💐💞 শ্রীমদ্ভগবদ্গীতা 💞💐

🌹🌻🌺💞💞💐💐💞💞🌺🌻🌹

🌻🌼💐 দ্বাদশ অধ্যায়ের মাহাত্ম্য💐🌼🌻

🍇বিশেষ পোষ্ট🍇

শ্রী শ্রী গুরু গৌরাঙ্গ জয়তঃ

সকল সাধু,গুরু,বৈষ্ণব ও গৌর ভক্তবৃন্দের শ্রীচরণে আমার অনন্ত কোটি সাষ্টাঙ্গ দণ্ডবৎ প্রণাম I

''হরি - গুরু - বৈষ্ণব তিনিহেঁ স্মরণ।

তিনেহেঁ স্মরণ হইতে বিঘ্ন বিনাশন।।

অনায়াসে হয় নিজ বাঞ্ছিত পূরণ ।।‘’

‘’নমস্ত্রিকাল - সত্যায় জগন্নাথ সুতায় চ।

স - ভৃত্যায় স -পুত্রায় স - কলত্রায় তে নমঃ।।‘’

দ্বাদশ-অধ্যায়-ভক্তিযোগ

ভগবান শিব বললেন,- হে প্রিয়ে পার্বতি! আমি তোমাকে শ্রীমদ্ভগবদগীতার দ্বাদশ   অধ্যায়ের মাহাত্ম্য বলছি, একাগ্রচিত্তে  তাহা শ্রবণ কর।

ভারতের দাক্ষিণাত্যে কোলহাপুর নামে এক অতি গুরুত্বপূর্ণ তীর্থস্থান অবস্থিত। সেখানে ভগবান বিষ্ণুর দিব্য সঙ্গিনী মহালক্ষ্মীর মন্দির রয়েছে সকল দেবতারাই এই মহালক্ষ্মীকে নিয়মিত ভাবে পূজা করেন। স্থানটি সকল বাঞ্ছাপূরণকারী। রুদ্রগয়াও এখানে অবস্থিত। একদিন ঘটনাক্রমে এক যুবক রাজপুত্র সেখানে উপস্থিত হলেন। রাজপুত্রের স্বর্ণের মতো উজ্জ্বল শরীর, অতি সুন্দর দুটি চোখ, বলিষ্ঠ স্কন্ধ, বিস্তৃত বক্ষ ও বাহু দুটি যেমন লম্বা তেমনই শক্তিশালী। কোলহাপুরে পৌঁছে প্রথমে তিনি মণিকান্ত সরোবরে অবগাহন করে তার পিতৃপুরুষদের পূজা করলেন। তারপর মহালক্ষ্মীর মন্দিরে গিয়ে দেবীকে প্রণতি জানিয়ে প্রার্থনা করলেন, দয়াময়ী, ত্রিলোক পূজিতা, সকল সৌভাগ্যদায়িনী, সৃষ্টি-জননী হে দেবি! তোমার জয় হোক ।

হে সকল জীবের আশ্রয়, সকল বাসনা পূরণকারিনী, হে ত্রিলোক পালক অচ্যুতের বিস্ময়কর শক্তি, তুমিই পরম প্ৰেষ্ঠা দেবী। হে ভক্ত-ত্রাতা! তোমার জয় হোক। হে দেবি! তুমিই ভক্তের মনোবাঞ্ছা পূরণকারিনী এবং তুমিই সকল ভক্তকে অচ্যুতের সেবায় নিযুক্ত করেছ। তুমি নিত্য ও সকল পতিত আত্মার মুক্তিদায়িনী। তোমার জয় হোক। ত্রিলোকের কল্যাণ ও সংরক্ষণের জন্য হে দেবি! তুমি অম্বিকা, ব্রাহ্মী,বৈষ্ণবী, মহেশ্বরী, বরাহী মহালক্ষ্মী, নরসিংহী,ইন্দ্ৰী, কুমারী, চণ্ডিকা, লক্ষ্মী, সাবিত্রী, চন্দ্রকলা, রোহিণী, পরমেশ্বরীকত রূপ ধারণ করেছ। অনন্ত মহিমাশালিনী তোমার জয় হোক । অনুগ্রহ করে আমার প্রতি কৃপাবারি বর্ষণ কর।

এরূপ প্রার্থনা শুনে মহালক্ষ্মী সন্তুষ্ট হয়ে রাজপুত্রকে বললেন,- ‘’হে রাজকুমার! আমি তোমার প্রতি খুবই প্রসন্ন। তোমার ইচ্ছা মতো আমার কাছে যেকোন বর প্রার্থনা কর।” রাজপুত্র বললেন,- ‘’হে  ত্রিলোকের! আমার পিতা রাজা বৃহদ্রথ অশ্বমেধ নামে বিখ্যাত যজ্ঞ সম্পাদন করছিলেন। কিন্তু যজ্ঞ পূর্ণ হবার পূর্বেই অসুস্থতা বশত তিনি পরলোক গমন করলেন। এদিকে আমার অশ্বমেধযজ্ঞ সম্পূর্ণ হতেই পৃথিবী পরিভ্রমণরত যজ্ঞের পবিত্র অশ্বকে বা কারা চুরি করল। অশ্বের অন্বেষণে আমি চতুর্দিকে লোক পাঠালাম। কিন্তু  তারা ব্যর্থ হয়ে ফিরে এল। তারপর আমি পুরোহিতের অনুমতি নিয়ে তোমার সাহায্য প্রার্থনা করতে তোমার কাছে এলাম। দয়া করে কিভাবে আমি অশ্ব ফিরে পাব এবং যজ্ঞ সম্পূর্ণ করে আমার পিতার ইচ্ছা পূর্ণ করব জানাও।‘’

মহালক্ষ্মী বললেন,-‘’হে মহান রাজকুমার! আমার মন্দির দ্বারের পাশে সিদ্ধ সমাধিনামে এক অতি উন্নত ব্রাহ্মণ বাস করেন। তিনি তোমার ইচ্ছা পূরণ করতে পারবেন। মহালক্ষ্মীর এই কথা শুনে রাজকুমার সিদ্ধ সমাধির বাসস্থানে গিয়ে তাকে প্রণাম নিবেদন করলেন। প্রণাম করার পর হাত জোড় করে নীরবে সিদ্ধ সমাধির সামনে দাঁড়ালেন। সিদ্ধ সমাধি তখন বললেন, ‘’মাতা মহালক্ষ্মী তোমাকে এখানে পাঠিয়েছেন, তাই আমি তোমার মনোবাঞ্ছা পূর্ণ করব।‘’ তারপর কিছু মন্ত্রোচ্চারণ করে সিদ্ধ সমাধি সব দেবতাদের তার সম্মুখে হাজির করলেন। রাজকুমার দেখলেন সমস্ত দেবতারা সিদ্ধ সমাধির সামনে হাজির হয়ে সব নির্দেশের অপেক্ষা করছেন।

সিদ্ধ সমাধি সেই দেবতাদের বললেন,- ‘’হে দেবগণ! রাজকুমারের যজ্ঞের অশ্বটি রাত্রিকালে দেবরাজ ইন্দ্র অপহরণ করেছেন। দয়া করে অশ্বটিকে এখনই এনে দিন।‘’ তৎক্ষণাৎ দেবতারা সেই অশ্বটিকে তাঁর সামনে এনে হাজির করলেন। সিদ্ধ সমাধি তখন তাদের বিদায় দিলেন। রাজকুমার এই সকল অদ্ভুত ঘটনা দেখে সিদ্ধ সমাধির পায়ে পড়ে জানতে চাইলেন,- কি করে এমন শক্তি আপনি আয়ত্ত করেছেন, যা আমি পূর্বে কখনও দেখিনি বা শুনিনি? হে মহামুনি! অনুগ্রহ করে আমার নিবেদন শুনুন। আমার পিতা রাজা বৃহদ্রথ অশ্বমেধযজ্ঞ শুরু করার পর অপ্রত্যাশিতভাবে মারা যান। আমি তার দেহ বিশুদ্ধ ফুটন্ত তেলে রেখে দিয়েছি। আপনার ইচ্ছা হলে কৃপা করে তার জীবন দান করুন।‘’

এ কথা শুনে সিদ্ধ সমাধি একটু মুচকি হেসে বললেন,- ‘’ চলো দেখে আসি কোথায় তোমার পিতার দেহটি রেখেছ। সেখানে পৌঁছানোর পর সিদ্ধ সমাধি হাতে অল্প জল নিয়ে মন্ত্রোচ্চারণ করে রাজা বৃহদ্রথের মৃতদেহের মস্তকে ছিটিয়ে দিলেন। মাথায় জলের ছোঁয়া লাগার সঙ্গে সঙ্গে রাজা উঠে বসে সিদ্ধ সমাধির কাছে জানতে চাইলেন, ‘’হে মহান্ ভক্ত! কে আপনি?’’ রাজপুত্র অনতিবিলম্বে সকল ঘটনার কথা তার পিতাকে জানালেন। সকল বিবৃতি শুনে রাজা বার বার সিদ্ধ সমাধিকে প্রণাম জানিয়ে জিজ্ঞাসা করলেন,- এই ঐশ্বরিক শক্তি লাভের জন্য কি তপস্যা বা সাধনা করেছেন?’’

সিদ্ধ সমাধি উত্তর করলেন,-‘’হেপ্রিয় রাজা বৃহদ্রথ! আমি প্রতিদিন শ্রীমদ্ভগবদগীতার দ্বাদশ অধ্যায় পাঠ করি।‘’ এই সকল কথা শুনে রাজা মহানভক্ত সিদ্ধ সমাধির কাছ থেকে শ্রীমদ্ভগবদগীতার দ্বাদশ অধ্যায় পাঠ ও অনুশীলন শিক্ষা করলেন। কালক্রমে রাজা এবং রাজপুত্র উভয়ই ভগবান শ্রীকৃষ্ণের শ্রীপাদপদ্ম লাভ করলেন। শ্রীমদ্ভগবদগীতার দ্বাদশ অধ্যায় প্রতিদিন পাঠ করে অনেকেই জীবনের সর্বোচ্চ লক্ষ্য ভগবান শ্রীকৃষ্ণের শ্রীচরণ কমলে ভক্তি লাভ করেছেন।

💐জয় পতিত পাবন শ্রীভগবানের জয়💐