🦚💐🏵️🌷🏵️💐🦚

🌷শ্রীগঙ্গা দশহরা🌷

🦚💐🏵️🌷🏵️💐🦚

💐শুভ শ্রীগঙ্গা পূজা💐

শ্রী শ্রী গুরু গৌরাঙ্গ জয়তঃ

সকল সাধু, গুরু, বৈষ্ণব ভক্তবৃন্দের শ্রীচরণে আমার অনন্ত কোটি সাষ্টাঙ্গ দণ্ডবৎ প্রণাম। শ্রীগঙ্গা নদীর শুভ অবতরণ তিথি শ্রীগঙ্গা পূজার সবাইকে জানাই প্রীতি শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন। হরে কৃষ্ণ, আজ – রবিবার  শ্রীগঙ্গা  দশহরা, শ্রীগঙ্গা পূজা I

 

‘’নিম্নগানাং যথা গঙ্গা   দেবানামচ্যুতো যথা । 

বৈষ্ণবানাং যথা শম্ভুঃ  পুরাণানামিদং তথা ।।‘’      ( ভা. ১২ - ১৩/১৬ )

অর্থাৎ,- নদীগণের মধ্যে গঙ্গা, দেবগণের মধ্যে বিষ্ণু এবং বৈষ্ণবগণের মধ্যে শম্ভু সর্ব্ব শ্রেষ্ঠ, সেইরূপ পুরাণগণের মধ্যে শ্রীমদ্ভাগবত শ্রেষ্ঠ হইয়া থাকে।

 

দশজন্মের পাপ কাটাতে যা যা করবেন,-

গঙ্গা কলিযুগে পরম তীর্থ। বিশেষ করে সব শাস্ত্রই এই কথা বলে। মহাভারতে ঋষি পুলস্ত্য, ভীস্মের নিকট কীর্ত্তন করেছেন,- 'যেখানে গঙ্গা আছেন সেটাই দেশ, গঙ্গা তীরের সেই দেশই তপোবন ও সিদ্ধ তীর্থ' আর্য্যদের প্রাচীন ধর্মগ্রন্থেও 'গঙ্গা' নাম উল্লেখ আছে। গঙ্গা বৈদিকী নদী। ঋক্ বেদের একটি শ্লোকে যমুনা, সরস্বতী, শতদ্রু, পরুষ্ণী, অসিক্লী , মরুৎবৃধা, বিতস্তা, সুষোমা ও আর্জীকিয়া নদীর সাথে গঙ্গার নাম পাওয়া যায়। (ঋক্- ১০/৭৫/০৫)

পুরাণ মতে স্বর্গ বাসিনী এই গঙ্গা দেবীকে মর্তে এনেছিলেন সগর রাজার বংশজ রাজা ভগীরথ। তিনি আবার ভগবান শ্রীরামচন্দ্রের কূলের পূর্বপুরুষ। পৌরাণিক আখ্যানের মতে সগর রাজার ষাট হাজার পুত্র কপিল মুনির শাপে ভস্ম হয়, তাহাদিগের প্রেতাত্মার মুক্তির জন্য স্বর্গ থেকে গঙ্গা কে আনবার প্রয়োজন হয়। তপস্যা করতে করতে একে একে করে রাজা সগর, অসমঞ্জ, অংশুমান ও রাজা দিলীপ দেহ ত্যাগ করেন।

অবশেষে দিলীপ পুত্র ভগীরথ সুর্য্যবংশের রাজা সগরের ৬০ হাজার পুত্রদের উদ্ধারের জন্য, ভগীরথ শ্রীব্রহ্মার কঠোর তপস্যা করে পতিতপাবনী গঙ্গাকে পৃথিবীতে আনেন। ভগীরথ এনেছে বলে মা গঙ্গার নাম ভাগীরথী। গঙ্গার প্রচণ্ড বেগকে পৃথিবীদেবী সরাসরি সহ্য করতে পারবে না তাই ব্রহ্মার আদেশে ভগীরথ মহাদেব শিবের তপস্যা করেন ধরণীমাতার এই বেগ ধারণ করতে।  মহাদেব মাতা ভাগীরথীকে জটায় ধারণ করে গঙ্গাধর নামে বিখ্যাত হন। গঙ্গাকে মহাদেব, জটা থেকে বের করে পৃথিবীতে গঙ্গা অবতীর্ণ হয়।

 

গঙ্গোত্রী হয়ে গঙ্গা যেখানে অলকানন্দার সহিত মিলিত হয়েছেন সে স্থানের নাম দেব প্রয়াগ । গঙ্গা হরিদ্বারে, তারপরে যেখানে যমুনা ও গুপ্তা সরস্বতীর সাথে মিলিত হয়েছেন সে স্থানের নাম ‘প্রয়াগ’ বা ‘ত্রিবেণীসঙ্গম’। গঙ্গার সহিত গোমতী, ঘর্ঘরা, শোন, বরুণা, অসি, গণ্ডকী, কুশী, রূপনারায়ন ইত্যাদি বহু নদ নদী মিলিত হয়েছেন। গঙ্গা আসার সময়,জহ্নুমুনির লতা পাতার আশ্রমকে নিজের প্রচণ্ড স্রোতে বয়ে নিয়ে, তাই   জহ্নুমুনি ক্রোধে গঙ্গাকে মুখে গ্রহণ করেন। ভগীরথের প্রার্থনায় জহ্নুমুনি গঙ্গা দেবীকে ডান কান থেকে বের করেন। জহ্নু মুনির থেকে বের হয়ে মাতা গঙ্গা জহ্নু কন্যা জাহ্নবী নামে বিখ্যাত হন। উত্তর ভারতের বহু তীর্থ যেমন হরিদ্বার, প্রয়াগ, কাশী, নবদ্বীপ, দক্ষিণেশ্বর, কালীঘাট তীর্থ গঙ্গার ধারেই। গঙ্গা পাপানাশিনী, কলির কলুষ নাশিনী। 

জ্যৈষ্ঠ মাসের শুক্লা দশমী তিথিকে গঙ্গাদশহরা বলা হয়। এই তিথি পূর্ব দশজন্মের কৃত পাপ এবং এ জন্মের দশটি পাপ হরণ করে। দশটি পাপের তালিকায় যে অবৈধ কর্মের উল্লেখ রয়েছে, তাতে অপরাধ ও পাপ একসঙ্গে মিশে রয়েছে। পাপে ও অপরাধে পার্থক্য যাই থাক, মানুষ স্বভাব বশে ও স্বার্থের কারণে প্রতিদিন এই সব মন্দ কাজ করে চলেছে। জেনে বা না জেনে মানুষ দুষ্কর্ম করছে, দুষ্কর্মের বিরাম নেই, পাপ কর্মেরও শেষ নেই।

পাপের হাত থেকে কি আমাদের মুক্তি নেই???

সনাতন ধর্মশাস্ত্র অভয় দিয়ে বলে, নিশ্চয়ই রয়েছে। শুভকাজে অশুভ কর্মের বিনাশ, পূণ্যকর্মে পাপের ক্ষয়। যোগ, যাগযজ্ঞ, পূজো, অর্চনা, ব্রত, নিয়ম সবই পাপ বিনাশ করে। দশ পাপ হরা দশহরা এমনই পুণ্য তিথি। বঙ্গের প্রাচীন শাস্ত্রকারেরা পুণ্য তিথিগুলির মধ্যে দশহরার উল্লেখ করেছেন। জীমূতবাহন, রায়মুকুট, বৃহস্পতি ও রঘুনন্দন প্রমুখ পণ্ডিতবর্গ জ্যৈষ্ঠ্য শুক্লা দশমী তিথিতে দশহরাকে বিশেষ মর্যাদা দিয়েছেন।

বৈদিক যুগের কোনও এক সময়ে দশহরা তিথি থেকেই বৎসর গণনা আরম্ভ হতো। দশহরা সেদিন নববর্ষের মর্যাদা পেত। দশহরার প্রধান ধর্মীয় কর্ম গঙ্গায় স্নান। কারণ, এই তিথিতেই গঙ্গা মর্ত্যলোকে নেমে এসেছিলেন। তিনি এই তিথিতে দশবিধ পাপ হরণ করেন।

দশবিধ পাপ কি???

সাধারণত মানুষ কায় বা দেহ,মনে ও বাক্যের দ্বারা পাপ করতে থাকে। পরদ্রব্য হরণ, অযথা হিংসা অর্থাৎ বৃথা প্রাণী হত্যা ও পরদার গমন অর্থাৎ অবৈধ প্রণয়, এই তিনটি দেহগত পাপ।

অহংকারী বাক্য, মিথ্যা কথা বলা, পরনিন্দা এবং অসংবদ্ধ প্রলাপ বা বাজে বকা, এই চারটি বাক্যগত পাপ।

মনে মনে পরের দ্রব্যের কামনা, পরের অনিষ্ট চিন্তা এবং মিথ্যার প্রতি আসক্তি,  এই তিনটি মানসিক পাপ।

 

স্কন্ধপুরাণ অনুযায়ী, এই দিনে গঙ্গায় স্নান করে গঙ্গাকে দশটি ফুল, দশটি ফল ও দশটি প্রদীপ দিয়ে পুজো করার কথা বলা হয়েছে।

একটি পৌরাণিক কথা আছে কাণ্ডার নামে একজন মুনি ছিলেন। তার মত পাপী এই ত্রিভুবনে কেউ ছিলনা। সারাজীবন মুনি বৈশ্যসেবা করেন, বেশ্যার বশীভূত হয়ে ঘরে থাকেন। কাঠ কাটতে বনে যাওয়ার সময় কাণ্ডার মুনিকে বাঘ মেরে ফেলল। যমদূত এসে তাকে বেঁধে নিয়ে যাচ্ছিল যমের ঘরে। বাঘ তো মাংস সব খেয়ে নিল গায়ের কেবল বনের মধ্যে অস্থি পড়ে রইল। কাক এই অস্থি নিয়ে যায়, তখন এক চিল কাকের পিছনে দৌঁড়াতে থাকে। চিলের সঙ্গে কাড়াকাড়ি করতে গিয়ে কাক ভয়ে অস্থিগুলো ফেলে দিয়ে উড়ে যায়, কোন কারণে সেই অস্থিগুলো গঙ্গায় পড়ে যায়।

গঙ্গার পরশ পেতেই মুনি দিব্য রূপ ধারণ করেন, তখন বৈকুন্ঠদূত এসে যমদূতদের থেকে মুনিকে নিয়ে বৈকুন্ঠে চলেযান। যমদূতরা যমরাজের কাছে গিয়ে জিজ্ঞাসা  করেন কাণ্ডার মুনি মহাপাপী, এত পাপ করে সে তো নরকে আসার কথা, কেন সে বৈকুন্ঠে গেল। তার কি গুণ সে বৈকুন্ঠ যাচ্ছে। যমদূতের কথা শুনে যম গেল হরির কাছে এই বিষয়ে জিজ্ঞাসা করতে।

বৈকুন্ঠে গিয়ে যমরাজ বলিলেন,- প্রভু! পাপীর উপর আমার অধিকার, কাণ্ডারের মত মহাপাপীর সাথে এটা কি হল প্রভু। যমের কথায় প্রভু হাঁসতে লাগলেন। শ্রীহরি বললেন,- হে যমরাজ এটা গঙ্গার মহিমা। গঙ্গা যেখানে, সেখানে কোন পাপ থাকেনা। মন দিয়ে শুন যম গঙ্গার মহিমা। গঙ্গার বাতাস যতদূর যাবে ততদূর যম, তোমার যমপাশের কোন অধিকার নেই, এটা আমার কথা। কেউ যদি পুড়ে মরে আর তার অস্থি যদি গঙ্গায় ফেলা যায়, সে চর্তুর্ভুজ হয়ে বৈকুন্ঠে আসবে। গঙ্গার তীরে থেকে যে গঙ্গার জল পান করেন তার শরীর আমার সমান। তুমি তোমার দূতদের সেখানে যেতে মানা করবে যেখানে আছে পতিতপাবনী গঙ্গার পরশ।

💞হর হর গঙ্গে 💞জয় মা জাহ্নবী💞জয় মা ভাগীরথী 💞