💐💞 শ্রীমদ্ভগবদ্গীতা 💞💐

🌹🌻🌺💞💞💐💐💞💞🌺🌻🌹

🌻🌼💐 দশম অধ্যায়ের মাহাত্ম্য💐🌼🌻

🍇বিশেষ পোষ্ট🍇

শ্রী শ্রী গুরু গৌরাঙ্গ জয়তঃ

সকল সাধু,গুরু,বৈষ্ণব ও গৌর ভক্তবৃন্দের শ্রীচরণে আমার অনন্ত কোটি সাষ্টাঙ্গ দণ্ডবৎ প্রণাম I

''হরি - গুরু - বৈষ্ণব তিনিহেঁ স্মরণ।

তিনেহেঁ স্মরণ হইতে বিঘ্ন বিনাশন।।

অনায়াসে হয় নিজ বাঞ্ছিত পূরণ ।।‘’

দশম অধ্যায় - বিভূতি-যোগ

ভগবান শিব বললেন,- হে প্রিয়ে পার্বতি! আমি তোমাকে শ্রীমদ্ভগবদগীতার দশম  অধ্যায়ের মাহাত্ম্য বলছি, একাগ্রচিত্ত তাহা শ্রবণ কর। এই অধ্যায়টি চিন্ময় জগতে যাওয়ার সোপান স্বরূপ।
 

কাশীপুরীতে ধীরবুদ্ধি নামে এক ব্রাহ্মণ ছিল। আমার বাহক নন্দীর মতো। সেও আমার প্রিয় ছিল। সে ছিল সর্বদাই শান্তিপূর্ণ এবং তার সমস্ত ইন্দ্রিয় ভগবান শ্রীকৃষ্ণের গুণকীর্ত্তনে নিবদ্ধ ছিল। যেখানেই সে যেত, গভীর স্নেহে আমি তাকে অনুসরণ করতাম, যাতে আমি তাকে রক্ষা করতে পারি এবং তার সেবা করতে পারি। আমার কার্যকলাপ দেখে আমার নিত্য সেবক ভৃঙ্গী আমার কাছে জানতে চাইল এই মহান ভক্ত কি ধরণের তপশ্চর্যা এবং পুণ্যকর্ম সম্পাদন করেছেন, যাতে আপনি স্বয়ং তাঁর সেবা করছেন?

ভৃঙ্গীর প্রশ্ন শুনে আমি বললাম, এক সময় কৈলাশ পর্বতের পুন্নাগ উদ্যানে চাঁদের আলোয় বসে আছি, এমন সময় ঝড়ো হাওয়া গাছ- পালাকে সশব্দে নাড়িয়ে দিল I চারিদিক ছায়ায় ঢেকে গেল মনে হল যেন একটা পর্বত নড়াচড়া করছে। হঠাৎ দেখি আকাশে কালো মেঘের ন্যায় একটা বিশাল পাখি এসে নিকটেই উপস্থিত হল। তার  ডানা ঝাপটানিতে গাছপালা নড়তে লাগল এবং চতুর্দিকে ধূলায় ঘূর্ণিপাকের সৃষ্টি হল। পাখিটি ভূমিতে অবতরণ করে আমাকে শ্রদ্ধা জানাল এবং একটি সুন্দর পদ্মফুল আমাকে অর্পণ করল। এরপর আমাকে বলল, ‘’সকলের আশ্রয় হে মহাদেব! আপনার জয় হোক। আপনার মহিমার অন্ত নেই। ইন্দ্রিয় সংযমী সকল ভক্তদের আপনি রক্ষাকর্তা।

পরমেশ্বর ভগবান কৃষ্ণের ভক্তদের মধ্যে আপনি হলেন সর্বশ্রেষ্ঠ। বৃহস্পতির ন্যায় মহাত্মারা, সর্বদা আপনার মহিমা কীর্ত্তন করে থাকেন। আপনার অনন্ত মহিমা সহস্র ফণাবিশিষ্ট অনন্তশেষও পূর্ণরূপে বর্ণনা করতে অক্ষম। আমার ন্যায় স্বল্পবুদ্ধি একটা পাখি তো কোন ছার।” পাখিটির স্তুতি শোনার পর আমি জানতে চাইলাম, “কে তুমি এবং কোথা থেকে তুমি এসেছ? দেখতে তুমি একটা রাজহাঁসের মতো, কিন্তু তোমার গাত্রবর্ণ কাকের মতো। পাখিটি বলল, অনুগ্রহ করে শুনুন আমি হলাম ব্রহ্মার বাহন হংস এবং যে কারণে আমার গাত্রবর্ণ কাকের মতো হয়েছে, আমি তা বলছি।

সৌরাষ্ট্রের (সুরাট) নিকটে এক মনোরম সরোবর থেকে এই অত্যাশ্চর্য দিব্য পদ্মটি আনা হয়েছে। সেখানে আমি কিছুকাল বেশ আনন্দেই ছিলাম। কিন্তু উড়তে উড়তে হঠাৎ করেই আমি মাটিতে পড়ে যাই এবং আমার শরীর কালো হয়ে যায়। তখন আমি মনে মনে চিন্তা করলাম, কি করে আমি পড়ে গেলাম এবং কিভাবে আমার কর্পূরের  মতো ধবধবে সাদা গায়ের রং কালো হয়ে গেল?' এই সব কথা যখন ভাবছিলাম তখন সরোবরের পদ্মগুলি থেকে একটা কণ্ঠস্বর ভেসে এল, ‘হে হংসরাজ! ওঠ কেন তুমি পড়ে গেলে এবং কেন তোমার গায়ের রঙ কালো হয়ে গেল শুনে যাও। আমি উঠে পড়লাম এবং সরোবরের কেন্দ্রস্থলে গেলাম।

সেখানে পাঁচটি অসাধারণ সুন্দর পদ্মফুল দেখতে পেলাম। সেগুলির  ভিতর থেকে একজন সুন্দরী মহিলা বেরিয়ে এল। তাকে প্রদক্ষিণ করে আমি আমার পতনের কারণ জিজ্ঞাসা করলাম। সে বলল, “হে কৃষ্ণহংস! তুমি ওড়ার সময় আমাকে অতিক্রম করে ফেলেছিলে, আর সেই পাপে তোমার পতন হয়েছে। এবং তোমার দেহ কালো হয়েছে। তোমাকে পড়তে দেখে আমার খুব দুঃখ হল। সেইজন্যই তোমাকে এখানে ডেকেছি । আমি একবার মাত্র মুখ খোলায় সুগন্ধ নির্গত হয়ে সাত হাজার কালো মৌমাছিকে পবিত্র করে দিল এবং তারা তৎক্ষণাৎ স্বর্গরাজ্যে প্রবেশ করল। হে প্রিয় পক্ষিরাজ! যে কারণে আমি এইশক্তির অধিকারী তোমাকে তা বলব।

এই জন্মের তিন জন্ম পূর্বে, আমার এক ব্রাহ্মণ পরিবারে জন্ম হয়েছিল। আমার নাম ছিল সরোজবদনা। বাবা আমাকে সতীত্ব রক্ষার আদর্শ শিক্ষা দিতেন। তাই বিয়ের পর আমি খুবই বিশ্বস্ততার সঙ্গে স্বামী সেবা করতাম। একদিন আমি একটি ময়না পাখি পেলাম। সেটার দেখাশোনা করতে গিয়ে আমার স্বামী সেবার ব্যাঘাত ঘটত। তাই রেগে গিয়ে স্বামী আমাকে পরজন্মে ময়না হয়ে জন্মাতে অভিশাপ দিলেন। পর জন্মে ময়না হয়ে জন্মালেও, কঠোরভাবে সতীত্বের আদর্শ পালনের জন্য আমার কতিপয় মুনি-ঋষির সঙ্গ লাভ হল। তারা আমাকে তাদের আশ্রমে স্থান দিলেন। এক মুনিকন্যা আমাকে দেখাশোনা করত। সেখানে থাকাকালীন প্রতি সকাল ও সন্ধ্যায় আমি শ্রীমদ্ভগবদগীতার দশম অধ্যায়ের পাঠ শুনতাম। ফলে পরের জন্মে আমি পদ্মাবতী নামে এক অপ্সরা হয়ে জন্মালাম এবং স্বর্গলোকে বাস করতে লাগলাম।

একদিন পুষ্পক বিমানে ভ্রমণরত অবস্থায় এই সরোবরে একটি সুন্দর পদ্মফুল দেখতে পেলাম। সেখানে গিয়ে আমি জল-কেলি শুরু করলাম। সেই সময় দুর্বাসা মুনি এসে আমাকে সম্পূর্ণ নগ্ন অবস্থায় দেখলেন। তার ভয়ে সঙ্গে সঙ্গে আমি পাঁচটি পদ্মফুলের রূপ ধারণ করলাম। আমার দুই হাত দুটি পদ্ম, দুই পা দুটি পদ্ম এবং অবশিষ্ট শরীর থেকে পঞ্চম পদ্মের সৃষ্টি হল। দুর্বাসা মুনির চোখ থেকে আগুন ঝরতে লাগল। তিনি অভিশাপ দিয়ে বললেন, “রে পাপীয়সী! তুই একশো বছর এই অবস্থায় থাক আমাকে অভিশাপের পরই তিনি অদৃশ্য হলেন।

সৌভাগ্যক্রমে শ্রীমদ্ভগবদগীতার দশম অধ্যায় স্মরণে আমি সক্ষম ছিলাম। তাই অভিশাপের একশো বছর পূর্ণ হওয়ায় আজ আমি সেই অভিশাপ থেকে মুক্ত হয়েছি। আমাকে অতিক্রম করার জন্য তোমার ভূমিতে পতন হয়েছে এবং তুমি কৃষ্ণকায় হয়েছ। আমার কাছে শ্রীমদ্ভগবদগীতার দশম অধ্যায় শ্রবণ করলে এই অবস্থা থেকে তুমি নিষ্কৃতি পাবে। ‘’শ্রীমদ্ভগবদগীতার দশম অধ্যায় পাঠ শেষ করার পর পদ্মাবতী বৈকুণ্ঠে চলে গেল। তারপর আমি এখানে এসে এই মনোরম পদ্মটি আপনাকে দিলাম।”

ভগবান শিব বললেন, কৃষ্ণ-হংসটি তার কহিনী শেষ করার সঙ্গে সঙ্গে দেহত্যাগ করে ধীরবুদ্ধি নাম নিয়ে এক ব্রাহ্মণ পরিবারে জন্ম নিল। বাল্যকাল থেকেই ধীরবুদ্ধি সর্বদা শ্রীমদ্ভগবদগীতার দশম অধ্যায় পাঠ করত। তাই সেই পাঠ যে শুনবে, সে পতিতই হোক বা নেশায় উন্মত্তই হোক অথবা ব্রাহ্মণ-হত্যাকারী হোক, শঙ্খ-চক্রধারী শ্রীবিষ্ণুর দর্শন সে পাবেই। সেই কারণেই হে প্রিয় ভৃঙ্গী! আমি সর্বদা ধীরবুদ্ধির সেবা করছি। প্রিয়ে পার্বতি! পুরুষ বা নারী, সন্ন্যাসী বা গৃহস্থ, যে অবস্থাই হোক না কেন,
শ্রীমদ্ভগবদগীতার দশম অধ্যায় পাঠ করলেই বিষ্ণু দর্শনের সৌভাগ্য লাভ করবে।

💐হরে কৃষ্ণ💐👏📯📯📯📯📯💐📯📯📯📯📯👏 💐জয় শ্রীরাধা💐