💐পুরুষোত্তম ক্ষেত্র-মাহাত্ম্য💐

🍁🌴🌳🌺🌷💞🌻🍁🌻💞🌷🌺🌳🌴🍁

বিশেষ পোষ্ট

শ্রী শ্রী গুরু গৌরাঙ্গ জয়তঃ

সকল সাধু,গুরু,বৈষ্ণব ও গৌর ভক্তবৃন্দের শ্রীচরণে আমার অনন্ত কোটি সাষ্টাঙ্গ দণ্ডবৎ প্রণাম I

''হরি - গুরু - বৈষ্ণব তিনিহেঁ স্মরণ।

তিনেহেঁ স্মরণ হইতে বিঘ্ন বিনাশন।।

অনায়াসে হয় নিজ বাঞ্ছিত পূরণ ।।‘’

🌻শ্রীজগন্নাথদেবের লীলাকথামৃত🌻

পুরুষোত্তম ক্ষেত্র পরম পবিত্রকারী স্থান। এখানে ভগবান বিষ্ণু দারুনির্মিত বিগ্ৰহরূপে বিরাজিত রয়েছেন, তিনি দারুব্রহ্ম নামেও সুবিদিত। কেউ তাঁর দর্শন গ্রহণ মাত্রই মোক্ষ লাভ করে থাকে। যে পুরুষোত্তম ক্ষেত্র পরিদর্শন করে সে অপর সকল পবিত্র তীর্থে গমনের ফল প্রাপ্ত হয়। ভগবান জগন্নাথ সর্বত্র বিরাজমান, তিনি সর্বব্যাপী। তবুও, পুরুষোত্তম ক্ষেত্রে তিনি তাঁর সাক্ষাৎ স্বরূপে অবস্থান করছেন। এই ধাম ভগবানের এতই প্রিয় যে তিনি তাঁর নিজ নামানুসারে (পুরুষোত্তম) এই স্থানের নামকরণ করেছেন। এই ক্ষেত্রের পরিধি দশ যোজন অর্থাৎ ১২০ কি.মি. অবধি  বিস্তৃত। এই ক্ষেত্র সমুদ্র হইতে অভিব্যক্ত হয়েছে এবং এর তটবর্তী ভূমিক্ষেত্র বালুকাবৃত। বালুকাময় এই তটভাগের মধ্যস্থলে একটি নীল পর্বত বিদ্যমান।

একসময় এই ধরণী প্রলয়জলে নিমগ্ন ছিল। ভগবান শ্রীবরাহদেব পৃথিবীকে উদ্ধার করে একে যথাস্থানে স্থাপন করেন। তারপর ব্রহ্মা সকল তীর্থ ও নদীসমূহ স্থাপনে ব্রতী হন। ব্রহ্মা সকল জীবকূলের দুর্দশার কথা চিন্তা করেন, যারা সকলে ত্রিবিধ ক্লেশে এখানে নির্যাতিত হচ্ছে। তাঁদের কল্যাণের কথা ভেবে ব্রহ্মা মুক্তিপ্রদায়ক পরমেশ্বর শ্রীবিষ্ণুকে বহুবিধ প্রার্থনা-স্ততি নিবেদন করেন। শ্রীবিষ্ণু ব্রহ্মাজীর প্রার্থনায় অত্যন্ত প্রীত হলেন এবং তাঁর সামনে আবির্ভূত হলেন। তাঁর গাত্রবর্ণ ছিল মেঘের মতো নীলাভ। তাঁর চতুর্ভুজে শঙ্খ, চক্র, গদা ও পদ্ম শোভা পাচ্ছিল। তিনি গরুড়ের পিছে আরোহণ করছিলেন। ভগবান বিষ্ণু ব্ৰহ্মাকে বললেন, “আমি তোমাকে একটি পন্থা বলব যার ফলে তোমার অভিপ্রায় সিদ্ধ হবে।

মহাসাগরের উপরভাগে এবং মহানদী নামক নদীর দক্ষিণভাগে অবস্থিত একটি স্থান রয়েছে, যার নাম উৎকলদেশ। এই স্থান অত্যন্ত রহস্যময় এবং সাধারণ মানুষের অগোচর। এই স্থানে আমি আমার বিশেষ রূপ, পুরুষোত্তমরূপে অবস্থান করি। সৃষ্টি ও প্রলয়ের দ্বারা উৎকল কখনো প্রভাবিত হয় না। সেখানে নীলগিরি নামক পর্বতের শিখরদেশে একটি কল্পবট বিদ্যমান। এই মহীরুহের পশ্চিম দিকে রোহিণীকুণ্ড নামে একটি সরোবর আছে। ঐ সরোবরের তটদেশে আমি পুরুষোত্তমরূপে অবস্থান করছি। যে আমার দর্শন করবে সে মুক্তি লাভ করবে, এতে কোনো সংশয় নেই।

শ্রীভগবান বলিলেন,- "হে ব্রহ্মা, তুমি সেখানে গিয়ে আমার ধ্যান কর। তখন পুরুষোত্তম ক্ষেত্রের সকল মহিমা স্বতঃ তোমার নিকট প্রকাশিত হবে। ঐ স্থান বেদগোপ্য। আমার মায়াশক্তি - প্রভাবে কেউই এই ধাম সম্বন্ধে অবগত নয়। এখন আমার কৃপায় এই ধাম সকলের কাছে প্রকাশিত হবে। কেউ যদি এক নিঃশ্বাস কাল-মাত্র এখানে অবস্থান করে, তাহলে সে এক অশ্বমেধ যজ্ঞের ফল প্রাপ্ত হবে।” এইভাবে ব্রহ্মাকে উপদেশ প্রদান করে ভগবান শ্রীবিষ্ণু অন্তর্হিত হলেন। শ্রীবিষ্ণুর আজ্ঞানুসারে ব্রহ্মা নীলাচল ধামে গমন করে ধ্যান করতে আরম্ভ করলেন।

পিতৃলোক  হইতে যমরাজ নীলাচলে আগমন করলেন। যমরাজ এই ভেবে উদ্বিগ্ন হলেন যে ভগবান যদি এইভাবে প্রত্যেককে তাঁর দর্শন প্রদান করেন তাহলে তিনি তাঁর পদ, তাঁর সেবা-দায়িত্ব হারাবেন। সকল পতিত জীবকূল মুক্তিলাভ করবে, ফলে যমরাজের পদের অস্তিত্ব বিপন্ন হবে। এই উৎকণ্ঠায় তিনি নীলাচল ক্ষেত্রে এসে ভগবান শ্রীনারায়ণের স্তুতি করতে লাগলেন। যমরাজের প্রার্থনা-স্তুতিতে শ্রীনারায়ণ অত্যন্ত প্রীত হলেন। তিনি তাঁর বাম পাশে উপবিষ্ট লক্ষ্মীদেবীকে যমরাজের সঙ্গে কথা বলতে ইঙ্গিত করলেন।

লক্ষ্মীদেবী বললেন, ‘’হে সূর্যনন্দন  যমরাজ! আমাদের পক্ষে এই পুরুষোত্তম ক্ষেত্রে পরিত্যাগ করা অসম্ভব। এই ক্ষেত্রে কাউকেই তাদের কর্মফল ভোগ করতে হয় না। যারা এখানে বাস করে, এমনকি এখানকার সকল পশুপাখীরাও তাদের সকল পাপকর্ম্মের ফল হতে বিমুক্ত হয়। যে এখানে বিরাজিত ভগবান শ্রীনারায়ণকে দর্শন করে সে সকল কর্মফল হইতে মুক্ত হয়। অন্য সকল স্থানে তোমার প্রভাব থাকবে কিন্তু এই স্থানে নয়। এই স্থান ব্যতিরেকে অন্য যে কোন স্থানে তুমি তোমার কর্তব্য করতে পারো। তোমার প্রপিতামহ ব্রহ্মা এই স্থানের মহিমা অবগত হয়ে ভগবান শ্রীগদাধরণকে তাঁর প্রার্থনা-স্তুতি নিবেদন করেছেন।‘’

যমরাজ বিনীতভাবে উত্তর দিলেন, ‘’হে জগত্মাতা, আপনি যা কিছু বলেছেন তা সত্য বলে স্বীকার করছি। ভগবানের অভিপ্রায় চূড়ান্ত। তিনি জীবসত্তাসমূহকে বন্ধন গ্রস্ত করেন, তিনিই তাঁদেরকে বন্ধন হইতে বিমুক্ত করেন। তিনি আমাকে সৃষ্টি করেছেন, তেমনি তিনি স্বর্গ ও নরক রচনা করেছেন। এই ক্ষেত্রে যে-কেউ মৃত্যুবরণ করবে সে-ই মুক্তি লাভ করবে- এই যদি আপনার অভিলাষ হয়, তাহলে কৃপাপূর্বক এই স্থানে বাস করার মাহাত্ম্য আমাকে বিশদভাবে ব্যাখ্যা করে বলুন। পুরুষোত্তম ক্ষেত্রের মহিমা কীর্ত্তনের সুযোগ লাভ করে জগত্মাতা লক্ষ্মীদেবী আনন্দিত হলেন। তিনি যমরাজকে নিম্নোক্ত লীলাকাহিনী বললেন।

পুরুষোত্তম ক্ষেত্র-মাহাত্ম্য :-

মার্কণ্ডেয় ঋষি ও নীলাচল ধাম

মার্কণ্ডেয় নামক একজন ঋষি ছিলেন। তিনি বর লাভ করেছিলেন যে তিনি সাত কল্পকাল (ব্রহ্মার সাত দিন) জীবিত থাকবেন। ব্রহ্মার দিন শেষ হলে প্রলয় হল, সেই সময় সমগ্র পৃথিবী জলমগ্ন হল। সেই প্রলয়বারিধিতে সকল জীবের মৃত্যু হল। কিন্তু মার্কণ্ডেয় ঋষির মৃত্যু হল না। তিনি সেই জলে ভাসতে লাগলেন। সেই আদিগন্ত বিস্তৃত জলরাশির তরঙ্গোচ্ছ্বসে ঐ ঋষি অত্যন্ত ক্লিষ্ট হলেন। দীর্ঘকাল ঐভাবে কষ্টভোগের পর তিনি নীলাচলের সন্নিকট একটি তটে উপনীত হলেন। তিনি দেখলেন যে তটবর্তী-ভূমি জলশূন্য, জলস্তরের চেয়ে উঁচু। সেখানে ঐ ভূমিক্ষেত্রে অতিকায় এক বটবৃক্ষ দণ্ডায়মান ছিল। সবিস্ময়ে মার্কণ্ডেয় শুনলেন যে কেউ যেন তাকে আহ্বান করছে, “মার্কণ্ডেয়! উদ্বিগ্ন হয়ো না, আমার কাছে চলে এসো।‘’

মার্কণ্ডেয় ভাবলেন, “কে আমাকে আহ্বান করছে? কোথা থেকে এই স্নেহার্দ্র কণ্ঠস্বর ভেসে  আসছে?" তারপর তিনি শ্রীনারায়ণ ও লক্ষ্মীদেবীকে দর্শন করলেন। তিনি তাঁদেরকে তাঁর প্রণতি নিবেদন করলেন। ভগবান শ্রীবিষ্ণুকে তিনি অনেক প্রার্থনা-স্তুতি নিবেদন করলেন। ভগবান তাঁর এই ভক্তকে বললেন, “তুমি আমার তত্ত্ব অবগত নও, সেজন্যই তুমি ক্লেশ ভোগ করছ। হে মহর্ষি, এই বটবৃক্ষের শীর্ষে আরোহণ কর। যেখানে তুমি এক বৃক্ষপত্রে আমাকে শিশুরূপের দর্শন পাবে। তুমি সেখানে তাঁর সেই উন্মুক্ত মুখবিবরে প্রবেশ করতে পারো এবং সেখানে সুখে অবস্থান করতে পারো।" মার্কণ্ডেয় একথা শ্রবণ করে বিস্মিত হলেন। তিনি সেই মহীরুহে আরোহণ করলেন এবং ভগবানের শিশুমূর্তি দেখতে পেলেন।  

ঋষি সাবধানে তার মুখের মধ্যে প্রবেশ করলেন। সেখানে তিনি চতুর্দশ ভুবন ও ব্রহ্মাদেব সহ সকল দেবগণ, দিকপালগণ, সিদ্ধ, গন্ধর্ব, রাক্ষস, মুনি ও দেবর্ষিগণ, সকল মহাসাগর, তীর্থ, নদী, পর্বত ও অরণ্যসমূহ দর্শন করলেন। তিনি সহস্ৰমস্তক শেষ নাগকে দর্শন করলেন। ব্রহ্মা যা-কিছু সৃষ্টি করেছেন সবকিছুকে সেই ভগবানের শিশুরূপের উদরে দর্শন করলেন। পরিশেষে ঋষি শিশুরূপ ভগবানের মুখবিবর দিয়ে বহির্গত হলেন এবং পুনরায় শ্রীনারায়ণ ও লক্ষ্মীদেবীকে দর্শন করলেন। মার্কণ্ডেয় ঋষিকে দর্শন করে শ্রীবিষ্ণু বললেন, ‘’মার্কণ্ডেয়, তুমি নিঃসংশয়ে জানবে যে এই পরমাদ্ভূত স্থান হচ্ছে আমার নিত্য-ধাম। এস্থানে কোনরূপ সৃষ্টি বা প্রলয় সংঘটিত হয় না। এখানে কোন জড়বন্ধন নেই। আমি এখানে বিদ্যমান আছি এইটি জেনে যে, আমার এই ধামে প্ৰবশ করে, তাঁর আর এই জড়জগতে জন্মগ্রহণ করতে হয় না।‘’

‘’হে প্রভু! ঋষি তাঁর মস্তক অবনত করে বললেন, “আমি এখানে অবস্থান করতে ইচ্ছা করি। অনুগ্রহ করে আমাকে আপনার কৃপাশিস প্রদান করুন যেন আমি আপনার এই ধামে বাস করতে পারি।" ভগবান উত্তরে বললেন, “আমি এই প্রলয়কাল পর্যন্ত অবস্থান করব। তারপর আমি তোমার জন্য একটি সুন্দর স্থান সৃষ্টি করব, তুমি সুখে অবস্থান করতে পারবে এবং আমার দ্বিতীয় রূপ, মাধবের পূজা করতে পারবে। এইভাবে আমার কৃপায় তুমি মৃত্যুকে জয় করতে পারবে।" এই বর লাভ করে মার্কণ্ডেয় ঋষি শ্রীশিবকে পরিতুষ্ট করার জন্য তপস্যা করেছিলেন এবং এজন্য শিব এখানে মার্কণ্ডেশ্বর নামে বিদিত আছেন।

পুণ্ডরীক ও অম্বরীশ উদ্ধার

এক সময়ে কুরুক্ষেত্রে পুণ্ডরীক নামক একজন ব্রাহ্মণ এবং অম্বরীশ নামক একজন ক্ষত্রিয় বাস করত। তারা পরস্পর ঘনিষ্ঠ বন্ধু ছিল। সদ্বংশে জন্মগ্রহণ করা সত্ত্বেও তারা তাদের সকল সদগুণাবলী বিসর্জন দিয়ে নানারকম পাপকর্মে আসক্ত হয়ে পড়েছিল। তারা কখনো তাদের নিজ নিজ বর্ণোচিত নিত্যকর্ম, ব্ৰতাদি করত না। তারা সুরা পান করত এবং বেশ্যাসঙ্গ করত। দেহান্তে তারা কি গতি লাভ করবে এ নিয়ে তাদের কোনো উদ্বেগ ছিল না। পুণ্ডরীক ও অম্বরীশ উভয়ে একবার অর্থোপার্জনের উদ্দেশ্যে অন্য দেশে যেতে মনস্থ করল। ইতস্তত পরিভ্রমণ করতে করতে তারা এমন একটি স্থানে পৌছাল যেখানে সাধু-ঋষিগণ যজ্ঞানুষ্ঠান করছিলেন।

বহু দূর থেকে তারা শাস্ত্র পাঠের ধ্বনি শুনতে পাচ্ছিল। এইসব পবিত্র পারমার্থিক কার্যকলাপ দর্শন করে তাদের মনে পরিবর্তন এল। তারা আধ্যাত্মিক জীবনের প্রতি আকৃষ্ট হল। আমরা কতই না পাপকর্ম করেছি, সেই বন্ধুদ্বয় অনুশোচনা করতে লাগল। কিভাবে আমরা পাপমুক্ত হব? কেমন করে আমাদের পাপমোচন হবে? আমরা যেসব জঘন্য পাপ করেছি, শাস্ত্রে তার বর্ণনা মেলা ভার। সেইসব পাপকর্মের প্রতিক্রিয়া হইতে মুক্ত হবার জন্য শাস্ত্রের উপদেশ কি? এসো আমরা যজ্ঞার্থে সমবেত এইসব সাধুগণের নিকট একথা জিজ্ঞাসা করি। নিশ্চিতভাবেই তাঁরা আমাদের উদ্ধার লাভের কিছু উপায় বলতে পারবেন।"

অত্যন্ত বিনম্রচিত্তে সাধুগণের নিকট উপনীত হয়ে পুণ্ডরীক ও অম্বরীশ তাঁদের কাছে সবিস্তারে তাদের পাপকর্মের বর্ণনা করল, তারপর সাধুগণের কাছে জানতে চাইল যে কিভাবে তারা যমদণ্ড  হইতে অব্যাহতি পেতে পারে। যখন সেই সাধুবর্গ তাদের পাপের বিবরণ শ্রবণ করছিলেন, তখন সেই বিবরণ এতই বীভৎস ছিল যে তাঁরা চোখ বন্ধ করেছিলেন। তাঁদের কেউ এইসব অতি গর্হিত পাপকর্মের উপযুক্ত প্রায়শ্চিত্তের বিধান দিতে পারলেন না। সেখানে একজন মহাবৈষ্ণব ছিলেন যিনি ছিলেন ঐ সাধুধণের মধ্যে প্রধান। তিনি ঐ বন্ধুদ্বয়কে কিছু কথা বললেন যা তাঁদের অন্তরে আশার সঞ্চার করল। তিনি বললেন, “হে ব্রাহ্মণপুত্র ও ক্ষত্রিয়পুত্র, তোমরা যদি এই সব ঘৃণ্য পাপকর্মফল থেকে মুক্ত হইতে চাও, তাহলে অবিলম্বে পুরুষোত্তম ক্ষেত্রে গমন কর। এই স্থান সকল তীর্থের মধ্যে শ্রেষ্ঠতম।

পুরুষোত্তম ভগবান সর্বাপেক্ষা করুণাময় এক মূর্তিতে তাঁর এক ভক্ত, রাজা ইন্দ্রদ্যুম্নের ভক্তিতে প্রীত হয়ে প্রকটিত হয়েছেন। এই বিগ্রহ, শ্রীজগন্নাথের পূজারাধনা করার ফলে কেবল তোমাদের পাপমোচনই হবে না, তোমরা জড়বন্ধন হতেও মুক্ত হবে। কেবল তাঁর দর্শনমাত্রই তোমরা তোমাদের সকল পাপ হইতে মুক্ত হবে। এই জগদীশের শরণ গ্রহণ করো, যিনি উৎকল প্রদেশে, নীলগিরি পর্বতের উপর বিরাজ করেছেন। করুণাময় প্রভু নিশ্চয়ই তোমাদের সকল মনোবাসনা পূর্ণ করবেন।‘’ ঐ বৈষ্ণবের নিকট থেকে এই সদুপদেশ প্রাপ্ত হয়ে পুণ্ডরীক ও অম্বরীশ প্রসন্নমনে পুরুষোত্তম ক্ষেত্রের উদ্দেশ্যে যাত্রা শুরু করলেন।

ভগবান শ্রীজগন্নাথের মহিমা শ্রবণ করে তাঁদের চিত্তে বৈরাগ্য ও অনাসক্তির উদয় হল। তাঁরা কুসঙ্গ পরিহার করে ভক্তিযুক্ত সেবা অনুশীলন করতে শুরু করলেন। কয়েকদিন পর তাঁরা পুরীধামে পৌঁছালেন। তাঁরা মহোদধি, সমুদ্রে স্নান করে মন্দিরের দিকে অগ্রসর হলেন। মন্দিরের প্রবেশ দ্বারে উপনীত হয়ে তাঁরা সাষ্টাঙ্গ প্রণাম নিবেদন করলেন। কিন্তু সেইসময়ে তাঁরা শ্রীজগন্নাথ ও অন্যান্য বিগ্রহসমূহের দর্শন পেলেন না। উৎকণ্ঠায় তাঁদের হৃৎকম্প হতে শুরু করল, তখন পুণ্ডরীক ও অম্বরীশ ভগবান দর্শন না পাওয়া পর্যন্ত উপবাস করার সঙ্কল্প করলেন। তাঁরা নিরন্তর প্রভুর দিব্যনাম গ্রহণ করতে লাগলেন।

তৃতীয় রাত্রে তাঁরা মন্দিরের অভ্যন্তর থেকে জ্যোতিঃপ্ৰবা নির্গত হইতে দেখলেন। ভক্তদ্বয় উপবাস অব্যাহত রেখে অবিশ্রান্তভাবে ভগবানের দিব্যনাম জপ করতে লাগলেন। পরিশেষে, সপ্তম রাত্রে তাঁরা শ্রীজগন্নাথের দর্শন লাভ করলেন। সকল পাপ- কলুষতা থেকে সম্পূর্ণ বিমুক্ত হয়ে এবং অপ্রাকৃত জ্ঞান ও দিব্য আনন্দে পরিপূর্ণ হয়ে পুণ্ডরীক ও অম্বরীশ তাঁদের অবশিষ্ট জীবন নীলাচল ধামে শ্রীজগন্নাথের সেবায় অতিবাহিত করলেন।

💞জয় পতিতপাবন পরম করুণাময় শ্রীজগন্নাথদেবের জয়💞