Sunday, June 21, 2020


🌷🌻গৌরাঙ্গ মহাপ্রভুর গুণ্ডিচা মার্জন লীলা🌻🌷
🏵💐🌺🏵💐💞🏵💐🌺🏵💐💞🏵💐🌺🏵
বিশেষ পোষ্ট
শ্রী শ্রী গুরু গৌরাঙ্গ জয়তঃ
সকল সাধু,গুরু,বৈষ্ণব গৌর ভক্তবৃন্দের শ্রীচরণে আমার অনন্ত কোটি সাষ্টাঙ্গ দণ্ডবৎ প্রণাম I
‘’হরি - গুরু - বৈষ্ণব তিনিহেঁ স্মরণ।
তিনেহেঁ স্মরণ হইতে বিঘ্ন বিনাশন।।
অনায়াসে হয় নিজ বাঞ্ছিত পূরণ ।।‘’

গুণ্ডিচা মার্জন লীলা
মহাপ্রভু গুণ্ডিচা মন্দির মার্জন করতেন পার্ষদগণ সহিত। চৈতন্যচরিতামৃতে শ্রীল কৃষ্ণদাস কবিরাজ গোস্বামী মহাশয় তার লীলা সমূহ বর্ণনা করেছেন,-

জগন্নাথের রথযাত্রার দিবস আইল।।
প্রথমেই প্রভু কাশীমিশ্রেরে আনিয়া।
পড়িছা পাত্র সার্বভৌম আনিল।
তিন জনার পাশে প্রভু হাসিয়া কহিল।
গুণ্ডিচা মন্দির মার্জনসেবা মাগি নিল।।
জগন্নাথ গুণ্ডিচা মন্দিরে আসবেন- শ্রীকৃষ্ণ বৃন্দাবনে আসছেন, তাই মহাপ্রভু আনন্দের সাথে গুণ্ডিচা মন্দির মার্জনের কাজ চাইয়া লইলেন।

তবে একশত ঘট শত সম্মার্জনী ( ঝাঁটা )
নূতন প্রভুর আগে দিল পড়িছা আনি।।
আর দিন প্রভাতে প্রভু লঞা নিজগণ।
শ্রীহস্তে সবার সঙ্গে লেপিল চন্দন।।
শ্রীহস্তে সবারে দিল এক এক মার্জনী।
সব গণ লঞা প্রভু চলিলা আপনি।।
চারিপাশে শত ভক্ত সম্মার্জনী - করে।
আপনে শোধয়ে প্রভু শিখায় সবারে।।
প্রেমোল্লাসে গৃহ শোধে লয় কৃষ্ণনাম।
ভক্তগণকৃষ্ণকহে, করে নিজ কাম।।
এই পদ্যে কবিরাজ গোস্বামী মহাশয় মহাপ্রভুর গুণ্ডিচা মার্জন লীলাকে ব্যক্ত করেছেন। একশ কলসি, একশ ঝাটা নিয়ে মহাপ্রভু পার্ষদ সহিত গুণ্ডিচা মন্দির মার্জন করছেন , ইন্দ্রদুম্ন্য সরোবরের থেকে কলসি ভরে জল এনে সকলে কৃষ্ণ নাম উচ্চারণ করতে করতে গুণ্ডিচা মন্দির মার্জন করছেন। এইভাবে সকলে গুণ্ডিচা মন্দির মার্জন করিতে লাগলেন। কেউ কেউ আবার সেই সময়ে মহাপ্রভুর চরণ ধুয়ে সেই জল পান করতে লাগলেন,-

কেহ জলঘট দেয় মহাপ্রভুর করে।
কেহ ছলে জল দেয় চরণ উপরে।।
কেহ লুকাইয়া করে সেই জল পান।
কেহ মাগি লয় কেহ অন্যে করে দান।।
ভক্তেরা মহাপ্রভুর চরণে অতি সতর্কে ধুয়ে সেই জল চরণামৃত নিজে পান করছেন আবার অন্য কেউ দিচ্ছেন। কারণ এতদিন বিগ্রহে গোবিন্দের চরণামৃত গ্রহণ করেছেন আজ গোবিন্দ, মহাপ্রভু রূপে সামনে সুতরাং সেই সুযোগ হাতছাড়া করা যায় না। হরি ধ্বনি করে গুণ্ডিচা মন্দির মার্জন করছেন মহাপ্রভু তাঁর ভক্তের সহিত। এই লীলা দেখবার জন্য আশেপাশের মানুষ ছুটে আসাতে মন্দিরের ভেতরে  ধাক্কাধাক্কিতে কিছু কলস ভেঙ্গেও গেলো। কেউ কেউ লুকিয়ে মহাপ্রভুর চরণামৃত নিজে পান করলো অপরকে দিলো। কিন্তু মহাপ্রভুর মধ্যে এখন রাধারাণীর ভাব, সুতরাং তাঁর চরণামৃত পান করা তিঁনি মানতে পারছেন না।

ভক্তেরা জানে স্বয়ং যিঁনি রথে চড়ে আসবেন তিনিই বঙ্গপ্রদেশে শচীনন্দন রূপে আবির্ভূত হয়েছেন। একভক্ত মহাপ্রভুর চরণামৃত পান করবার সময় ধরা পড়লে মহাপ্রভু তাকে বকা-ঝকা করেন,-
হেনকালে এক গৌড়ীয়া সুবুদ্ধি সরল।
প্রভুর চরণ যুগে দিল ঘট জল।।
সেই জল লৈয়া আপনে পান কৈল।
তাহা দেখি প্রভুর মনে দুঃখ রোষ হৈল।।
অবতারকে সামান্য কজন মাত্র চিনতে পারেন, বাকীরা অবহেলা করেন। মহাপ্রভু ভক্তকে জীবশিক্ষার নিমিত্ত বকা ঝকা করলেন, কিন্তু অন্তরে অন্তরে ভক্তকে কৃপা করলেন। সেই ভক্ত তখন মহাপ্রভুর চরণ ধরি ক্ষমা চাইলো,-

পুন আসি প্রভুর পায় করিল বিনয়।
অজ্ঞ অপরাধ ক্ষমা করিতে জুয়ায়।।
তবে মহাপ্রভু মনে সন্তোষ হইলা।
সারি করি দুই পাশে সব বসাইলা।।
গুণ্ডিচা মন্দির মার্জনের পর সরোবরে স্নান, কীর্ত্তন, মহাপ্রসাদ ভোজন করেছিলেন মহাপ্রভু তাঁর ভক্ত মণ্ডলী সহিত।

গুণ্ডিচা মন্দির মার্জন মহিমা
🏵💐💞🏵🌺🏵💞💐🏵
রথযাত্রার দিন শ্রীজগন্নাথ গুণ্ডিচা মন্দিরে যান। সারা বছরের / দিন সেখানে থাকেন। আর পৌনে বার মাস গুণ্ডিচা মন্দির ফাঁকা থাকে। এক বছরের ধুলো বালি ময়লা মন্দিরে জমে আছে। পড়িছার দ্বায়িত্ব মন্দির পরিস্কার করা। কিন্তু শ্রীমন্মহাপ্রভু পড়িছার কাছে এই দ্বায়িত্ব চাইয়া লইলেন। সাংসারিক জীবের কাছে ময়লা আর্বজনা পরিস্কার করা হীন কাজ, দাস দাসীদের কাজ। কিন্তু শ্রীমন্মহাপ্রভু যিনি স্বয়ং গোলক বিহারী শ্রীকৃষ্ণ, যিনি অনন্তকোটি বিশ্বব্রহ্মাণ্ডের অধীশ্বর, অনন্তকোটি ব্রহ্মাণ্ডের ব্রহ্মা, কত কত রুদ্র যার চরণ সেবার জন্য লালায়িত আজ তিনি কি করছেন? আজ তিনি নিজের শ্রীহস্তে গুণ্ডিচা মন্দির পরিস্কার করার দ্বায়িত্ব নিলেন। কি তার যোগ্য কর্ম? এই গুণ্ডিচা মার্জন লীলার কয়েকটি কারণ রয়েছে।

শ্রীমন্মহাপ্রভুর দুটি ভাব। ভক্তভাব এবং ভগবত ভাব। ভক্তভাবে শ্রীমন্মহাপ্রভু আমাদের নিজে আচরণ করে জীবকে শিক্ষা দিলেন। এই শিক্ষা সেই দয়াময় না দিলে আর কে দেবেন? মন্দির মার্জন কর্মটি জগন্নাথের জন্য। সুতরাং এটাও ভজনাঙ্গ। যে ভজনাঙ্গে ভগবত কৃপা লাভ সম্ভব। গুণ্ডিচায় এক বছরের ধুলো ময়লা জমে আছে, সেখানে আমার প্রাণপ্রিয় জগন্নাথ কেমন করে থাকবেন, এই কথা ভেবে ভগবত প্রেমিক ভক্তের হৃদয় বিকল হয়ে যায় ভগবানের প্রতি ভক্তের প্রীতির আধিক্য জনিত। সন্তান যখন শরীরে ময়লা মেখে রাখে তখন দাস - দাসী নয়, মা ছুটে আসেন সন্তানকে পরিস্কার করার জন্য কারণ সন্তানের প্রতি মায়ের প্রীতির আধিক্য। কাজ কি কোনো হীন কাজ হইতে পারে? দক্ষিনাঞ্চলের স্বাধীন নরপতি প্রতাপ রুদ্র রাজাও নিজে রথাগ্রে চন্দন সুবাসিত জল ছড়িয়ে ঝাড়ু দিতেন।

গুণ্ডিচা মার্জন লীলাটিতে প্রভুর ভগবত ভাবও আছে। ভগবানতো শুধুমাত্র সেবা গ্রহণ করেন কিন্তু সেবা করে যে কত সুখ কি তার আনন্দ তা আস্বাদনের লোভেও প্রভু গুণ্ডিচা মার্জনের দায়িত্ব নিয়েছিলেন। কৃষ্ণ লীলাতেও  প্রভু  একই কাজ করেছিলেন। যুধিষ্ঠিরের রাজসূয় যজ্ঞে ব্রাহ্মণদের পাদ প্রক্ষালনের ভার নিয়েছিলেন। ব্রাহ্মণের পদসেবায় যে আনন্দ তার লোভ চতুর চূড়ামণি শ্রীকৃষ্ণ ত্যাগ করতে পারেননি। জীবশিক্ষার জন্য তিনি দেখিয়ে দিলেন যে,"যিনি বড় তিনিই হীন সেবা করতে পারেন" কিন্তু কৃষ্ণলীলার মতো গুণ্ডিচা মার্জন লীলার আনন্দ প্রভু একা ভোগ করেন নি। প্রভূ আমাদের দাতার শিরোমণি, তাই প্রিয় পার্ষদ সকলকেই আনন্দের ভাগ দিলেন। অল্প অল্প ভাগ নয়, প্রভু বললেন,-
"কে কত কুড়ায় সব একত্র করিব।
যার অল্প তাঁর ঠাঞি পিঠা পানা লব।।"
অর্থাৎ,- যে যত খুশি পরিশ্রম করে সেবার সুযোগ নিয়ে নাও।

গুণ্ডিচা মার্জন লীলার আরও একটি গুঢ় তাৎপর্য আছে এবং এটাই প্রভুর নদীয়া লীলার বৈশিষ্ট্য। শ্রীশ্রী গৌরসুন্দর হলেন রাধাভাবাবিষ্ঠ শ্রীকৃষ্ণ। শ্রীরাধার ভাবে আবিষ্ট হয়ে আজ তিনি গুণ্ডিচা মার্জন করছেন। রথযাত্রার ছলে শ্রীজগন্নাথ বৃন্দাবন লীলারস আস্বাদনের জন্যই মন্দির থেকে বেরিয়ে আসেন। শ্রীরাধা ভাবে আবিষ্ট  মহাপ্রভু মনে মনে ভাবছেন, বহুকাল পরে তার প্রাণবল্লভ দ্বারকা থেকে ব্রজে আসবেন তাই তার আনন্দের সীমা নাই। সেই আনন্দের প্রেরণায় প্রাণবল্লভকে অভ্যর্থনা জানানোর জন্য সখীদের সঙ্গে নিয়ে বহুকাল পরিত্যক্ত নিকুঞ্জ মন্দির পরিস্কার করছেন। তার ভক্তবৃন্দ সখীবৃন্দ আর তিনি রাধা

🏵জয় শচীনন্দন শ্রীগৌরহরির জয়💐🏵💐জয় সকল ভক্তবৃন্দের জয়🏵

No comments:

Post a Comment

🌳🦚💐🏵️🌷🏵️💐🦚🌳 💐 পক্ষবর্দ্ধিনী মহাদ্বাদশী 💐 🌳🦚💐🏵️🌷🏵️💐🦚🌳 শ্রী শ্রী গুরু গৌরাঙ্গ জয়তঃ সকল সাধু , গুরু , বৈষ্ণব ...