💐শ্রীঅদ্বৈতের প্রতি কৃপাদণ্ড💐

🌹🌻🌺💞 🍁💞💐🏵️💐💞 🍁💞🌺🌻🌹

শ্রী শ্রী গুরু গৌরাঙ্গ জয়তঃ

সকল সাধু,গুরু,বৈষ্ণব ও গৌর ভক্তবৃন্দের শ্রীচরণে আমার অনন্ত কোটি সাষ্টাঙ্গ দণ্ডবৎ প্রণাম I

‘’হরি - গুরু - বৈষ্ণব তিনিহেঁ স্মরণ।

তিনেহেঁ স্মরণ হইতে বিঘ্ন বিনাশন।।

অনায়াসে হয় নিজ বাঞ্ছিত পূরণ ।।‘’

নমস্ত্রিকাল - সত্যায় জগন্নাথ সুতায় চ।

স - ভৃত্যায় স -পুত্রায় স - কলত্রায় তে নমঃ।।

🍁দাস্যভাবের শ্রেষ্ঠতা🍁
শুক্লাম্বর ব্রহ্মচারী নবদ্বীপে ঘরে ঘরে ভিক্ষা করে আর "কৃষ্ণ" বলে সবসময় কাঁদে। মহাপ্রভু একদিন তার ঝুলি থেকে জোর করে ভিক্ষার চাল নিয়ে খেলেন। শুক্লাম্বর হায় হায় করে উঠলেন। মহাপ্রভু আবার এক মুঠো চাল নিয়ে পরমানন্দে খাচ্ছেন। শুক্লাম্বর ব্রহ্মচারী ধূলায় গড়াগড়ি যেতে লাগল। সব ভক্তগণ জয় জয়ধ্বনি করে উঠলেন। মহাপ্রভু বলছেন - তোমার কাছে প্রেমভক্তি আছে আমি তাই আস্বাদন করছি।

প্রেম ভুখা প্রভু আমার- প্রেমে চলে প্রেমে বলে - প্রেমে কোল দেয় আচন্ডালে- প্রেম ভুখা প্রভু আমার।

একদিন মহাপ্রভু নগর ভ্রমণ করছেন পারিষদগণ সঙ্গে। একদল পাষণ্ডী বলছে- নিমাই পণ্ডিত! রাজার লোক আসছে! তুমি রাতে দরজা বন্ধ করে কীর্ত্তন কর, লোকে দেখতে পায় না‌। এবার রাজার লোক আসছে ধরতে, সাবধান হয়ে যাও! নিমাই পণ্ডিত বলছেন,-  খুব ভালো কথা, আমিও রাজ দর্শন করতে চাই । আমাকে কেউ দেখতে চায় না, রাজার লোক দেখতে আসছে, ভালোই হল, আমিও রাজার দর্শন করতে পারব। ঘরে এসে মহাপ্রভু বলছেন - আজ পাষণ্ড সম্ভাষা হল। এখন সংকীর্ত্তন কর সব দুঃখ দূরে যাক। সংকীর্ত্তন আরম্ভ হলে মহাপ্রভু বলছেন- আজ আনন্দ আসছে না কেন?

অদ্বৈত বললেন - আমি সব প্রেম শোষণ করে নিয়েছি। আমি প্রেম পাইনা, শ্রীবাস ও পায়না। তুমি তেলি-মালির সঙ্গে প্রেমের বিলাস কর। এই অবধূত তোমার কোথা থেকে এসেছে, এসেই প্রেমের ভাণ্ডারী হয়ে গেল? আমাকে যদি প্রেমযোগ না দাও তো সব শোষণ করে নিব, পরে আমায় কোন দোষ দেবে না, বলেই দিলাম। শুনে মহাপ্রভু দরজা খুলে ছুটে চললেন গঙ্গার দিকে, নিত্যানন্দ-হরিদাস পিছু পিছু ধাবিত হলেন। গঙ্গায় ঝাঁপ দিয়ে পড়লেন মহাপ্রভু সঙ্গে সঙ্গে নিত্যানন্দ হরিদাসও ঝাঁপ দিলেন। চুলে ধরলেন নিত্যানন্দ ও হরিদাস, চরণ ধরে টেনে উপরে তুললেন।

মহাপাত্র অদ্বৈত ভ্ৰকুটি করি’ নাচে।
“কেমতে হইব প্রেম, নাড়া’ শুষিয়াছে ?

মুঞি নাহি পাঙ প্ৰেম, না পায় শ্ৰীবাস। 

তিলি-মালি-সনে কর প্রেমের বিলাস ॥

অবধূত তোমার প্রেমের হৈল দাস।
আমি সে বাহির, আর পণ্ডিত শ্ৰীবাস ॥

আমি সব নাহিলাঙ প্ৰেম-অধিকারী।
অবধূত আসি’ হইল প্রেমের ভাণ্ডারী ॥

যদি মোরে প্ৰেম-যোগ না দেহ’ গোসাঞি।
শুষিব সকল প্ৰেম, মোর দোষ নাই৷”

চৈতন্যের প্রেমে মত্ত আচাৰ্য্য গোসাঞী।
কি বলয়ে, কি করয়ে, কিছু স্মৃতি নাই ।

সর্ব-মতে কৃষ্ণভক্ত-মহিমা বাড়ায়।
ভক্তগণে যথা বেচে, তথাই বিকায় ॥

মহাপ্রভু - আমাকে চুলে ধরে উঠালে কেন? 
নিত্যানন্দ - মরতে গেছিলে কেন?
প্রভু- জানি তুমি পরম বিহ্বল।
নিত্যানন্দ-আমার অপরাধ ক্ষমা কর।
সেবক যদি অভিমান করে কিছু বলে তার জন্য কি তার প্রাণদণ্ড করা উচিত?
প্রেমময় নিত্যানন্দের দুই চোখে জলধারা! যার প্রাণ ধন বন্ধু সব কিছুই চৈতন্য।
মহাপ্রভু - শোন নিত্যানন্দ,হরিদাস! তোমরা কারো কাছে প্রকাশ করবে না, আমি আজ গোপনে থাকব। বলেই নন্দনাচার্যের গৃহে গিয়ে উঠলেন। (নবদ্বীপে একটি জায়গা আছে লুকানোর। সে হলো নন্দন আচার্য গৃহ। যেই আসে সেই ওখানে লুকায়।) অদ্বৈতাচার্যের মাথায় বজ্রাঘাত হল। ঘরে গিয়ে উপবাস করে রুদ্ধদ্বারে শয়ন করে রইলেন।

মহাপ্রভু নন্দনাচার্যের ঘরে বিষ্ণু খট্টার উপরে বসলেন। নন্দন আচার্য দণ্ডবৎ প্রণাম করলেন। ভিজাবস্ত্র ছাড়িয়ে শুষ্কবস্ত্র পরিধান করালেন। তারপর প্রসাদ চন্দন মালা অর্ঘ্য গন্ধ চন্দনে ভূষিত করলেন। প্রভু ভক্তের পদার্থ মহানন্দে গ্রহণ করলেন। নন্দনাচার্যের সব দুঃখ দূরে গেল। তাম্বুল দিচ্ছেন মহাপ্রভুকে। মহাপ্রভু বলছেন- আমার কথা শোনো, নন্দন! আজ তুমি আমাকে সঙ্গোপনে রাখবে। নন্দন বলছেন - প্রভু! কোথায় লুকাবে তুমি সংসারের ভিতরে? হৃদয়ে যে থাকতে পারল না লুকিয়ে, সেখান থেকেও ভক্ত তোমাকে বাহির করলো। যে ক্ষীরসাগরের মাঝে থাকতে পারল না লুকিয়ে, তাকে কি করে আমি লুকিয়ে রাখব?

আচার্যের বাক্যে মহাপ্রভু হাসছেন। রাত্রি সেখানেই কাটালেন। ভাগ্যবান নন্দন কৃষ্ণকথা প্রসঙ্গে সর্ব রাত্রি অতিবাহিত করল। সকাল হলে অদ্বৈতের প্রতি দণ্ড করে ঠাকুর শেষে অনুগ্রহ করতে মন করলেন। আজ্ঞা দিলের নন্দনকে একেশ্বর শ্রীবাস পণ্ডিতকে ডেকে আন। শ্রীবাস এসেই ক্রন্দন করতে লাগলেন। প্রভু জিজ্ঞেস করলেন- আচার্যের বার্তা কহ? শ্রীবাস বলছেন - আর কি বলব তার কথা? কাল থেকে তিনি উপবাসী আছেন। সবে মাত্র দেহ আছে। সব সময় ক্রন্দন করছেন। তার দুঃখে আমরা সকলে দুঃখিত। 

শ্রীবাসের কথা শুনে মহাপ্রভু চললেন আচার্যের বাড়িতে। এসে দেখছেন আচার্য মহাঅপরাধী মনে করছেন নিজেকে। মহাপ্রভু বললেন- আচার্য! দেখো আমি এসেছি। লজ্জায় কিছু বলতে পারছেন না আচার্য। প্রেমযোগে প্রভুর চরণ চিন্তা করছেন।
মহাপ্রভু আবার বললেন - আচার্য ওঠো! চিন্তা নাই উঠে নিজ কার্য সম্পাদন কর।
আচার্য - প্রভু! তুমি আমাকে নিরন্তর অহংকার দিয়ে, এমন দুর্গতি করাও! সবাকে উত্তম দাস্যভাব দিয়েছ। আর আমাকে অহংকার দিয়েছ। প্রাণ, দেহ, ধন, মন - সবই তুমি। তবে মোরে দুঃখ দেহ এ তোমার ঠাকুরালি।

প্রভুর তখন ভগবান্ আবেশ রয়েছে। তিনি গম্ভীরভাবে বললেন ,- ‘’আমার নিজ জন না হলে তোমাকে দণ্ড দিতাম না। আমি আমার অনুগ্রহের পাত্রকেই এভাবে দণ্ড দিয়ে থাকি’’ । যথা চৈতন্যভাগবতে,-
‘’অপরাধ দেখি কৃষ্ণ যারে দণ্ড করে ।
জন্মে জন্মে দাস সেই বলিনু তোমারে ।।"
তখন অদ্বৈত আচার্য্য উঠে বাহু তুলে নৃত্য করতে লাগলেন , আর বলতে লাগলেন, "আমি আজ প্রভুর দণ্ড পেলাম, আমি আজ কৃষ্ণের দাস হলাম । আজ জানলাম , শ্রীকৃষ্ণ আমাকে বিস্মৃত হননি।"

সেই প্রবাদ বাক্যটি  শ্রীভগবান  বলছেন,-
"যে করে আমার আশ তারি করি সর্বনাশ ।
তবু নাহি ছাড়ে পাশ তার হই দাসের দাস ।।"
সকল বৈষ্ণব হৈলা পরম - আনন্দ।
তখনে হাসয়ে হরিদাস নিত্যানন্দ।।

এ সব পরমানন্দ    লীলা -  কথা - রসে।
কেহো কেহো বঞ্চিত     হইল দৈব দোষে।।

অল্প করি না মানিহ     'দাস' হেন নাম।

অল্প ভাগ্যে  'দাস'    নাহি করে ভগবান।।

আগে হয় মুক্ত    তবে সর্ববন্ধ নাশ।
তবে সেই হৈতে পারে    শ্রীকৃষ্ণের দাস।।

অনন্ত ব্রহ্মাণ্ড ধরে    প্রভু বলরাম।

সেহো প্রভুদাস্য করে    কেবা হয় আন।।

জয় জয় হলধর    নিত্যানন্দ-রায়।
চৈতন্য কীর্ত্তন স্ফূরে    যাহার কৃপায়।।

তাঁহার প্রসাদে হৈল    চৈতন্যেতে রতি।
যত কিছু বলি সব    তাঁহার শকতি।।

আমার প্রভুর প্রভু    শ্রীগৌরসুন্দর।
এ বড় ভরসা চিত্তে     ধরি নিরন্তর।।

🏵️💐জয় ভক্তবৎসল শ্রীগৌরহরির জয়💐🏵️