🦚💐🏵️🌺🌷🌺🏵️💐🦚

🌳🌴বৃন্দাবনের নিধিবন🌴🌳

🦚💐🏵️🌺🌷🌺🏵️💐🦚

শ্রী শ্রী গুরু গৌরাঙ্গ জয়তঃ

 

শ্রী শ্রী গুরু গৌরাঙ্গ জয়তঃ

সকল সাধু, গুরু, বৈষ্ণব ও গৌর ভক্তবৃন্দের শ্রীচরণে আমার অনন্ত কোটি সাষ্টাঙ্গ দণ্ডবৎ প্রণাম I

‘’গুরু - বৈষ্ণব  - ভগবান তিনিহেঁ স্মরণ ।

তিনেহেঁ স্মরণ হইতে হয় বিঘ্ন বিনাশন ।।

অনায়াসে হয় নিজ বাঞ্ছিত পূরণ । I’’

 

গুরবে গৌরচন্দ্রায় রাধিকায়ৈ তদালয়ে।

কৃষ্ণায় কৃষ্ণভক্তায় তদ্ভক্তায় নমো নমঃ।।

 

নিধিবন অনেক চমৎকারী রহস্যে পূর্ন। ব্রজ বাসীদের বিশ্বাস যে, এখানে আজও শ্রীকৃষ্ণ গোপীদের নিয়ে রাসলীলা করেন। রাসলীলা খেলতে রাধাকৃষ্ণ এখনও আসেন নিধিবনে । সারারাত ধরে তাঁরা সেখানে রাস (নাচ গান ) করেন । থাকেন গোপিনীরা, শোনা যায় নূপুরের নিক্কণ, দিনের আলো ফোটার আগেই সবাই অদৃশ্য হয়ে যান। কোথায় আছে সেই নিধিবন ? আছে মথুরা জেলার বৃন্দাবনে । আগে তাকে ডাকা হত মধুবন বলে ।

 

নিধিবন মন্দিরে শ্রীকৃষ্ণ পূজিত হন বাঁকেবিহারী রূপে । সকাল থেকে সারাদিন মন্দিরে পা পড়ে অসংখ্য পুণ্যার্থীর । বিকেল ৫ টার পরে কোনও ভক্তকে নিধিবনে থাকতে দেওয়া হয় না । সন্ধ্যা আরতির পরে রাত আটটা নাগাদ মন্দির বন্ধ করে চলে যান স্বয়ং পূজারী । বন্ধ করে দেওয়া হয় দেবালয়ের সব দরজা- জানালা । এরপর সেখানে আর কেউ থাকে না। এমনকি সারাদিন যেসব পশু-পক্ষী নিধিবনে থাকে, তারাও সন্ধ্যা হতেই নিধিবন ত্যাগ করে অন্যত্র চলে যায়।

রাত্রিবেলায় এখানে কাউকে থাকতে দেওয়া হয়না । পূজারী এবং ভক্তদের বিশ্বাস, রাতের অন্ধকারে প্রতিটি গাছ এক এক জন গোপী হয়ে ওঠেন, জ্বলে ওঠে আলো, রাধা এবং গোপীদের সঙ্গে রাসলীলা শুরু করেন কৃষ্ণ । গোটা রাত মন্দির এবং বাগানে নাচগান করে আবার মিলিয়ে যান সবাই । অনেকে নাকি শুনেছেন তাঁদের ঘুঙুরের শব্দও । জনশ্রুতি  আছে যে, কোনো ব্যক্তি যদি রাসলীলা দেখার চেষ্টা করে, তবে সে হয় পাগল, নয় চিরতরে দৃষ্টিহীন হয়ে যায় , নতুবা তার মৃত্যু ঘটে । একথা জানা সত্ত্বেও অনেকে কৌতূহলের বশবর্তী হয়ে নিধিবনের ঝোঁপে লুকিয়ে শ্রীকৃষ্ণের দর্শন করতে চেয়েছেন, রহস্যভেদে  চেষ্টা করেছিলেন রাত্রিবাসের । কিন্তু পরের দিন, হয় তাঁকে মৃত অবস্থায় পাওয়া গেছে, নয়তো সে পাগল হয়ে গেছে , অপ্রকৃতিস্থ অবস্থায় বলতেই পারেনি রাতের ঘটনা ।

মন্দির ঘিরে আছে তুলসির বন,— বিশেষত্ব হলো এখানকার জোড়া তুলসী গাছ। নিধি বনে সব তুলসী গাছ জোড়ায় থাকে। এর পেছনে প্রচলিত ধারণাটি হলো ,— যখন রাধা-কৃষ্ণ বনে রাসলীলা করেন তখন এই জোড়া গাছ গুলি গোপীরূপ ধারণ করেন । প্রচলিত বিশ্বাস, অগুনতি শাখামৃগর বাসা হলেও এই গাছগুলো আসলে ব্রজভূমির গোপিনী । ভোর হতেই তাঁরা সবাই আবার তুলসী গাছে পরিণত হন। আছে বড় গাছও , গাছগুলির গঠনও বড় অদ্ভূত । আশ্চর্য জনক ভাবে, মন্দিরের পাশে সব গাছের কাণ্ড ফাঁপা, ডালপালা নুয়ে আছে নিচের দিকে । আমরা সাধারণতঃ গাছের শাখাকে উপরের দিকে বড় হতে দেখি । কিন্তু নিধিবনের গাছের শাখা নিচের দিকে বড় হয় । এখানকার গাছগুলি এত ঘন যে চলার রাস্তা তৈরীর জন্য এই গাছগুলোকে লাঠির সাহায্যে  ঠেকনা দিয়ে রাখা হয়।

 ভিতরে আছে রঙ্গমহল নামে একটি ছোট মন্দির । এই মন্দির নিয়েও জনশ্রুতি প্রচলিত আছে । তা হলো শ্রীরাধা-কৃষ্ণ প্রতি রাতে এই মন্দিরে বিশ্রাম করেন। এই জন্য মন্দির বন্ধ করার আগে রঙ্গমহলে শ্রীরাধা ও কৃষ্ণের জন্য চন্দনের পালঙ্ক, জলের পাত্র, শৃঙ্গার উপকরণ, ভোগের সামগ্রী , পান ইত্যাদি রাখা হয়। সব কিছু সাজিয়ে রাখার পরে মন্দিরের দরজা বন্ধ করে দেওয়া হয়। পরদিন সকালে মন্দিরের দরজা খুলে দেখা যায়, প্রতিটি জিনিস ব্যবহৃত হয়েছে । আধখাওয়া হয়ে পড়ে আছে খাবার, বাকি জিনিস অগোছালো অবস্থায় পড়ে আছে, — যেমন চর্ব্বিত তাম্বুল পড়ে থাকে, জলের পাত্র খালি হয়ে থাকে ইত্যাদি ।

নিধিবনে অবস্থিত ললিতাকুণ্ড ও বিশাখা কুণ্ড সম্পর্কে প্রচলিত কাহিনীটি হলো যে, একবার ভগবান শ্রীকৃষ্ণ সখীদের নিয়ে রাসলীলা করার সময় সখীদের তৃষ্ণাবোধ হয় । তৃষ্ণা নিবারণের জন্য ভগবান নিজের বাঁশী দিয়ে কুণ্ডদুটি খনন করেন ।  এই‌ বনে বংশীচোর রাধারাণীর মন্দির আছে। এখানে রাধারাণীর বংশীচোর নামে প্রসিদ্ধ হওয়ার পেছনে এক কাহিনী আছে।  শ্রীকৃষ্ণের বাঁশির প্রতি শ্রীরাধা এবং গোপীদের মনে সর্ব্বদাই হিংসাভাব রয়েছে । কারণ শ্রীকৃষ্ণের অধরসুধা,  যা কেবল গোপীদেরই প্রাপ্য , বাঁশী শ্রীকৃষ্ণের ওষ্ঠলগ্ন হয়ে সর্ব্বদাই সেই অধরসুধা পান করে থাকে । এছাড়া বাঁশি বাজানোতে কৃষ্ণ এত মগ্ন হয়ে যান যে,  রাধারাণীর প্রতি তাঁর ধ্যানই থাকে না। একবার শ্রীরাধা ভগবান কৃষ্ণের প্রতি অভিমান বশে তাঁর বাঁশিটি চুরি করার মতলব আঁটেন । শ্রীকৃষ্ণ ঘুমিয়ে পড়লে রাধারাণী ভগবানের বাঁশিটি চুরি করে এখানে লুকিয়ে রেখেছিলেন। তখন থেকে এই মন্দিরটি বংশীচোর রাধারাণীর নামে প্রসিদ্ধি লাভ করেছে ।

অনেক চমৎকারী রহস্যে পূর্ণ নিধিবন ঘিরে আছে জনশ্রুতি আর লৌকিক বিশ্বাস। বিশ্বাসে মিলায় বস্তু, তর্কে বহুদূর — এই তত্ত্ব মনে রেখে বৃন্দাবনবাসী বিশ্বাস করেন, নিধিবনে সত্যি নিধি বা সম্পদ আছে,  আছে কৃষ্ণ লীলার ঐশ্বরিক সম্পদ ।

🌳🌴🦚💐🏵️🌺🌷🌺🏵️💐🦚🌴🌳

 সম্ প্রার্থনাত্মিকা

গৌরাঙ্গ বলিতে হবে পুলক- শরীর ।

হরি হরি বলিতে নয়নে ব'বে নীর ।।

অার কবে নিতাই চাঁদের করুণা হইবে ।

 সংসার- বাসনা মোর করে তুচ্ছ হবে ।।

বিষয় ছাড়িয়া কবে শুদ্ধ হবে মন ।

কবে হাম হেরব শ্রীবৃন্দাবন ॥

রূপ- রঘুনাথ পদে কবে হবে মতি ।

কবে হাম বুঝব যুগল পিরিতি ॥

রূপ -রঘুনাথ- পদে রহু মোর আশ ।

প্রার্থনা করয়ে সদা নরোত্তম দাস ।।

🌳🌴🦚💐🏵️🌺🌷🌺🏵️💐🦚🌴🌳

 দৈন্যবোধিকা

হরিহরি ! কি মোর করম গতি মন্দ ।

ব্রজে রাধাকৃষ্ণপদ, ন ভজিনু তিল-আধ,

 না বুঝিনু রাগের সম্বন্ধ ৷।

স্বরূপ সনাতন রূপ, রঘুনাথ ভট্টযুগ,

ভূগর্ভ শ্রীজীব লোকনাথ ।

ইহা সভার পাদপদ্ম, না সেবিনু তিল-আধ,

 আর কিসে পূরিবেক সাধ ।।

কৃষ্ণদাস কবিরাজ, রসিক ভকত-মাঝ,

যেঁহো কৈল চৈতন্যচরিত।

 গৌর -গোবিন্দ- লীলা, শুনিতে গলয়ে শিলা ,

 তাহাতে না হৈল মোর চিত ৷।

সে-সব ভকত-সঙ্গ, যে করিল তার সঙ্গ,

তার সঙ্গে কেনে নহিল বাস ।

কি মোর দুঃখের কথা, জনম গোঙাইনু বৃথা,

ধিক্ ধিক্ নরোত্তম দাস ॥

🌳🌴🦚💐🏵️🌺🌷🌺🏵️💐🦚🌴🌳

সম্ - প্রার্থনাত্মিকা

 

রাধাকৃষ্ণ ! নিবেদন এই জন করে ।

দেহ অতি রসময়, সকরুণ- হৃদয়,

 অবধান কর নাথ ! মোরে ।।

হে কৃষ্ণ গোকুলচন্দ্র, গোপীজনবল্লভ,

 হে কৃষ্ণপ্রেয়সী শিরোমণি !

 হেমগৌরী শ্যাম-গায়, শ্রবণে পরশ পায়,

গুণ শুনি জুড়ায় পরাণী ॥

অধম দুৰ্গতিজনে, কেবল করুণামনে,

ত্রিভুবনে এ যশ- খেয়াতি ।

 শুনিয়া সাধুর মুখে, শরণ লইনু সুখে,

 উপেখিলে নাহি মোর গতি ৷।

জয় রাধে জয় কৃষ্ণ, জয়জয় রাধে কৃষ্ণ,

 কৃষ্ণকৃষ্ণ জয়জয় রাধে ।

 অঞ্জলি মস্তকে করি, নরোত্তম ভূমে পড়ি

 কহে দোঁহে পূরাও মনসাধে ।।

🌳🌴🦚💐🏵️🌺🌷🌺🏵️💐🦚🌴🌳

স্বাভীষ্ট- লালসা

 

হরিহরি হেন দিন হইবে আমার ।

দুঁহ অঙ্গ পরশিব, দুঁহ অঙ্গ নিরখিব,

সেবন করিব দোঁহাকার !!

ললিতা- বিশাখা সঙ্গে, সেবন করিব রঙ্গে ,

 মালা গাঁথি দিব নানা ফুলে ।

কনকসম্পূট করি, কর্পূর তাম্বূল পুরি,

যোগাইব অধরযুগলে ।।

রাধাকৃষ্ণ বৃন্দাবন, এই মোর প্রাণধন,

 এই মোর জীবন- উপায় ।

 জয় পতিতপাবন, দেহ মোরে এই ধন,

 তোমা বিনে অন্য নাহি ভায় ।।

শ্রীগুরু করুণাসিন্ধু, অধমজনার বন্ধু,

লোকনাথ লোকের জীবন ।

হা হা ! প্রভু কর দয়া, দেহ মোরে পদছায়া,

 নরোত্তম লইল শরণ ।।