Saturday, June 27, 2020


শয়নী একাদশী
♥♥শুভ একাদশী♥♥ ♥♥শুভ একাদশী♥♥
হরে কৃষ্ণ, আগামী ০১/০৭/২০২০ ইং রোজ - বুধবার শয়নী একাদশী I
(পারণ - পরদিন পূর্ব্বাহ্ন ০৯। ২৭ মিঃ মধ্যে একাদশীর পারণ)

আপনি নিজে একাদশী ব্রত পালন করুন অন্যকে পালনে উৎসাহিত করুন।
ভক্তি হচ্ছে ভগবানকে জানার ভগবৎ প্রীতি সাধনের একমাত্র সহজ উপায়। শাস্ত্রে যে চৌষট্টি প্রকার ভক্ত্যাঙ্গের কথা বলা হয়েছে, তার মধ্যে একাদশী ব্রত সর্বত্তোম। শ্রবণ, কীর্ত্তন, স্মরণ আদি নবধা ভক্তির পরই দশম ভক্ত্যাঙ্গরূপে একাদশীর স্থান। এই তিথিকে হরিবাসর বলা হয়। তাই ভক্তি লাভেচ্ছু সকলেরই একাদশী ব্রত পালনের পরম উপযোগিতার কথা বিভিন্ন পুরাণে বর্ণিত হয়েছে। একাদশী তিথি সকলের অভীষ্ট প্রদানকারী। এই ব্রত পালনে সমস্ত প্রকার পাপ বিনষ্ট, সর্বসৌভাগ্য শ্রীকৃষ্ণের প্রীতি বিধান হয়। নারী-পুরুষ নির্বিশেষে আট থেকে আশি বছর বয়স পর্যন্ত যে কোন ব্যক্তিরই ভক্তিসহকারে পবিত্র একাদশী ব্রত পালন করা কর্তব্য।

সঙ্কটজনক অবস্থা বা জন্মমৃত্যুর অশৌচে কখনও একাদশী ব্রত পরিত্যাগ করতে নেই। একাদশীতে শ্রাদ্ধ উপস্থিত হলে সেইদিন না করে দ্বাদশীতে শ্রাদ্ধ করা উচিত। শুধু বৈষ্ণবেরাই নয়, শিবের উপাসক, সূর্য-চন্দ্র-ইন্দ্রাদি যেকোন দেবোপাসক, সকলেরই কর্তব্য একাদশী ব্রত পালন করা। দুর্লভ মানবজীবন লাভ করেও এই ব্রত অনুষ্ঠান না করলে বহু দুঃখে - কষ্টে চুরাশি লক্ষ যোনি ভ্রমণ করতে হয়। অহংকারবশত একাদশী ব্রত ত্যাগ করলে অশেষ যমযন্ত্রণা ভোগ করতে হয়। যে ব্যাক্তি এই ব্রতকে তুচ্ছ জ্ঞান করে, জীবিত হয়েও সে মৃতের সমান।

🍁শয়নী একাদশী মাহাত্ম্য🍁
আষাঢ় মাসের শুক্লপক্ষের একাদশীর নাম 'শয়নী ভবিষোত্তরপুরাণে যুধিষ্ঠির - শ্রীকৃষ্ণ তথা নারদ - ব্রহ্মা  সংবাদে এই তিথির মাহাত্ম্য বর্ণিত রয়েছে।
    
মহারাজ যুধিষ্ঠির বললেন,- হে কৃষ্ণ ! আষাঢ় মাসের শুক্লপক্ষের একাদশীর নাম কি ? এর মহিমাই বা কি ? তা আমাকে কৃপাপূর্ব্বক বলুন। শ্রীকৃষ্ণ বললেন, ব্রহ্মা এই একাদশী সম্পর্কে দেবর্ষি নারদকে যা বললেন। আমি সেই আশ্চর্যজনক কথা আপনাকে বলছি।

শ্রীব্রহ্মা বললেন, হে নারদ ! সংসারে একাদশীর মতো পবিত্র আর কোন ব্রত নেই। সকল পাপ বিনাশের জন্য এই বিষ্ণুব্রত পালন করা একান্ত আবশ্যক। যে ব্যক্তি এই প্রকার পবিত্র পাপনাশক এবং সকল অভিষ্ট প্রদাতা একাদশী ব্রত না জেনে করে তাকে নরকগামী হতে হয়। আষাঢ়ের শুক্লপক্ষের এই একাদশী 'শয়নী'  নামে বিখ্যাত। শ্রীভগবান ঋষিকেশের জন্য এই ব্রত পালন করতে হয়। এই ব্রতের সমন্ধে এক মঙ্গলময় পৌরণিক কাহিনী আছে আমি এখন তা বলছি।

বহু বহু বছর পূর্বে সূর্যবংশে মান্ধাতা নামে একজন রাজর্ষি ছিলেন। তিনি ছিলেন সত্যপ্রতিজ্ঞ এবং প্রতাপশালী চক্রবর্তী রাজা। প্রজাগণকে তিনি নিজের সন্তানের মতো পালন করতেন। সেই রাজ্যে  কোন রকম দুঃখ, রোগ - ব্যাধি, দুর্ভিক্ষ, আতঙ্ক, খাদ্যভাব অথবা কোন অন্যায় আচরণ ছিল না। এইভাবে বহুদিন অতিবাহিত হলো। কিন্তু একসময় হঠাৎ দৈবদুর্বিপাকে ক্রমাগত তিনবছর সে রাজ্যে কোন বৃষ্টি হয় নি। দুর্ভিক্ষের ফলে সেখানে দেবতাদের উদ্দেশ্যে দান মন্ত্রের 'স্বাহা'  'স্বাধা' ইত্যাদি শব্দও বন্ধ হয়ে গেল। এমনকি বেদপাঠও ক্রমশ বন্ধ হল। তখন প্রজারা রাজার কাছে এসে বলতে লাগল,- মহারাজ দয়া করে আমাদের কথা শুনুন। শাস্ত্রে জলকে নার বলা হয় আর সেই জলে ভগবানের অয়ন অর্থাৎ নিবাস। তাই ভগবানের এক নাম নারায়ণ।

মেঘরূপে ভগবান বিষ্ণু সর্বত্র বারিবর্ষণ করেন সেই বৃষ্টি থেকে অন্ন এবং অন্ন খেয়ে প্রজাগণ জীবন ধারণ করেন। এখন সেই অন্নের অভাবে প্রজারা ক্ষয়প্রাপ্ত হচ্ছে। অতএব হে মহারাজ, আপনি এমন কোন উপায় অবলম্বন করুন যাতে আপনার রাজ্যের শান্তি এবং কল্যাণ সাধন হয় রাজা মান্ধাতা বললেন,- তোমরা ঠিকই বলেছ, অন্ন থেকে প্রজার উদ্ভব। অন্ন থেকেই প্রজার পালন তাই অন্নের অভাবে প্রজারা বিনষ্ট হয়; আবার রাজার দোষে রাজ্য নষ্ট হয়। আমি নিজের বুদ্ধিতে আমার নিজের কোন দোষ খুঁজে পাচ্ছি না তবুও প্রজাদের কল্যাণের জন্য আমি আপ্রাণ চেষ্টা করব। তারপর রাজা ব্রহ্মাকে প্রণাম করে সৈন্যসহ বনে গমন করলেন।

বনে প্রধান প্রধান ঋষিদের আশ্রমে ভ্রমন করলেন। এভাবে তিনি ব্রহ্মার পুত্র মহাতেজস্বী অঙ্গিরা ঋষির সাক্ষাৎ লাভ করলেন। তাঁকে দর্শনমাত্রই রাজা মহানন্দে ঋষির চরণ বন্দনা করলেন। মুনিবর তাকে আশীর্বাদ কুশল প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করলেন। রাজা তখন তার বনে আগমনের কারণ সবিস্তারে ঋষির কাছে জানালেন। ঋষি অঙ্গিরা কিছু সময় ধ্যানস্থ থাকার পর বলতে লাগলেন,- ‘ হে রাজন ! এটি সত্যযুগ, এই যুগে সকললোক বেদ পরায়ণ এবং ব্রাহ্মণ ছাড়া অন্য তপস্যা করে না। এই নিয়ম থাকা সত্ত্বেও এক শূদ্র রাজ্যে তপস্যা করছে। তার এই অকার্যের জন্যই রাজ্যের এই দুর্দশা। তাকে হত্যা করলেই সকল দোষ দূর হবে। রাজা বললেন,- হে মুনিবর ! তপস্যাকারী নিরপরাধ ব্যক্তিকে আমি কিভাবে বধ করব ? আমার পক্ষে সহজসাধ্য অন্য কোন উপায় থাকলে আপনি দয়া করে আমাকে বলুন।

তদুত্তরে মহর্ষি অঙ্গিরা বললেন,- আপনি আষাঢ় মাসের শুক্লপক্ষের শয়নী নামে প্রসিদ্ধা একাদশী ব্রত পালন করুন, এই ব্রতের প্রভাবে নিশ্চয়ই রাজ্যে বৃষ্টি হবে। এই একাদশী সর্বসিদ্ধি দাত্রী এবং সর্ব উপদ্রব নাশকারিনী। হে রাজন, প্রজা পরিবারবর্গ সহ আপনি এই ব্রত পালন করুন। মুনিবরের কথা শুনে রাজা নিজের প্রাসাদে ফিরে গেলেন। আষাঢ় মাস উপস্থিত হলে রাজ্যের সকল প্রজা রাজার সাথে এই একাদশী ব্রতের অনুষ্ঠান করলেন। ব্রত প্রভাবে প্রচুর বৃষ্টিপাত হলো কিছুকালের মধ্যেই অন্নভাব দূর হল। ভগবান হৃষিকেশের কৃপায় প্রজাগণ সুখী হল। এই কারণে সুখ মুক্তি প্রদানকারী এই উত্তম ব্রত পালন করা সকলেই অবশ্য কর্তব্য।

★★★সবাইকে অনুরোধ রইল অবশ্যই মনে রাখবেন যে, একাদশী ব্রত বা কোন উপবাস মানেই কিন্তু শুধু না খেয়ে থাকা নয়,বরং শুদ্ধ/পবিত্র দেহ,মন নিয়ে ব্রত/উপবাস রেখে নিরন্তর "ভগবানের নাম জপ" হরিকথা শ্রবণ, কীর্ত্তন,গীতাপাঠ করে "ভগবান কে প্রসন্ন/খুশি করাই  ব্রত/উপবাসের মূল উদ্দেশ্য"★★★

‘’একাদশ্যাং নিরাহারো ব্রতেনানেন কেশব।
প্রসীদ সুমুখ নাথ জ্ঞানদৃষ্টিপ্রদো ভব।।‘’

এই মন্ত্র পাঠ করে নির্দিষ্ট সময়ের আগে পারণ করতে হয়।
গীতার মাহাত্ম্যে উল্লেখ আছে

‘’যোহধীতে বিষ্ণুপর্বাহে গীতাং শ্রীহরিবাসরে।
স্বপন জাগ্রৎ চলন তিষ্ঠন শত্রুভির্ন হীয়তে।।‘’

অর্থাৎ শ্রীবিষ্ণুর উৎসবের দিনে, একাদশী জন্মাষ্টমীতে যিনি গীতা পাঠ করেন , তিনি চলুন বা দাড়িয়ে থাকুন, ঘুমিয়ে বা জেগে থাকুন,(যে অবস্থাতেই থাকুন না কেন) শত্রু কখনো তার কোন ক্ষতি করতে পারেনা।

জয় শ্রীকৃষ্ণের জয়জয় শ্রীএকাদশী মহাব্রতের জয়

No comments:

Post a Comment

💐🏵️💞🌺🌷🌺💞🏵️💐 🌷বৈষ্ণবের ব্যাস পূজা🌷 💐🏵️💞🌺🌷🌺💞🏵️💐 শ্রী শ্রী গুরু গৌরাঙ্গ জয়তঃ সকল সাধু, গুরু, বৈষ্ণব ও গৌর ভক্তবৃন্দ...