💐💞 শ্রীমদ্ভগবদ্গীতা 💞💐

🌹🌻🌺💞💞💐💐💞💞🌺🌻🌹

🌻🌼💐 ত্রয়োদশ অধ্যায়ের মাহাত্ম্য💐🌼🌻

🍇বিশেষ পোষ্ট🍇

শ্রী শ্রী গুরু গৌরাঙ্গ জয়তঃ

সকল সাধু,গুরু,বৈষ্ণব ও গৌর ভক্তবৃন্দের শ্রীচরণে আমার অনন্ত কোটি সাষ্টাঙ্গ দণ্ডবৎ প্রণাম I

''হরি - গুরু - বৈষ্ণব তিনিহেঁ স্মরণ।

তিনেহেঁ স্মরণ হইতে বিঘ্ন বিনাশন।।

অনায়াসে হয় নিজ বাঞ্ছিত পূরণ ।।‘’

‘’নমস্ত্রিকাল - সত্যায় জগন্নাথ সুতায় চ।

স - ভৃত্যায় স -পুত্রায় স - কলত্রায় তে নমঃ।।‘’

ত্রয়োদশ-অধ্যায়-প্রকৃতি-পুরুষ-বিবেকযোগ

ভগবান শিব বললেন,- হে প্রিয়ে পার্বতি! শ্রীমদ্ভগবদগীতার ত্রয়োদশ  অধ্যায়ের অসীম মাহাত্ম্য শ্রবণ কর। এই মাহাত্ম্য শ্রবণে তুমি অভূতপূর্ব আনন্দ লাভ করবে।

দক্ষিণভারতে তুঙ্গভদ্রানামে এক বিরাট নদী আছে এই নদীর তীরে হরিহরপুর নামে এক সুন্দর নগরী বর্তমান। সেখানে হরিহর নামে শিবের এক বিগ্রহ পূজিত হয়ে থাকেন। এই শিবের দর্শনে সর্বপ্রকার মঙ্গল সাধিত হয়। এই হরিহরপুরে হরি দীক্ষিত নামে সরল, অনাড়ম্বর জীবনযাপনকারী এক পণ্ডিত ব্রাহ্মণ বাস করতেন। তার স্ত্রী ছিল অতি দুরাচারী। হীন শ্রেণীর কাজের জন্য লোকেরা তার স্ত্রীকে দুরাচারিণী বলে ডাকত। সব সময় সে তার স্বামীর সঙ্গে ঝগড়া করত, গালিগালাজ করত, স্বামীর সঙ্গে কখনও সে ঘুমাত না। স্বামীর বন্ধুদের সঙ্গে সব সময় সে রূঢ় ব্যবহার করত এবং সে তার কাম পিপাসা চরিতার্থ করতে পরপুরুষের সঙ্গ করত। এ ছাড়াও সে বিভিন্ন রকমের নেশায় আসক্তাছিল।

হরিহরপুরে দিন দিন জনাধিক্য ঘটায় সে তার প্রেমিকদের সঙ্গে অবাধ মেলা-মেশার জন্য নগরের বাইরে বনের মধ্যে এক কুটির নির্মাণ করল। একদিন রাত্রিতে সে খুবই কামার্ত হল এবং কামপ্রবৃত্তি নিবৃত্ত করার মতো কোন পুরুষ না পেয়ে বনের মধ্যে যদি কোন প্রেমিকের সন্ধান পাওয়া যায় সেই আশায় সেখানে গেল। কিন্তু সেখানেও সে কাউকে না পেয়ে কামের তীব্র দহন-জ্বালায় বনের মধ্যে ইতস্তত ঘুরে বেড়াতে লাগল যদি তার কাম পিপাসা চরিতার্থ করার মতো কোন পুরুষ পাওয়া যায় এই আশায়। কিছুক্ষণ এমনিভাবে ঘুরে বেড়ানোর পর দেখল তার দেহ ও ইন্দ্রিয় এত জ্বলছে যে, সে তাদের কাম পিপাসা নিবৃত্ত করতে না পেরে হতভম্বের মতো বসে পড়ে কাঁদতে শুরু করে দিল। তার কান্না শুনে এক ক্ষুধার্ত বাঘের ঘুম ভেঙে গেল। জেগে উঠে বাঘটি দ্রুত সেই স্থানে পৌঁছাল। বাঘের আগমনের শব্দ শুনে কামার্তা নারী উঠে পড়ল এবং মনে মনে ভাবল নিশ্চয়ই কেউ তার প্রয়োজন মেটাতে এগিয়ে আসছে। সে দেখল একটা বাঘ তার সামনে হাজির।

বাঘটি তার তীক্ষ্ণ নখ দিয়ে তাকে চিরে ফেলতে উদ্যত হল। তখন সেই কামার্তা নারীটি বলল,- ‘’হে ব্যাঘ্র! তুমি কেন আমাকে হত্যা করতে এখানে এসেছ? এর উত্তর আগে দাও তারপর আমাকে হত্যা কর।‘’  ভয়ঙ্কর পশুটি তখন সেই দুরাচারিণী নারীকে হত্যা না করে হেঁসে উঠল। তারপর সে এই কাহিনীটি বলল,- ‘’দাক্ষিণাত্যে মলাপহা নামে এক নদী আছে এবং এর তীরে মুনিপর্ণা নামে এক নগরী অবস্থিত। সেখানে পঞ্চলিঙ্গ নামে ভগবান শিবের এক বিখ্যাত বিগ্রহ আছে। সেই নগরে, এক ব্রাহ্মণ পরিবারে আমার জন্ম হয়। এমন উচ্চ বংশে জন্ম হলেও আমি কিন্তু খুবই লোভী ছিলাম। নিজের ইন্দ্রিয়গুলির ওপর আমার কোন নিয়ন্ত্রণ ছিল না। আমি নদীতীরে বসে থাকতাম এবং যজ্ঞ করতে কোনলোক এলে কিছু না জেনেও আমি তার যজ্ঞ সম্পাদন করতাম।

জড়বাদী লোকদের বাড়িতেও আমি আহার গ্রহণ করতাম। যজ্ঞ ও বিগ্রহ অর্চনার নামে আমি প্রয়োজনাতিরিক্ত অর্থ সংগ্রহ করতাম এবং নিজের ইন্দ্রিয়-তর্পণের জন্য সেই অর্থব্যয় করতাম। যে সকল ব্রাহ্মণ কঠোরভাবে শাস্ত্রের অনুশাসন মেনে চলতেন, তাদেরও আমি সমালোচনা করতাম। কখনও কাউকে কিছু দান করতাম না। ধীরে ধীরে আমি বৃদ্ধ হলাম, চুল পেকে গেল, দাঁত পড়ল, দৃষ্টিশক্তি ক্ষীণ হল, কিন্তু তবুও আমার অর্থ সংগ্রহ ও সঞ্চয়ের লালসা দূর হল না। একদিন ভুলক্রমে, আমি কয়েকজন নিষ্ঠুর ও প্রতারক ব্রাহ্মণের বাড়িতে কিছু খাদ্য ভিক্ষা করতে গেলাম। আমার ওপর তারা কুকুর লেলিয়ে দিল। একটি কুকুর আমার পা কামড়ে দিল। আমি পড়ে গিয়ে মরে গেলাম। তারপর থেকে আমি এই বাঘের দেহ লাভ করে এই বিপদসঙ্কুল বনে বাস করছি। 

সৌভাগ্যবশত, আমি আমার গত জন্মের কথা মনে রাখতে পেরেছি। এই জন্মে আমি কোন ভক্ত, সন্ন্যাসী বা সাধ্বীরমণীকে আক্রমণ করি না। শুধু পাপাত্মা ও অসতী নারীদের ভক্ষণ করি। তুমি হলে সবচেয়ে অসতী ও পাপীনারী। তাই তোমাকে দিয়েই আমার মধ্যাহ্ন ভোজন সম্পন্ন করব।” কাহিনী শেষ করে বাঘটি সেই পাপীনারীকে খেয়ে ফেলল। এরপর যমদুতেরা তাকে পুয়োদ নামক নরকে নিক্ষেপ করল। সেখানে মল, মূত্র ও রক্তে ভর্তি নোংরা স্থানে তাকে দশ কোটি কল্প থাকতে হয়েছিল। তারপর তাকে সেখান থেকে রৌরব নরকে নিক্ষেপ করা হয়। সেখানে তাকে একশো মন্বন্তর কাল থাকতে হয়। এরপর সে চণ্ডালিনী হয়ে মর্তে জন্মগ্রহণ করে এবং আবার সেই পাপ-পথে জীবনযাপন করে। তার এই পাপ কাজের জন্য তার কুষ্ঠ ও যক্ষ্মা রোগ হয়।

সৌভাগ্যবশত আর একবার সে হরিহরপুরের তীর্থে যায়। অম্বিকাদেবীর (পার্বতী) মন্দির সন্নিকটে সে মহামুনি বাসুদেবকে শ্রীমদ্ভগবদ্গীতার ত্রয়োদশ অধ্যায় পাঠ্যরত অবস্থায় দেখল। তার মুখে এই পাঠ শুনে সে আকৃষ্ট হল এবং বার বার সেই পাঠ শুনল। এই পাঠ শ্রবণের ফলে সে চণ্ডালিনীর দেহ ত্যাগ করে তার অতীব পাপপূর্ণ কার্যাবলীর প্রতিক্রিয়া থেকে সম্পূর্ণরূপে মুক্ত হল। ভগবান বিষ্ণুর মতো চতুর্ভুজ মূর্তি ধারণ করে সে বৈকুণ্ঠে গমন করল।

🍁হর হর মহাদেব🍁💐জয় পতিত পাবন শ্রীভগবানের জয়💐