🌷শ্রীকৃষ্ণ ও উদ্ধব সংবাদ🌷

🍁🌴🌳🌺🌷💞🌻🍁🌻💞🌷🌺🌳🌴🍁

বিশেষ পোষ্ট

শ্রী শ্রী গুরু গৌরাঙ্গ জয়তঃ

সকল সাধু,গুরু,বৈষ্ণব ও গৌর ভক্তবৃন্দের শ্রীচরণে আমার অনন্ত কোটি সাষ্টাঙ্গ দণ্ডবৎ প্রণাম I

''হরি - গুরু - বৈষ্ণব তিনিহেঁ স্মরণ।

তিনেহেঁ স্মরণ হইতে বিঘ্ন বিনাশন।।

অনায়াসে হয় নিজ বাঞ্ছিত পূরণ ।।‘’

শ্রীভগবানের বিভূতি বর্ণন

ভগবান শ্রীকৃষ্ণের পরম প্রিয় ও সেবক উদ্ধব যখন জানতে পারলেন যে শ্রীপ্রভু তাঁর নরলীলা সংবরণ করে স্বধাম গমনের জন্য প্রস্তুত হচ্ছেন তখন তিনি প্রভুর কাছে ছুটে এসে তাঁর শ্রীচরণে  প্রণাম নিবেদন করে বললেন,- ‘’জীবন সর্বস্ব শ্যামসুন্দর ! আপনাকে ছেড়ে থাকা আমার পক্ষে সম্ভব নয়, অতএব আপনি আমাকেও আপনার সঙ্গে নিয়ে চলুন। আপনার বিয়োগ ব্যথা সহ্য করা আমার পক্ষে সম্ভব নয়।

শ্রীভগবান উত্তরে বলিলেন,-  যদুবংশ, ব্রাহ্মণদের অভিশাপে ভস্ম হয়েই আছে । আজ হইতে  সপ্তম দিবসে সমুদ্র, দ্বারকাপুরীকে গ্রাস করবে। আমার মর্ত্যলোক ত্যাগ করার সঙ্গে সঙ্গে সকল মঙ্গলের অবসান হবে আর কলিযুগের সূচনা হবে। তখন তোমার সেইখানে না থাকাই ভালো কারণ কলিযুগে মানুষ অধর্মপরায়ণ হবে। তখন সকলের সঙ্গে স্নেহ বন্ধন ছিন্ন করে আমাতে মন নিত্যযুক্ত রেখে পৃথিবীতে স্বচ্ছন্দে বিচরণ করলে তোমার মঙ্গল হবে।

শ্রীভগবানের আদেশ শিরোধার্য করে সেবক উদ্ধব তাঁর কাছ থেকে জানতে চাইলেন,-

যেষু যেষু চ ভাবেষু ভক্ত্যা ত্বাং পরমর্ষয়ঃ।

উপাসীনাঃ প্রপদন্ত্যে সংসিদ্ধিং তদ্বদস্ব মে।।  (ভাগবত ১১।১৬।৩)

অর্থাৎ হে প্রভো ! পরমর্ষিগণ যে যে ভূত মধ্যে ভক্তিসহকারে আপনার উপাসনা করিয়া থাকেন, তাহা আমার নিকট বর্ণন করুন।

শ্রীভগবান উত্তর দিলেন,- হে প্রিয় উদ্ধব ! প্রশ্ন অতি উত্তম, একই প্রশ্ন কুরুক্ষেত্রে অর্জুনও আমাকে করেছিল। অর্জুন যুদ্ধ থেকে নিজেকে সরিয়ে নিতে চাইলে আমি বীর শিরোমণিকে সেই কথা বলে আমার অভীষ্ট কার্যে তাকে যুক্ত করে ছিলাম। হে উদ্ধব ! আমি সকল প্রাণীর হিতাকাঙ্ক্ষী, সুহৃদ ও নিয়ামক ঈশ্বর। স্থাবর জঙ্গমরূপে আমিই সর্বত্র পরিব্যাপ্ত। সৃষ্টি -স্থিতি-প্রলয় আমার কারণেই হয়। আমার বিভূতির শেষ নেই। তোমার অবগতির জন্য কিছু বলছি , শ্রবণ কর।

গতিশীল বস্তুতে আমি গতি, আমি কালরূপে শাসন করি। গুণে আমি তাঁর মূল স্বরূপ সাম্যাবস্থা আর গুণযুক্ত বস্তুতে আমি গুণ। গুণযুক্ত বস্তুতে আমি ক্রিয়াপ্রধান প্রথম কার্য সুত্রাত্মা আর মহান জ্ঞানশক্তি প্রধান প্রথম কার্য মহত্তত্ব।

হিরণ্যগর্ভো বেদানাং মন্ত্রানাং প্রণবস্ত্রিবৃৎ।

অক্ষরাণামকারোহস্মি পদানিচ্ছন্দসামহম্।।   (ভাগবত ১১। ১৬। ১২)

অর্থাৎ,- আমি বেদগণের অধ্যাপক হিরণ্যগর্ভ, মন্ত্র সকলের মধ্যে প্রণব, অক্ষরগণের মধ্যে  অকার এবং ছন্দঃ সমূহের মধ্যে ত্রিপদা গায়ত্রী - স্বরূপ।

সকল দেবতার মধ্যে ইন্দ্র , অষ্টবসুর মধ্যে অগ্নি, দ্বাদশ আদিত্যগণের মধ্যে বিষ্ণু ও একাদশ রুদ্রগণের মধ্যে নীললোহিত রুদ্র। আমি ব্রহ্মর্ষিগণের মধ্যে ভৃগু, রাজর্ষিগণের মধ্যে মনু, দেবর্ষিগণের মধ্যে নারদ আর গাভীগণের মধ্যে কামধেনু। সিদ্ধপুরুষগণের মধ্যে আমি কপিলমুনি, পক্ষীদের মধ্যে গরুড়, প্রজাপতিগণের মধ্যে দক্ষ প্রজাপতি, ও পিতৃপুরুষদের মধ্যে অর্যমা।

প্রিয় উদ্ধব, আমি দৈত্যদের মধ্যে দৈত্যরাজ প্রহ্লাদ, নক্ষত্রদের মধ্যে আমি চন্দ্র, ঔষধির দের মধ্যে আমি সোমরস, এবং যক্ষ ও রাক্ষসগণের মধ্যে আমি কুবের। আমি গজরাজগণের মধ্যে ঐরাবত, জলচরগণের মধ্যে তাদের প্রভু বরুণ , উত্তাপ ও আলোক বিকিরণ কারীগণের মধ্যে সূর্য্য আর মানবগণের মধ্যে রাজা। আমি অশ্বগণের মধ্যে উচ্চৈঃশ্রবা, ধাতুগণের মধ্যে সুবর্ণ, দণ্ড ধারীগণের মধ্যে যম আর সর্পগণের মধ্যে বাসুকি।

হে নিস্পাপ উদ্ধব ! আমি নাগরাজগণের মধ্যে শেষনাগ, কেশর শৃঙ্গযুক্ত প্রাণীগণের মধ্যে সিংহ , আশ্রম সমূহের মধ্যে সন্ন্যাসাশ্রম ও বর্ণসমূহরে মধ্যে ব্রাহ্মণ। আমি তীর্থ ও নদীসমূহের মধ্যে গঙ্গা, জলাশয় সমূহের মধ্যে সমুদ্র, অস্ত্রশস্ত্র সমূহের মধ্যে ধনুক ও ধনুর্ধরগণের মধ্যে ত্রিপুরারী শংকর। নিবাসস্থানের মধ্যে আমি সুমেরু, দুর্গম স্থানসমূহের মধ্যে হিমালয়, বনস্পতিসমূহের মধ্যে অশ্বত্থ ও শস্য সমূহের মধ্যে যব।

পুরোধসাং বসিষ্ঠোহহং ব্রহ্মিষ্ঠানাং বৃহস্পতি।

স্কন্দোহহং সর্বসেনান্যামগ্রণ্যাং ভগবানজঃ।।  (ভাগবত ১১।১৬।২২)

অর্থাৎ,- আমি পুরোহিতগণের মধ্যে বশিষ্ঠ, বেদজ্ঞগণের মধ্যে দেবগুরু বৃহস্পতি, সেনাপতিগণের মধ্যে আমি কার্তিকেয় এবং সন্মার্গ প্রবর্ত্তকগণের মধ্যে ব্রহ্ম- স্বরূপ।

আমি পঞ্চমহাযজ্ঞের মধ্যে ব্রহ্মযজ্ঞ, ব্রতসমূহের মধ্যে অহিংসা ব্রত, পরিশোধনকারী বস্তুদের মধ্যে নিত্যশুদ্ধ বায়ু, অগ্নি, সূর্য, জল, বাণী ও আত্মা। অষ্টযোগের মধ্যে আমি মন নিরোধক সমাধি , বিজয় ইচ্ছুকদের মধ্যে মন্ত্র ( নীতি ) বল , কৌশল সমূহের মধ্যে আত্ম-অনাত্ম বিবেকরূপ কৌশল ও খ্যাতিবাদীদের মধ্যে বিকল্প।

আমি স্ত্রীগণের মধ্যে শতরূপা, পুরুষগণের মধ্যে স্বায়ম্ভুব মনু, মুনিগণের মধ্যে নারায়ণ ও ব্রহ্মচারীগণের মধ্যে সনৎকুমার। আমি অনিমিষ অর্থাৎ অপ্রমত্তপদার্থগণের মধ্যে সংবৎসরস্বরূপ, ঋতুগণের মধ্যে বসন্তস্বরূপ, মাস সমূহের মধ্যে অগ্রহায়ণ - মাসস্বরূপ এবং নক্ষত্রগণের মধ্যে অভিজিৎ - স্বরূপ। যুগমধ্যে আমি সত্যযুগ, ধীরগণ মধ্যে দেবর্ষি দেবল ও অসিত, বেদবিভাগ - কতৃগণের মধ্যে   দ্বৈপায়ণ ব্যাস এবং পণ্ডিতগণের মধ্যে বিবেকী  শুক্রাচার্য -স্বরূপ।

ভগবৎপদবাচ্য পুরুষগণের মধ্যে আমি বাসুদেব - স্বরূপ, ভগবদ্ভক্তগণের মধ্যে তুমি অর্থাৎ উদ্ধব - স্বরূপ, কিম্পুরুষগণের মধ্যে হনুমৎস্বরূপ এবং বিদ্যাধরগণের মধ্যে সুদর্শনস্বরূপ।

পৃথিবী বায়ুরাকাশ আপো জ্যোতিরহং মহান।

বিকারঃ পুরুষোহব্যক্তং রজঃ সত্ত্বং তমঃ পরম।

অহমেতৎ প্রসঙ্গখ্যানং জ্ঞানং তত্ত্ববিনিশ্চয়ঃ।।   (ভাগবত ১১।১৬।৩৭)

অর্থাৎ,- আমি রূপ, রস, গন্ধ, স্পর্শ ও শব্দ এই পঞ্চতন্মাত্র, অহঙ্কার, মহত্তত্ত্ব, পঞ্চ মহাভূত, একাদশ ইন্দ্রিয়, পুরুষ, প্রকৃতি, সত্ত্ব, রজঃ, তমঃ, পরব্রহ্ম এই সমস্ত পদার্থের পরিসংখ্যা এবং জ্ঞান ও তাহাদের ফলভূত তত্ত্বনির্ণয়স্বরূপ। 

‘’কলের্দোষনিধেরাজন্ অস্তি হ্যেকো মহানগুণঃ I

কীর্ত্তনাদেব কৃষ্ণস্য মুক্তসঙ্গঃ পরং ব্রজেৎ I I‘’ (শ্রীমদ্ভাগবত)

কলি সমস্ত দোষের বটে, তথাপি হে রাজন ! কলির একটি মহানগুণ এই যে, কৃষ্ণকীর্ত্তনে জীব মায়াবদ্ধ হইতে মুক্ত হয়ে শ্রীকৃষ্ণরূপ পরতত্ত্ব লাভ করেন।

‘’নাম - সংকীর্ত্তন যস্য সর্বপাপ প্রণাশনম্।

প্রণামো দুঃখশমনস্তং নমামি শ্রীহরিং পরম্।।‘’

যে হরিনাম সংকীর্ত্তন করিলে ইহকাল ও পরকালের পাপরাশি নিঃশেষে দগ্ধ হয়,আমি সেই নামরূপী পরমাত্মা স্বরূপ শ্রীহরিকে প্রণাম করি। পরমকরুণাময় গোলোকপতি সচ্চিদানন্দ ভগবান শ্রীকৃষ্ণ ও তাঁর একান্ত হ্লাদিনী শক্তি শ্রীমতী রাধারাণী এবং সকল বৈষ্ণব ভক্ত - পার্ষদদের শ্রীচরণকমলে নিরন্তর প্রার্থনা করি, সকলের জীবন যেনো রাধা-কৃষ্ণময়তায় পূর্ণ হয়ে, মঙ্গলময়, কল্যাণময়, ভক্তিময়, সুন্দরময় আর আনন্দময় হয়ে উঠুক।

"হরে কৃষ্ণ হরে কৃষ্ণ কৃষ্ণ কৃষ্ণ হরে হরে

হরে রাম হরে রাম রাম রাম হরে হরে!!"

!! জয় শ্রীরাধাকৃষ্ণের জয় !! !! জয় সকল ভক্তবৃন্দের জয় !!