ কনকাবদাতৌ,
সংকীর্ত্তনৈকপিতরৌ কমলায়তাক্ষৌ।
বিশ্বম্ভরৌ দ্বিজবরৌ যুগধর্ম্মপালৌ,
বন্দে জগৎপ্রিয়করৌ করুণাবতারৌ।

''অনন্তকোটি জীবন বেদান্ত পড়ে মুক্তি হবেনা, অনন্তকাল নাক টিপে দশ বিশ হাত উঁচু হইতে পারলে কোনও মঙ্গল হবেনা। যিনি নিজে শ্রীমদ্ভাগবত,- এমন ব্যক্তির মুখে শ্রীমদ্ভাগবত শুনলে জগতের সকল জীবের মঙ্গল হবে। ''পৃথিবীর সমস্ত পুস্তক যদি অগ্নিতে ভষ্মীভূত হয়ে যায় তাতেও কোন ক্ষতি হয় না, যদি একটি মাত্র গ্রন্থ থাকেন - শ্রীমদ্ভাগবত'' হাজার হাজার বিদ্যাপীঠ সব উঠে গেলে কোন অসুবিধা হবেনা যদি একমাত্র শ্রীমদ্ভাগবতের পঠন - পাঠন থাকে; কিন্তু কি আশ্চর্য্য - মায়ার কি খেলা, সেই পুস্তকখানা নিয়েই যত ব্যবসা। গৌরসুন্দরের কথার ঠিক উল্ট পথে জগতের স্বাভাবিক গতি। বহু লোককে বললাম শ্রীমদ্ভাগবত প্রচার কর, অসংখ্য লোক ভাগবত প্রচারের বিরোধী ভাগবত - প্রচারের পরম শত্রু। আমি এখন একা নেই বহু লোক হয়েছে , তাতে বহু শত্রুও হয়েছে। অসংখ্য শত্রু হয়েছে তথাপি সেই শত্রুদের মঙ্গল হউক সত্যকথা প্রচারিত হউক; এটাই আমার সংকল্প।'' ---শ্রীল ভক্তিসিদ্ধান্ত সরস্বতী গোস্বামী প্রভুপাদ

যৎকীর্ত্তনং যৎস্মরণং যদীক্ষণং
যদ্বন্দনং যচ্ছ্রবনং যদর্হণম্  
লোকস্য সদ্যো বিধুনোতি কল্মষং
তস্মৈ সুভদ্রশ্রবসে নমো নমঃ ।।  (ভাগবত //১৫)

অর্থাৎ,- আমি সেই সর্ব মঙ্গলময় ভগবান শ্রীকৃষ্ণকে সশ্রদ্ধ প্রণাম নিবেদন করি; যাঁর যশগাথা কীর্ত্তন, স্মরণ, দর্শন, বন্দন, শ্রবণ পূজনের ফলে সমস্ত পাপরাশি অচিরেই ধৌত হয়। 

মায়ামুগ্ধ জীবের নাহি স্বতঃ কৃষ্ণজ্ঞান।
জীবেরে কৃপায় কৈলা কৃষ্ণ বেদ-পুরাণ।।  (চঃচৈ মধ্য ২০.১২২)

মায়ার প্রভাবে আচ্ছন্ন বদ্ধ জীব তার নিজের চেষ্টায় কৃষ্ণ স্মৃতি জাগরিত করতে পারে না। তাই শ্রীকৃষ্ণ তাঁর অহৈতুকী কৃপার প্রভাবে জীবকে বেদ পুরাণাদি স্বার্থ গ্রন্থাবলী দান করেছে।

তস্মাদ্ভারত সর্বাত্মা ভগবানীশ্বরো হরিঃ
শ্রোতব্যঃ কীর্তিতব্যশ্চ স্মর্তব্যশ্চেচ্ছতাভয়ম্ ।। (ভাগবত //

অর্থাৎ,- হে ভারত! সমস্ত দুঃখ-দুঃর্দশা থেকে যে মুক্ত হওয়ার বাসনা করে, তাকে অবশ্যই পরমাত্মা, পরম নিয়ন্তা এবং সমস্ত দুঃখ হরণকারী পরমেশ্বর ভগবানের কথা শ্রবণ, কীর্ত্তন স্মরণ করতে হবে।

বৈ পুংসাং পরো ধর্মো যতো ভক্তিরধোক্ষজে
অহৈতুক্যপ্রতিহতা যয়াত্মা সুপ্রসীদতি।।  (ভাগবত //

অর্থাৎ,- সমস্ত মানুষের পরম ধর্ম হচ্ছে সেই ধর্ম যার দ্বারা ইন্দ্রিয়জাত জ্ঞানের অতীত শ্রীকৃষ্ণে অহৈতুকী অপ্রতিহতা ভক্তি লাভ করা যায়। সেই ভক্তি-বলে অনর্থ নিবৃত্তি হয়ে আত্মা যথার্থ প্রসন্নতা লাভ করে।

📚শ্রীমদ্ভাগবতের স্বরূপ----
শ্রীসনাতন গোস্বামী ভাগবতের স্বরূপ বলছেন, "শ্রীকৃষ্ণঃ পরিবর্ত্তিত", পূর্ণব্রহ্ম কৃষ্ণ শব্দব্রহ্মরূপে পরিবর্তিত। শ্রীগ্রন্থ আর শ্রীগোবিন্দ অভিন্ন।
শ্রীগ্রন্থে দ্বাদশটি স্কন্ধ আছে। কোন কোন আচার্য শ্রীগ্রন্থের ধ্যানে বলেছেন,-

''পাদো যদিও প্রথম দ্বিতীয়, তৃতীয়  চতুর্থ তুর্য কটিও যদ উরু।
নাভিমষ্ট পঞ্চম এবম  ষষ্ঠম, ভুজঙ্গরাঙ দু যুগলম তথান।।
কণ্ঠস্থ রাজন নবম যদিও, মুখারবিন্দম দশমম প্রফুল্লম।
একাদশ যস্য ললাট পট্টম, শিরোপি দ্বাদশ এবম ভাতি।।
তোমাদি দেব করুণা নিধানম, তমাল বর্ণ সুমিত অবতারম।
অপার সংসার সমুদ্র সেতুম, ভজাম্যহম ভাগবতম।।''

প্রথম দ্বিতীয় স্কন্ধ শ্রীকৃষ্ণের দুই চরণ যে চরণবলি মহারাজনিজ মস্তকে ধারণ করেছিলেন। গোপীরা যা নিজ বক্ষে ধারণ করেন।
তৃতীয় চর্তুথ স্কন্ধ শ্রীকৃষ্ণের দুই উরু, যে উরুদেশেপ্রহ্লাদ মহারাজকে বসিয়েছিলেন শ্রীভগবান নৃসিংহ অবতারে।
পঞ্চম- ষষ্ঠ স্কন্ধ দুই পার্শ্বদেশ যে পার্শ্বদেশেমা যশোদাদামবন্ধন করেছিলেন।
সপ্তম অষ্টম স্কন্ধ শ্রীকৃষ্ণের দুই বাহু। যে বাহু দিয়েশ্রীদাম, সুদাম, অর্জুনসখাদের বক্ষে ধারণ করেন।
নবম স্কন্ধ ভগবানের হৃদয়, যে হৃদয়ে থাকে প্রিয় রাধারাণী
একাদশস্কন্ধ ভগবানের কপাল। যে কপালে অলকা তিলকা করে শৃঙ্গার করানমা যশোদা
দ্বাদশ স্কন্ধ হল ভগবানের মস্তক যা ময়ূরপুচ্ছ শোভিত হয়।
আর দশমস্কন্ধ হল ভগবানের শ্রীমুখের হাসি। অধরের মধুর হাসি 'মঞ্জুহাস্যতাম" শ্রীভগবান সৃষ্টি, স্থিতি, লয়ের কর্ত্তা তিনি সর্বজ্ঞ সর্বশক্তিমান, তিনি কৃপাময়--- এসব কথা শোনা হয়েছে। এখন ঋষিগণ জানতে চান ভগবানের মধ্যে হাসি আছে কিনা। আনন্দ আছে কিনা। রস আছে কিনা। ভাগবতের দশম স্কন্ধ এই জিজ্ঞাসার উত্তর দিয়েছেন।
শ্রীমদ্ভাগবতের পরিচয় দিতে ভাগবত নিজে বলছেন--
নিগমকল্পতরোর্গলিতং ফলং
শুকমুখাদমৃতদ্রবসংযুতম।
পিবত ভাগবতং রসমালয়ং
মুহুরহো রসিকা ভুবি ভাবুকাঃ।।

বেদ কল্পবৃক্ষ। বেদকল্পবৃক্ষের গলিত ফল হচ্ছে শ্রীমদ্ভাগবত। গাছের আম দুই প্রকারের পেতে পারি আমরা। আঁকশি দিয়ে আহরণের ফলে বা গাছ হইতে পেকে নিজের থেকে পড়ে ভূতলে  তখন। একটি আবৃত অপরটি গলিত। আহৃত ফল কাঁচা থাকতে পারে। গলিত ফলটি সুপরিপক্ক। বেদ থেকে ধর্ম্ম, অর্থ, কাম মোক্ষ এই চারিপুরুষার্থ লাভ হয় বেদ কল্পতরু। এই কল্পতরু ফল শ্রীভগবান লীলাবর্ণন প্রধান পরমরসময় শ্রীমদ্ভাগবত। জগতে দেখা যায় ফলের আঁটি খোসা বাদ দিয়ে কেবলমাত্র রস পান করা হয়, কিন্তু ফলের আঁটি বা খোসা নাই, এটার সবই রস। অর্থাৎ শ্রীমদ্ভাগবতের কিছুই পরিত্যজ্য না, সবই পরমাদরে গ্রাহ্য। যদিও শ্রীভগবানের লীলারসময় শ্রীমদ্ভাগবত জগতে অতি দুর্লভ বস্তু, তবুও শ্রীভগবানের কৃপায় অতি সুলভ হয়েছে।

এই রস শ্রীভগবান স্বয়ং ব্রহ্মাকে দিয়েছিলেন, ব্রহ্মা নারদকে, নারদ ব্যাসকে এবং ব্যাস হইতে  শ্রীশুকদেব আস্বাদন করছেন শুকমুখ হইতে জগতে এসেছে। বৃক্ষের ফল যদি উচ্চ শাখা হইতে ভুমিতে পতিত হয়, তা হলে তা ভেঙে যায়। কিন্তু যদি শাখা প্রশাখা দিয়ে গড়িয়ে আসে আস্তে আস্তে মাটিতে পড়ে তা হলে আর সেই সম্ভাবনা থাকে না। শ্রীমদ্ভাগবত ব্রহ্মা নারদ ব্যাসাদি শিষ্যপ্রশিষ্য পরম্পরায় জগতে আসছে, কাজেই উচুঁ থেকে ফল পড়ে ভেঙে যায়নি তা অবিকৃত আছে। শুকপক্ষী যেমন মধুর ফল ছাড়া অন্য কিছুই খায় না, সেইরূপ পরমহংস চুড়ামণি আজন্ম সংসারত্যাগী শ্রীশুকমুনি পরমমধুর শ্রীকৃষ্ণ লীলারস ছাড়া অন্য রস আস্বাদন করেন না, সুতরাং শুকমুখনিগর্লিত এই রসময় ফল পরম মধুর।

অতএব হে ভাবুক রসিকগণ সর্ব্বত্যাগ করে এই রসই আস্বাদন করুন। রসাস্বাদনের অধিকার বা আগ্রহ সকলের নেই; কেবল রসিকেরই অধিকার। যে রস বোঝে বা তার রসাস্বাদনে আগ্রহ আছে সেই রসিক। এইজন্য ব্যাসদেব এই রস আস্বাদন করবার জন্য রসিকগণকেই আহ্বান করছেন।
ব্যাসদেব আবার ভাবুকদের আহ্বান করছেন, কারণ রস সকলে চায় বটে, কোনটি প্রকৃত রস, তা কেউ বোঝে না, বুঝলে শ্রীভগবানের রস ছাড়া কেহ অনিত্য বিষয়রসে মত্ত হইত না। যাঁরা ভাবুক, তাঁরা কোন রস নিত্য চিরস্থায়ী, তা ভাবনা করে রসান্বেষণ করেন, কাজেই ভাবুক রসিকগণ এই বেদকল্পতরুর পরমমধুর সময় ফল আস্বাদন করেন এই আহ্বান ব্যাসদেবের। কলিহত জীবের জন্য ভগবানের করুণা এই শ্রীমদ্ভাগবত। যার সাথে পরিচয় করিয়ে দিলেন কলিযুগ পাবন অবতার গৌরহরি।  

যথা তরোর্মূলনিষেচনেন
তৃপ্যন্তি তৎস্কন্ধভুজোপশাখাঃ
প্রাণোপহারাচ্চ যথেন্দ্রিয়াণাং
তথৈব সর্বার্হণমচ্যুতেজ্যা ।।  (ভাগবত /৩১/১৪)

অর্থাৎ,- গাছের মূলে জল সেচন করলে যেমন সেই গাছের কাণ্ড, ডাল, উপশাখা প্রভৃতি সকলেই তৃপ্তিলাভ করে এবং উদরে আহার্যদ্রব্য প্রদানের দ্বারা যেমন ইন্দ্রিয়ের তৃপ্তি হয়, তেমনই শ্রীকৃষ্ণের পূজা করলে সমস্ত দেবতাদের পূজা হয়ে যায়।।
এবং প্রসন্নমনসো ভগবদ্ভক্তিযোগতঃ
ভগবত্তত্ত্ববিজ্ঞানং মুক্তসঙ্গস্য জায়তে ।।  (ভাগবত //২০

অর্থাৎ,- এভাবেই শুদ্ধ সত্ত্বে অধিষ্ঠিত হয়ে ভক্তিযোগে যুক্ত হওয়ার ফলে যাঁর চিত্ত প্রসন্ন হয়েছে, তিনি সব রকম জড় বন্ধন মুক্ত হয়ে ভগবৎ-তত্ত্ব বিজ্ঞান উপলব্ধি করেন। 
বাসুদেবে ভগবতি ভক্তিযোগঃ প্রয়োজিতঃ
জনয়ত্যাশু বৈরাগ্যং জ্ঞানং যদহৈতুকম্ ।।  (ভাগবত //

অর্থাৎ,- ভক্তি সহকারে পরমেশ্বর ভগবান শ্রীকৃষ্ণের সেবা করা হলে অচিরেই শুদ্ধ জ্ঞানের উদয় হয় এবং জড়-জাগতিক বিষয়ের প্রতি অনাসক্তি আসে

জয় শ্রীমদ্ভাগবত মহাপুরাণের জয়। জয় দ্বাদশ মহাভাগবৎগণের জয়।

🌳🌴🦚💐🏵️🌺🌷🌺🏵️💐🦚🌴🌳 🌷 শ্রীচৈতন্যমহাপ্রভুর   আবির্ভাব লীলা 🌷 🌳🌴🦚💐🏵️🌺🌷🌺🏵️💐🦚🌴🌳 শ্রী শ্রী গুরু গৌরাঙ্গ জয়তঃ সকল...