💐🏵️💞🌺🌷🌺💞🏵️💐
💞🦚রাগাত্মিকা ভক্তি🦚💞
💐🏵️💞🌺🌷🌺💞🏵️💐
শ্রী শ্রী গুরু গৌরাঙ্গ জয়তঃ
সকল সাধু, গুরু, বৈষ্ণব ও গৌর ভক্তবৃন্দের শ্রীচরণে আমার অনন্ত কোটি সাষ্টাঙ্গ দণ্ডবৎ প্রণাম I
‘’গুরু - বৈষ্ণব - ভগবান তিনিহেঁ স্মরণ ।
তিনেহেঁ স্মরণ হইতে হয় সর্ববিঘ্ন বিনাশন ।।
অনায়াসে হয় নিজ বাঞ্ছিত পূরণ । I’’
আজানুলম্বিত – ভুজৌ কনকাবদাতৌ,
সংকীর্ত্তনৈকপিতরৌ কমলায়তাক্ষৌ ।
বিশ্বম্ভরৌ দ্বিজবরৌ যুগধর্ম্মপালৌ,
বন্দে জগৎ প্রিয়করৌ করুণাবতারৌ ।।
🌷💞🌷
রাগানুগা ভক্তি জন্মালে ভক্ত ভগবান ভিন্ন আর কিছু চান না। তিনি ‘সর্ববিধ আশ্রম— ধর্ম ত্যাগ করে’ এবং ‘সর্ব উপাধি বিমুক্ত হয়ে একমাত্র ভগবানের সেবায় আত্মনিয়োগ করেন।’ স্ত্রী পুত্র বিত্ত সংসার প্রভৃতি জাগতিক বিষয়ের প্রতি ভালবাসা তাঁর নিকট সাময়িক আদান- প্রদানসম্ভূত দোকানদারী বা কেনাবেচার নামান্তর বলে বোধ হয়। বাস্তবেও, বিশ্লেষণ করলে স্পষ্ট জানা যায় যে, সাধারণত সন্তানের প্রতি মাতার বা মাতার প্রতি সন্তানের এবং স্ত্রীর প্রতি স্বামীর বা স্বামীর প্রতি স্ত্রীর ভালবাসাও ঐ পর্যায়ভুক্ত। এটি প্রেম নামে অভিহিত হলেও এতে আদান-প্রদান ভাব সুপ্ত থাকে বলেই একে প্রকৃত প্রেম বলা যায় না। প্রত্যক্ষ দেখা যায়, অনেক ক্ষেত্রে মাতা-পুত্র ও স্বামী-স্ত্রী পরস্পরের কাছে যা আশা করে, তা না পেলে তাদের মধ্যে ভালবাসার সম্বন্ধ শিথিল হয়।
🌷💞🌷
ঈশ্বরে রাগাত্মিক প্রেমে কোন রকম আদান-প্রদান নেই। এখানে প্রেমের জন্যই প্রেম, ভালবাসার জন্যই ভালবাসা। একেই সর্বোচ্চ প্রেম বা নিঃস্বার্থ ভালবাসা বলে । এরই নাম অহেতুক প্রেম। একেই বলা হয় শ্রদ্ধাভক্তি । এই ভক্তি বা প্রেম জন্মালে প্রেমাস্পদকে প্রেমিক কেবল দানই করেন, বিনিময়ে তাঁর কাছে কোন প্রতিদান আশা করেন না। প্রেমাস্পদের কাছে তাঁর চাইবার বা পাবারও কিছু থাকে না। তিনি কখনও ‘এটা দাও’, ‘ওটা দাও’ বলে প্রেমাস্পদের কাছে প্রার্থনা করেন না। যথার্থ প্রেমিকের দৃষ্টিতে এরূপ প্রার্থনা করা দোকানদারী মাত্র।
🌷💞🌷
রাগাত্মিক প্রেমের উদয় হলে প্রেমিকের দম্ভের ভয় এবং পুরস্কারের প্রলোভন থাকে না। দম্ভের ভয়ে ভালবাসা ক্রীতদাসের ভালবাসার মতই ভালবাসার ভানমাত্র। পুরস্কারের লোভে ভালবাসা হল স্বার্থান্ধতা । রাগাত্মিক প্রেমে ঈশ্বর দম্ভদাতা বা বরদাতা নন। তিনি পরম প্রেমাস্পদ; তাঁকে ভালবাসতে ভাল লাগে বলেই প্রেমিক ভালবাসে। প্রেমিকের প্রেমাঞ্জনমণ্ডিত চোখে ভগবানের তুল্য সুন্দর আর কিছুই নেই। ভক্ত সেই চিরসুন্দরের অস্তিত্বে দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করেন; তাঁর অস্তিত্বের কোন প্রমাণ চান না। প্রেমিকের কাছে প্রেমের ভগবানের প্রমাণ ভগবানই । তিনি সর্বশক্তিমান কি না, প্রেমিক তা বিচার করবার আবশ্যকতা বোধ করেন না। তাঁর নিকট ঈশ্বর প্রেমময়, পরম প্রেমস্বরূপ। প্রেমিক শত দুঃখ বরণ করেও প্রেমাস্পদের সুখবিধান করতে সর্বদা প্রস্তুত। প্রেমাস্পদের সুখেই প্রেমিকের সুখ এবং তার দুঃখেই প্রেমিকের দুঃখ , এবং তাঁকে লাভ করা ভিন্ন প্রেমিক অন্য সুখের কামনা করেন না। এটিই পর-প্রেম, এটিই পরা ভক্তি।
🌷💞🌷
এই পরা ভক্তির স্বরূপ-নির্ণয় প্রসঙ্গে গৌড়ীয় বৈষ্ণবাচার্যগণ ভক্তিকে উত্তমা, মধ্যমা ও কনিষ্ঠা ভেদে তিন শ্রেণীতে বিভক্ত করে প্রত্যেকটির অধিকারী নির্দেশ করেছেন। তাঁদের মতে ভক্তিশাস্ত্রে সুপণ্ডিত ও শ্রদ্ধাসম্পন্ন ভক্ত উত্তমা ভক্তির, শাস্ত্রজ্ঞানবর্জিত অথচ ভগবানে শ্রদ্ধান্বিত ভক্ত মধ্যমা ভক্তির এবং শাস্ত্রজ্ঞানশূন্য ও ভগবানে দৃঢ়শ্রদ্ধাহীন ভক্ত কনিষ্ঠা ভক্তির অধিকারী। তৃতীয় শ্রেণীর ভক্ত ও বৈধী ভক্তির কোন একটি প্রধান অঙ্গ বা বহু ভজনাঙ্গ দীর্ঘকাল সম্যকরূপে পালন করলে উত্তমা ভক্তির অধিকার অর্জন করতে পারেন।
🌷💞🌷
উত্তমা ভক্তি ত্রিবিধ— সাধন-ভক্তি, ভাব-ভক্তি ও প্রেমা-ভক্তি । সাধন-ভক্তি আবার বৈধ ও রাগানুগ সাধনভেদে দ্বিবিধ। ভগবানের প্রতি যাঁদের আকর্ষণ জন্মেনি, অথচ শাস্ত্র-শাসন, দুঃখ-বিমূক্তি ও শান্তি-সুখের জন্য যাঁরা ভগবানকে ভক্তি করেন, তাঁদের পক্ষে বৈধ সাধন উপযোগী। বৈধ ভক্তি দীর্ঘকাল নিষ্ঠাসহকারে অনুষ্ঠানের ফলে ভগবানের প্রতি আকর্ষণ জন্মালে রাগানুগ সাধনের অধিকার হয়। স্মরণ , মনন ও ধ্যান এই সাধনের অঙ্গ।
🌷💞🌷
ভাবভক্তি কল্পনা ও আবেগমূলক । কিন্তু এতে ভগবানের প্রতি কতকটা আকর্ষণ আছে। ‘ভক্তিরসামৃতসিন্ধু’ — মতে এর অপর নাম রতি। ভাব-ভক্তি বা রতি সাধন-ভক্তির ফলস্বরূপ হলেও একে প্রেমের অঙ্কুরমাত্র বলা হয়। ভাব-ভক্তি আবার দুই প্রকার— বৈধী ও রাগানুগা। সাধুসঙ্গ কীর্ত্তন শ্রবণ প্রভৃতির মধ্যে এক বা একাধিক ভজনাঙ্গ সাধনকে বৈধী ভাব-ভক্তি এবং এর পরিপক্ক অবস্থায় ইষ্টনামের জন্য প্রগাঢ় তৃষ্ণার ফলে তাঁর প্রতি আবিষ্টতা জন্মালে তাকে রাগানুগা ভাব-ভক্তি বলে। এই আবিষ্টতাই রাগাত্মিকা ভক্তির প্রধান লক্ষণ। এই রাগাত্মিকা ভক্তি ক্রমে স্নেহ, মান, প্রণয়, রাগ, অনুরাগ ও ভাব অতিক্রম করে মহাভাবে পরিণত হয়।
🌷💞🌷
রাগাত্মিকা ভক্তি সম্বন্ধাত্মিকা ও কামাত্মিকা এই দুইভাগে এবং সম্বন্ধাত্মিকা ভক্তি শান্ত, দাস্য, সখ্য, ও বাৎসল্য এই চার রকমে বিভক্ত। কামাত্মিকা ভক্তিতে এই চতুর্বিধ সম্বন্ধাত্মিকা ভক্তির চরম পরিণতি ভিন্ন এর নিজস্ব মধুর রস বা মহাভাব আছে। টীকাকার বিশ্বনাথ চক্রবর্তী মহাভাবের লক্ষণ-বর্ণনা-প্রসঙ্গে লিখেছেন,— ‘‘শ্রীকৃষ্ণের সুখেও ক্ষণকালের জন্য পীড়ার আশংকায় যে অসহিষ্ণুতা সেটিই রূঢ় মহাভাব। কোটী ব্রহ্মাণ্ডের সকল সুখ যে সুখের লেশমাত্র নয় এবং বিশ্বের সকল বৃশ্চিক ও সর্পাদি দংশনজনিত দুঃখ যে দুঃখের লেশমাত্র নয়, এই প্রকার শ্রীকৃষ্ণ- মিলন জনিত সুখ এবং শ্রীকৃষ্ণ-বিরহ জনিত দুঃখ যে অবস্থা হতে সঞ্জাত হয়, তাকেই অধিরূঢ় মহাভাব বলা হয় । অধিরূঢ় মহাভাবের আবার ‘মোদন’ ও ‘মাদন’ নামে দুটি রূপ আছে।’’
🌷💞🌷
এইজন্য বৈষ্ণবাচার্যগণ একেকে সর্বোত্তম ভক্তি-রস বা মধুর-রস বলে প্রচার করেছেন। সংসারে এক ব্যক্তি অন্যান্য ব্যক্তির সঙ্গে যে সকল ভাবাশ্রয়ে সম্বন্ধ স্থাপন করে, শান্ত, দাস্যাদি পঞ্চবিধ সম্বন্ধাত্মক ভাব সেই পার্থিব ভাবসমূহেরই আধ্যাত্মিক রূপ। গৌড়ীয় বৈষ্ণবগণ ভগবান্ শ্রীকৃষ্ণে এই ভাবগুলি আরোপ করে সাধন করতে উপদেশ দেন। তাঁরা বলেন, শান্ত, দাস্য আদি পঞ্চবিধ রসের নিজস্ব পঞ্চবিধ স্থায়ীভাব আছে। এছাড়া দাস্যে শান্ত ভাব, সখ্যে শান্ত ও দাস্যভাব, বাৎসল্যে শান্ত, দাস্য ও সখ্যভাব এবং মাধুর্যে শান্ত, দাস্য, সখ্য ও বাৎসল্য — এইভাব চতুষ্টয় পূর্ণমাত্রায় বিদ্যমান।
🌷💞🌷
‘শ্রীচৈতন্যচরিতামৃত’ কার লিখেছেন,-
‘’পূর্ব্ব পূর্ব্ব রসের গুণ পরে পরে হয় ।
দুই তিন গণনে পঞ্চ পর্য্যন্ত বাঢ়য় ।।
গুণাধিক্য রসাধিক্য বাঢ়ে প্রতি রসে ।
শান্ত দাস্য সখ্য বাৎসল্যের গুণ মধুরেতে বৈসে
।। ’’
এথেকে স্পষ্ট প্রতীত হয় যে, শান্ত আদি পঞ্চবিধ রস-সাধনার প্রত্যেকটি ভগবানকে লাভের পথ হলেও এবং পর্যায়ক্রমে এদের গুণাধিক্যে রসাধিক্য থাকলেও প্রথমতঃ শান্ত ভাব-সাধনায় সিদ্ধিলাভ না করলে ক্রমে অন্যান্য ভাব-সাধনের অধিকার জন্মে না। কাজেই সম্বন্ধাত্মিকা ভক্তির সকল সাধককেই প্রথমে শান্ত ভাব সাধন করতে হয়। এতে সাফল্য লাভ করলে ক্রমে তাঁর দাস্য আদি অন্যান্য ভাব-সাধনার যোগ্যতা জন্মে।
কবে কৃষ্ণ ধন পাব, হিয়ার মাঝারে থোব,
জুড়াইব তাপিত - পরাণ ।
সাজাইয়া দিব হিয়া, বসাইব প্রাণপ্রিয়া,
নিরখিব সে চন্দ্রবয়ান ।।
হে সজনী! কবে মোর হইবে সুদিন ।
সে প্রাণনাথের সঙ্গে, কবে বা ফিরিব রঙ্গে,
সুখময় যমুনা পুলিনে ।।
ললিতা বিশাখা লঞা, তাঁহারে ভেটিব গিয়া,
সাজাইয়া নানা উপহার ।
সদয় হইয়া বিধি, মিলাইবে গুণনিধি,
হেন ভাগ্য কি হইবে আমার ???
দারুণ বিধির নাট, ভাঙিল প্রেমের হাট,
তিলমাত্র না রাখিল তার ।
কহে নরোত্তম দাস, কি মোরে জীবনে আশ,
ছাড়ি গেল ব্রজেন্দ্রকুমার ।।
🏵️জয় রাধেশ্যাম🏵️🏵️জয় ব্রজধাম🏵️
No comments:
Post a Comment