💐গীতগোবিন্দ ও জগন্নাথ💐

🍁🌴🌳🌺🌷💞🌻🍁🌻💞🌷🌺🌳🌴🍁

বিশেষ পোষ্ট

শ্রী শ্রী গুরু গৌরাঙ্গ জয়তঃ

সকল সাধু,গুরু,বৈষ্ণব ও গৌর ভক্তবৃন্দের শ্রীচরণে আমার অনন্ত কোটি সাষ্টাঙ্গ দণ্ডবৎ প্রণাম I

''হরি - গুরু - বৈষ্ণব তিনিহেঁ স্মরণ।

তিনেহেঁ স্মরণ হইতে বিঘ্ন বিনাশন।।

অনায়াসে হয় নিজ বাঞ্ছিত পূরণ ।।‘’

🌻শ্রীজগন্নাথদেবের লীলাকথামৃত🌻

একসময়ে উড়িষ্যার অধিবাসীগণের মধ্যে কবি জয়দেব রচিত গীতগোবিন্দের গীতগুলি খুবই প্ৰসিদ্ধি লাভ করে। পুরীর মন্দিরের কাছে ছোট একটি গ্রামে পদ্মা নামে একটি বালিকা থাকত। সে  একজন বাগান পরিচর্যাকারী মালীর কন্যা এবং গীতগোবিন্দ গানে খুব পারদৰ্শী ছিল। পদ্মা একদিন বাগানের একাংশের বেণ্ডন গাছ থেকে বেগুন তুলছিল, আর সেই সাথে মধুর সুরে গীতগোবিন্দ আবৃত্তি করছিল। মন্দিরে শ্ৰীজগন্নাথ যখন গীতগোবিন্দর এই গীতি শ্রবণ করলেন, তিনি আর নিজেকে মন্দিরে আবদ্ধ রাখতে পারলেন না। তৎক্ষণাৎ তিনি বেদী ত্যাগ করে পদ্মা যেখানে গান গাইছিল সেই বাগানে গমন করলেন।

মেয়েটি যে দিকে যাচ্ছিল, জগন্নাথ তাঁকে অনুসরণ করছিলেন আর মুগ্ধচিত্তে তাঁর গান শুনছিলেন। তিনি গীতগোবিন্দর এই গানে এতই আকৃষ্ট ও বিমুগ্ধ হলেন যে শীঘ্ৰই তিনি সম্পূৰ্ণ আত্মবিস্মৃত হয়ে পড়লেন। যখন তিনি মেয়েটিকে এইভাবে অনুসরণ করছিলেন, তখন একসময় কাঁটাযুক্ত একটি বেগুনগাছে তাঁর বস্ত্র আটকে ছিঁড়ে গেল এবং আর তাঁর উত্তরীয়টি মাটিতে পড়ে গেল। কিন্তু প্ৰভু গীতগোবিন্দ শ্ৰবণে এতই তন্ময় হয়ে গিয়েছিলেন যে তিনি এসব কিছুই লক্ষ্য করলেন না। কিছু সময় পর পদ্মার ঝুড়িটি বেগুনে ভৰ্তি হল, সে বাগান থেকে চলে গেল। পদ্মার গান শ্ৰবণ করে পূৰ্ণ পরিতৃপ্ত চিত্তে শ্ৰীজগন্নাথ মন্দিরে ফিরে এলেন।

পরদিন সকালে পূজারীরা প্ৰাতঃকালীন সেবাকর্ম করার জন্য মন্দিরে এলেন। তাঁরা যখন মন্দিরের দ্বার খুললেন, তখন তাঁরা সবিস্ময়ে লক্ষ্য করলেন যে জগন্নাথের বস্ত্র ছেঁড়া এবং তাঁর উত্তরীয়টি নেই। তাঁর বস্ত্রের কিছু কিছু টুকরো এখানে ওখানে পড়ে রয়েছে। মনে হচ্ছিল যেন পূর্বদিন সন্ধ্যায় ভগবানকে যথাযথভাবে বস্ত্র পরানো হয়নি। এসব দেখে পূজারীরা চিন্তিত হয়ে পড়লেন এবং অবিলম্বে রাজাকে সংবাদ দিলেন। কিভাবে এমনটা ঘটতে পারে কারোরই বোধগম্য হচ্ছিল না। প্ৰত্যেকেই এটাকে অত্যন্ত অশুভ লক্ষণসূচক বলে বিবেচনা করলেন। রাজা পূজারীদের সেবায় কোনও ত্রুটি হলে তার জন্য ভগবানের কাছে ক্ষমা প্ৰাৰ্থনা করলেন এবং উপবাস করতে শুরু করলেন।

শ্রীজগন্নাথ রাজার কাছে স্বপ্নে আবির্ভূত হয়ে বললেন, “হে রাজা! বিচলিত হওয়ার কারণ নেই। আমার মহান ভক্ত জয়দেব রচিত গীতগোবিন্দ আমার অত্যন্ত প্রিয়, আমি এটি শ্রবণ করতে অত্যন্ত পছন্দ করি। গত রাত্রে গ্ৰাম্য বালিকা খুব সুন্দর সুরে গীতগোবিন্দ গাইছিল। আমি তার গানে আকৃষ্ট হয়ে পড়ি এবং তার গান শ্ৰবণ করার জন্য মন্দির ত্যাগ করি। আমি যখন বেগুন ক্ষেতে তাকে অনুসরণ করছিলাম, তখন বেগুনগাছের কাঁটায় আমার পোশাক ছিঁড়ে যায় এবং আমার উত্তরীয় বস্ত্রটি সেই বেগুন ক্ষেতে পড়ে যায়। এর জন্য তোমাদের আদৌ বিচলিত হবার কোনও কারণ নেই। এসবে তোমাদের কোনও দোষ নেই। কিন্তু তোমাদের কাছে আমার অনুরোধ, ঐ বালিকাটিকে প্ৰতিদিন মন্দিরে নিয়ে এসে আমার সামনে গান করতে বলো। আমি বিশ্ৰাম গ্ৰহণের পূৰ্বে তার গান শ্ৰবণ করব।"

অবিলম্বে রাজা পদ্মাকে খুঁজে নিয়ে আসতে লোক পাঠালেন। যখন তারা তার বাড়ীটি খুঁজে সেখানে গেল, তারা বাড়ীর বাগানে ভগবানের উত্তরীয় পড়ে থাকতে দেখল। রাজা যখন একথা শুনলেন, তখন তিনি খুব বিস্মিত হলেনঃ এতে এটিই সত্য প্ৰতিপন্ন হচ্ছে যে প্ৰভু গতরাত্রে তাঁদের বাগানে গিয়েছিলেন। শ্ৰীজগন্নাথের প্রতি রাত্ৰে পদ্মার কাছ থেকে গীতগোবিন্দ-গান শ্ৰবণের অভিপ্ৰায় রাজা পূৰ্ণ করতে চাইলেন। তিনি নিজে পদ্মার বাড়ীতে গেলেন এবং তাঁর স্বপ্নের কথা এবং তার গান শোনাবার জন্য ভগবানের অভিলাষের কথা তাকে বললেন।

রাজা তাকে বললেন যে, ''তাঁর আপত্তি না থাকলে সে এসে পুরীতে থাকতে পারে। তার ও তার পরিবারের সকলের পুরীতে বাস করার সকল সুযোগ-সুবিধার বন্দোবস্ত করে দেওয়া হবে, রাজা জানালেন। তখন সে প্ৰতিদিন শ্ৰীজগন্নাথের সামনে গীতগোবিন্দ গেয়ে শোনাতে পারবে। একথা শুনে পদ্মা খুবই আনন্দিত হল। তার কতই না সৌভাগ্য যে, ভগবান নিজে তার কাছ থেকে গীতগোবিন্দ-গান শ্ৰবণ করবেন! ফলে পদ্মা তার পরিবারের সকলকে নিয়ে পুরীতে গিয়ে শ্ৰীজগন্নাথের সেবা করতে সম্মত হল। শীঘ্রই তাঁরা সকলে পুরী এসে রাজার সঙ্গে সাক্ষাৎ করল। রাজা তাঁদের সকলকে পুরীতে বাস করবার সকল সুব্যবস্থা করে দিলেন এবং পদ্মাকে শ্ৰীজগন্নাথের সামনে গীতগোবিন্দ গান করার বিশেষ সেবা দিলেন ।

সেই দিন থেকে ভগবানের বিশ্ৰাম গ্ৰহণের পূৰ্বে তাঁকে গীতগোবিন্দ গানকে রাজা অত্যন্ত সমাদর ও মৰ্যাদা দেন। তিনি এই গান গাইবার সময় ও কিভাবে গাইতে হবে তাঁর উপযুক্ত পদ্ধতি সবই নিৰ্ধারণ করে দিয়েছিলেন। এই সেবার জন্য রাজা একটি বিশেষ আদেশ জারি করলেন এবং সেটি যে স্থায়ী আদেশ, সেটি বোঝানোর জন্য তাঁর নিৰ্দেশে আদেশটি পাথরে খোদাই করে লিখিত হল। সেই দিন থেকে সৌভাগ্যশালিনী মেয়ে পদ্মা নৈশকালীন আরতির পর শ্ৰীজগন্নাথের বিশ্ৰাম গ্রহণের পূর্বে তাঁর সামনে প্ৰতিদিন সুললিত স্বরে তাঁকে গীতগোবিন্দ গেয়ে তাঁর আনন্দবিধান করতে লাগল। ছোট্ট বালিকা পদ্মা সেই থেকে ভগবান জগন্নাথের দেবদাসী নামে খ্যাত হল। সেই থেকে এখনও প্রতি রাতে ভগবান জগন্নাথকে গীতগোবিন্দ শুনানো হয়।

💞জয় পতিতপাবন পরম করুণাময় শ্রীজগন্নাথদেবের জয়💞