💐💞 শ্রীমদ্ভগবদ্গীতা 💞💐

🌹🌻🌺💞💞💐💐💞💞🌺🌻🌹

🌻🌼💐 অষ্টম অধ্যায়ের মাহাত্ম্য💐🌼🌻

🍇বিশেষ পোষ্ট🍇

শ্রী শ্রী গুরু গৌরাঙ্গ জয়তঃ

সকল সাধু,গুরু,বৈষ্ণব ও গৌর ভক্তবৃন্দের শ্রীচরণে আমার অনন্ত কোটি সাষ্টাঙ্গ দণ্ডবৎ প্রণাম I

''হরি - গুরু - বৈষ্ণব তিনিহেঁ স্মরণ।

তিনেহেঁ স্মরণ হইতে বিঘ্ন বিনাশন।।

অনায়াসে হয় নিজ বাঞ্ছিত পূরণ ।।‘’

একবার ভগবান শিব বললেন,- হে প্রিয়ে পার্বতি! আমি তোমাকে শ্রীমদ্ভগবদগীতার অষ্টম অধ্যায়ের মাহাত্ম্য বলব। যা শ্রবণে অমৃত আস্বাদনের আনন্দ লাভ করবে।

দাক্ষিণাত্যের আমদকপুর নামক এক গুরুত্বপূর্ণ স্থানে ভাবশর্মা নামে এক ব্রাহ্মণ বাস করত। সে এক গণিকাকে(বেশ্যা) বিবাহ করে। মাংসাহার, মদ্যপান, চৌর্যবৃত্তি,পরস্ত্রীগমন এবং পশু শিকার করে সে জীবন উপভোগ করত। একদিন সেই পাপাসক্ত ভাবশর্মা এক ভোজসভায় নিমন্ত্রিত হল। সেখানে সে এত বেশী মদ্যপান করল যে তার মুখ দিয়ে উদরস্থ মদ বেরিয়ে আসতে শুরু করল। ভোজের  পর সে খুবই অসুস্থ হয়ে পড়ল। তীব্র কলেরা রোগে অনেক দিন ভুগে ভুগে সে মারা

গেল এবং মৃত্যুর পর সে একটি খেজুর বৃক্ষের শরীর লাভ করল। একদিন দুজন ব্রহ্ম রাক্ষস এসে সেই খেজুর গাছের নিচে আশ্রয় নিল। তাদের পূর্ব জীবনের ঘটনা নিম্নরূপ-

কুশীল নামে এক ব্রাহ্মণ ছিল। সে ছিল বেদজ্ঞ। তার স্ত্রীর নাম ছিল কুমতি এবং সে ছিল এক দুবৃত্তিপরায়ণা নারী। ব্রাহ্মণটি পণ্ডিত হলেও লোভীছিল। স্ত্রীর সঙ্গে সেও প্রতিদিন ভিক্ষা করত, কিন্তু অন্য কোন ব্রাহ্মণকে সে কখনও ভিক্ষা দিত না। তাদের মৃত্যুর সময় উপস্থিত হলে তারা ব্রহ্ম রাক্ষসের শরীর লাভ করল এবং ক্ষুধা-তৃষ্ণায় কাতর হয়ে অবিশ্রান্ত ভাবে যত্র-তত্র ঘুরে বেড়াতে লাগল। একদিন ওই খেজুর গাছের নিচে তারা বিশ্রাম করতে বসল। তখন স্ত্রী তার স্বামীকে প্রশ্ন করল, “কিভাবে আমরা এই ব্রহ্ম-রাক্ষসের অভিশপ্ত জীবন থেকে মুক্তি পাব?” স্বামী বলল, “ব্রহ্ম-জ্ঞানের দ্বারা, আত্ম-জ্ঞানের দ্বারা, কর্ম-জ্ঞানের দ্বারা। এই সকল জ্ঞান ছাড়া আমাদের পাপময় প্রতিক্রিয়া থেকে মুক্ত হওয়া সম্ভব নয়।” একথা শুনে স্ত্রী জিজ্ঞাসা করল,

‘’কিং তদ্ ব্রহ্ম কিমধ্যাত্মাং কিং কর্ম পুরুষোত্তম।, হে স্বামী!ব্রহ্ম কি? অধ্যাত্ম কি? সকাম কর্মই বা কি?” সম্পূর্ণ দৈবক্রমে, তার স্ত্রী শ্রীমদ্ভগবদগীতার অষ্টম অধ্যায়ের প্রথম শ্লোকের অর্ধাংশ জপ করল। সেই সময় এই অর্ধ শ্লোক শুনে ভাবশর্মা বৃক্ষরূপ থেকে মুক্ত হল এবং পুনরায় সর্ব পাপ মুক্ত হয়ে ব্রাহ্মণের রূপ পরিগ্রহ করল। সহসা আকাশ থেকে এক পুষ্প বিমান এসে স্বামী- স্ত্রীকে তাদের নিজগৃহে অর্থাৎ ভগবানের ধাম বৈকুণ্ঠে ফিরিয়ে নিয়ে গেল।

এই ঘটনার পরে ব্রাহ্মণ ভাবশর্মা পরম শ্রদ্ধায় সেই অর্ধ শ্লোক (কিং তদ ব্রহ্ম  কিমধ্যাত্মংকিং কর্ম পুরুষোত্তম) লিপিবদ্ধ করল। ভগবান শ্রীকৃষ্ণের পূজা করার মানসে সে কাশীপুরী গিয়ে অবিরাম সেই অর্ধ শ্লোক জপ করে কঠোর তপস্যা করতে লাগল। ইতিমধ্যে বৈকুণ্ঠে লক্ষ্মীদেবী ভগবান বিষ্ণুকে সহসা যােগনিদ্রা থেকে উঠতে দেখে করজোড়ে জানতে চাইলেন, “আপনি এত শীঘ্র কেন নিদ্রা থেকে জাগরিত হলেন?”ভগবানবিষ্ণু বললেন, “প্রিয়ে লক্ষ্মি! এইকাশীপুরীতে গঙ্গাতীরে আমার একভক্ত শ্রীমদ্ভগবদগীতার অষ্টম অধ্যায়ের প্রথম শ্লোকের অর্ধাংশ অবিরাম জপ করতে করতে কঠোর তপস্যায় মগ্ন হয়েছে। তার এই ভক্তির কি প্রতিদান আমি দেব সেটাই চিন্তা করছি।”

পার্বতী দেবাদিদেব শিবকে জিজ্ঞাসা করলেন ভগবানবিষ্ণু তখনতার ভক্তের প্রতি তুষ্ট হয়ে কি বর প্রদান করলেন?

শিব বললেন,- ভাবশর্মা ভগবানবিষ্ণুর শ্রীপাদপদ্মেরনিত্য সেবায়যুক্ত হওয়ার জন্য বৈকুণ্ঠে গমন করল। শুধু তাই নয়, তার সব পূর্বপুরুষরা ভগবান বিষ্ণুর শ্রীচরণ লাভের সৌভাগ্য অর্জন করলেন। প্রিয়ে পার্বতি! তোমাকে আমি শ্রীমদ্ভগবদগীতার অষ্টম অধ্যায়ের মাহাত্মের সামান্য অংশ মাত্র বর্ণনা করলাম।

‘’কলের্দোষনিধেরাজন্ অস্তি হ্যেকো মহানগুণঃ I

কীর্ত্তনাদেব কৃষ্ণস্য মুক্তসঙ্গঃ পরং ব্রজেৎ I I‘’ (শ্রীমদ্ভাগবত)

কলি সমস্ত দোষের বটে, তথাপি হে রাজন ! কলির একটি মহানগুণ এই যে, কৃষ্ণকীর্ত্তনে জীব মায়াবদ্ধ হইতে মুক্ত হয়ে শ্রীকৃষ্ণরূপ পরতত্ত্ব লাভ করেন।

‘’নাম - সংকীর্ত্তন যস্য সর্বপাপ প্রণাশনম্।

প্রণামো দুঃখশমনস্তং নমামি শ্রীহরিং পরম্।।‘’

যে হরিনাম সংকীর্ত্তন করিলে ইহকাল ও পরকালের পাপরাশি নিঃশেষে দগ্ধ হয়,আমি সেই নামরূপী পরমাত্মা স্বরূপ শ্রীহরিকে প্রণাম করি। পরমকরুণাময় গোলোকপতি সচ্চিদানন্দ ভগবান শ্রীকৃষ্ণ ও তাঁর একান্ত হ্লাদিনী শক্তি শ্রীমতী রাধারাণী এবং সকল বৈষ্ণব ভক্ত - পার্ষদদের শ্রীচরণকমলে নিরন্তর প্রার্থনা করি, সকলের জীবন যেনো রাধা-কৃষ্ণময়তায় পূর্ণ হয়ে, মঙ্গলময়, কল্যাণময়, ভক্তিময়, সুন্দরময় আর আনন্দময় হয়ে উঠুক।

"হরে কৃষ্ণ হরে কৃষ্ণ কৃষ্ণ কৃষ্ণ হরে হরে !

হরে রাম হরে রাম রাম রাম হরে হরে !!"

🍁🌾🍁জয় শ্রীমহাকালের জয় 🍁🌾🍁 জয় সকল ভক্তবৃন্দের জয় 🍁🌾🍁