💐💞 শ্রীমদ্ভগবদ্গীতা 💞💐

🌹🌻🌺💞💞💐💐💞💞🌺🌻🌹

🌻🌼💐 নবম অধ্যায়ের মাহাত্ম্য💐🌼🌻

🍇বিশেষ পোষ্ট🍇

শ্রী শ্রী গুরু গৌরাঙ্গ জয়তঃ

সকল সাধু,গুরু,বৈষ্ণব ও গৌর ভক্তবৃন্দের শ্রীচরণে আমার অনন্ত কোটি সাষ্টাঙ্গ দণ্ডবৎ প্রণাম I

''হরি - গুরু - বৈষ্ণব তিনিহেঁ স্মরণ।

তিনেহেঁ স্মরণ হইতে বিঘ্ন বিনাশন।।

অনায়াসে হয় নিজ বাঞ্ছিত পূরণ ।।‘’

নবম অধ্যায় - রাজগুহ্য - যোগ

ভগবান শিব বললেন,- হে প্রিয়ে পার্বতি! আমি তোমাকে শ্রীমদ্ভগবদগীতার নবম  অধ্যায়ের মাহাত্ম্য বলছি, একাগ্রচিত্ত তাহা শ্রবণ কর।

নর্মদা নদীতীরে মাহিষ্মতীনগরে মাধব নামে এক ব্রাহ্মণ বাস করতেন। তিনি বেদের সকল অনুশাসন খুব কঠোর ভাবে অনুসরণ করতেন এবং ব্রাহ্মণোচিত সকল সদগুণের অধিকারী ছিলেন। তার বিশাল পাণ্ডিত্যের জন্য তিনি প্রচুর দান পেতেন। তার এই সঞ্চিত অর্থের দ্বারা তিনি এক বিরাট অগ্নিহোত্র যজ্ঞ শুরু করেছিলেন। যজ্ঞের আহুতি দানের জন্য তিনি একটি ছাগশিশু কিনলেন। আহুতি প্রদানের উদ্দেশ্যে ছাগটিকে যখন স্নান করানো  হচ্ছিল, তখন সকলকে অবাক করে সেই ছাগটি হাসতে শুরু করে দিল। উচ্চ কণ্ঠে ছাগটি বলল,-  “ওহে ব্রাহ্মণ! যে যাগ-যজ্ঞ আমাদের জন্ম-মৃত্যুর চক্রে আবদ্ধ করে রাখে, সেই যজ্ঞ সম্পাদন করে কী লাভ? আমিতো কত যাগযজ্ঞ করেছি, তবুও আমার অবস্থাটা দেখ। উপস্থিত জনতার প্রত্যেকেই ছাগশিশুর কণ্ঠে এরূপ কথা শুনে কৌতূহলী হল এবং করজোড়ে ব্রাহ্মণটি জিজ্ঞাসা করলেন,-  “কী করে তুমি ছাগল হয়ে জন্মালে? পূর্ব জন্মে তুমি কোন জাতির অন্তর্ভুক্ত ছিলে এবং কি ধরনের কাজ তুমি করতে?

ছাগটি উত্তর করল,- “হে ব্রাহ্মণ! পূর্ব জন্মে আমি উচ্চ ব্রাহ্মণ পরিবারে জন্ম গ্রহণ করেছিলাম এবং বেদের নির্দেশিত সমস্ত ধর্মীয় আচার অতি সতর্কতার সঙ্গে পালনকরতাম। একদিন আমার স্ত্রী, আমার সন্তানের রোগারোগ্যের জন্য দুর্গাপূজার বাসনা করলেন। তাই তিনি আমাকে একটি ছাগশিশু এনে দিতে অনুরোধ করলেন।  সেই মতো যখন আমরা দুর্গামায়ের মন্দিরে ছাগ বলি দিলাম, তখন ছাগটি আমাকে  অভিশাপ দিয়ে বলল,-  “হে পাপিষ্ঠ, নিকৃষ্টতম নর! তুই আমার সন্তানদের পিতৃহীন করে দুঃখ প্রদান করলি। এজন্য তুইও পরজন্মে ছাগ হয়ে জন্মাবি।”  হে ব্রাহ্মণ! হে মাধব! সেইকারণে আমার মৃত্যুর পর আমি এই ছাগদেহ প্রাপ্ত হলাম। কিন্তু ভগবান গোবিন্দের কৃপায় আমি আমার পূর্বজন্মের কথা স্মরণ করতে পারি। আপনি যদি অন্য একটি প্রাসঙ্গিক গুরুত্বপূর্ণকাহিনী শুনতে চান তবে আমি তা আপনাকে বলব।

একদা কুরুক্ষেত্র নামক স্থানে চন্দ্ৰশর্মা নামে সূর্যবংশীয় একরাজা ছিলেন। একবার সূর্যগ্রহণের সময় রাজা এক ব্রাহ্মণকে কিছু দান করতে মনস্থ করলেন। সেই দানক্ষেত্রে একজন শূদ্র উপস্থিত হয়েছিল তার গায়ের রং ছিল সম্পূর্ণ কালো। রাজা তার পুরোহিতের সঙ্গে এক পবিত্র সরোবরে স্নান করে ধৌত বসন পরলেন, শরীরে চন্দন লেপন করে স্বস্থানে ফিরে এলেন। ভক্তি সহকারে এক যোগ্য ব্রাহ্মণকে কিছু দান করলেন। হঠাৎ সেই কৃষ্ণবর্ণ শূদ্রের দেহ থেকে এক পাপী চণ্ডাল বেরিয়ে আসল এবং তার অল্প সময় পরেই সেই কৃষ্ণবর্ণ চণ্ডালের দেহ থেকে এক স্ত্রী চণ্ডালও নির্গত হল। তারপর সেই দুই চণ্ডাল ব্রাহ্মণের দিকে এগিয়ে গিয়ে তার দেহে প্রবেশ করল।

ব্রাহ্মণটি অবিচলিতভাবে শান্ত থেকে ভগবান গোবিন্দকে স্মরণ করে শ্রীমদ্ভগবদ গীতার নবম অধ্যায় কীর্ত্তন করতে লাগলেন। এই সমস্ত কার্যকলাপ দেখে রাজা হতবুদ্ধি হয়ে গেলেন। তার বাস্ফুর্তি হল না। শ্রীমদ্ভগবদগীতার নবম অধ্যায়ের শব্দগুলি ব্রাহ্মণের ওষ্ঠাগত হওয়া মাত্রই তথায় বিষ্ণুদূতগণ উপস্থিত হয়ে ওই দুই চণ্ডালকে বিতাড়িত করলেন। রাজা ব্রাহ্মণের কাছে জানতে চাইলেন, পণ্ডিত প্রবর! এই দুই ব্যক্তি কারা এবং আপনি কোন মন্ত্র জপ করছিলেন? কোন বিগ্রহকেইবা স্মরণ করেছিলেন?

ব্রাহ্মণ উত্তর করলেন, 'চণ্ডালের মূর্তি ধারণ করে পাপ এবং চণ্ডালিনীর মূর্তি ধারণ করে অপরাধ উপস্থিত হয়েছিল। সেই সময় আমি শ্রীমদ্ভগবদগীতার নবম অধ্যায় জপ করতে শুরু করেছিলাম, কারণ এটি সকল ভয়ঙ্কর অবস্থা থেকে কাউকে মুক্ত করতে সক্ষম শ্রীমদ্ভগবদগীতার নবম অধ্যায় পাঠ করে আমি সর্বদা ভগবান গোবিন্দের শ্রীচরণকমল স্মরণ করছিলাম একথা শুনে রাজা সেই ব্রাহ্মণের কাছে শ্রীমদ্ভগবদগীতার নবম অধ্যায় পাঠ করার পদ্ধতি শিখলেন। ক্রমে তিনিও ভগবান গোবিন্দের শ্রীপাদপদ্ম লাভে সফল হলেন। ছাগের কাছে এই সকল আলোচনা শুনে তৎক্ষণাৎ ব্রাহ্মণ মাধব ছাগটিকে মুক্ত করে দিয়ে প্রতিদিন শ্রীমদ্ভগবদ্গীতার নবম অধ্যায় পাঠ শুরু করলেন এবং এইভাবে তিনিও ভগবান শ্রীগোবিন্দের শ্রীপাদপদ্ম লাভ করলেন।

🍁🌾🍁জয় শ্রীগোবিন্দের জয় 🍁🌾🍁 জয় সকল ভক্তবৃন্দের জয় 🍁🌾🍁