🍁পরম ভাগবত দেবর্ষি নারদ 🍁

🌷🌺🏵️🍁💞🌺🌸🌻🌸🌺💞🍁🏵️🌺🌷

বিশেষ পোষ্ট

শ্রী শ্রী গুরু গৌরাঙ্গ জয়তঃ

সকল সাধু,গুরু,বৈষ্ণব ও গৌর ভক্তবৃন্দের শ্রীচরণে আমার অনন্ত কোটি সাষ্টাঙ্গ দণ্ডবৎ প্রণাম I

‘’হরি - গুরু - বৈষ্ণব তিনিহেঁ স্মরণ।

তিনেহেঁ স্মরণ হইতে বিঘ্ন বিনাশন।।

অনায়াসে হয় নিজ বাঞ্ছিত পূরণ ।।‘’

''স্বয়ম্ভুর্নারদঃ শম্ভুঃ কুমারঃ কপিলো মনুঃ।

প্রহ্লাদো জনকো ভীষ্মো বলিরব্যাসকির্বয়ম।।'' ---(শ্রীমদ্ভাগবত ৬/৩/২০)

দেবর্ষি নারদ মুনি হলেন, সনাতনী হিন্দু পৌরাণিক কাহিনী মতে, ব্রহ্মার মানসপুত্র। ইনি ত্রিকালজ্ঞ, বেদজ্ঞ ও তপস্বী। নারদ শব্দের অর্থ জল। ইনি সব সময় তর্পণের জন্য জল দান করতেন বলে এঁর নাম হয় নারদ। কল্পযুগের শেষে শ্রীবিষ্ণু যখন সমুদ্রের জলে শায়িত ছিলেন, তখন তাঁর নিঃশ্বাস যোগে নারদ বিষ্ণুর অন্তরে প্রবেশ করেন। শ্রীবিষ্ণু তাঁর নিদ্রা ত্যাগ করে যখন সৃষ্টির ইচ্ছা করেন। তখন তাঁর ইন্দ্রিয় থেকে ব্রহ্মার উৎপত্তি হয় এবং ব্রহ্মার মন থেকে নারদ আবির্ভূত হন। ইনি সেই থেকে দেবদত্ত বীণায় হরি গান করে সর্বত্র ভ্রমণ করতে থাকেন।

ব্রহ্মাবৈবর্ত পুরাণের মতে, এঁর জন্ম হয়ে ছিলো ব্রহ্মার কণ্ঠ থেকে। প্রথমে ব্রহ্মা তাঁকে সৃষ্টির ভার দেন। সৃষ্টির কাজে ব্যস্ত থাকলে ঈশ্বর চিন্তা বিঘ্নিত হবে বিবেচনা করে ইনি ব্রহ্মার আদেশ মানতে রাজী হলেন না। ফলে ব্রহ্মা তাঁকে অভিশাপ দিয়ে বলেন যে, নারদকে গন্ধমার্দ্ধন পর্বতে গন্ধর্ব যোনিতে জন্মগ্রহণ করতে হবে। যথা সময়ে ইনি গন্ধর্ব যোনিতে জন্ম গ্রহণ করেন। এই সময় তাঁর নাম ছিলো উপবর্হণ। এই জন্মে ইনি চিত্ররথের ৫০টি কন্যাকে বিবাহ করেন। এর পরে ইনি এক আসরে রম্ভার নাচ দেখে উত্তেজিত হলে, তাঁর বীর্যপাত হয়। এতে ক্রুদ্ধ হয়ে, শ্রী ব্রহ্মা তাকে শূদ্র হওয়ার অভিশাপ দেন। ব্রহ্মার এই অভিশাপে কলাবতী নামক এক শূদ্রাণীর গর্ভে ইনি জন্মগ্রহণ করেন।

শূদ্র কূলে জন্মের পরই তার পিতা মারা যান,মাতা পরিচারিকার কাজ করে তার ভরণ-পোষণ করেন। একদা তার গ্ৰামে কিছু সাধু-মহাত্মা চতুর্মাস্য উদযাপন করার জন্য এলে তাদের সাথে নারদ সময় কাটাতে থাকেন এবং সাধুদের উদ্বৃত্ত/ উচিষ্ট  খাদ্য সানন্দে প্রসাদরূপে গ্ৰহন করে ক্ষুধা মেটাতেন। সাধুসেবা ও সৎসঙ্গ অমোঘ ফলপ্রদানকারী হয়ে থাকে। তার প্রভাবে নারদ এর মন পবিত্র হয়ে ওঠে এবং সমস্ত পাপ ক্ষয় হয়ে যায়। মহাত্মারা চলে যাওয়ার সময় একে ভগবদ্-নাম-জপ ও ভগবদ্-স্বরূপ -ধ্যান করার উপদেশ দেন।

সর্প দংশনে নারদের মাতার মৃত্যু হয়। তখন তাঁর বয়স মাত্র ৫ বছর, এইসব ভগবান এর অনুগ্ৰহ করে ইনি অনাথের নাথ দীননাথ এর ভজন করতে বেড়িয়ে পরেন। একদিন ধ্যান করতে করতে হঠাৎ তার হৃদয়ে ভগবান প্রকাশমান হলেন এবং দিব্যস্বরূপ দেখিয়ে অন্তর্হিত হলেন। ভগবান কে আবার দেখার জন্য নারদের মনে ব্যাকুলতা সৃষ্টি হলে তখন দৈববাণী শোনা গেল,- 'হে দাসীপুত্র! এ জন্মে তুমি আমার দর্শন পাবে না,পরের জন্মে তুমি আমায় পারিষদরূপে পুনরায় লাভ করবে ।

কয়েক কল্পযুগ পরে ব্রহ্মা পুনরায় সৃষ্টি আরম্ভ করলে, আবার ইনি শ্রীব্রহ্মার মানস পুত্র রূপে অবতীর্ণ হন। এইবার.ইনি বীণা যোগে সঙ্গীত পরিবেশন করে সকলকে মোহিত করা শুরু করেন। পুরাণ মতে, নারদ সর্বদাই নানা রাগ-রাগিণী যুক্ত সঙ্গীত পরিবেশন করতেন। কিন্তু সব সময় তাঁর সঙ্গীতে কিছু না কিছু ত্রুটি থেকে যেতো। কিন্তু নারদ এই ত্রুটি নিজে বুঝতে পারতেন না। সেই কারণে নারদ তাঁর নিজের গান নিয়ে খুব গর্ব করতেন। নারদের এই গর্বকে খর্ব করার জন্য একবার রাগ-রাগিণীরা বিকলাঙ্গ নর-নারীর রূপ গ্রহণ করে নারদের যাত্রা পথে উপস্থিত হলেন। নারদ এই বিষয় অবগত ছিলেন না বলে, ইনি উক্ত বিকলাঙ্গ নারী-পুরুষরূপী রাগ-রাগিণীকে তাঁদেরকে বিকলাঙ্গের কারণ জিজ্ঞাসা করলেন। তখন তাঁরা বললেন যে, তাঁরা নারদের বিকৃত সঙ্গীতের রূপ।

নারদ এই কথা শুনে ব্যাকুল হয়ে, তাঁদেরকে প্রকৃষ্টরূপে সঙ্গীত পরিবেশনের উপায় জিজ্ঞাসা করলেন। উত্তরে তাঁরা বললেন যে, মহাদেবের গান শুনলে তাঁদের বিকলাঙ্গতা দূর হবে। এরপর নারদ মহাদেবের কাছে সঙ্গীত শোনার আবেদন জানালে, মহাদেব জানালেন যে, প্রকৃষ্ট শ্রোতা ছাড়া তিনি গান শোনাবেন না। পরে নারদ মহাদেবের পরামর্শ অনুসারে ব্রহ্মা ও বিষ্ণুকে অনুরোধ করে আসরে নিয়ে আসেন। মহাদেবের গান শোনার পর রাগ-রাগিণীদের বিকলাঙ্গতা দূর হয়। এই সঙ্গীতের মর্ম ব্রহ্মা বুঝতে পারলেন না। কিন্তু ভগবান বিষ্ণু বুঝতে পেরেছিলেন। ফলে ইঁহার শরীর দ্রবীভূত হয়। বিষ্ণুর এই দ্রবীভূত অংশ ব্রহ্মা তাঁর কমণ্ডলুতে ধারণ করেন। বিষ্ণুর এই দ্রবীভূত অংশই গঙ্গা নামে খ্যাত হয়।

নারদের সঙ্গীতের প্রতি আকর্ষণ লক্ষ্য করে, বিষ্ণু উলুকেশ্বর নামক এক গন্ধর্বের কাছে তাঁকে সঙ্গীত শিক্ষার জন্য পাঠান। তাঁকে বিভিন্ন স্থানে বিভিন্ন ভূমিকায় দেখা যায়। ইনি কৃষ্ণের জন্মবৃত্তান্ত পূর্বেই কংসকে জানিয়েছিলেন। ধ্রুবের তপস্যায় মন্ত্রদাতা ছিলেন, মহাদেব-পার্বতীর বিবাহের ঘটক ছিলেন, দক্ষের অহঙ্কার নাশে ইনি বিশেষ ভূমিকা রাখেন। রামায়ণের মূল কাহিনী তিনি বাল্মীকিকে শুনিয়েছিলেন। পরে এই কাহিনী অবলম্বনে বাল্মীকি রামায়ণ রচনা করেছিলেন। এছাড়া ইনি দূত হিসাবেও বিভিন্ন সময় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছেন।

ইনি কথা গোপন করে রাখতে পারতেন না। কখনো কখনো অবিবেচকের মতো কথা বলে, বিপর্যয় ডেকে আনতেন। কংসের কাছে, শ্রীকৃষ্ণের জন্মগ্রহণ এবং কৃষ্ণকর্তৃক কংসবধের কথা বলেছিলেন। বিন্ধ্যপর্বতের কাছে সুমেরুর গুণকীর্তন করে, পৃথিবীর বিপর্যস্ত করেন। পরে এই বিপর্যয় থেকে অগস্ত্য মুনি পৃথিবী রক্ষা করেন।

ভগবানের ভক্তদের মধ্যে নারদ ছিলেন সর্বশ্রেষ্ট। ইনি ভগবানের ভক্তি ও মাহাত্ম্য প্রচারের জন্য তাঁর বীণার মধুর তানে ভগবদ্ গুন গান করতে করতে নিরন্তর বিচরণ করতেন।একে ভগবানের "মন" বলা হয় । এঁর প্রণীত ভক্তি সূত্রের ভক্তির অত্যন্ত সুন্দর ব্যাখ্যা আছে। আজও এটি অপ্রত্যক্ষ রূপে ভক্তদের সহায়তা করে থাকে। ভক্ত প্রহ্লাদ,ভক্ত অম্বরীষ,ভক্ত ধ্রুব প্রমুখ কে উপদেশ প্রদান করে ইনি তাদের ভক্তির মার্গে প্রবৃত্ত করেছেন ‌ সমগ্ৰ লোকেরঅবাধ গতি। নারদের মঙ্গলময় জীবন সংসারের মঙ্গলের জন্য। ইনি জ্ঞানের স্বরূপ, বিদ্যার ভাণ্ডার, আনন্দের সাগর এবং সর্ব প্রাণীর অকারণ প্রেমিক এবং স্বভাবতই বিশ্বের হিতাকাঙ্ক্ষী।  

💐জয় শ্রীনারদমুনির জয়🌺🏵️🌺জয় সকলভক্তবৃন্দের জয়💐