💐💞 শ্রীমদ্ভগবদ্গীতা 💞💐

🌹🌻🌺💞💞💐💐💞💞🌺🌻🌹

🌻🌼💐 তৃতীয় অধ্যায়ের মাহাত্ম্য💐🌼🌻

বিশেষ পোষ্ট

শ্রী শ্রী গুরু গৌরাঙ্গ জয়তঃ

সকল সাধু,গুরু,বৈষ্ণব ও গৌর ভক্তবৃন্দের শ্রীচরণে আমার অনন্ত কোটি সাষ্টাঙ্গ দণ্ডবৎ প্রণাম I

''হরি - গুরু - বৈষ্ণব তিনিহেঁ স্মরণ।

তিনেহেঁ স্মরণ হইতে বিঘ্ন বিনাশন।।

অনায়াসে হয় নিজ বাঞ্ছিত পূরণ ।।‘’

শ্রীভগবান বিষ্ণু বললেন,- প্রিয়ে লক্ষ্মী ! জনস্থান নগরীতে জড় নামে কৌশিক বংশজাত এক ব্রাহ্মণ বাস করত। সে ব্রাহ্মণোচিত কার্যকলাপ পরিত্যাগ করে নানা ধর্ম বিরোধী কাজ করত। মদ, জুয়া, পশু শিকার ও বেশ্যালয়ে গমন তার অতি প্রিয় ছিল। এইভাবে ধনসম্পদ নষ্ট করে সর্বশান্ত হয়ে উত্তরদেশে সে ব্যবসা করার উদ্দেশ্যে গমন করল। সেখানে থাকাকালীন অনেক অর্থ রোজগার করে নিজ জন্মস্থানে ফেরার মনস্থ করে রাস্তায় বেরিয়ে পড়ল। অনেক পথ হাঁটার পর  সে এক জনশূন্য স্থানে এসে পৌঁছাল। সূর্যাস্তের পর অন্ধকার নেমে আসল। সে তখন এক গাছের নিচে রাত কাটাতে মনস্থ করল।

যখন সে বিশ্রাম করছিল, সেই সময় কয়েকজন দস্যু এসে তাকে প্রহার করে মেরে ফেলে তার অর্থকড়ি নিয়ে চলে গেল। ধর্ম ত্যাগ করে অধর্মের আশ্রয়ে এক পাপী-জীবনযাপন করার ফলে তার এইভাবে মৃত্যু হল। মরার পর সে একটি প্রেত শরীর লাভ করল। জড়ের পুত্র খুবই ধার্মিক ছিল এবং বৈদিক শাস্ত্রে সে ছিল অত্যন্ত পারদর্শী। অনেক দিন পার হয়ে গেলেও তার পিতা জন্মস্থানে ফিরে এল না। সে তখন পিতার খোঁজে বের হবে বলে স্থির করল। বহুদিন ধরে এখানে-সেখানে সে পিতার খোঁজ করে বেড়াতে লাগল। যখনই কোন পথিকের সাক্ষাৎ পায় তখনই সে তার কাছে তার পিতার কথা জিজ্ঞাসা করে। একদিন তার পিতার পরিচিত এক ব্যক্তির সঙ্গে তার দেখা হল। লোকটি তাকে তার পিতার সম্বন্ধে সব ঘটনা বিস্তার করে বলল। পিতার মৃত্যু সংবাদ শুনে তার নরক থেকে মুক্তি লাভের জন্য কাশীধামে গিয়ে পিণ্ডদানের মনস্থ করল।

কাশীযাত্রার নবম দিনের দিন ঘটনাক্রমে, যে গাছের নিচে তার পিতাকে হত্যা করা হয়েছিল, সেই একই গাছের নিচে বসে বিশ্রাম করতে লাগল। সন্ধ্যাবেলায় সেখানে সে তার নিত্যকার কৃষ্ণপূজা সম্পন্ন করে শ্রীমদ্ভগবদগীতার তৃতীয় অধ্যায় পাঠকরল। তার শ্লোক আবৃত্তি শেষ হওয়া মাত্রই আকাশ মার্গ থেকে এক উচ্চ শব্দ ভেসে এল। উপরের দিকে তাকিয়ে সে তার পিতাকে দেখতে পেল। আর তার চোখের সামনেই তার পিতা চতুর্ভুজধারী পীতবসন পরিহিত এক অপরূপ সুন্দর মূর্তিতে পরিবর্তিত হয়ে গেল। তার মেঘবর্ণ উজ্জ্বল দেহের ছটায় চতুর্দিক আলোকিত হল। পিতা তাকে আশীর্বাদ করল। পুত্র এই সকল বিস্ময়কর ঘটনাবলী সম্পর্কে ভালোভাবে জানতে চাইল। তখন পিতা বলল, “প্রিয় পুত্র! তুমি শ্রীমদ্ভগবদগীতার তৃতীয় অধ্যায় পাঠ করেছ, তাই আমার পাপকর্মের ফলস্বরূপ প্রাপ্ত প্রেত শরীর থেকে আমি মুক্ত হয়েছি। তুমি যে উদ্দেশ্যে কাশী যাওয়ার জন্য বেরিয়েছ, ভগবদ্গীতার তৃতীয় অধ্যায় পাঠ করায় তা সফল হয়েছে। এখন তুমি বাড়ি ফিরে যেতে পার।”

তার প্রতি আর কোন নির্দেশ আছে কি না জানতে চাওয়ায় পিতা বলল, “আমার ভাইও খুবই পাপী-জীবনযাপন করত বলে নরকের সর্বাপেক্ষা কোন এক তমসাবৃত অঞ্চলে পড়ে পড়ে কষ্ট পাচ্ছে। তুমি যদি তাকে এবং অন্যান্য পূর্বপুরুষদের উদ্ধার করতে ইচ্ছা কর, যারা এই জড় জগতে বিভিন্ন দেহ ধারণ করে কষ্ট ভোগ করছে, তবে দয়া করে শ্রীমদ্ভগবদগীতার তৃতীয় অধ্যায়টি পাঠ কর। যারা এই অধ্যায়ের শ্লোক সমূহ আবৃত্তি করে, তারা সকলেই ভগবান বিষ্ণুর সমতুল্য রূপ ধারণ করবে এবং তাদের বৈকুণ্ঠ প্রাপ্তি হবে।‘’  পিতার নির্দ্দেশবাক্য শুনে পুত্র উত্তরে বলল, তাই যদি হয়, তবে যারা এই নরকে আবদ্ধ হয়ে আছে তাদের সকলের মুক্তি না হওয়া পর্যন্ত আমি গীতার এই শ্লোকসমূহ পাঠ করতে থাকব।  এই সময়ে বৈকুণ্ঠ লোক থেকে এক পুষ্পক বিমান অবতরণ করল,তার পিতা তখন তাকে আশীর্বাদ করে সেই বিমানে আরোহণ করে বৈকুন্ঠ লোক গেল।

অতঃপর পুত্র জনস্থানে ফিরে এসে ভগবান কৃষ্ণের শ্রীবিগ্রহের সামনে বসল। তার সকল পূর্বপুরুষদের বদ্ধ আত্মাকে নরক থেকে উদ্ধারের মানসে শ্রীমদ্ভগবদ্গীতার তৃতীয় অধ্যায় পাঠ করতে শুরু করল। তার এই আবৃত্তি পাঠ যখন দিনের পর দিন চলতে লাগল, তখন ভগবান বিষ্ণু যমরাজের রাজ্যে দূত পাঠালেন। পাপীদের শাস্তিবিধানের অধিকর্তা হলেন যমরাজ। যমরাজের সামনে বিষ্ণুদূতগণ উপস্থিত হয়ে বললেন যে, ক্ষীর সমুদ্রে অনন্তশয্যায় শায়িত ভগবান শ্রীবিষ্ণু বার্ত্তা পাঠিয়েছেন। দূতেরা আরও বললেন যে, ভগবান বিষ্ণু তার কুশল জানতে চেয়েছেন এবং নরকে কষ্ট পাওয়া সকল বদ্ধ আত্মাকে মুক্তি দিতে বলেছেন।

ভগবান বিষ্ণুর নির্দ্দেশ শোনা মাত্রই সকল বদ্ধ আত্মা যারা কষ্ট পাচ্ছিল তাদের নরক থেকে মুক্তি দিয়ে যমরাজ বিষ্ণুদূতগণের সঙ্গে নিজে বিষ্ণু দর্শনের জন্য ক্ষীর সমুদ্রে গেলেন। সেখানে পৌঁছে  ভগবান বিষ্ণুকে তিনি অনন্ত শয্যায় শায়িত দেখলেন। তার দেহ থেকে সহস্র সূর্যের জ্যোতি বিচ্ছুরিত হচ্ছিল এবং সমস্ত ঐশ্বর্যের অধিষ্ঠাত্রী লক্ষ্মীদেবী তার পদসেবা করছিলেন। চতুর্দিকে মুনি ঋষি এবং স্বর্গরাজ ইন্দ্র সহ বহু দেব-দেবী ভগবানের গুণকীর্ত্তন করছিলেন, ব্রহ্মাও সেখানে উপস্থিত ছিলেন এবং বেদ স্তুতি করছিলেন।

ভগবান বিষ্ণুর পাদপদ্মে পতিত হয়ে যমরাজ তাকে প্রণাম নিবেদন করলেন এবং স্তুতি করতে লাগলেন, হে ভগবান! সকল জীবাত্মার আপনি শুভাকাঙক্ষী। আপনার অপার মহিমা। আপনার থেকেই বেদের উৎপত্তি। আপনি হলেন কাল এবং কালক্রমে আপনিই সবকিছু ধ্বংস করবেন। আপনিই এই ত্রিজগতের সৃষ্টিকর্তা এবং রক্ষক। প্রত্যেকের হৃদয়ে পরমাত্মারূপে সকল জীবের কার্যাবলীকে আপনি পরিচালিত করেন। সকল বিশ্বের গুরু আপনি এবং সকল ভক্তের লক্ষ্য আপনি। হে কমলনয়ন! কৃপা করে আপনি আমার ভক্তিপূর্ণ প্রণতি গ্রহণ করুন।  যমরাজ এইভাবে কৃতাঞ্জলিপুটে ভগবান বিষ্ণুকে শ্রদ্ধা নিবেদন করলেন।

যমরাজ বললেন, হে প্রভু! আপনার নির্দ্দেশ মতো আমি সকল বদ্ধ আত্মাকে নরক থেকে মুক্তি দিয়েছি। দয়া করে নির্দ্দেশ দিন আমি এখন কি করব?  ভগবান বিষ্ণু বজ্রের ন্যায় গম্ভীর অথচ অমৃতের ন্যায় মধুর কণ্ঠে উত্তর দিলেন, হে প্রিয় ধর্মরাজ! তুমি সকলের প্রতি সমদর্শী, তোমার কর্ত্তব্য সম্পর্কে নতুন কোন নির্দ্দেশ দানের প্রয়োজন নেই। আমার পূর্ণ আশীর্বাদ নিয়ে তুমি তোমার পুরীতে ফিরে গিয়ে তোমার নিত্য  কাজ আরাম্ভ কর। তারপর ভগবান বিষ্ণু যমরাজের দৃষ্টি থেকে অন্তর্হিত হলেন, আর যমরাজ তার নিজ পুরীতে ফিরে গেলেন।

জড়ের পুত্র সদাচারী ব্রাহ্মণ ছিলেন, যখন তার সব পূর্বপুরুষদের বদ্ধ আত্মাদের সফলতার সঙ্গে নরক থেকে মুক্ত করতে সমর্থ হলেন তখন বিষ্ণু দূতেরা সেখানে এসে তাকেও বিষ্ণুলোকে নিয়ে গেলেন। সেখানে তিনি পরমেশ্বর ভগবানের শ্রীপাদপদ্মের নিত্য সেবায় নিযুক্ত হলেন।

💞জয় ভক্তবৎসল শ্রীভগবানের জয়💐💐জয় সকল ভক্তবৃন্দের জয়💞