💐শ্রীল রুপগোস্বামী 💐

🍁তিরোভাব 🍁

হরে কৃষ্ণ, আজ - পরম বৈষ্ণব পরম ভাগবত ষড় - গোস্বামীর মধ্যে প্রধান শ্রীকৃষ্ণচৈতন্য মহাপ্রভুর পূর্ণ কৃপাপাত্র শ্রীল রূপগোস্বামীর বিরহ তিথি। সকল ভক্তবৃন্দের শ্রীচরণে করবদ্ধ নিবেদন সবাই এই পরম শ্রীভক্তি সিদ্ধান্তাচার্য্য ব্রজপ্রেমলাভের অভিধেয় - জ্ঞান প্রদাতার পুৎ জীবনচরিত আত্মসাৎ করে নিজের দৈনন্দিন জীবনে আচরণ করবেন।

''শ্রীরূপমঞ্জরী খ্যাতা যাসীদ বৃন্দাবনে পুরা।

সাদ্য রূপাখ্যগোস্বমী ভূত্বা প্রকটতামিয়াৎ।।''

যিনি বৃন্দাবনে পূর্ব্বে রূপমঞ্জরী নাম খ্যাতা ছিলেন, তিনি অধুনা গৌরলীলা পুষ্টির জন্য রুপগোস্বামী রূপে প্রকটিত হইয়াছেন। রাধারাণীর অনুগতা সখীগণের মধ্যে প্রধানা ললিতা সখী, ললিতার অনুগতা মঞ্জরীগণের মধ্যে প্রধানা রূপমঞ্জরী। এইজন্য গৌরলীলাতে ষড় গোস্বামীর মধ্যে প্রধান রূপগোস্বামী।

বৃন্দাবন ধামে অবস্থান কালে রূপ গোস্বামী কৃষ্ণলীলা নাটক লিখিতে আরম্ভ করেন । নাটকের কিয়দংশ অর্থাৎ মঙ্গলাচরণ ও নান্দীশ্লোক বৃন্দাবনেই লিখিত হইয়াছিল। গৌড় হইতে রূপ গোস্বামী নীলাচল আসিবার কালে সত্যভামাপুর নামক কোন গ্রামে এক রাত্রি বিশ্রাম করেন । এইখানে রূপ রাত্রে স্বপ্ন দেখেন যেন এক দিব্যরূপ ধারিণী রমণী আসিয়া বলিলেন, আমার নাটক পৃথকরূপে রচনা করিবে। স্বপ্নের কথা মনে মনে বিচার করিয়া রূপ এই সিদ্ধান্ত করিলেন যে, শ্ৰীকৃষ্ণের ব্রজতত্ত্ব লিখিবার সংকল্প করিয়াছি, এই জন্য সত্যভামা দুই লীলা স্বতন্ত্ররূপে লিখিবার জন্য আদেশ করিলেন ।

তদনন্তর রূপ পুরুষোত্তম ক্ষেত্রে সমাগত হইয়া হরিদাসের আশ্রমে বাস করিতে লাগিলেন । হরিদাস নীচজাতি যবন, এইজন্য জগন্নাথ পুরীতে থাকিতেন না, শ্ৰীক্ষেত্রের অনতিদূরে নির্জন স্থানে একটি সামান্য কুটীরে হরিনামরসে নিমগ্ন থাকিতেন । চৈতন্যদেব প্রতিদিন হরিদাসের কুটীরে আসিয়া তাঁহার সঙ্গে ভগবৎ প্রসঙ্গে মগ্ন হইতেন । গৌরচন্দ্র রূপকে আলিঙ্গন করিয়া কুশল প্রশ্ন করিতে লাগিলেন। অনন্তর গৌর রূপ গোস্বামীর সঙ্গে নিত্যানন্দ অদ্বৈত প্রভৃতি বঙ্গদেশীয় ও উড়িষ্যাবাসী ভক্তগণের পরিচয় করিয়া দিলেন । রূপ বিনয়ে অবনত হইয়া ভক্তগণের চরণবন্দনা করিলেন । রূপের নিরভিমান গভীর জ্ঞান ও বিনয়াবনত ভক্তিভাব সন্দর্শন করিয়া ভক্তগণ পরম প্রীতি লাভ করিলেন । এই সময়ে রূপ নাটক রচনাতে নিযুক্ত ছিলেন। শ্ৰীকৃষ্ণের ব্রজলীলা ও পুরলীলা পৃথক ভাবে লিখিবার কথা বোধ হয় চৈতন‍্যদেব অবগত হইয়াছিলেন ; একদিন গৌর বলিলেন,
“কৃষ্ণকে বাহির নাহি করিহ ব্রজ হইতে ।
ব্ৰজ ছাড়ি কৃষ্ণ কভু না যান কাঁহাতে ॥”

দুই লীলা স্বতন্ত্রভাবে বর্ণনা করিবেন , রূপের এই ইচ্ছা ছিল, এক্ষণে শ্ৰীচৈতন্যের সম্মতি পাইয়া উৎসাহিত হইলেন, এবং পৃথক পৃথক নান্দী প্রস্তাবনা লিখিয়া লীলাভেদে বিদগ্ধমাধব ও ললিতমাধব নামে সংস্কৃত ভাষায় দুইখানি নাটক লিখিতে লাগিলেন । রূপ গোস্বামী কেবল বিষয় বিরাগী হরিভক্ত সাধু ও সংস্কৃতশাস্ত্রে পণ্ডিত ছিলেন তাহা নহে, তিনি একজন প্রতিভাশালী কবি । এই সকল গ্রন্থে তাঁহার ভাবমাধুর্য্য , পদলালিত্য ও স্বাভাবিক কবিত্বশক্তি অতি উজ্জ্বল রূপে প্রকাশিত হইয়াছে । একদিন হরিদাসের আশ্রমে বসিয়া রূপ নাটক লিখিতেছেন, এমন সময়ে চৈতন্যদেব সেইখানে অাসিয়া উপস্থিত হইলেন, এবং “ কি পুথি লিখিতেছ ?” বলিয়া লিখিত পুস্তকের একটি পাতা টানিয়া লইলেন। প্রথমতঃ রূপের হস্তাক্ষরের প্রশংসা করিয়া চৈতন্য বিদগ্ধমাধবের এই শ্লোকটি পড়িতে লাগিলেন ।

“তুণ্ডে তাণ্ডবিনী রতিং বতনুতে তুণ্ডাবলী লব্ধয়ে।
কর্ণক্রোড়কড়ম্বিনী ঘটরতে কর্ণার্ব্বুদেভ্যঃ স্পৃহাং ॥
চেতঃ প্রাঙ্গণসঙ্গিনী বিজয়তে সৰ্ব্বেন্দ্রিয়াণাং কৃতিং ।
নোজানে জনিত কিয়ন্তিরমৃতৈঃ কৃষ্ণেতি বর্ণদ্বয়ী ॥ "

‘ কৃষ্ণ’ এই দুইটি বর্ণ যে কি পরিমাণ অমৃত দিয়া গঠিত হইয়াছে তাহা জানি না। যখন ইহা রসনাতে নৃত্য করিতে থাকে, তখন আরও বহু রসনা লাভ করিতে ইচ্ছা হয়, যখন কর্ণরন্ধ্রে অঙ্কুরিত হয়, তখন অৰ্ব্বুদ সংখ্যক কৰ্ণ পাইবার জন্য স্পৃহা জন্মে , এবং চিত্তপ্রাঙ্গণে প্রবিষ্ট হইলে সমুদায় ইন্দ্রিয় ব্যাপার ইহার নিকট পরাস্ত হইয়া যায়। এই মাধুর্য্য- রস সিঞ্চিত হরিনাম- মাহাত্ম্য- ব্যঞ্জক অপূর্ব শ্লোক পাঠ করিতে করিতে প্রেমরসময় গৌরচন্দ্র প্রেমাবিষ্ট হইয়া পড়িলেন। হরিদাস উল্লাসে নৃত্য করিতে করিতে বলিলেন, শাস্ত্র ও সাধুমুখে নামমাহাত্ম্য শ্রবণ করিয়াছি , কিন্তু এমন সুধামাখা নাম- মহিমা কখনও শুনি নাই । আর এক দিন গৌরসুন্দর, সাৰ্ব্বভৌম ভট্টাচাৰ্য্য রায় রামানন্দ ও স্বরূপ প্রভৃতি ভক্ত পণ্ডিতগণে পরিবৃত হইয়া রূপের সন্নিধানে আসিলেন। 

গৌরের মুখে রূপের প্রশংসা আর ধরে না, সমস্ত পথ ভক্তগণ সমীপে রূপের গুণ বর্ণনা করিতে লাগিলেন । ভক্তবৃন্দসহ প্রভুকে দেখিয়া রূপ ও হরিদাস সাষ্টাঙ্গ প্রণাম করিয়া তাহাদিগকে পিড়ার ওপরে বসাইলেন এবং আপনারা ভূমিতলে উপবিষ্ট হইলেন। চৈতন্য প্রভু বলিলেন, রূপ ! সেই অমৃতময় শ্লোক আবার পড় । রূপ গোসাঞি বিনয়ে অধোবদন , লজ্জাতে পড়িতে না পারিয়া মৌনভাব অবলম্বন করিলেন। শেষে গৌরের পুনঃপুনঃ অনুরোধে বিদগ্ধমাধব নাটকের সেই শ্লোক আবার পাঠ করিলেন ।
শ্ৰীকৃষ্ণের নামমাহাত্ম্য যুক্ত কবিত্ব রসপূর্ণ শ্লোকের রসাস্বাদন করিয়া রামানন্দ প্রমুখ ভক্তগণ আনন্দ ও বিস্ময়ে উৎফুল্ল হইয়া বলিতে লাগিলেন, এমন মধুময় নামমহিমা আমরা কখন শুনি নাই । রায় রামানন্দ জিজ্ঞাসা করিলেন,

“কোন গ্রন্থ কর হেন জানি ।
যাহার ভিতরে এই সিদ্ধান্তের খনি।”

স্বরূপ গোস্বামী রামানন্দকে নাটকের পরিচয় অবগত করিলে, রায়ের অনুরোধে রূপ বিদগ্ধমাধব ও ললিতমাধব নাটকের স্থানে স্থানে পাঠ করিয়া শুনাইতে লাগিলেন । প্রথমতঃ বিদগ্ধ মাধবের নান্দীশ্লোক পাঠ করা হইল ।

"সুধানাং চান্দ্রীণামপি মধুরিমোন্মাদ দমনী দধান।
রাধাদি প্রণয়ঘনসারৈঃ সুরভিতাং ।
সমস্তাৎ সন্তাপ উদ্গম বিষম সংসার সরণী
প্রণীতাং তে তৃষ্ণাং হরতু হরিলীলা শিখরিণী।”

যাহাতে সুধাংশুর সুধা- মাধুর্য্য- শালিতার গৌরব দমিত হইযাছে , এবং যাহা রাধাদির প্রণয়রূপ কর্পূর সংযোগে সৌগন্ধ্য ধারণ করিয়াছে, সেই হরিলীলা- শিখরিণী অর্থাৎ হরিলীলারূপ মধুরাস্বাদযুক্ত পানীয় তোমার সন্তাপ- বৰ্দ্ধক অতিদুর্গম সংসাররূপ- পথ -পর্য্যটন- জনিত তৃষা নিবারণ করুক। এই রূপে প্রেমোৎপত্তি , পূৰ্ব্বানুরাগ , বিকার চেষ্টা , ভাব ও প্রেমের লক্ষণ ইত্যাদি যে রসের যেরূপ প্রেমরসাভিষিক্ত কবিত্বময় শ্লোক রচনা করিয়াছিলেন , রূপ গোস্বামী নাটকের মধ্যে মধ্যে পাঠ করিয়া ভক্তগণকে তাহা শুনাইতে লাগিলেন। পূর্বকথিত দুইখানি নাটকের নান্দীতে রূপ গোস্বামী ইষ্টদেব বন্দনার যে শ্লোক রচনা করেন, চৈতন্যের ভয়ে তিনি তাহা পাঠ করিতে সঙ্কুচিত হইলেন । এই দুই শ্লোকে আপন ইষ্টদেব শ্রীচৈতন্যের বর্ণনাচ্ছলে চৈতন্যাবতারের আভাস প্রদান করা হইয়াছিল। ঈশ্বরাবতার রূপে বর্ণনা ত দূরের কথা শ্রীচৈতন্য আপনার সামান্য প্রশংসাও সহ্য করিতে পারিতেন না। তৃণ হইতে নীচ ও নিরভিমান হইয়া হরিনাম করাই চৈতন্যের ধৰ্ম্ম । কেহ তাহার অন্যায় প্রশংসা করিলে তিনি বিষ্ণু স্মরণ পূর্বক কর্ণে অঙ্গুলি দিয়া মহা বিরক্তি প্রকাশ করিতেন । এই কারণে উক্ত শ্লোক আবৃত্তি করিতে রূপ গোস্বামী নিরতিশয় সঙ্কুচিত হইলেন।

শ্রীরূপকৃত এই দুই শ্লোকে আপন ইষ্টদেব শ্রীচৈতন্যের বর্ণনাচ্ছলে চৈতন্যাবতারের আভাস প্রদান করা হইয়াছিল। ঈশ্বরাবতার রূপে বর্ণনা ত দূরের কথা শ্রীচৈতন্য আপনার সামান্য প্রশংসাও সহ্য করিতে পারিতেন না। তৃণ হইতে নীচ ও নিরভিমান হইয়া হরিনাম করাই চৈতন্যের ধৰ্ম্ম । কেহ তাহার অন্যায় প্রশংসা করিলে তিনি বিষ্ণু স্মরণ পূর্বক কর্ণে অঙ্গুলি দিয়া মহাবিরক্তি প্রকাশ করিতেন । এই কারণে উক্ত শ্লোক আবৃত্তি করিতে রূপ গোস্বামী নিরতিশয় সঙ্কুচিত হইলেন। রূপের লজ্জা ও সংকোচ দেখিয়া চৈতন্য বলিলেন, বৈষ্ণব সমাজে গ্রন্থ শুনাইবে ইহাতে আর লজ্জা কি, শ্লোক পাঠ কর ।

‘’রায় কহে কহ ইষ্টদেবের বর্ণন ।
প্রভুর সঙ্কোচে রূপ না করে পঠন ।।
প্রভু কহে কহ কেন কি সঙ্কোচ লাজে ।
গ্রন্থের ফল শুনাইবে বৈষ্ণব সমাজে I I’’    ( চৈতন্য চরিতামৃত অন্ত্যখণ্ড )

শ্ৰীগৌরের আদেশে রূপ সলজ্জ এই দুইটি শ্লোক আবৃত্তি করিলেন।
‘’অনর্পিতচরীং চিরাৎ করুণয়াবতীর্ণঃ কলৌ
সমর্পয়িতুং উন্নতোজ্জ্বলরসাং স্বভক্তিশ্রিয়ং।
হরিঃ পুরটসুন্দর দ্যুতিকদম্ব সন্দীপিতঃ
সদা হৃদয়কন্দরে স্ফুরতু যঃ শচীনন্দন I I’’   (বিদগ্ধ মাধব )যে উন্নতোজ্জ্বল মধুর রস জগতে কখন অর্পিত হয় নাই, সেই স্বীয় ভক্তিসম্পদ প্রদান করিবার জন্য যিনি করুণা করিয়া এই কলিযুগে অবতীর্ণ হইয়াছেন ; যাঁহার দেহদ্যুতি কনককান্তি হইতেও অতি উজ্জ্বল শোভাযুক্ত, সেই শচীনন্দন হরি (সিংহ) তোমাদের হৃদয়কন্দরে সর্বদা প্রকাশিত থাকুন।

"নিজপ্রণয়িতং সুধামুদয়মাপ্তুবন্ যঃ ক্ষিতৌ
কিরতালমুরীকৃত দ্বিজ কুলাধিরাজ স্থিতিঃ ।
স লুণ্ডিততমস্ততিৰ্ম্মম শচীসুতাখ্যঃ শশী
বশীকৃতজগন্মনাঃ কিমপি শৰ্ম্ম বিন্যস্ততু I I”     ( ললিত মাধব ) যিনি ক্ষিতিতলে জন্মগ্রহণ করিয়া স্বীয় প্রেমরসামৃত বহুল পরিমাণে বিস্তার করিয়াছেন, যিনি দ্বিজকুলাধিরাজ এই খ্যাতি লাভ করিয়াছেন, এবং যিনি অজ্ঞানান্ধকার সমূল বিনাশ করিতেছেন, সেই জগন্মোহন শচীনন্দন শশী আমার অনির্ব্বচনীয় সুখ বিধান করুন।

শ্লোক শ্রবণ করিয়া ভক্তগণ পরমানন্দ লাভ করিলেন ; কিন্তু শ্ৰীগৌরসুন্দর নিজের অতি স্তুতি শ্রবণ করিয়া রাগান্বিত হইয়া রূপকে ভর্ৎসনা করিতে লাগিলেন । রামানন্দ বলিলেন; রূপের বাক্য সহজেই অমৃতরসে পরিপূর্ণ, তোমার স্তুতিরূপ কর্পূর বিন্দুর সংযোগে তাহা আরও সৌগন্ধময় হইয়াছে। চৈতন্য বিরক্ত হইয়া বলিলেন, এই সকল উপহাসকর লজ্জাজনক কথা শুনিয়া তুমি উল্লসিত হইতেছ ইহাই অতি আশ্চৰ্য্য ! রায় রামানন্দ তাঁহাকে এই বলিয়া বুঝাইতে লাগিলেন যে, স্বীয় গ্রন্থের মঙ্গলাচরণে অভীষ্ট দেবের স্তুতি করা দোষাবহ নহে, ইহা শ্রবণ করিয়া লোকের সুখ হইয়া থাকে।

“তবে রূপ গোসাঞি যদি শ্লোক পড়িল ।
শুনি প্রভু কহে এই অতি স্তুতি হৈল।
কাঁহা তোমার কৃষ্ণরস কাব্য সুধাসিন্ধু।
তার মধ্যে কেন মিথ্যা স্তুতি ক্ষার বিন্দু ॥
রায় কহে রূপের বাক্য অমৃতের পুর।
তার মধ্যে এক বিন্দু দিয়াছে কর্পূর ॥
প্রভু কহে রায় তোমার ইহাতেও উল্লাস ।
শুনিতেই লজ্জা লোকে করে উপহাস ॥
রায় কহে লোকের সুখ ইহার শ্রবণে ।
অভীষ্ট দেবের স্মৃতি মঙ্গলাচরণে ॥”    (চৈঃচঃ অস্ত্য খণ্ড ১ম পরিচ্ছেদ )

অতঃপর রামানন্দ ও শ্রীচৈতন্য রূপের কবিত্বের বিস্তর সুখ্যাতি করিলেন। চৈতন্য বলিলেন, “ইহাঁর সালঙ্কার কাব্য অতিমধুর, এ প্রকার কবিত্ব ব্যতীত মাধুর্য্য রস প্রচার হওয়া অসম্ভব । তোমরা সকলে কৃপা করিয়া রূপকে এই বর দাও, যেন ইনি প্রেমরসময় ব্রজলীলা প্রচার করিতে পারেন । ইঁহার জ্যেষ্ঠ ভ্রাতা সনাতনের ন্যায় বিজ্ঞ ব্যক্তি পৃথিবীতে অতি দুর্লভ | দীনতা, বৈরাগ্য ও পাণ্ডিত্য তাঁহাতেই সম্যকরূপে স্থিতি করিতেছে। এই দুই ভাইকে আমি ভক্তিশাস্ত্র প্রবর্তন করিবার জন্য বৃন্দাবনে পাঠাইয়াছিলাম।” রূপের প্রতি প্রভুর স্নেহ ও কৃপা দেখিয়া ভক্তমণ্ডলী সুখী হইলেন এবং প্রীতি প্রফুল্ল হৃদয়ে সকলে রূপকে আলিঙ্গন করিলেন ।

বর্ষা চারি মাস অতিবাহিত হইলে অদ্বৈত ও নিত্যানন্দ প্রভৃতি স্বদেশে প্রত্যাগমন করিলেন । চৈতন্যদেব যতদিন নীলাচলে ছিলেন, ভক্তিরস পিপাসু গৌরগত- প্রাণ বঙ্গদেশীয় বৈষ্ণবগণ প্রেমসাগর গৌরের প্রেমানুরাগে আকৃষ্ট হইয়া প্রতি বৎসর রথযাত্রার সময়ে নীলাদ্রিতে আসিতেন। অদ্বৈত প্রভৃতি নীলাচল পরিত্যাগ করিলে রূপ গোস্বামী হরিদাসের কুটীরে থাকিয়া উভয়ে কৃষ্ণকথা প্রসঙ্গে অতি আনন্দমনে কালযাপন করিতে লাগিলেন । দোলযাত্রা পর্য্যন্ত রূপ নীলাচলে অবস্থান করেন। তৎপরে গৌরচন্দ্র বলিলেন, “তুমি বৃন্দাবনে গিয়া রসশাস্ত্র নিরূপণ করিয়া ভক্তিরস প্রচার কর, এবং লুপ্ত তীর্থ উদ্ধার করিয়া কৃষ্ণসেবা প্রচার কর । । সনাতনকে একবার নীলাদ্রি আসিতে বলিও ৷ তদনন্তর রূপ বঙ্গদেশ হইয়া বৃন্দাবন গমন করিলেন । 

ক্রমশঃ…