💐💞 শ্রীমদ্ভগবদ্গীতা 💞💐

🌹🌻🌺💞💞💐💐💞💞🌺🌻🌹

🌻🌼💐 সপ্তম অধ্যায়ের মাহাত্ম্য💐🌼🌻

বিশেষ পোষ্ট

শ্রী শ্রী গুরু গৌরাঙ্গ জয়তঃ

সকল সাধু,গুরু,বৈষ্ণব ও গৌর ভক্তবৃন্দের শ্রীচরণে আমার অনন্ত কোটি সাষ্টাঙ্গ দণ্ডবৎ প্রণাম I

''হরি - গুরু - বৈষ্ণব তিনিহেঁ স্মরণ।

তিনেহেঁ স্মরণ হইতে বিঘ্ন বিনাশন।।

অনায়াসে হয় নিজ বাঞ্ছিত পূরণ ।।‘’

একবার ভগবান শিব বললেন,- হে প্রিয়ে পার্বতি! আমি তোমাকে শ্রীমদ্ভগবদগীতার

সপ্তম অধ্যায়ের মাহাত্ম্য বলব। যা শ্রবণে অমৃত আস্বাদনের আনন্দ লাভ করবে।

পাটলিপুত্র নামে একটি বিরাটনগর ছিল। নগরের চতুর্দিকে অনেক বড় বড় সিংহ দরজা ছিল। এই নগরে শংকুকর্ণ নামে এক ব্রাহ্মণ বাস করত। সে ছিল একজন ব্যবসায়ী। ব্যবসা করে সে প্রচুর অর্থসঞ্চয় করেছিল। তার পূর্ব পুরুষদের জন্য কখনও সে কোনরূপ ধর্মাচরণ বা শাস্ত্রীয় আচার-অনুষ্ঠান উদযাপন করেনি। সে এত ধনী হয়েছিল যে, রাজা ও মহারাজা পর্যন্ত তার গৃহে ভোজন করতেন। শংকুকর্ণ একজন অন্যতম সেরা কৃপণ লোক। সে তার সঞ্চিত অর্থ মাটির নিচে পুঁতে রেখেছিল।

একদা চতুর্থবার বিবাহ করার জন্য শংকুকর্ণ  তার পুত্র, কন্যা ও আত্মীয়-পরিজন সহ যাচ্ছিল। পথে রাত্রিতে বিশ্রামের জন্য এক জায়গায় সকলে মিলে অবস্থান করল। সকলে ঘুমিয়ে পড়লে একটি সাপ এসে তাকে দংশন করে। তার পুত্র ও পরিজনরা মিলে, ডাক্তার এবং ওঝা ডেকে আনে, কিন্তু কেউ  শংকুকর্ণকে বাঁচাতে পারল না। শীঘ্রই সে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ল। মৃত্যুর পর সে একটি প্রেত-সর্প হয়ে জন্মাল। তার একমাত্র ধ্যান-জ্ঞান ছিল তার সঞ্চিত অর্থ, যা নাকি সে তার গৃহের খুব কাছেই পুঁতে রেখেছিল। তার এই গুপ্ত ধনের বিন্দু বিসর্গ সে কাউকেই  প্রকাশ করেনি। প্রেতসর্প হয়ে সে তার এই সঞ্চিত ধন পাহারা দিত, যাতে অন্য কেউ তা অপহরণ করতে না পারে।

প্রেত সর্পের ফাদে আবদ্ধ থেকে কিছুদিন পর সে ক্লান্ত হয়ে পড়ে এবং একদিন রাত্রিতে স্বপ্নে তার ছেলেদের দেখা দিয়ে তাকে সাহায্য করতে  অনুরোধ করে। পরদিন সকালে তার অলস ছেলেরা ঘুম থকে উঠে পরস্পর সেই স্বপ্ন বৃত্তান্ত বলাবলি করল। এক ছেলে একটা বড় কোদাল নিয়ে তার পিতৃ নির্দিষ্ট স্থানে চলে গেল। নির্দিষ্ট স্থানে পৌঁছে সে বুঝতে পারল যে, গুপ্ত ধনের সঠিক স্থানটি সম্বন্ধে সে অবগত নয়। এই ছেলেটি ছিল অত্যন্ত লোভী। অনেকক্ষণ ধরে সে স্থানটি খুঁজল এবং যখন সে একটি সাপের গর্ত দেখতে পেল, তৎক্ষণাৎ খুড়তে শুরু করল।

অল্প সময় পরেই বিরাট এক ভয়ঙ্কর সর্প সেই গর্ত থেকে বেরিয়ে এসে বলল, ‘’রে মূর্খ ! কে তুমি? কেন এখানে এসেছ? কে তোমাকে পাঠিয়েছে? এখানটায় তুমি খুঁড়ছ কেন? আমার প্রশ্ন গুলির শীঘ্র উত্তর দাও।‘’  পুত্রটি বলল,-  আমি তোমার ছেলে, আমার নাম শিব। গতরাতে আমি স্বপ্নে দেখেছি এখানেই গুপ্ত ধন পোঁতা আছে। তাই আমি সেগুলি নিতে এসেছি।  ছেলে শিবের কথা শুনে প্রেত-সর্পটি হাসতে লাগল। পরে বলল, তুমি যদি আমার ছেলে, তবে কেন এই নরককুণ্ড থেকে আমাকে উদ্ধার করতে এতদিন কোন প্রয়োজনীয় শাস্ত্রীয় আচার-অনুষ্ঠান করনি? শেষ জীবনে লোভের বশেই আমি এই সাপের শরীর পেয়েছি, আর তোমরাও সেই একই দিকে অগ্রসর হচ্ছ।

পুত্র জিজ্ঞাসা করল, “হে পিতা! কৃপা করে বলুন, কিভাবে আপনি এই নারকীয় অবস্থা থেকে উদ্ধার পাবেন?” প্রেত-সর্পটি উত্তর করল, “কোনরূপ দান-ধ্যান ও যজ্ঞ তপস্যার দ্বারা নয়, শুধু ভগবদগীতার সপ্তম অধ্যায় পাঠ করলেই আমি জন্ম-মৃত্যুর চক্র থেকে উদ্ধার পাব। হে প্রিয় পুত্র! দয়া করে আমার শ্রাদ্ধ - শান্তি কর এবং ভগবদ্গীতার সপ্তম অধ্যায় পাঠে পারদর্শী ব্রাহ্মণকে নিমন্ত্রণ করে তার সেবা কর ও উত্তম রূপে তাঁকে আহার করাও।‘’  অন্যান্য ভাইদের সঙ্গে পরামর্শ করে শিব পিতার নির্দ্দেশ মত ব্রাহ্মণকে ডেকে যথাযোগ্য  সম্মান করে সেবা করল।

সেই ব্রাহ্মণটি যখন শ্রীমদ্ভগবদগীতার সপ্তম অধ্যায় পাঠ করতে থাকলেন, শংকুকর্ণ তখন প্রেত-সর্পের সেই ভয়ঙ্কর দেহ ত্যাগ করে এক দিব্য চতুর্ভুজ মূর্তি ধারণ করল। সে তার পুত্রদের আশীর্বাদ করে গুপ্তধনের স্থানটির কথা বলে বৈকুণ্ঠে চলে গেল। তার পুত্রদের মন এখন কৃষ্ণসেবায় নিবদ্ধ, তাই তারা সেই সঞ্চিত অর্থ মন্দির নির্মাণে, কূপ খননে এবং খাদ্য বিতরণে ব্যয় করল। প্রতিদিন তারা শ্রীমদ্ভগবদগীতার সপ্তম অধ্যায় পাঠে মগ্ন হল এবং অচিরেই পরমেশ্বর ভগবান শ্রীকৃষ্ণের শ্রীপাদপদ্ম লাভ করল।

ভগবান শিব বললেন,- প্রিয়ে পার্বতি! ভগবদগীতার সপ্তম  অধ্যায়ের অপূর্ব মাহাত্ম্যের কথা  তোমাকে বললাম। যে ব্যক্তি এই বর্ণনা শুনবে, সে সমস্ত প্রকার পাপের প্রতিক্রিয়া থেকে তৎক্ষণাৎ মুক্ত হবে।

 ‘’কলের্দোষনিধেরাজন্ অস্তি হ্যেকো মহানগুণঃ I

কীর্ত্তনাদেব কৃষ্ণস্য মুক্তসঙ্গঃ পরং ব্রজেৎ I I‘’ (শ্রীমদ্ভাগবত)

কলি সমস্ত দোষের বটে, তথাপি হে রাজন ! কলির একটি মহানগুণ এই যে, কৃষ্ণকীর্ত্তনে জীব মায়াবদ্ধ হইতে মুক্ত হয়ে শ্রীকৃষ্ণরূপ পরতত্ত্ব লাভ করেন।

‘’নাম - সংকীর্ত্তন যস্য সর্বপাপ প্রণাশনম্।

প্রণামো দুঃখশমনস্তং নমামি শ্রীহরিং পরম্।।‘’

যে হরিনাম সংকীর্ত্তন করিলে ইহকাল ও পরকালের পাপরাশি নিঃশেষে দগ্ধ হয়,আমি সেই নামরূপী পরমাত্মা স্বরূপ শ্রীহরিকে প্রণাম করি। পরমকরুণাময় গোলোকপতি সচ্চিদানন্দ ভগবান শ্রীকৃষ্ণ ও তাঁর একান্ত হ্লাদিনী শক্তি শ্রীমতী রাধারাণী এবং সকল বৈষ্ণব ভক্ত - পার্ষদদের শ্রীচরণকমলে নিরন্তর প্রার্থনা করি, সকলের জীবন যেনো রাধা-কৃষ্ণময়তায় পূর্ণ হয়ে, মঙ্গলময়, কল্যাণময়, ভক্তিময়, সুন্দরময় আর আনন্দময় হয়ে উঠুক।

"হরে কৃষ্ণ হরে কৃষ্ণ কৃষ্ণ কৃষ্ণ হরে হরে

হরে রাম হরে রাম রাম রাম হরে হরে!!"

🍁🌾🍁জয় শ্রীরাধাকৃষ্ণের জয় 🍁🌾🍁জয় সকল ভক্তবৃন্দের জয় 🍁🌾🍁