💐💞 শ্রীমদ্ভগবদ্গীতা 💞💐

🌹🌻🌺💞💞💐💐💞💞🌺🌻🌹

🌻🌼💐 চতুর্থ অধ্যায়ের মাহাত্ম্য💐🌼🌻

বিশেষ পোষ্ট

শ্রী শ্রী গুরু গৌরাঙ্গ জয়তঃ

সকল সাধু,গুরু,বৈষ্ণব ও গৌর ভক্তবৃন্দের শ্রীচরণে আমার অনন্ত কোটি সাষ্টাঙ্গ দণ্ডবৎ প্রণাম I

''হরি - গুরু - বৈষ্ণব তিনিহেঁ স্মরণ।

তিনেহেঁ স্মরণ হইতে বিঘ্ন বিনাশন।।

অনায়াসে হয় নিজ বাঞ্ছিত পূরণ ।।‘’

💐ভগবানবিষ্ণু বললেন, - প্রিয়ে লক্ষ্মি তোমার নিকট এবার শ্রীমদ্ভগবদগীতার চতুর্থ অধ্যায়ের মাহাত্ম্য বর্ণনা করছি, মনযোগ দিয়ে শ্রবণ কর।

গঙ্গার তীরে কাশী (বারাণসী) নামে এক বিখ্যাত নগরী, যেখানে বিশ্বনাথের মন্দির অবস্থিত। সেখানে ভরত নামে এক মহান সাধু বাস করতেন। প্রতিদিন তিনি গভীরনিষ্ঠা ও ভক্তিসহকারে শ্রীমদ্ভগবদগীতার চতুর্থ অধ্যায় পাঠ করতেন। পূর্বে ভরত যখন তীর্থযাত্রায় পরিভ্রমণ করছিলেন, তখন তিনি তপোদন  নামক নগরে ভগবান শ্রীকৃষ্ণের শ্রীবিগ্রহ দর্শন করতে যান। তারপরে ঐ স্থান ত্যাগের সময় তিনি দুটি বেল গাছ দেখতে পেলেন। সেই গাছের ছায়ায় বিশ্রাম করার মানসে তিনি একটি গাছের মূলকে বালিশ করে এবং অন্য গাছের মূলের ওপর পা রেখে শুয়ে পড়লেন। কিছুকাল পরে (ভরতের সেই স্থান ত্যাগের পর) দুটি গাছই শুকাতে শুরু করে। পাঁচ-ছয় দিনের মধ্যেই গাছ দুটি সম্পূর্ণ শুকিয়ে মারা যায়। যে দুটি আত্মা সেই গাছের মধ্যে বাস করত তারা এক ধার্মিক ব্রাহ্মণের কন্যা রূপে জন্ম নিল। সেই কন্যাদ্বয় যখন সতেরো বছরে পা দিল তখন তাদের বারাণসীতে তীর্থযাত্রায় নিয়ে যাওয়া হল।

বারাণসীতে ভ্রমণ করতে করতে হঠাৎ তাদের সঙ্গে মহাত্মা ভরতের দেখা হয়ে গেল। ভরতকে দেখার সঙ্গে সঙ্গেই তারা দুইজন পায়ে পড়ে মধুর বচনে বলল,- “হে মহারাজ ভরত! আপনার কৃপাতেই আমরা বৃক্ষরূপ থেকে মুক্তি পেয়েছি।‘’ ভরত মহারাজ তাদের কথা শুনে বিস্ময়াভিভূত হলেন, তিনি তাদের জিজ্ঞাসা করলেন, “হে প্রিয় কন্যারা! কোথায় এবং কখন আমি তোমাদের সংস্পর্শে এসেছিলাম এবং তোমাদের কু-রূপ থেকে মুক্তি দিয়েছিলাম? কিভাবে তোমাদের বৃক্ষরূপ প্রাপ্তি হয়েছিল দয়া করে আমাকে জানাও, কারণ সেই সম্বন্ধে আমি কিছুই জানি না।”

প্রথমে কন্যাদ্বয় তাদের বৃক্ষরূপ প্রাপ্তির কথা ভরত মহারাজকে বলল। একজন বলল, “মহারাজ, গোদাবরী নদীর তীরে ছিন্নপাপ নামে একটি পবিত্র স্থান আছে। সেখানে সত্যতপা নামে এক ঋষি বাস করতেন। তিনি খুব কঠোর তপস্যা ও কৃচ্ছসাধন করছিলেন। গ্রীষ্মকালে তিনি অনেকগুলি অগ্নিকাণ্ডের মাঝখানে বসতেন এবং শীতকালে শীতল নদীতে জলের মধ্যে দাঁড়িয়ে থাকতেন। কালক্রমে তিনি সম্পূর্ণরূপে বিশুদ্ধ হন এবং ইন্দ্রিয়দমনে পূর্ণ সক্ষম হন। এইভাবে ধীরে ধীরে তিনি লীলা পুরুষোত্তম ভগবান শ্রীকৃষ্ণের শ্রীপাদপদ্ম লাভ করেন।

পিতামহ ব্রহ্মা প্রতিদিন ঋষি সত্যতপার দর্শনে যেতেন এবং ভগবৎ-সেবা সম্বন্ধে তাকে প্রশ্ন করতেন। ইত্যবসরে সত্যতপা ঋষির প্রতিষ্ঠা দেখে দেবরাজ ইন্দ্র চিন্তিত হলেন। তিনি ভাবলেন একদিন সত্যতপা তাকে তার স্বর্গের রাজপদ থেকে উচ্ছেদ করবেন। ইন্দ্র তখন আমাদের দুজনকে ডেকে পাঠালেন। সেই জন্মে আমরা ইন্দ্রের রাজসভায় অপ্সরা ছিলাম। ইন্দ্র আমাদের বললেন, 'যাও, আমাকে রাজপদ থেকে উৎখাত করার আগে এই সত্যতপা মুনির পতন ঘটাও। গোদাবরী নদীর তীরে সত্যতপা মুনি যেখানে কঠোর তপস্যা করছিলেন, ইন্দ্রের নির্দ্দেশ পেয়ে আমরা সেখানে গিয়ে উপস্থিত হলাম।  

আমরা মুনির খুব নিকটবর্তী হয়ে তাকে বিচলিত করার উদ্দেশ্যে নৃত্যগীত শুরু করে দিলাম, নৃত্যরত অবস্থায় আমাদের গাত্রবাস শিথিল হয়ে খসে পড়ল এবং আমাদের স্তনদ্বয় অনাবৃত হল। মুনি তখন ক্রোধে হাতে জল নিয়ে আমাদের অভিশাপ দিয়ে বললেন, যা, তোমরা দুজনেই গঙ্গাতীরে গিয়ে বেলগাছ হয়ে থাক্। অভিশাপ বাক্য শুনে আমরা মুনির চরণে পতিত হয়ে ক্ষমা প্রার্থনা করলাম। তাকে অনুনয়-বিনয় করে বললাম যে, আমরা দেবরাজ ইন্দ্রের আজ্ঞাবাহী দাসী, আপনি কৃপা করে আমাদেরকে অভিশাপ থেকে মুক্তি দেন। আমাদের আত্ম-সমর্পিত ভাব দেখে মুনিবর তুষ্ট হলেন এবং বললেন, অভিশাপ ব্যর্থ হওয়ার নয়, তবে ভরত মহারাজের সংস্পর্শে না আসা পর্যন্ত আমাদের গাছ হয়ে থাকতে হবে। আমরা পূর্ব জন্মের কথা স্মরণ করতে সক্ষম হব বলে তিনি আমাদের আশীর্বাদও করলেন।

হে পরম প্রিয় ভরত মহারাজ! আমরা যখন গাছ হয়ে গঙ্গাতীরে ছিলাম তখন আপনি তপোদন ভ্রমণ কালে আমাদের নিচে বিশ্রাম করেছিলেন। আপনি শ্রীমদ্ভগবদ্গীতার চতুর্থ অধ্যায় পাঠকরছিলেন। আপনার সেই পাঠ শুনে আমরা শুধু বৃক্ষ জীবন থেকে মুক্ত হয়ে ভক্ত পরিবারেই জন্মগ্রহণ করিনি, বরং এই জড় জগতের সকল ভোগ বাসনা থেকেও মুক্ত হয়েছি।

ভগবান বিষ্ণু বললেন,- প্রিয়ে লক্ষ্মি! এই কন্যাদ্বয় ভরত মহারাজের কাছে তাদের জীবন কাহিনী বর্ণনা করায় তিনি খুবই সন্তুষ্ট হয়ে আশ্রমে ফিরে গেলেন। কন্যাদ্বয় সারা জীবন ধরে শ্রীমদ্ভগবদগীতার চতুর্থ অধ্যায় অতি যত্নে পাঠ করে আমার শ্রীপাদপদ্ম লাভ করেছেন।

হরি হরি আর কি এমন দশা হব।

হরি হরি আর কি এমন দশা হব।

এ ভব সংসার ত্যজি,                    পরম আনন্দে মজি,

আর কবে ব্রজভূমে যাব।।

সুখময় বৃন্দাবন,                    কবে হবে দরশন,

সে ধূলি লাগিবে কবে গায়।

প্রেমে গদগদ হৈঞা,                    রাধাকৃষ্ণ-নাম লৈয়া,

কান্দিয়া বেড়াব উভরায়।।

নিভৃত নিকুঞ্জে যাঞা,                    অষ্টাঙ্গে প্রণাম হৈঞা,

ডাকিব 'হা রাধানাথ' বলি।

কবে যমুনার তীরে,                    পরশ করিব নীরে,

কবে পিব করপুটে তুলি।।

আর কবে এমন হব,                    শ্রীরাসমণ্ডলে যাব,

কবে গড়াগড়ি দিব তায়।

বংশীবট-ছায়া পাঞা,                    পরম আনন্দ হৈঞা,

পড়িয়া রহিব তা'র ছায়।।

কবে গোবর্দ্ধন গিরি,                    দেখিব নয়ন ভরি,

কবে হবে রাধাকুণ্ডে বাস।।

ভ্রমিতে ভ্রমিতে কবে,                    এ দেহ পতন হবে,

কহে দীন নরোত্তমদাস।।

বৃষভানুসুতা, চরণ সেবনে, হইব যে পাল্যদাসী।

শ্রীরাধার সুখ, সতত সাধনে, রহিব আমি প্রয়াসী।।

শ্রীরাধার সুখে, কৃষ্ণের যে সুখ,জানিব মনেতে আমি।

রাধাপদ ছাড়ি, শ্রীকৃষ্ণ সঙ্গমে,কভু না হইব কামী।।

সখীগণ মম,পরম সুহৃদ, যুগল প্রেমের গুরু।

তদনুগা হয়ে, সেবিব রাধার, চরণ কল্পতরু ।।

💞জয় ভক্তবৎসল শ্রীভগবানের জয়💐💐জয় সকল ভক্তবৃন্দের জয়💞