💐💞 শ্রীমদ্ভগবদ্গীতা 💞💐

🌹🌻🌺💞💞💐💐💞💞🌺🌻🌹

🌻🌼💐 ষষ্ঠ অধ্যায়ের মাহাত্ম্য💐🌼🌻

বিশেষ পোষ্ট

শ্রী শ্রী গুরু গৌরাঙ্গ জয়তঃ

সকল সাধু,গুরু,বৈষ্ণব ও গৌর ভক্তবৃন্দের শ্রীচরণে আমার অনন্ত কোটি সাষ্টাঙ্গ দণ্ডবৎ প্রণাম I

''হরি - গুরু - বৈষ্ণব তিনিহেঁ স্মরণ।

তিনেহেঁ স্মরণ হইতে বিঘ্ন বিনাশন।।

অনায়াসে হয় নিজ বাঞ্ছিত পূরণ ।।‘’

ভগবানবিষ্ণু বললেন হে প্রিয়ে, আমি এখন শ্রীমদ্ভগবদগীতার পঞ্চম অধ্যায়ের অনন্ত মাহাত্ম্যের কথা বর্ণনা করছি। নিষ্ঠা সহকারে শ্রবণ কর। এই অধ্যায়ের মাহাত্ম্য যে শ্রবণ করবে, সে এই জড় জগত থেকে মুক্তি লাভ করবে।

দাক্ষিণাত্যে গোদাবরী তীরে প্রতিষ্ঠানপুর (পৈঠন) নামে এক সুন্দর নগরী বিদ্যমান। সেখানে আমি পিপ্পলেশ নামে বিখ্যাত। সেই অঞ্চলে জনশ্রুতি নামে এক রাজা ছিলেন। তিনি অনন্ত গুণের অধিকারী ছিলেন, তাই লোকেরা তাকে খুবই ভালবাসত। প্রতিদিন তিনি যজ্ঞ করতেন। তার সেই বিশাল ও ঐশ্বর্যপূর্ণ যজ্ঞের ধোঁয়া স্বর্গের নন্দনকাননে পৌঁছে কল্পবৃক্ষের পাতাগুলিকে কালো করে দিত। ঐ বৃক্ষগুলি যেন রাজা জনশ্রুতিকে শ্রদ্ধা নিবেদন করতে সর্বদা প্রস্তুত ছিল। রাজার ধর্মীয় কার্যাবলীর জন্য প্রতিষ্ঠানপুরে সর্বদা দেব-দেবীরা অবস্থান করতেন।

রাজা জনশ্রুতি অকাতরে দান করতেন ঠিক যেমন মেঘ বারি বর্ষণ করে। তার পবিত্র ও শাস্ত্রসম্মত কার্যকলাপের জন্য সর্বদা সঠিক সময়ে বর্ষণ হত। শস্যক্ষেত্র সর্বদা ফসলে পরিপূর্ণ থাকত। খরা, বন্যা আদি দৈব দুর্বিপাকছিল না। জনগণের মঙ্গলের জন্য তিনি নিয়মিত কূপ ও পুষ্করিণী খনন করতেন। দেব-দেবীগণ জনশ্রুতির ওপর অতীব সন্তুষ্ট হয়ে হংসরূপ ধরে তাকে আশীর্বাদ করার জন্য তার প্রাসাদের উপরিভাগে বিচরণ করছিলেন। পরপর সারিবদ্ধ হয়ে, পরস্পর কথাবার্তা বলতে বলতে তারা আকাশে উড়ছিলেন। ভদ্রশ্ব নামে হংসটি অন্য দুতিনটি রাজহংসের সঙ্গে আগে আগে যাচ্ছিলেন। তখন অন্য রাজহংসেরা ভদ্রশ্বকে ডেকে বললেন, “ভাই ভদ্রশ্ব! কেন তুমি আগে আগে উড়ছ? তুমি কি মহান রাজা জনশ্রুতিকে তোমার সামনে উপস্থিত দেখতে পাচ্ছ না?

 এত ক্ষমতাবান রাজা যে, তিনি ইচ্ছা করলেই তার শত্রুদের ভস্ম করে ফেলতে পারেন। অন্য হংসদের কথা শুনে ভদ্ৰশ্ব হেসে বললেন, “ভাই সব এই জনশ্রুতি রাজাকি রৈমুনির মতো শক্তিশালী?” রাজহংসদের কথা শুনে রাজা তৎক্ষণাৎ তার উচ্চ প্রাসাদশীর্ষ থেকে নেমে এসে সিংহাসনে বসলেন। তারপর তিনি তার রথের সারথি মহকে ডেকে পাঠিয়ে সেই মহামুনি রৈকে খুঁজে বার করতে নির্দেশ দিলেন। রাজার নির্দেশ পেয়ে খুব আনন্দের সঙ্গে রৈকে খুঁজতে তৎক্ষণাৎ সে বেরিয়ে পড়ল। প্রথমে সে সকল প্রাণীর মঙ্গলকারী প্রভু বিশ্বনাথের স্থান কাশীপুরীতে গেল। তারপর গেল গয়াধামে। এখানে সকল প্রাণীর জন্ম-মৃত্যুর বন্ধন থেকে মুক্তি প্রদানকারী কমলাক্ষ ভগবান গদাধর অবস্থান করেন।

অনেক তীর্থস্থান ভ্রমণের পর মহ এসে মথুরায় পৌঁছাল। স্থানটি সকল পাপ বিনাশে সক্ষম। এই স্থানে পরমেশ্বর ভগবান শ্রীকৃষ্ণ বাস করেন। সমস্ত মুনি-ঋষি, দেবতা, বেদ ও অন্যান্য শাস্ত্রসমূহ নিজ নিজ স্বরূপে পরমেশ্বর ভগবান শ্রীকৃষ্ণের সেবা করেন। অর্ধচন্দ্রের ন্যায় আকৃতিবিশিষ্ট মথুরা নগরী ভক্তি প্রদায়িনী মনোরমা যমুনা তীরে অবস্থিত। সুদৃশ্য আকৃতি বিশিষ্ট গোবর্দ্ধন পর্বত একটা বৃহদাকার রত্নখচিত রাজমুকুটের মতো মথুরা মণ্ডলের ঔজ্জ্বল্য ও মহিমা বৃদ্ধি করছে। পবিত্র বৃক্ষ ও লতাগুল্মের দ্বারা স্থানটি পরিবেষ্টিত। মথুরার চতুষ্পর্শ্বে বারটি অপূর্ব অরণ্যে ভগবান শ্রীকৃষ্ণ তার মধুর লীলাবিলাস করেন।।

মথুরা ত্যাগের পর মহ পশ্চিম দিক ও উত্তর দিক ভ্রমণ করেন। একদিন সে কাশ্মীর নামক এক নগরে পদার্পণ করেন, সেখানে এক অতি বিশাল দৃপ্তিময় ম্বেত অঞ্চল দেখতে পেল। সেখানে অবিরাম পূত যজ্ঞাগ্নি প্রজ্বলিত হওয়ায় সাধারণ মুখ পর্যন্ত সকল লোককেই দেবতার মতো সুন্দর দেখাচ্ছিল। ওপরে সুদৃশ্য সারি সারি মেঘ বিরাজ করছিল। ভগবান শিব এখানে মণিকেশ্বর নামে পারিচিত। কাশ্মীররাজ যুদ্ধে অনেক রাজাকে পরাভূত করে এখানে প্রত্যাবর্তন করেন এবং ভগবান শিবের উপাসনায় নিমগ্ন হন।

ভগবান শিবের প্রতি দৃঢ় ভক্তি থাকার সেই রাজাও মণিকেশ্বর নামে পরিচিত হন। সেখানে মন্দির দ্বারের নিকটে বৃক্ষতলে একটি ক্ষুদ্র যানে উপবিষ্ট হয়ে মহ সেই মহামুনি রৈকে দেখতে পেল। জনশ্রুতির বর্ণনা বা কি? আপনি মহাত্মা, মুক্ত পুরুষ। এখানে কেন আপনি বসে আছেন? মহ’র কথা শুনে রৈক কিছুক্ষণ চিন্তা করে বললেন,-  আমি সম্পূর্ণরূপে তৃপ্ত, আমার কোনও কিছু চাহিদা নেই। "এই উত্তর শুনে মহ মনে মনে সব বুঝতে পারল এবং তখনই প্রতিষ্ঠানপুরে ফিরে এল। গন্তব্যস্থলে পৌছে অবিলম্বে রাজার কাছে গিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন করে করজোড়ে সকল ঘটনা রাজাকে জানাল।

মহের কাছ থেকে সব শুনে রাজা তখনই মহামুনি রৈকের দর্শনে যেতে মনস্থ করলেন। বহু মূল্যবান উপঢৌকন সঙ্গে নিয়ে সুদৃশ্য রথে আরোহণ করে তিনি কাশ্মীরের উদ্দেশ্যে যাত্রা করলেন। রৈক মুনির কাছে পৌছে তিনি তার চরণে পতিত হলেন এবং মূল্যবান রেশমি বস্ত্র ও মণিরত্ন তার সামনে রাখলেন। মহামুনি রৈক এতে ক্রোধান্বিত হয়ে বললেন, “হে মূখরাজা! এইসব তুচ্ছ বস্তু তুমি তোমার রথে তোল এবং  এখান থেকে চলে যাও।” পরম ভক্তি সহকারে রাজা তার পায়ে পড়ে অনুনয় করে তাঁর কাছে ক্ষমা ও করুণা ভিক্ষা করলেন। রাজা বললেন, “হে মুনিবর! কিভাবে আপনি তপস্যার এত উচ্চ মার্গে পৌঁছালেন এবং ভগবদ্ভক্তি লাভ করলেন?”

রাজার এই আনুগত্যের ভাব লক্ষ্য করে পরিতুষ্ট হয়ে রৈক বললেন,“প্রতিদিন আমি শ্রীমদ্ভগবদ্গীতার ষষ্ঠ অধ্যায় পাঠ করি।” তারপর রাজা জনশ্রুতি রৈকর মুখে শ্রীমদ্ভগবদগীতার ষষ্ঠ অধ্যায়ের পাঠ শুনলেন। এরপর থেকে রাজা প্রতিদিন গভীর নিষ্ঠা সহকারে ষষ্ঠ অধ্যায় পাঠ করতে লাগলেন। যথাসময়ে পুষ্পক বিমান এসে তাঁকে বৈকুণ্ঠে নিয়ে গেল। মহামুনি রৈক যিনি প্রতিদিন শ্রীমদ্ভগবদ্গীতার ষষ্ঠ অধ্যায়ের পাঠ করতেন একদিন তিনিও বৈকুণ্ঠধামে গমন করলেন। সেখানে তিনি পুরুষোত্তম ভগবান বিষ্ণুর শ্রীপাদপদ্মের সেবায় নিযুক্ত হলেন। শ্রীমদ্ভগবদগীতার ষষ্ঠ অধ্যায় যিনি পাঠকরেন, অচিরেই তিনি ভগবানবিষ্ণুর চরণকমল প্রাপ্ত হবেন। এই বিষয়ে কোন সন্দেহের অবকাশ নেই।

💞জয় ভক্তবৎসল শ্রীভগবানের জয়💐💐জয় সকল ভক্তবৃন্দের জয়💞