Sunday, February 23, 2020


শ্রীল রসিকানন্দ দেব গোস্বামী
(তিরোভাব)
হরে কৃষ্ণ, আগামী ২৪/০২/২০২০ ইং রোজ - সোমবার পরমহংস শ্রীল রসিকানন্দ দেব গোস্বামীর শুভ তিরোভাব তিথি বিরহ মহামহোৎসব।
শ্রীল রসিকানন্দ দেব গোস্বামী ১৫১২ শকাব্দে মেদিনীপুর জেলান্তর্গত সুবর্ণরেখা নদীর তটবর্ত্তী রোহিণী বা রয়নী গ্রামে আবির্ভূত হইয়াছিলেন।ইহার পিতার নাম রাজা শ্রীঅচ্যুতানন্দ,মাতার নাম শ্রীভবানী দেবী।শ্রীল রসিকানন্দ কৃষ্ণলীলায় মধুর রসাশ্রিত সেবিকা ছিলেন।শ্রীল শ্যামানন্দ প্রভু রসিকানন্দ দেবকে রাধাকৃষ্ণের উপাসনামন্ত্র প্রদান করিয়াছিলেন।রসিকানন্দ প্রভুর অপর নাম শ্রীরসিকমুরারি। শ্রীরসিকমুরারির ভক্তিমতী ভাৰ্য্যা ইচ্ছাময়ী দেবীর নাম ভক্তিরত্নাকরে উল্লিখিত আছে।ইচ্ছাময়ী দেবী ঘন্টাশিলা গ্রামে কিছুদিন অবস্থান করিয়া ছিলেন।

ঘন্টাশিলা গ্রামে নির্জ্জন প্রদেশে একদিন শ্রীরসিকমুরারি সদ্গুরু প্রাপ্তির জন্য ব্যাকুল হইয়া ধ্যানমগ্ন হইলে,আকাশবাণী শুনিতে পাইলেন,-'হে মুরারি,তুমি চিন্তা করিও না,তোমার গুরুদেব শ্রীশ্যামানন্দ,শীঘ্র তাঁহার দর্শন পাইবে,তাঁহার শ্রীচরণাশ্রিত হইয়া তুমি কৃতার্থ হইবে।'মুরারি উক্ত আকাশবাণী শুনিয়া পরমোৎসাহে আনন্দে 'শ্যামানন্দ' নামমন্ত্র জপ্ করিতে লাগিলেন। শ্রীল গুরুদেবের দর্শনের জন্য ব্যাকুল হইয়া সমস্ত রাত্রি ক্রন্দন করিলে নিশান্তে শ্যামানন্দ প্রভু স্বপ্নে দর্শন প্রদান করিয়া বলিলেন,-উদ্বিগ্ন হইও না, প্রভাত হইলে আমার দর্শন পাইবে। প্রভাতে রসিকমুরারী দেখিতে পাইলেন সূর্য্যসম তেজোময় দীর্ঘ কলেবর শ্যামানন্দ প্রভু সহাস্যবদনে কিশোরদাস আদি ভক্তগণের দ্বারা পরিবেষ্টিত হইয়া 'হা শ্রীকৃষ্ণচৈতন্য,হা নিত্যানন্দ' নাম উচ্চারণ মুখে প্রেমবিহ্বল অবস্থায় নৃত্য করিতে করিতে তাঁহার নিকট অগ্রসর হইতেছেন।রসিকমুরারীর বহু প্রত্যাশিত গুরু দর্শন করিয়া তৎক্ষণাৎ মহানন্দে গুরুপাদপদ্মে পতিত হইলেন।শ্যামানন্দ প্রভু স্নেহাতি বশতঃ রসিকানন্দকে কোলে করিয়া নেত্রজলে সিক্ত করতঃ তাঁহাকে 'রাধাকৃষ্ণ' মন্ত্র প্রদানের পর শ্রীমন্নিত্যানন্দ ও শ্রীমন্মহাপ্রভুর চরণে সমর্পণ করিলেন।নিস্কপট আত্তি হইলে যে সদ্গুরু লাভ হয়,ইহা তাঁহার একটি জ্বলন্ত প্রত্যক্ষ দৃষ্টান্ত।

শ্রীল রসিকানন্দ দেব গোস্বামী সর্বতোভাবে সর্বেন্দ্রিয়ে ঐকান্তিকতার সহিত গুরুসেবা করিয়া অল্পদিনের মধ্যেই শ্যামানন্দ প্রভুর প্রধান শিষ্য ও মহাশক্তিশালী আচার্য্যরূপে পরিণত হইলেন।শ্রীল গুরুদেবের কৃপা দ্বারা সমৃদ্ধ হইয়া বহু দস্যু,পাষণ্ড,যবন ও পতিত জীবকে ভগবদ্ভক্তিরূপ প্রেমরত্ন প্রদানের দ্বারা উদ্ধার করিলেন। একটী দুষ্ট যবন রসিকমুরারীকে জব্দ করিবার জন্য মত্ত হস্তীকে তাঁহার নিকট প্রেরণ করিয়াছিল;কিন্তু রসিকমুরারী প্রভু সেই মত্ত হস্তীকে শিষ্য করিয়া তাহাকে বিষ্ণু - বৈষ্ণব সেবায় নিয়োজিত করিয়াছিলেন। তাঁহার এই অলৌকিক শক্তির প্রভাব দেখিয়া সকলে পরম বিস্ময়ান্বিত ও চমৎকৃত হইয়াছিলেন।

শ্রীল রসিকানন্দ দেব গোস্বামীর মহাপুরুষোচিত অলৌকিক শক্তি প্রভাবে আকৃষ্ট হইয়া ময়ূরভঞ্জের রাজা শ্রীবৈদ্যনাথ ভঞ্জ,পটাশপুরের রাজা শ্রীগজপতি,ময়নার রাজা চন্দ্রভানু,পাঁচটের রাজা শ্রীহরিনারায়ণ,ধারেন্দার রাজা শ্রীভীম,শ্রীকর,ওড়িষার শাসনকর্ত্তা নবাব ইব্রাহিম খাঁর ভ্রাতুষ্পুত্র আহস্মদ বেগ প্রভৃতি তাঁহার শিষ্য হইয়াছিলেন।

শ্রীল রসিকানন্দ দেব গোস্বামী ‘’শ্রীশ্যামানন্দশতক,শ্রীমদ্ভক্ত - ভাগবতাষ্টক ও কুঞ্জকেলি দ্বাদশক’’ গ্রন্থসমূহ রচনা করিয়া ছিলেন।

এইরূপ কথিত হয় যে শ্রীল রসিকানন্দ দেব গোস্বামী অন্তর্ধান লীলার অব্যবহিত পূর্বে বাঁশদহ হইতে সাতজন সেবককে লইয়া সংকীর্ত্তন করিতে করিতে রেমুণায় শ্রীগোপীনাথের প্রাঙ্গণে আসিয়াছিলেন।রসিকানন্দ প্রভু গর্ভমন্দিরে প্রবেশ করিয়া গোপীনাথের শ্রীঅঙ্গে লীলাপ্রবিষ্ট হইলেন। তাঁহার সঙ্গীগণও তথায় দেহরক্ষা করিলেন।আজও রেমুণায় ক্ষীরচোরা গোপীনাথের প্রাঙ্গণে একটী বেড়ের মধ্যে রসিকমুরারীর পুষ্পসমাধি ও সাতজন তাঁহার সেবক ভক্তের সমাধি দৃষ্ট হয়।শ্রীল রসিকানন্দ দেব গোস্বামীর তিরোভাব উপলক্ষে রেমুণায় শিব - চতুর্দ্দশীর পর হইতে বারদিনব্যাপী প্রতি বৎসর বিশেষ মহোৎসব অনুষ্ঠিত হইয়া থাকে।

No comments:

Post a Comment

🌳🌴🪴🌲🦚🍁💐🏵️🌺🌷🌺🏵️💐🍁🦚🌲🪴🌴🌳 🌻🌼 শ্রীবলরামের রাসযাত্রা 🌹 শ্রীকৃষ্ণের বসন্তরাস 🌼🌻 🌳🌴🪴🌲🦚🍁💐🏵️🌺🌷🌺🏵️💐🍁🦚🌲🪴...