💐💞 শ্রীমদ্ভগবদ্গীতা 💞💐

🌹🌻🌺💞💞💐💐💞💞🌺🌻🌹

🌻🌼💐 একাদশ অধ্যায়ের মাহাত্ম্য💐🌼🌻

🍇বিশেষ পোষ্ট🍇

শ্রী শ্রী গুরু গৌরাঙ্গ জয়তঃ

সকল সাধু,গুরু,বৈষ্ণব ও গৌর ভক্তবৃন্দের শ্রীচরণে আমার অনন্ত কোটি সাষ্টাঙ্গ দণ্ডবৎ প্রণাম I

''হরি - গুরু - বৈষ্ণব তিনিহেঁ স্মরণ।

তিনেহেঁ স্মরণ হইতে বিঘ্ন বিনাশন।।

অনায়াসে হয় নিজ বাঞ্ছিত পূরণ ।।‘’

‘’নমস্ত্রিকাল - সত্যায় জগন্নাথ সুতায় চ।

স - ভৃত্যায় স -পুত্রায় স - কলত্রায় তে নমঃ।।‘’

একাদশ-অধ্যায়-বিশ্বরূপ-দর্শন

ভগবান শিব বললেন,- হে প্রিয়ে পার্বতি! আমি তোমাকে শ্রীমদ্ভগবদগীতার একাদশ  অধ্যায়ের মাহাত্ম্য বলছি, একাগ্রচিত্তে  তাহা শ্রবণ কর। এই অধ্যায়ের সম্পূর্ণ মাহাত্ম্য  বর্ণনা করা সম্ভব নয়, কারণ হাজার হাজার কাহিনী রয়েছে। তার মধ্যে মাত্র একটি কাহিনীর কথা আমি তোমাকে এখন বলব।

প্রণীতা নদীর তীরে মেঘঙ্কর নামে এক নগরে শ্রীজগদীশ্বরের মন্দির অবস্থিত। মন্দিরে ধনুক হাতে স্বয়ং জগদীশ্বর দণ্ডায়মান। মেঘঙ্করে সুনন্দ নামে এক শুদ্ধাচারী ব্রাহ্মণ বাস করতেন। যিনি আজীবন ব্রহ্মচারী। জগদীশ্বরের সামনে বসে সুনন্দ শ্রীমদ্ভগবদ্গীতার একাদশ অধ্যায় পাঠ করতেন এবং ভগবানের শাশ্বত সনাতন রূপের ধ্যান করতেন। এই একাদশ অধ্যায় পাঠের ফলে তিনি তার ইন্দ্রিয়ের ওপর সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ ক্ষমতা অর্জন করলেন এবং ভগবান জগদীশ্বরকে অবিরাম স্মরণ করতে সমর্থ হয়েছিলেন।

একদা সেই শুদ্ধাচারী ব্রাহ্মণ সুনন্দ গোদাবরী নদীর তীরে তীর্থ পর্যটনে বার হলেন। বিরাজ-তীর্থ থেকে শুরু করে তিনি সকল তীর্থই ভ্রমণ করলেন এবং সব তীর্থেই স্নান করে অধিষ্ঠিত বিগ্রহসমূহ দর্শন করলেন। একদিন তিনি বিবাহ মণ্ডপ নগরীতে পৌঁছালেন। অন্যান্য সহযাত্রীদের সঙ্গে নিয়ে তিনি বিশ্রামের স্থান খুঁজতে খুঁজতে নগরের মধ্যস্থলে একটি ধর্মশালা পেয়ে গেলেন এবং সেখানে তাঁরা রাত্রি যাপন করলেন। সকালে ঘুম থেকে উঠে সুনন্দ দেখলেন তার সব সঙ্গীরা তাকে ফেলে চলে গেছে। তাদের খুঁজতে গিয়ে নগরপালের সঙ্গে তার সাক্ষাৎ হল। নগরপাল তার পায়ে পড়ে বলল, ‘’হে মহামুনি! আপনার সঙ্গীরা কোথায় গিয়েছে, তা আমি বলতে পারব না। কিন্তু এটা আমি বলতে পারি যে আপনার সমকক্ষ ভক্ত কেউ নেই। আপনার মতো শুদ্ধ ভক্ত আমি কখনও দেখিনি। হে বাহ্মণ! এই নগরে থাকবার জন্য আপনাকে আমি অনুরোধ  করছি।‘’  নগর পালের এই বিনীত অনুনয় শুনে তিনি কিছুদিন সেখানে থাকতে মনস্থ করলেন।

সুনন্দের স্বাচ্ছন্দ্যপূর্ণ অবস্থিতির জন্য সব ব্যবস্থাই তিনি করলেন এবং নিজে রাত্রি দিন তার সেবায় নিযুক্ত থাকলেন। আট দিবস অতিক্রান্ত হওয়ার পর এক বাহ্মণ সুনন্দের কাছে এসে উচ্চস্বরে কাঁদতে কাঁদতে বলল, “হে শুদ্ধাচারী বাক্ষণ! গত রাতে এক রাক্ষস আমার ছেলেকে ভক্ষণ করেছে।” সুনন্দ জিজ্ঞাসা করলেন, “সেই রাক্ষস কোথায় থাকে এবং কিভাবে সে তোমার ছেলেকে খেয়ে ফেলল।‘’ গ্রামবাসীটি উত্তরে বলল, “এই নগরে এক অতি ভয়ঙ্কর রাক্ষস বাস করে। প্রতিদিন তার ইচ্ছা মতো গ্রামবাসীদের ধরে ধরে খায়। একদিন আমরা সবাই মিলে তার কাছে গিয়ে আমাদের বাঁচাতে অনুরোধ করলাম। বিনিময়ে আমরা তার রোজ খাদ্যের যোগান দেব বললাম।।

ধর্মশালা বানানো হল। যে সকল পথিক এখানে বেড়াতে আসত তাদের সেই ধর্মশালায় পাঠানো হত এবং যথারীতি রাত্রিতে যখন তারা ঘুমিয়ে থাকত, তখন সেই রাক্ষস এসে তাদের ধরে খেত। এইভাবে আমরা রাক্ষসের হাত থেকে নিজেদের বাঁচাতে সক্ষম হলাম। আপনি আপনার সঙ্গীদের সঙ্গে এই ধর্মশালায় ছিলেন। রাক্ষসটি কিন্তু আপনার সঙ্গীদের সঙ্গে আপনাকে খায়নি। এর কারণ বলছি শুনুন।গত রাতে আমার ছেলের এক বন্ধুকে আমি এই ধর্মশালায় পাঠিয়েছিলাম। আমি বুঝতে পারিনি যে, সে ছিল আমার ছেলের অতি ঘনিষ্ঠ ও প্রিয় বন্ধু। আমার ছেলে এটা জানতে পেরে তার বন্ধুকে ফিরিয়ে আনতে যখন সেখানে গেল, রাক্ষসটি তাকেও খেয়ে ফেলল। আজ সকালে আমি তাই রাক্ষসের কাছে। গিয়ে কেন সে অন্যদের সঙ্গে আমার ছেলেকেও ভক্ষণ করেছে জানতে চাইলাম। ছেলেকে ফিরে পাওয়ার যদি কোন উপায় থাকে সেটাও তাকে জিজ্ঞাসা করলাম।”রাক্ষসটি আমাকে বলল, ‘’তোমার ছেলেও যে এই ধর্মশালায় প্রবেশ করেছিল আমি তা জানতাম না। তাই অন্যদের সঙ্গে তাকেও আমি খেয়ে ফেলেছি।

এখন তাকে ফিরে পাওয়ার একটা মাত্রই উপায় আছে। সেটা হল কোন ব্যক্তি যদি কৃপা করে শ্রীমদ্ভগবদগীতার একাদশ অধ্যায় শুদ্ধ ভাবে পাঠ করে, তবে আমি এই রাক্ষস শরীর থেকে মুক্ত হব, আর তখনই তুমি তোমার ছেলেকে ফিরে পাবে। এইক্ষণে এই শহরের ধর্মশালায় এক ব্রাহ্মণ অবস্থান করছেন। আমি তাকে ভক্ষণ করিনি, কারণ তিনি প্রতিদিন শ্রীমদ্ভগবদগীতার একাদশ অধ্যায় পাঠ করেন। তিনি যদি এই অধ্যায়টি সাতবার পাঠ করে আমার শরীরে পবিত্র জল ছিটিয়ে দেন, তাহলে আমি এই রাক্ষসের অভিশপ্ত দেহ থেকে মুক্ত হব।‘’ সুনন্দ গ্রামবাসীটির কাছে জানতে চাইলেন, “কী পাপ এই ব্যক্তিটি করেছিল যার জন্য তার এই রাক্ষস শরীর লাভ হয়েছে?”

গ্রামবাসীটি জানাল, বহু পূর্বে এখানে এক কৃষক বাস করত একদিন সে যখন মাঠ পাহারা দিচ্ছিল তখন অল্পদূরে সে এক বিরাট শকুন কর্তৃক এক পথচারীকে আক্রান্ত হতে দেখল। সেইসময় একজন যোগী রাস্তা দিয়ে যাচ্ছিলেন। লোকটিকে শকুন কর্তৃক আক্রান্ত দেখে দৌড়ে তাকে সাহায্য করতে গেলেন, কিন্তু ততক্ষণে অনেক বিলম্ব হয়ে গেছে। তখন যোগীপুরুষটি কৃষকের ওপর ক্রুদ্ধ হয়ে বললেন, ‘অন্যকে চোর-ডাকাত, সাপ, আগুন, অস্ত্রের দ্বারা আক্রান্ত হতে দেখে যদি কারও সাহায্য করার ক্ষমতা থাকা সত্ত্বেও সাহায্য করতে এগিয়ে না আসে যমরাজ তাকে শাস্তি দেন। বহুকাল নরকের জ্বালা ভোগ করে সে নেকড়ে হয়ে জন্মায়। আর কেউ যদি কাউকে প্রয়োজনের সময় সাহায্য করে, তবে নিশ্চিতই ভগবান বিষ্ণু তার প্রতি তুষ্ট হন।

কেউ যদি গরুকে কোন হিংস্র জন্তুর হাত থেকে, নীচ জাতির মানুষের হাত থেকে, অথবা দুষ্ট শাসকের হাত থেকে বাঁচাতে চেষ্টা করে, সে ভগবান বিষ্ণুকে লাভ করে। দুষ্ট কৃষক! লোকটিকে শকুনের দ্বারা আক্রান্ত দেখেও তুই তাকে বাঁচানোর কোন চেষ্টাই করিসনি। তাই আমি অভিশাপ দিচ্ছি তুই রাক্ষস হয়ে জন্মাবি। কৃষকটি বলল, ‘সারা রাত আমি মাঠ পাহারা দিয়েছি। তাই আমি খুব ক্লান্ত। অতএব, হে মুনিবর! দয়া করে আমাকে কৃপা করুন। যোগী বললেন, কেউ যদি শ্রীমদ্ভগবদগীতার একাদশ অধ্যায় পাঠ করে তোমার মস্তকে জল সিঞ্চন করে, তাহলেই তুমি শাপ মুক্ত হবে। গ্রাম্য লোকটি বলল, ‘’প্রিয় সুনন্দ! কৃপা করে আপনি শ্রীমদ্ভগবদগীতার একাদশ অধ্যায় পাঠ করে এই রাক্ষসের মাথায় পবিত্র জল ছিটিয়ে দিন।

গ্রামবাসীর কাছে এই ইতিহাস শুনে সুনন্দ সঙ্গে সঙ্গে সেই রাক্ষসের কাছে গিয়ে শ্রীমদ্ভগবদগীতার একাদশ অধ্যায় পাঠ করে সেই রাক্ষসের মাথায় জল সিঞ্চন করলেন। সঙ্গে সঙ্গে রাক্ষসটি ভগবান বিষ্ণুর মতো চতুর্ভুজ মূর্তি ধারণ করল। সেই রাক্ষসই শুধু নয়, তার ভক্ষিত হাজার হাজার লোকের একই গতি হল, সকলেই চতুর্ভুজ মূর্তি লাভ করল। তারপর ভগবান প্রেরিত পুষ্পক বিমানে চড়ে সকলেই বৈকুণ্ঠে চলে গেল। এই বিস্ময়কর ঘটনাটি দেখে গ্রামবাসীটি জানতে চাইল এদের মধ্যে কোন জন তার ছেলে। এত দিন রাক্ষস রূপে থাকা লোকটি হাঁসতে শুরু করল এবং সেই দিব্য  রথে উপবিষ্ট হাজার হাজার সুপুরুষদের মধ্যে একজনকে নির্দেশ করে বলল, ‘’এই হল তোমার ছেলে। গ্রামবাসীটি তার ছেলেকে তার সঙ্গে বাড়ি যেতে মিনতি করল।

পিতার অনুরোধে হেঁসে হেঁসে পুত্রটি বলল,- হে মহাশয়! বহু জন্ম ব্যাপী তুমি আমার পিতা এবং আমি তোমার পুত্র হয়েছি, কিন্তু এখন এই মহান শুদ্ধ ভক্ত সুনন্দের কৃপায় জন্ম-মৃত্যুর চক্র থেকে মুক্ত হয়ে আমি আমার প্রকৃত গৃহ বৈকুণ্ঠে যাচ্ছি। মহাশয়! অনুগ্রহ করে সুনন্দের পাদপদ্মে শরণ নিয়ে শ্রীমদ্ভগবদগীতার একাদশ অধ্যায় শ্রবণ কর। তাহলে তুমিও ভগবান বিষ্ণুর আবাসে (বৈকুণ্ঠে) স্থান পাবে এতে কোন সন্দেহ নেই। কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধক্ষেত্রে সখা অর্জুনের প্রশ্নের উত্তরে ভগবান শ্রীকৃষ্ণের মুখ থেকে এই অমৃত নির্দেশ নির্গত হয়েছিল। এই আলোচনা ও গীতার একাদশ অধ্যায়ের পাঠ শুনে যে কেউ জন্ম-মৃত্যু চক্রের দৃঢ় বন্ধন ছিন্ন করতে পারে।‘’

শ্রীশিব বললেন,-  এই সব জ্ঞানগর্ভ কথা বলে অন্যান্য ভাগ্যবান আত্মার সঙ্গে সে বৈকুণ্ঠে চলে গেল। তার পিতা সুনন্দের কাছ থেকে শ্রীমদ্ভগবদগীতার একাদশ অধ্যায় শিক্ষা করে এবং অনতিবিলম্বে বৈকুণ্ঠে চলে যান। প্রিয়ে পার্বতি! সকল পাপকর্মের প্রতিক্রিয়া নাশে সক্ষম শ্রীমদ্ভগবদগীতার একাদশ অধ্যায়ের মাহাত্ম্য শ্রবণ ও কীর্ত্তন।

💐জয় পতিত পাবন শ্রীভগবানের জয়💐