💐সাধুসঙ্গে 'কৃষ্ণ' নাম💐

🍁🌺🏵️🌷💞🌻💞🌷🏵️🌺🍁

বিশেষ পোষ্ট

শ্রী শ্রী গুরু গৌরাঙ্গ জয়তঃ

সকল সাধু,গুরু,বৈষ্ণব ও গৌর ভক্তবৃন্দের শ্রীচরণে আমার অনন্ত কোটি সাষ্টাঙ্গ দণ্ডবৎ প্রণাম I

''হরি - গুরু - বৈষ্ণব তিনিহেঁ স্মরণ।

তিনেহেঁ স্মরণ হইতে বিঘ্ন বিনাশন।।

অনায়াসে হয় নিজ বাঞ্ছিত পূরণ ।।‘’

অনেকেই জানেন, ঈশ্বরের আরাধনা অনেক ভাবে করা যায়। তন্মধ্যে জপ, কীর্ত্তন, ধ্যান, মনন, চিন্তন, পূজন ইত্যাদি। আজ আমরা আলোচনা করবো সাধু সঙ্গের মাধ্যমে কিরুপে 'কৃষ্ণ নাম' করা যায়।

প্রথমে দেখি সাধু কে। সহজ কথায়, যে সৎ এবং স্বাভাবিক জীবন যাপনে অভ্যস্ত থেকে ভগবদ্ কথা শ্রবন, কীর্ত্তন, আলোচনা ইত্যাদি করে থাকেন, যার দর্শনে অন্তরে ভগবদ্ভক্তির উদ্রেক হয় তিনিই সাধু। গুনীজনে বলে গিয়েছেন,
"সৎসঙ্গে স্বর্গ বাস      অসৎ সঙ্গে সর্বনাশ !"

এই সৎ মানুষদের সান্নিধ্যে থেকে ভগবদ্ কথা আলোচনা করাই হলো সাধুসঙ্গ। পরমেশ্বর ভগবান হলেন পরমাত্মা। আর সকল দেবদেবী ভগবানের অংশ প্রকাশ। সকল জীবের মধ্যে পরমেশ্বর ভগবান আছেন জীবাত্মা রুপে। তাই কেউই হেয় বা অবঞ্জার নয়। ভগবান শ্রীকৃষ্ণ গীতায় বলেছেন যে, নিজেকে তৃণ অপেক্ষা ক্ষুদ্র মনে করে, ভগবানের আরাধনা করতে। আমরা নগন্য জীব। গর্ব অহংকারের আমাদের শেষ নেই। এটাই যে আমাদের পতনের মুল হেতু, কয়জন তার হিসাব রাখে? "

ব্রহ্মা প্রথম যখন মানুষ সৃষ্টি করেন, তখন শুধু সত্ত্ব গুন দিয়ে ছিলেন মানুষের মধ্যে। এর ফলে, এক জন্মেই মানুষ সিদ্ধি লাভ করে মহামুক্তি লাভ করতো। ব্রহ্মা চিন্তিত হয়ে পড়লেন। এভাবে তো সৃষ্টি রক্ষা সম্ভব নয়। তাই এরপর মনুষের মধ্যে রজঃ ও তমো গুন যুক্ত করে দিলেন। আর তখন থেকেই শুরু হলো পাপপূণ্যের বিচারে পূনর্জন্মের। সৃষ্টি রক্ষাও হলো আর মানুষের কর্মফল বিচারের নিশ্চয়তাও মিললো।" আসলে আমরা এতো তমসাচ্ছন্ন যে সব সময় আমরা নিজেদের বড় মনে করে অন্যকে ছোট ভাবার চেষ্টায় বিভোর। একবার চিন্তা করে দেখিনা, যাকে ছোট ভাবছি, তার মধ্যেও আছে পরমেশ্বরের অস্তিত্ব। তাছাড়া তার হৃদয়ে থাকতে পারে ভগবদ্ভক্তি ও ভগবদ্ ঞ্জান। যার আস্বাদনে আমরা পরম তৃপ্ত হতে পারি।

সাধুসঙ্গ কিভাবে করা যায় দেখা যাক। ভজন, কীর্ত্তন, আলোচনা ইত্যাদি সভা বা অনুষ্ঠান সাধু সঙ্গের প্রধান স্থান। এছাড়া সাধু ব্যক্তির সাক্ষাতে, তাঁকে নানা ভগবদ্ সম্পর্কীয় প্রশ্ন করে উত্তর খোজার চেষ্টাও সাধুসঙ্গের সমান। আমরা এখন ব্যস্ত জীবনের নাগরিক সমস্যা নিয়ে জীবন কাটাই। সময় আমাদের এতো কম যে এই সাধুসঙ্গের সময় অনেকের হয়ে ওঠেনা। তারপরও চেষ্টা করা উচিৎ, অন্তত মাঝে মধ্যে এই সাধুসঙ্গ করা আমাদের ঈশ্বরের পথে এগিয়ে দিতে সহায়তা করবে। এটা আমাদের দৃঢ় বিশ্বাস। তাই সবাইকে আহ্বান করবো, আমরা আমাদের নৈমিত্তিক কর্মের মাঝে যেমন এই ফেসবুকে পোস্ট, লাইক, কমেন্ট ইত্যাদির সময় বের করি, তেমনি সাধুসঙ্গের জন্যও একটু সময় বের করার চেষ্টা করি। আর কিছু না হোক, ভক্তিভাবে সাধুবাক্য শ্রবণ করে যথাযথ হৃদয়ঙ্গম করতে পারলে, আমাদের ঞ্জানের ভাণ্ডার যে শুন্য থাকবে না, এটা নিশ্চিত।

"।ষড়ঋপুকে নিয়ন্ত্রণের উপায়।"

শ্রীভগবানের দিব্যনাম  জপ আর কীর্ত্তন করলে আমাদের শরীর ও মন  শুদ্ধ থাকে। যদি মন শুদ্ধ থাকে তবে আমরা যে কার্য্য করি তা শুদ্ধ হবে। আমরা মনুষ্য জীব ভগবান আমাদের পরম যত্নে মানুষ রূপ দিয়ে এ পৃথিবীতে পাঠিয়েছেন। আমাদের শরীর আছে পরা ও অপরা প্রকৃতি দুই রকমের উপাদান ও গুণ। জীব দেহে পঞ্চভূতে গঠিত, যা পরা প্রকৃতির। আর ষড়ঋপু, অষ্টতত্ত্ব ইত্যাকার গুণ বা বৈশিষ্ট্য হলো অপরা প্রকৃতি।

মানুষ সবসময় চায় সুখী সুন্দর জীবনযাপন করতে। আহার, নিদ্রাসহ জাগতিক সুখ আর শান্তির সন্ধানে অবিরাম আমাদের কর্মোদ্যম আর প্রাণান্ত যুদ্ধের প্রয়াস। যখন এই সুখের মাঝে কোনো কিছু বাধা হয়ে দাঁড়ায় তখন আমাদের দুঃখ প্রাপ্তি হয়। কর্মতো আমাদের করতেই হবে। কারণ কর্মই ধর্ম। কিন্তু সে কর্ম কি আমরা যথাযথ ভাবে করতে পারছি? সঠিক বেঠিক হিসেব না করেই অস্থির চিত্তে আমরা ছুটে চলেছি আপন গতিতে। ভগবান্ বলেছেন যে আমাদের ফলাসক্ত না হয়ে নিষ্কাম কর্ম করতে অর্থাৎ সব কর্মের ফল শ্রীভগবানকে অর্পন করে শুধুমাত্র কর্ম করতে। তাই আমাদের কর্ম ফলের আশা পরিত্যাগ করে কেবল মাত্র কর্ম করে যেতে হবে।

যদি আমরা ভগবানের নির্দ্দেশ মত কর্ম করতে চাই তাহলে আমাদের চাই চিত্তের স্থিরতা বা সঠিক মনোসংযোগ। এই স্থিরতার জন্য আমাদের চাই অভ্যাস। আমরা যদি দৈনিক একটু একটু করে অভ্যাস করি, তাহলে বোঝা যাবে আমাদের মানসিক পরিবর্তন। এখন প্রশ্ন হল, এই অভ্যাসটা কিভাবে করবো? চিত্তস্থির করতে ধ্যান সর্বোত্তম। কিন্তু এটা সবার পক্ষে সম্ভব হয় না। তাই সহজ উপায় হলো জপ। এখন প্রশ্ন স্বাভাবিক এই জপ কি? আর আমরা কি জপ করতে পারি?

আমরা জানি শব্দ স্বয়ং 'ব্রহ্ম'। একই  শব্দ যদি বার বার মনে মনে একনিষ্ট ভাবে উচ্চারণ করা হয়, তবে তা জপ হবে। অনেকে গুরুপ্রদত্ত মন্ত্র জপ করেন। আবার হরিনামও জপ করেন। এই জপের সংখ্যা নিরুপণের জন্য মালা ব্যবহার উত্তম। তবে হাতের কর দ্বারাও করা যায়। অনেকে আছেন যারা কাজের জন্য সময় পান না, কখন তারা জপ করবে? মহাজ্ঞানী পণ্ডিত ব্যক্তিরা বলেন, জপ করা আর ঈশ্বরের উপাসনা একই বিষয়। আর পরমেশ্বর ভগবান শ্রীকৃষ্ণ গীতায় 'যপযজ্ঞ' কে উত্তম যজ্ঞ বলেছেন।

যাগো হে ও নগরবাসী🌺🌿

মুখে করো কৃষ্ণ নাম মনে নিয়ে ভক্তি,

কৃষ্ণ নামেই মিলবে মুক্তি মিলিয়ে নিও এই যুক্তি।।🙏

জপ যে কোন অবস্থায়, যে কোন স্থানে , যে কোন সময়ে করা যায়। ঈশ্বরের উপসানার জন্য সন্ধিক্ষণ সর্বাপেক্ষা উত্তম। সন্ধিক্ষণ হলো, রাত্রের শেষ, দিনের শুরু, দিনের শেষ, রাত্রের শুরু। আমরা যদি এই সন্ধিক্ষণে শুচিতার সাথে ভক্তি চিত্তে জপ করতে পারি, তবেই আমাদের মানসিকতার পরিবর্তন অনিবার্য। হঠাৎ তো আর সব কিছু হয় না। আমাদের মন বড়ই চঞ্চল। কখনো এক জায়গায় স্থির থাকে না। কখনো এখানে তো, পরক্ষণে অন্য জায়গায়। এই চঞ্চল মনকে অভ্যাস আর বৈরাগ্য দ্বারা নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব। মন যতই এদিক সেদিক যাক না কেন তাকে বারবার টেনে নিয়ে আসতে হবে স্থিরতায়।

মন হলো দুরন্ত ঘোড়ার মত্ত। ঘোড়া যেমন এক জায়গায় স্থির থাকে না ,তেমনি মনও এক জায়গায় স্থির থাকে না। কিন্তু এই অবশেষে চেষ্টার মাধ্যমে ঘোড়াকে এক জায়গায় বদ্ধ করে রাখা যায়। তেমনি অভ্যাস আর বৈরাগ্য দ্বারা এই চঞ্চল মনকে শ্রীভগবানের শ্রীচরণে অর্পন করে শুদ্ধচিত্তে জপ করতে হবে। তাই আমাদের একটু একটু করে চেষ্টা করতে হবে। আজকে দশ মিনিট, কাল পনের মিনিট তার পর সময়টা একটু একটু করে চেষ্টা করতে হবে বাড়ানোর।

আমরা যদি প্রতিদিন ত্রিশ মিনিট একাগ্র চিত্তে জপ করতে পারি তাহলে দেখা যাবে আমাদের সবকিছু ভাল হচ্ছে। তখন আর কোন চিন্তা থাকবে না। মন বড়ই অস্থির, তাকে নিয়ন্ত্রন আনা খুবই কঠিন। কিন্তু এই কঠিন কাজ আমাদের করতেই হবে। একটি ছোট বাচ্চাকে যেমন চেষ্টার দ্বারা নিয়ন্ত্রন করা হয়, ঠিক তেমনি আমরা চেষ্টার দ্বারা মনকে অবশ্যই নিয়ন্ত্রণ করতে পারবো। যখন জপ করা হয় তখন আর অন্য কিছু চিন্তায় আসবেই না। শুধু চোখ বন্ধ করে শ্রীভগবানকে স্মরণ করে জপ করলে ভগবদ্ভক্তি আসবেই আসবে।

ভক্তি নিত্যান্ত প্রয়োজনীয় কারণ কেবল ভক্তি দ্বারা শ্রীভগবান বস হন। আমাদের এটা মনে রাখতে হবে। নিরাশ হলে চলবে না। তাই আমাদের কাজে হতে হবে দৃঢ়, ব্যবহারে অমায়িক, চিন্তায় শুভ্রতা, মননে নিরহংকারী, কথায় মিষ্টতা, চলনে নম্রতা আচরণে ভদ্রতা, সবাইকে শ্রদ্ধা ইত্যকার সদ্ অভ্যাস। বন্ধুরা তাহলে আজ থেকেই এই অভ্যাস করতে পারিনা? পরম করুণাময় ভগবান শ্রীকৃষ্ণের চরণে প্রার্থনা করি, সরাব যেন তাঁর নাম জপ করার ইচ্ছা হয়। তাই সবাই এসো 'জপ' শুরু করি আর দেহস্থ ষড়ঋপুকে আপন নিয়ন্ত্রণে এনে আত্মার পরমার্থ চেতনার দ্বার
উন্মোচনে ব্রতী হই।

নাম ভজো নাম চিন্ত নাম করো সার I
অনন্ত শ্রীকৃষ্ণ নাম মহিমা অপার I I
শতবার সুবর্ণ গো কোটি কন্যাদান তথাপি
না হয় কৃষ্ণ নামের সমান। I

যেই নাম সেই কৃষ্ণ  ভজো নিষ্ঠা করি I

নামের সহিত আছে আপনি শ্রী হরি I I

"হরে কৃষ্ণ হরে কৃষ্ণ কৃষ্ণ কৃষ্ণ হরে হরে I
হরে রাম হরে রাম রাম রাম হরে হরে I I"

🍁জয় শ্রীহরি🍁 জয় রাধে🍁জয় গৌরাঙ্গ মহাপ্রভু 🍁