💐🏵️💞🌺🌷🌺💞🏵️💐
💞🌷🦚ভগবৎ ভক্ত🦚🌷💞
💐🏵️💞🌺🌷🌺💞🏵️💐
শ্রী শ্রী গুরু গৌরাঙ্গ জয়তঃ
সকল সাধু, গুরু, বৈষ্ণব ও গৌর ভক্তবৃন্দের শ্রীচরণে আমার অনন্ত কোটি সাষ্টাঙ্গ দণ্ডবৎ প্রণাম I
‘’গুরু - বৈষ্ণব - ভগবান তিনিহেঁ স্মরণ ।
তিনেহেঁ স্মরণ হইতে হয় সর্ববিঘ্ন বিনাশন ।।
অনায়াসে হয় নিজ বাঞ্ছিত পূরণ । I’’
আজানুলম্বিত - ভুজৌ কনকাবদাতৌ,
সংকীর্ত্তনৈকপিতরৌ কমলায়তাক্ষৌ।
বিশ্বম্ভরৌ দ্বিজবরৌ যুগধর্ম্মপালৌ,
বন্দে জগৎপ্রিয়করৌ করুণাবতারৌ।
ভক্ত কয় প্রকার ও কি কি ?
ভগবান শ্রীকৃষ্ণ ভগবদ্গীতায় বলেছেন যে ভক্ত চার প্রকার, যথা আর্ত ভক্ত, অর্থাথী ভক্ত, জিজ্ঞাসু ভক্ত এবং জ্ঞানী ভক্ত।
‘’চতুর্বিধা ভজন্তে মাং জনাঃ সুকৃতিনোহর্জুন।
আর্তো জিজ্ঞাসুরর্থার্থী জ্ঞানী চ ভরতর্ষভ।।‘’ (গীতা ৭/১৬)
অর্থাৎ,- হে ভরতশ্রেষ্ঠ অর্জুন! আর্ত, অর্থার্থী, জিজ্ঞাসু ও জ্ঞানী- এই চার প্রকার পুণ্যকর্মা ব্যক্তিগণ আমার ভজনা করেন। ভক্ত দুই প্রকার,যথা সকাম ভক্ত ও নিষ্কাম ভক্ত। সকাম ভক্ত হচ্ছে তারাই যারা ফলের আশায় কর্ম্ম করেন। আর নিষ্কাম ভক্ত হচ্ছে তারাই যারা ফলের কামনা ব্যতীত কর্ম্ম করেন। আর্ত, জিজ্ঞাসু, অর্থার্থী এ তিন ধরণের ভক্ত হচ্ছে সকাম ভক্ত। আর জ্ঞানীই হচ্ছে নিষ্কাম ভক্ত।
আর্ত ভক্ত হচ্ছে তারাই যারা কাতর হয়ে, ভয়ে বিহ্বল হয়ে, বিপদে পতিত হয়ে নিজেকে ভয় ও বিপদ হইতে রক্ষা করার জন্য ভগবানের আরাধনা করেন। কৌরবসভায় বিপদাপন্ন দ্রৌপদীর কাতর প্রার্থনা আর্ত ভক্তের অন্তর্গত।
আত্মজ্ঞান লাভ, তত্ত্বজ্ঞান লাভ, পারমার্থিক জ্ঞান লাভের জন্য অর্থাৎ যাদের জানার আগ্রহ তীব্র তারাই জিজ্ঞাসু ভক্ত। উদ্ধব, জনকাদি রাজা জিজ্ঞাসু ভক্তের মধ্যে শ্রেষ্ঠ।
যারা এ জড় জগতে ধনাদির জন্য বা সিদ্ধি লাভের জন্য ভগবানের আরাধনা করেন তারাই হচ্ছে অর্থার্থী ভক্ত। ইহলোকে ও পরলোকে সুখপ্রাপ্তি সুগ্রীব ও সুরথ রাজা প্রভৃতি রজ:প্রধান অর্থাথী ভক্ত।
ভোগবিলাস ত্যাগী, ফলাকাঙ্খারহিত, আত্মাতে পরিতৃপ্ত সেই আত্মানন্দ পুরুষই হচ্ছে জ্ঞানী ভক্ত। সনক, শুক, প্রহ্লাদ ও নারদাদি তারাই হচ্ছেন জ্ঞানী ভক্ত। আবার অবস্থা ভেদে জিজ্ঞাসু ভক্ত আর্ত ও অর্থাথী হতে পারেন। ভগবৎ বিরহ বশত: তিনি আর্ত এবং ভগবৎকৃপা লাভের অভিলাষী বলে অর্থার্থী। প্রকৃত সুকৃতিমান পুরুষ ব্যতীত কেহই এ চতুর্বিধ ভক্ত শ্রেণিভূক্ত হতে পারে না।
‘’তেষাং জ্ঞানী নিত্যযুক্ত একভক্তির্বিশিষ্যতে।
প্রিয়ো হি জ্ঞানিনোহত্যর্থমহং স চ মম প্রিয়ঃ।।‘’ (গীতা ৭/১৭ )
অর্থাৎ,- এই চার প্রকার ভক্তের মধ্যে নিত্যযুক্ত, আমাতে একনিষ্ঠ তত্ত্বজ্ঞানীই শ্রেষ্ঠ। কেন না আমি তাঁর অত্যন্ত প্রিয় এবং তিনিও আমার অত্যন্ত প্রিয়। জ্ঞানী আমার তত্ত্বজ্ঞানে অধিষ্ঠিত, আমার মতে তিনি আমার আত্মস্বরুপ। আমার অপ্রাকৃত সেবায় যুক্ত হয়ে তিনি সর্বোত্তম গতিস্বরুপ আমাকে লাভ করেন।
‘’বহূনাং জন্মনামন্তে জ্ঞানবান্মাং প্রপদ্যতে।
বাসুদেবঃ সর্বমিতি স মহাত্মা সুদুর্লভঃ।।‘’ (গীতা ৭/১৯)
অর্থাৎ,- জ্ঞানী সর্বদাই আমার সেবায় যুক্ত থেকে পরম গতি লাভ করেন। জ্ঞানবান ব্যক্তি বহু জন্মের পর বাসুদেবই এ চরাচর জগৎ, এরুপ অভেদ চিন্তাপূর্বক আমাকে প্রাপ্ত হন; সেরুপ মহাত্মা অত্যন্ত দুর্লভ। জন্মে জন্মে পুণ্য সঞ্চয় করে অবশেষে জ্ঞানবান ব্যক্তি ভগবৎ প্রেমে বিহ্বল হয়ে সকল কিছুতেই ভগবত দর্শন করেন। জ্ঞানবান যেদিকেই দৃষ্টি নিক্ষেপ করেন, সে দিকেই ভগবান ব্যতীত আর কিছুই দর্শন পান না। এজন্যে জ্ঞানপূর্বক যিনি তাঁকে ভক্তি করেন তিনি অতি মহাত্মা। এরুপ ব্যক্তি সচরাচর দেখকে পাওয়া যায় না।বহুজন্মার্জিত নিষ্কাম কর্মের ফলে পূণ্যপুঞ্জ সঞ্চিত হলেই জীবের ঈশ্বরসাক্ষাৎকার হয়ে থাকে। তখনই মনুষ্যকে প্রকৃত জ্ঞানবান বলা যেতে পারে। অভেদভাবে আত্মবোধ না হলে কারও প্রকৃত জ্ঞান লাভ হয় না।
এরুপ জ্ঞানীই প্রকৃত ভক্তিমান, তাঁর জ্ঞানদৃষ্টিতে অন্ত:করণ ভগবদ্ভাবে সমাহিত হলে ভগবৎসত্তা ব্যতীত নিজের বা অপর কিছুরই পৃথক অস্তিত্ব থাকে না। জ্ঞান বিনা প্রকৃত প্রেমের বিকাশ হয় না এবং প্রেমিক না হলেও জ্ঞানের উদয় হতে পারে না। এজন্যে জ্ঞানী ভক্ত সুদুর্লভ।
ভক্তিযোগ কি ???
ভক্তিযোগ অর্থ হচ্ছে ভগবান শ্রীকৃষ্ণের সঙ্গে সংযোগ সাধন করা। যোগ অর্থ ভগবানের সঙ্গে যুক্ত হওয়া। ভগবদ্গীতায় চারটি যোগের কথা বলা হয়েছে।
১।কর্ম্মযোগ,
২। জ্ঞানযোগ,
৩।ধ্যানযোগ ও
৪। ভক্তিযোগ।
কর্ম্মযোগ,জ্ঞানযোগ এবং ধ্যানযোগের মাধ্যমে ভগবানকে আংশিক ভাবে জানা যায়। কিন্ত ভগবদ্গীতায় ভগবান বলেছেন-
ভক্ত্যা মামভিজানাতি যাবান্ যশ্চাস্মি তত্ত্বতঃ।
ততো মাং তত্ত্বতো জ্ঞাত্বা বিশতে তদনন্তরম্।। (গীতা ১৮/৫৫)
অর্থাৎ,- ভক্তির দ্বারা কেবল স্বরূপত আমি যে রকম হই, সেরূপে আমাকে কেউ তত্ত্বত জানতে পারেন। এই প্রকার ভক্তির দ্বারা আমাকে তত্ত্বত জেনে, আমার ভক্ত আমার ধামে প্রবেশ করতে পারেন। অর্থাৎ, ভক্তির দ্বারাই ভগবানকে পূর্ণরূপে জানা যায়। তাই ভক্তিযোগই হচ্ছে ভগবানকে লাভ করার সর্বশ্রেষ্ঠ পন্থা।
শ্রীমদ্ভাগবতে নববিধা ভক্তির কথা বলা হয়েছে…
শ্রবণং কীর্ত্তনং বিষ্ণোঃ, স্মরণং পাদসেবনং।
অর্চ্চনং বন্দনং দাস্যং সখ্যং আত্মনিবেদনম্।।
ইতি পুংসার্পিতা বিষ্ণুর্ভক্তিচেৎ নবলক্ষণা।
ক্রিয়েত ভগবতীহদ্ধা যন্মন্যেহধীতুত্তমম্।।
নীচে ভক্তির নয়টি পন্থা অনুশীলন করে ভগবানকে লাভ করেছেন তাঁদের দৃষ্টান্ত দেওয়া হলঃ-
১। শ্রবণঃ- মহারাজ পরীক্ষিত কেবল শ্রবণের মাধ্যমে ভগবদ্ধাম লাভ করেন। তিনি শ্রীল শুকদেবের নিকট থেকে কেবলমাত্র সাত দিন শ্রীকৃষ্ণ মহিমা শ্রবণ করেছিলেন।
২। কীর্ত্তন - শ্রীল শুকদেব গোস্বামী কীর্ত্তনের মাধ্যমে ভগবানকে লাভ করেন। তাঁর পিতা মহান ঋষি ব্যাসদেবের নিকট থেকে লব্দ অপ্রাকৃত সংবাদ - ভগবৎ গুণ অবিকৃতভাবে কীর্ত্তনের মাধ্যমে।
৩। স্মরণঃ- মহারাজ প্রহ্লাদ ভগবানের শুদ্ধ ভক্ত দেবর্ষি নারদ মুনির উপদেশ অনুসারে সর্বদা ভগবানকে স্মরণের মাধ্যমে পরম গতি প্রাপ্ত হন।
৪। বন্দন (স্তব-গান) - কেবল স্তবের দ্বারা ভগবানের বন্দনা করার মাধ্যমে অক্রুর পরম পদ প্রাপ্ত হন।
৫। অর্চন (পূজা)- মহারাজ পৃথু কেবল ভগবানের পূজা করার মাধ্যমে সর্বোচ্চ সিদ্ধি প্রাপ্ত হন।
৬। পাদসেবন (সেবা)- সৌভাগ্যের অধিষ্ঠাত্রী দেবী, লক্ষীদেবী কেবল একস্থানে উপবেশন করে শ্রীনারায়ণের পাদসেবা করে সাফল্য লাভ করেন।
৭। দাস্য (আজ্ঞা পালন)- শ্রীরামচন্দ্রের সেবক মহানভক্ত হনুমান কেবল ভগবানের আজ্ঞা পালনের মাধ্যমে পরম গতি লাভ করেন।
৮। সখ্য(ভগবানের সঙ্গে সখ্যতা স্থাপন)- মহাবীর অর্জুন ভগবানের সঙ্গে সখ্যতা করার মাধ্যমে পূর্ণ সিদ্ধি অর্জন করেন। অত্যন্ত প্রীত হয়ে ভগবান অর্জুন ও অর্জুনের ভবিষ্যৎ অনুগামী মানুষদের জন্য ভগবদ্গীতার অমৃতময় জ্ঞান উপদেশ করেন।
৯। আত্মনিবেদন- মহারাজ বলি তাঁর যথা সর্বস্ব এমনকি নিজ শরীরটিকে ও ভগবানকে নিবেদনের মাধ্যমে পূর্ণ সাফল্য প্রাপ্ত হন।
অম্বরীষ মহারাজ উপরোক্ত নয়টি ভক্তির পন্থাই অনুশীলন করতেন এবং এভাবেই তিনিও পরমপদ প্রাপ্ত হন। সকলের হৃদয়ে ভগবানের প্রতি ভক্তি গুপ্ত অবস্থায় রয়েছে। কিন্তু জড় জাগতিক সঙ্গের প্রভাবে তা জড় কলুষের দ্বারা আবৃত হয়ে রয়েছে। এই জড় কলুষ থেকে আমাদের হৃদয়কে নির্মল করতে হবে। তাহলে সুপ্ত কৃষ্ণ ভক্তি জাগ্রত হবে। সেটিই হচ্ছে ভক্তিযোগের পূর্ণ পন্থা।
ভক্তিযোগ অনুশীলন করতে হলে সদ্গুরুর তত্ত্বাবধানে কতগুলো বিধিনিষেধ পালন করতে হবে। যেমন - ব্রহ্মমুহূর্ত্তে ঘুম থেকে উঠা, স্নান করে আরতি করা, হরেকৃষ্ণ মহামন্ত্র জপ ও কীর্ত্তন করা। ফুল তুলে ভগবানের শ্রীচরণে নিবেদন করা, ভোগ রান্না করে তা ভগবানকে নিবেদন করা, ভক্তসঙ্গ করা, নিরন্তর শুদ্ধ ভক্তের কাছ থেকে শ্রীমদ্ভাগবত শ্রবণ করা, এই ভক্তিযোগ অনুশীলন করলে আমাদের হৃদয়ের কলুষতা দূরীভূত হয়। আমরা কৃষ্ণ ভক্তির স্তরে উন্নীত হতে পারি। তাই সদ্গুরুর তত্ত্বাবধানে বিধিবদ্ধ ভাবে ভক্তিযোগ অবলম্বন করলে অবশ্যই কৃষ্ণভক্তি লাভ করা যায়। তাই ভগবান শ্রীকৃষ্ণ শ্রীমদ্ভগবদ্গীতায় বলেছেন-
‘’নেহাভিক্রমনাশোহস্তি প্রত্যবায়ো ন বিদ্যতে।
স্বল্পমপ্যস্য ধর্মস্য ত্রায়তে মহতো ভয়াৎ।।‘’ (গীতা ২/৪০)
অর্থাৎ, ভক্তিযোগের অনুশীলন কখনও ব্যর্থ হয় না এবং তার কোনও ক্ষয় নেই। তার স্বল্প অনুষ্ঠানও অনুষ্ঠাতাকে সংসাররূপ মহাভয় থেকে পরিত্রাণ করে।
‘’কলের্দোষনিধেরাজন্ অস্তি হ্যেকো মহানগুণঃ I
কীর্ত্তনাদেব কৃষ্ণস্য মুক্তসঙ্গঃ পরং ব্রজেৎ I I‘’ (শ্রীমদ্ভাগবত)
কলি সমস্ত দোষের বটে, তথাপি হে রাজন ! কলির একটি মহানগুণ এই যে, কৃষ্ণকীর্ত্তনে জীব মায়াবদ্ধ হইতে মুক্ত হয়ে শ্রীকৃষ্ণরূপ পরতত্ত্ব লাভ করেন।
‘’নাম - সংকীর্ত্তন যস্য সর্বপাপ প্রণাশনম্।
প্রণামো দুঃখশমনস্তং নমামি শ্রীহরিং পরম্।।‘’
যে হরিনাম সংকীর্ত্তন করিলে ইহকাল ও পরকালের পাপরাশি নিঃশেষে দগ্ধ হয়,আমি সেই নামরূপী পরমাত্মা স্বরূপ শ্রীহরিকে প্রণাম করি।
পরমকরুণাময় গোলোকপতি সচ্চিদানন্দ ভগবান শ্রীকৃষ্ণ ও তাঁর একান্ত হ্লাদিনী শক্তি শ্রীমতী রাধারাণী এবং সকল বৈষ্ণব ভক্ত - পার্ষদদের শ্রীচরণকমলে নিরন্তর প্রার্থনা করি, সকলের জীবন যেনো রাধা-কৃষ্ণময়তায় পূর্ণ হয়ে, মঙ্গলময়, কল্যাণময়, ভক্তিময়, সুন্দরময় আর আনন্দময় হয়ে উঠুক।
"হরে কৃষ্ণ হরে কৃষ্ণ কৃষ্ণ কৃষ্ণ হরে হরে
হরে রাম হরে রাম রাম রাম হরে হরে!!"
!! জয় শ্রীরাধাকৃষ্ণের জয় !! !! জয় সকল ভক্তবৃন্দের জয় !!





No comments:
Post a Comment