Saturday, February 29, 2020

মহাপ্রসাদ
মহাপ্রসাদ কী? শ্রীশ্রীজগন্নাথদেবের মহাপ্রসাদ কিভাবে পৃথিবীতে আসলো???
একবার নারদ মুনির ইচ্ছা হলো যে তিনি ভগবান নারায়ণের প্রসাদ পেতে চান। কিন্তু যা ছিল অসম্ভব,কারন নারায়ণের প্রসাদ কেবল মাত্র মহালক্ষী ব্যতীত অন্য কেউ পেতে পারেন না। এই সংকটে নারদ মুনি লক্ষীদেবী কে প্রসন্ন করার জন্য তপস্যা শুরু করলেন। অতঃপর ১২ বছর তপস্যার পর দেবীলক্ষী প্রসন্ন হলেন এবং নারদ মুনিকে বললেন, তোমার তপস্যায় আমি সন্তুষ্ট হয়েছি,বলো কি বর চাও তুমি? উত্তরে মুনিবর বললেন যে তিনি নারায়ণের প্রসাদ পেতে চান ! লক্ষীদেবী বললেন ঠিক আছে তুমি এখানে অপেক্ষা কর, নারায়ণের ভোজন শেষে তার অবশেষ প্রসাদ তুমি পাবে।

অবশেষে যখন নারদ মুনি সেই প্রসাদ পেল তা সেবা করে সে আনন্দে আত্মহারা হয়ে বীণার ছন্দে নারায়ণ নারায়ণ বলতে বলতে কৈলাস অভিমুখে যাত্রা করলেন। শিব তখন নারদ মুনিকে তার আনন্দের হেতু জানতে চাইলেন।নারদ মুনি তখন সবিস্তারে বর্ণনা  করলেন। তা শুনে শিবের ও ইচ্ছা হলো যে সেও নারায়ণের প্রসাদ পেতে চান। নারদ মুনি বললেন যে তিনি সব খেয়ে ফেলেছেন।কিন্তু এখন উপায় কি হবে? নারদ মুনি তার হাতের দিকে তাকিয়ে দেখলেন যে হাতের একপাশে একবিন্দু প্রসাদ লেগে আছে। শিবজী সেটা জল দিয়ে ধুয়ে সেবা করলেন। সেই চিন্ময় প্রসাদের এমনই স্বাদ ছিল যে ওইটুকু খেয়েই শিব আনন্দে তাণ্ডব নৃত্য শুরু করে দিলেন। এ দিকে মাতা পার্বতী এই তাণ্ডব নৃত্যের শব্দ শুনতে পেলেন। আর ভাবলেন যে এখনতো পৃথিবীর ধংসের সময় উপস্থিত হয়নি, তবে স্বামী কেন তাণ্ডব নৃত্য শুরু করলেন ! নিকটে গিয়ে শিবজীকে জিজ্ঞাসা করলেন  এবং ঘটনার বিবরন শুনলেন। তখন মাতা পার্বতী বললেন তিনিও নারায়ণের প্রসাদ পেতে চান। কিন্তু এখনতো আর কোন ভাবে সম্ভব না। পার্বতী দেবী অভিমান করলেন যে তিনি পত্নী হওয়া সত্ত্বেও কেন তার স্বামী নারায়ণের প্রসাদ একা সেবা করেছেন!!!

মাতা পার্বতী নারায়ণের ধ্যান শুরু করলেন। দেবী পার্বতীর তপস্যায় তুষ্ট হয়ে নারায়ণ তাকে দর্শন দেন এবং বললেন,- বলো পার্বতী তুমি কি বর চাও। তখন মাতা পার্বতী বললেন, হে নারায়ণ ! আপনিতো সবই জানেন,তবে আমার আরও প্রার্থনা আছে;এই জগতের সবাই আমার সন্তান, সন্তানদের রেখে আপনার প্রসাদ শুধু আমি একা পাব তা কখনই হতে পারে না।তাই আপনার মহাপ্রসাদ যেমন জগতের সবাই পায়,সেটাই আমার প্রার্থনা। উত্তরে ভগবান বললেন,- হে কল্যাণী, কলিকালে আমি যখন জগন্নাথদেব রুপে লীলা করব তখন আমি অকাতরে   আমার মহাপ্রসাদ বিতরন করব। সেই প্রসাদ প্রথমে তোমাকে দেওয়া হবে,পরে তা জগতের সবাইকে দেওয়া হবে। যদি আপনারা কেউ পুরীতে গিয়ে থাকেন সেখানে দেখতে পাবেন জগন্নাথ দেবের মন্দিরের পাশে বিমলাদেবীর (পার্বতী দেবী) মন্দির আছে। সেখানে জগন্নাথের প্রসাদ প্রথমে দেবী পার্বতীকে অর্পণ করা হয়। পরে সেই মহাপ্রসাদ সবাইকে বিতরন করা হয়।

জয় জগন্নাথ  জয় জগন্নাথ  জয় জগন্নাথ  জয় জগন্নাথ

Friday, February 28, 2020


শ্রীশ্রী সারস্বত গৌড়ীয় আসন মিশনের প্রতিষ্ঠাতা নিত্যলীলা প্রবিষ্ট ওঁ বিষ্ণুপাদ শ্রী শ্রীমদ ভক্তিবিবেক ভারতীগোস্বামী মহারাজ
(আবির্ভাব)
বাংলাদেশের যশোহর জেলার একটি মধ্যবিত্ত পরিবারে শ্রীল মহারাজ আবির্ভূত হন।অল্প বয়সে তিনি পিতৃহারা হইয়াছিলেন।জ্যেষ্ঠ ভ্রাতা বিধবা মাতৃদেবীর সহিত কিছুকাল বসবাস পূর্ব্বক স্কুলের পাঠ্য বিষয় অধ্যয়ন করিয়া তাহাতে পারদর্শিতা লাভ করেন।সেই সময় ব্রহ্ম মাধবগৌড়ীয়সম্প্রদায়ের আচার্য্যচূড়ামণি শ্রী শ্রীমদ ভক্তিসিদ্ধান্ত সরস্বতী গোস্বামী ঠাকুর প্রভুপাদের  বিশ্বপ্রেমিক শ্রীশ্রীকৃষ্ণচৈতন্যমহাপ্রভুর নির্ম্মল প্রেমভক্তি ধর্মের প্রচার বার্ত্তা শ্রবণে তাঁহার শ্রীচরণে আকৃষ্ট হইয়া সংসারের সকল প্রকার বন্ধন ভোগ বাসনা মলবৎ পরিত্যাগ পূর্ব্বক (২৬) বৎসর বয়সে তিনি শ্রীল প্রভুপাদের শ্রীচরণে চিরআশ্রয় গ্রহণ করতঃ শ্রীহরিনাম   বৈষ্ণবী দীক্ষা গ্রহণ করেন। তাঁর দীক্ষা নাম 'শ্রীপাদ নয়নাভিরাম দাসাধিকারী'

শ্রীল গুরুপাদপদ্ম প্রভুপাদের শ্রীচরণে থাকাকালীন একদিন প্রবল ঝড়বৃষ্টির মধ্যেও মঠের শ্রীবিগ্রহগণের নৈবেদ্য প্রস্তুত কারক পাকপাত্র মার্জ্জন ধৌত করিয়া দেওয়ায় যথাক্রমে পাক কার্য্য সুসম্পন্ন  হইয়াছিল।এইরূপ প্রীতি অনুরাগের সহিত সেবার আদর্শ দর্শন করিয়া শ্রীল প্রভুপাদ অত্যন্ত সন্তুষ্ট হইয়া ২৯শে কার্ত্তিক (১৩২৮) ১৫ই নভেম্বর (১৯২১) ৩০ দামোদর (৪৩৫ গৌরাব্দ) মঙ্গলবার শ্রীরাসপূর্ণিমা উর্জ্জাব্রত সমাপ্তির দিন শ্রীপাদ নয়নাভিরাম ভক্তিশাস্ত্রী প্রভুকে যথা বিহিত বৈদিক পাঞ্চরাত্রিক বিধানানুসারে দিব্য ত্রিদণ্ড সন্ন্যাস প্রদান করেন।তাঁহার সন্ন্যাস নাম ''শ্রীমদ ভক্তিবিবেক ভারতীগোস্বামী মহারাজনামে বৈষ্ণবজগতে খ্যাত হইলেন।

শ্রীল মহারাজ  বহু ভাগ্যবান ব্যক্তিকে শ্রী শ্রীমন্মহাপ্রভুর প্রচারিত শুদ্ধভক্তি ধর্মে আকৃষ্ট করিয়াছিলেন। বহু স্থানে নির্ভয়ে প্রচার করায় তদীয় পরমারাধ্যতম শ্রীল গুরুপাদপদ্মে বিশ্বব্যাপী শ্রীগৌড়ীয়মঠ সমূহের আচার্য্যভাস্কর শ্রীমদ ভক্তিসিদ্ধান্ত সরস্বতী গোস্বামীঠাকুর অত্যন্ত আনন্দলাভ করিয়াছিলেন। শ্রীল প্রভুপাদের অপ্রকট পরে নির্ভীক প্রচার বিষয়ে গুরুভ্রাতাদের সহিত মতের অমিল হওয়ায় সর্ব্বত্যাগী বিরক্ত সন্ন্যাসী শ্রীল মহারাজ একাকী হরিভজন করিবার অভিলাষে তাঁহার শ্রীগুরুদেবের আবির্ভাব স্থান শ্রীমন্মহাপ্রভুর লীলাভূমিতে শ্রীপুরুষোত্তমধামে শ্রীশ্রীজগন্নাথদেবকে আশ্রয় করিয়া নামাচার্য্য শ্রীল হরিদাসঠাকুরের সমাধির নিকটে বাণীভবনে অবস্থান পূর্ব্বক শ্রীমন্দিরের নীলচক্র দর্শন করিয়া নিষ্ঠার সহিত একলক্ষ হরিনাম গ্রহণ করিতেন এবং শ্রীমদ্ভাগবত শাস্ত্রকে আশ্রয় করিয়া সেই সুনীল মেঘবরণ শ্যামসুন্দর শ্রীকৃষ্ণমূর্তিকে ধ্যান করিতে করিতে অকিঞ্চন ভাবে দিন যাপন করিতেন।

এইরূপ ৯বৎসর অতীত হইবার পরে শ্রীসারস্বতগৌড়ীয়আসন মিশনের আচার্য্যদেব - সভাপতি ত্রিদণ্ডিস্বামী শ্রীমদ ভক্তিশ্রীরূপ সিদ্ধান্তী গোস্বামীমহারাজ তাঁহার শ্রীগুরুদেবের প্রেরণা ক্রমে আবার শ্রীল মহারাজকে তাঁহার সঙ্গ প্রদানের জন্য একান্ত ভাবে পত্র দ্বারা প্রার্থনা জানান যে তাঁহার দিব্য সঙ্গ না পাইলে তিনি প্রাণত্যাগ করিবেন।পত্রখানি পাঠ করিয়া অশ্রুপূর্ণ নয়নে শ্রীল ভক্তিবৈভব নারায়ণমহারাজকে বলিতে লাগিলেন ''সিদ্ধান্তিমহারাজ লিখেছেন,-তাঁকে আমার সঙ্গ না দিলে তিনি প্রাণত্যাগ করিবেন।'' তারপর সেই মুহুর্ত্ত্যেই একাকী হরিভজনের অভিলাষ পরিত্যাগ করিয়া তাঁহার সহিত মিলিত হইবার প্রতিশ্রুতি দিয়া পত্র প্রেরণ করিলেন। অনন্তর তাঁহারা উভয়ে মিলিয়া শ্রীগুরুদেবের সংকল্পিত অবশিষ্ট অভীষ্ট পূরণের জন্য বদ্ধ পরিকর হইয়া ২৪ পরগণার বাসুদেব পুরে একটি অস্থায়ী  আসন মঠ স্থাপন করেন।কালক্রমে তাহা অবশ্য ছাড়িয়া দিয়া তাঁহারা শ্রীগুরুদেব শ্রীল প্রভুপাদের অভিষ্ঠানুসারে শুদ্ধভক্তি প্রচারার্থে কলিকাতা মহানগরীতে ভবানীপুরে ''শ্রীসারস্বত গৌড়ীয়আসন ও মিশন'' স্থাপন করিয়া শ্রীবিগ্রহ সেবা প্রকট করেন।ইহার অব্যবহিত পরে পুরীধামে শ্রীসারস্বতগৌড়ীয়আসন ও মিশনের একটি শাখা স্থাপন করেন।

১৩৩৫ বঙ্গাব্দে,(৫২) বৎসর বয়সে শ্রীল মহারাজ মাঘীশুক্লা শ্রীপঞ্চমী তিথিতে শ্রীজাহ্নবীদেবীর তট প্রদেশে কলিকাতা মহানগরীস্থিত শ্রীআসনে অরুণোদয় কালে শ্রীহরিনাম জাপ করিতে করিতে নিত্য লীলায় প্রবেশ করেন।

Thursday, February 27, 2020


শ্রীল পুরুষোত্তম ঠাকুর
আবির্ভাব
''সদাশিব কবিরাজ মহাভাগ্যবান।
যাঁর পুত্র পুরুষোত্তমদাস নাম।।
বাহ্য নাহি পুরুষোত্তমদাসের শরীরে।
নিত্যানন্দচন্দ্র যাঁর হৃদয়ে বিহরে।।''

''সদাশিবসুতো নাম্না নাগরঃ পুরুষোত্তমঃ।
বৈদ্যবংশোদ্ভবো নাম্না দাম যো বল্লবো ব্রজে।।''

'ব্রজে যিনি দাম' নামক গোপ ছিলেন,তিনিই বৈদ্যবংশোদ্ভব সদাশিবের পুত্র নাগর পুরুষোত্তম। 'দাম' দ্বাদশ গোপালের অন্যতম।ব্রজলীলায় শ্রীপুরুষোত্তম ঠাকুর কৃষ্ণের বাল্যক্রীড়ার সঙ্গী।

কংসারি সেন,তাঁহার পুত্র সদাশিব কবিরাজ,তাঁহার পুত্র শ্রীপুরুষোত্তম ঠাকুর,তাঁহার পুত্র শ্রীকানু ঠাকুর,-এইভাবে চারি পুরুষ পর্য্যন্ত ইঁহারা সিদ্ধ গৌরভক্ত পার্ষদ ছিলেন।কংসারি সেন ব্রজলীলায় 'রত্নাবলী',সদাশিব কবিরাজ 'চন্দ্রাবলী'(গৌরাগণোদ্দেশ দীপিকা)

শ্রীপুরুষোত্তম ঠাকুরের পত্নীর নাম শ্রীজাহ্নবা দেবী।পুত্র কানুঠাকুরের শৈশবস্থায় মাতৃবিয়োগ হয়।শ্রীমন্নিত্যানন্দ প্রভু ইঁহার নাম 'শিশুকৃষ্ণদাস' রাখিয়াছিলেন।কথিত হয় যে,শ্রীমন্নিত্যানন্দশক্তি শ্রীজাহ্নবাদেবী শিশু কানুঠাকুরকে পালন করিয়াছিলেন এবং তাঁহাকে বৃন্দাবনে লইয়া গিয়াছিলেন।কাহারও মতে কানুঠাকুর দ্বাদশ গোপালের অন্যতম।জিরাটনিবাসী শ্রীমাধবাচার্য্যও শ্রীপুরুষোত্তম ঠাকুরের শিষ্য ছিলেন।

শ্রীপুরুষোত্তম ঠাকুরের শ্রীপাট সম্বন্ধে শ্রীল ভক্তিসিদ্ধান্ত সরস্বতী ঠাকুর এইরূপ লিখিয়াছেন,-নদীয়া জেলান্তর্গত চাকদহ শিমুরালির মধ্যবর্ত্তী স্থানে সুখসাগরে ইঁহার শ্রীপাট ছিল।শ্রীপুরুষোত্তম ঠাকুরের সেবিত বিগ্রহগণ প্রথমে বেলেডাঙ্গা গ্রামে বিরাজিত ছিলেন। উহা ধ্বংস হইলে ক্রমশঃ সুখসাগরে,পরে সাহেবডাঙ্গা বেরিগ্রামে শ্রীজাহ্নবামাতার মন্দিরে শ্রীবিগ্রহগণের সহিত শুভাগমন করিলেন।বেরিগ্রামও ধ্বংস হইলে পুনঃ শ্রীজাহ্নবা মাতার বিগ্রহগণের সহিত ঠাকুরের বিগ্রহ ভাগীরথী তীরে চাঁন্দুড় গ্রামে আসিয়া বিরাজিত হইলেন। শ্রীপুরুষোত্তম এক সময় প্রেমোন্মত্ত হইয়া সর্প বিষ ভক্ষণ করিয়াছিলেন। তাহাতেও তাঁহার কোনও বিকার হয় নাই। এই অলৌকিক শক্তি দেখিয়া সকলেই আশ্চর্য্যান্বিত হইয়াছিলেন।

💐🏵️🌺🌷🌺🏵️💐 🌷 কামদা একাদশী 🌷 💐🏵️🌺🌷🌺🏵️💐 শ্রী শ্রী গুরু গৌরাঙ্গ জয়তঃ সকল সাধু , গুরু , বৈষ্ণব ও গৌর ভক্তবৃন্দের...