🌷🌻💖🍁🌺রথযাত্রা তাৎপর্য 🌺🍁💖🌻🌷
🏵️💐🌺🏵️💐💞🏵️💐🌺🏵️💐💞🏵️💐🌺🏵
বিশেষ পোষ্ট

শ্রী শ্রী গুরু গৌরাঙ্গ জয়তঃ

সকল সাধু,গুরু,বৈষ্ণব ও গৌর ভক্তবৃন্দের শ্রীচরণে আমার অনন্ত কোটি সাষ্টাঙ্গ দণ্ডবৎ প্রণাম I শ্রীজগন্নাথদেবের বিশ্বপ্রসিদ্ধ রথযাত্রা পর্বের সবাইকে জানাই কৃষ্ণপ্রীতি শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন।

‘স্বকীয়া’ ও ‘পরকীয়া’ এই দুইভাবে ভগবান শ্রীকৃষ্ণ তাঁর লীলারস উপভোগ করে থাকেন। দ্বারকা রাজ্য যেমন শ্রীকৃষ্ণের ঐশ্বর্য - লীলার স্থান, বৃন্দাবন তেমনি তাঁর মাধুর্য - লীলার স্থল। দ্বারকায় মহিষীগণের সাথে ঐশ্বর্যমণ্ডিত যে লীলাবিলাস, তাকে স্বকীয়া লীলারস; আর ব্রজে গোপাঙ্গনাগণের সাথে যে মাধুর্যমণ্ডিত লীলারস, তাকে পরকীয়া লীলা রস বলা হয়।

🌷

শ্রীশ্রীজগন্নাথ দেব হলেন শ্রীকৃষ্ণের বামন রূপ। মহাস্নানযাত্রার পরবর্তী পনের দিন শ্রীভগবান  অঙ্গরাগবিহীন বিরূপ অবস্থায় জ্বরলীলা প্রকাশ করেন। এই সময় মন্দিরের দ্বার বন্ধ থাকে। এই সময়কে ‘অনবসরকাল’ বলাহয়। এই সময়ে জগন্নাথদেব মহালক্ষ্মী দেবীকে অন্তরঙ্গ সঙ্গ ও সেবা পরিচর্যা দানের জন্য সুযোগ করে দেন। পক্ষকাল বিশ্রামের পর নব বেশভূষায় সজ্জিত হয়ে বিগ্রহগণ নবমূর্তিতে প্রকটিত হয়ে প্রথম দর্শন দানকে ‘নেত্রোৎসব উৎসব’ বলা হয়।

🌷

রথযাত্রার দিন লক্ষ্মীদেবীর সঙ্গ ত্যাগ করে অর্থাৎ ঐশ্বর্যের জগৎ হইতে, পরকীয়া রসাস্বাদনের জন্য ব্রজের মাধুর্যমণ্ডিত ভক্তগণের প্রতি কৃপা সম্পাত করার জন্য বৃন্দাবনরূপ গুণ্ডিচার অভিমুখে চলে জগন্নাথ দেবের রথের চঞ্চল গতি। যাঁরা পুরুষোত্তম ভগবান্ জগন্নাথদেবের শ্রীমূর্তি দর্শন করার সুযোগ থেকে বঞ্চিত তাঁরাও আজ অসীম আনন্দে ঐ শ্রীমূর্তির শ্রীমুখদর্শনের সুযোগ পেয়ে ধন্য হন। সর্বেশ্বর ভগবান জগন্নাথদেব সকল ধর্ম ও মতাদর্শের মানুষের সহজ অনুধ্যানের জন্য স্বকৃপায় ও স্বমহিমায় বৎসরে একবার করে এইভাবে জনসমক্ষে এসে সকলের আনন্দ বিধান করে থাকেন।

🌷

দ্বারকার ঐশ্বর্যের সিংহ- দুয়ারটি আবৃত  হয়ে থাকে আপন বৈভবের মাঝে। জগন্নাথরূপী শ্রীকৃষ্ণের মনে বৃন্দাবনের স্মৃতি জাগরিত  হলে, তিনি আর নীলাচলরূপ দ্বারকায় অবস্থান করতে পারছিলেন না। অধীর আগ্রহে বৃন্দাবনে ফিরে যাবার জন্য তিনি উৎকণ্ঠিত বোধ করছিলেন। ভক্তের গভীর প্রেমের টানে দ্বারকার কৃষ্ণকে প্রেমরথ - রজ্জু দ্বারা আকর্ষণ করে ব্রজ হৃদয়ের দুয়ারে নিয়ে আসার জন্য প্রয়াসী হয়ে রথের শুভযাত্রার জয় ঘোষিত হয় বৎসরে একবার করে। এই একটি বারের প্রণয়স্মৃতিকে চির অম্লান করে রাখার জন্য সারা বৎসর ধরে চলে প্রাণে প্রাণে প্রেমরথের রজ্জু টানাটানি। পরিশেষে প্রাণের নৈকট্য চাওয়ার তীব্র উন্মাদনার প্রশমন হয় রথযাত্রার দিন। জগন্নাথের জীবনরথ ঐশ্বর্যের, কিন্তু তাঁর আস্বাদনটি প্রেমের। ভক্তপ্রাণের প্রেমের জোয়ারে ভগবানের ঐশ্বর্যের প্রাকার ভেসে যায়। ভগবান তাঁর শ্রীধাম ছেড়ে প্রেম বিলাসে নেমে আসেন ব্রজ বিহারে। মিলন হয় ভক্ত আর ভগবানের।

🌷

প্রায় পাঁচ হাজার বৎসর পূর্বে এক বিশেষ সূর্যগ্রহণ উপলক্ষ্যে কুরুক্ষেত্রের স্যমন্তক পঞ্চকে পবিত্র দ্বৈপায়ন হ্রদে দ্বারকাধীশ শ্রীকৃষ্ণ ও বলরাম বিভিন্ন পদাতিক সৈন্যদ্বারা পরিশোভিত হয়ে সুন্দর রাজবেশে উপস্থিত হয়েছিলেন পুণ্যস্নান করতে । সেখানে ব্রজবাসীরাও এসেছেন শ্রীকৃষ্ণ দর্শনের আশা নিয়ে পুণ্যার্থী হয়ে। যাদবগণ সেখানে সমবেত তাঁদের প্রিয়সখা, নন্দ মহারাজ ও ব্রজ গোপ-গোপীদের দেখতে পেলেন। সেখানে বৃন্দাবনের গোপ-গোপীদের সাথে ভগবান শ্রীকৃষ্ণের সাক্ষাৎ হলো। দীর্ঘ অদর্শন- জনিত বিরহ-বিধুরা গোপীরা আবার তাঁদের প্রাণকান্তকে দর্শন করে আনন্দিত হলেন। কিন্তু তাঁরা কৃষ্ণকে রাজবেশে দেখতে চাইলেন না। তাঁরা চাইলেন তাঁকে বৃন্দাবনে ফিরিয়ে নিয়ে ব্রজের বেশে দেখতে এবং উন্মুখ হলেন তাঁর সাহচর্য পেতে । তখন ব্রজবাসীরা কৃষ্ণ, বলরাম ও সুভদ্রা দেবীর রথের ঘোড়া ছেড়ে দিয়ে নিজেরাই রথ টানতে টানতে বৃন্দাবনে নিয়ে গেলেন।

🌷

সেই ঘটনা স্মরণ করে ভক্তরা আজ ও পুরীর জগন্নাথ মন্দির থেকে ভগবান শ্রীকৃষ্ণকে রথে টেনে বৃন্দাবনে নিয়ে যান। তাঁরা শ্রীকৃষ্ণকে ঐশ্বর্য্যের দেশ থেকে নামিয়ে তাঁদের মনের ভাবময় বৃন্দাবনে টেনে এনে তাঁকে দৃঢ় আলিঙ্গনাবদ্ধ করে দেবদুর্লভ প্রেমের ভাবরাজ্যে অবগাহন করেন। শ্রীকৃষ্ণ নির্জন স্থানে গমন করে তাঁদের কুশলাদি জিজ্ঞেস করার পর বললেন,- “হে প্রিয় সখীগণ, তোমরা কি এখনও আমাকে স্মরণ কর? আমার আত্মীয়বর্গের জন্য, আমার শত্রুদের বিনাশ করার দৃঢ়সঙ্কল্প নিয়ে আমি দীর্ঘদিন দূরে অবস্থান করছিলাম। তোমরা সম্ভবত ভাবছ যে, আমি অকৃতজ্ঞ এবং তাই আমাকে অবজ্ঞা করছ?

🌷

বস্তুত ভগবানই জীবকে একত্রিত করেন এবং তারপর তাদের বিচ্ছিন্ন করেন। ঠিক যেমন বায়ু মেঘরাশি, তৃণ, তুলা এবং ধূলিকণাকে পুনরায় ছড়িয়ে দেবার জন্যই একত্রিত করে, ঠিক তেমনি স্রষ্টাও তাঁর সৃষ্ট জীবের সঙ্গে একইভাবে আচরণ করেন। আমার প্রতি ভক্তির দ্বারাই জীব অমরত্বের যোগ্যতা লাভ করে। কিন্তু তোমাদের সৌভাগ্য দ্বারা তোমরা আমার প্রতি এক বিশেষ প্রেমময়ী মনোভাব লাভ করার ফলে আমাকে প্রাপ্ত হয়েছ। হে গোপীগণ ! ঠিক যেমন মাটি, জল, অগ্নি, বায়ু ও আকাশ সকল ভৌতিক পদার্থের আদি ও অন্ত এবং তাদের ভিতর ও বাহির উভয় ক্ষেত্রেই বর্তমান। এইভাবে আত্মাসমূহ যখন তাদের আপন স্বরূপে অবস্থান করে, সকল সৃষ্টবস্তু সৃষ্টির মূল উপাদানসমূহের মধ্যে বাস করে।

🌷

জড় সৃষ্টি ও আত্মা উভয়েই অবিনশ্বর পরম ব্রহ্ম আমার থেকে প্রকাশিত হয়, তোমরা তা দর্শন কর।'' এইভাবে কৃষ্ণ কর্তৃক পারমার্থিক বিষয়ে শিক্ষিত হয়ে তাঁর প্রতি তাঁদের নিরন্তর ধ্যানের ফলে মিথ্যা অহঙ্কারের সকল প্রভাব থেকে গোপীগণ মুক্ত হয়েছিলেন। তাঁর প্রতি তাঁদের নিমগ্নতা দ্বারা তাঁরা তাঁকে পূর্ণরূপে হৃদয়ঙ্গম করলেন। ভাগবতের ভাব হৃদয়ে ধারণ করে বলা চলে- গোপীরা ভগবানকে সবকিছু সমর্পণ করে দিয়েছিলেন,- তাঁদের মন জুড়ে পাতা ছিল কৃষ্ণের আসন, তাঁরা কৃষ্ণকে একান্ত আপনার করেই ভাবতেন, তাই তাঁরা কৃষ্ণের দ্বারকা গমনে ব্যথিত হয়েছিলেন। কৃষ্ণ যে সকলের - এভাবটি কৃষ্ণগতপ্রাণা গোপীরা বুঝতে চাইতেন না। তাই ভগবান্ তাঁদের মনের প্রেমগর্বের মিথ্যা অহঙ্কাররূপ ঐশ্বর্যের রাজ্য হইতে প্রেমময় দীক্ষায় প্রবুদ্ধ করে মাধুর্যের রাজ্যে নিয়ে এসে প্রেমের রথখানিকে তাঁদের আপন হৃদয়েই চালিত করলেন।

🌷

ভক্তের হৃদয়ে এই রথ টানাটানি অনুক্ষণ চলছে। সম্ভোগ রসরাজ ব্রজেন্দ্রনন্দন ব্রজবাসীকে পরিত্যাগ করে দ্বারকায় গিয়েছিলেন ঐশ্বর্য্যলীলা আস্বাদন করতে। কুরুক্ষেত্রের পুণ্যস্নানে আবার দেখা হয় তাঁদের সাথে। প্রেমের টানে নামে জোয়ার। রাধা- ভাবদ্যুতি- সুবলিততনু গৌর সুন্দর ঐশ্বর্য্যের লীলাভূমি নীলাচলক্ষেত্র হইতে মাধুর্য্য - লীলাভূমি গুণ্ডিচার দিকে রথকে আকর্ষণ করছেন। এটিই রথযাত্রার তাৎপর্য্য ।

 রথে তু বামনং দৃষ্ট্বা পুনর্জন্ম ন বিদ্যতে ।''

অর্থাৎ রথোপরি ভগবান জগন্নাথ দেবের একবার দর্শনেই জন্ম-মৃত্যুর পুনরাবর্তন থেকে অব্যাহতি মেলে ।

🍁জয় প্রভু জগন্নাথ 🍁 জয় প্রভু বলরাম🍁 জয় দেবী সুভদ্রা🍁 জয় শ্রীরথযাত্রা🍁