💐💞 শ্রীমদ্ভগবদ্গীতা 💞💐

🌹🌻🌺💞💞💐💐💞💞🌺🌻🌹

🌻🌼💐দ্বিতীয় অধ্যায়ের মাহাত্ম্য💐🌼🌻

বিশেষ পোষ্ট

শ্রী শ্রী গুরু গৌরাঙ্গ জয়তঃ

সকল সাধু,গুরু,বৈষ্ণব ও গৌর ভক্তবৃন্দের শ্রীচরণে আমার অনন্ত কোটি সাষ্টাঙ্গ দণ্ডবৎ প্রণাম I

''হরি - গুরু - বৈষ্ণব তিনিহেঁ স্মরণ।

তিনেহেঁ স্মরণ হইতে বিঘ্ন বিনাশন।।

অনায়াসে হয় নিজ বাঞ্ছিত পূরণ ।।‘’

ভগবান বিষ্ণু বললেন,- প্রিয়ে লক্ষী! ইতিমধ্যে তুমি আমার নিকট ভগবদগীতার প্রথম অধ্যায়ের মাহাত্ম্য শ্রবণ করেছ। এখন দ্বিতীয় অধ্যায়ের মাহাত্ম্য মনযোগ  দিয়ে শ্রবণ কর।

কোন এক সময়ে দাক্ষিণাত্যের পুরন্দরপুর নগরে দেবশর্মা নামে এক পণ্ডিত ব্রাহ্মণ বাস করতেন। তিনি সব রকম অগ্নি হোত্র যজ্ঞ সম্পাদনে পারদর্শী ছিলেন। আতিথেয়তার গুরুত্বও তিনি বুঝতেন। তিনি তার কার্যকলাপের দ্বারা সকল দেব - দেবীকে তুষ্ট করতে সক্ষম হয়েছিলেন। কিন্তু তার মনে সুখ ও অন্তরে শান্তি ছিল না। আত্মার সঙ্গে পরমাত্মা সম্পর্কিত তত্ত্ব জ্ঞান লাভে তার বাসনা ছিল। শেষের দিকে তিনি অনেক যোগী ও তপস্বীদের আমন্ত্রণ করে তাদের সেবা করে তাদের নিকট পরম-তত্ত্ব সম্বন্ধে অনুসন্ধান করতেন। এইভাবে তার জীবনের অনেক বৎসর অতিবাহিত হয়ে গেল।

একদিন ভ্রমণকালে তিনি দেখলেন এক যোগী তাঁর নাসিকার অগ্রভাবে দৃষ্টি নিবদ্ধ করে পদ্মাসনে গভীর ধ্যানমগ্ন হয়ে বসে আছেন। দেবশর্মা বুঝতে পারলেন যে, এই যোগী সম্পূর্ণরূপে শান্ত এবং জড়বাসনা শূন্য। গভীর শ্রদ্ধা ও সম্মানের সঙ্গে দেবশর্মা সেই যোগীর শ্রীচরণে পতিত হয়ে জানতে চাইলেন যে, কি করে তিনি পূর্ণ মানসিক শান্তি লাভ করতে পারবেন। তখন পরম পুরুষোত্তম ভগবান শ্রীকৃষ্ণ সম্বন্ধে পূর্ণ জ্ঞানের অধিকারী সেই যোগী, দেবশর্মাকে সোপুর গ্রামে গিয়ে মিত্রবন নামে এক ছাগ -পালকের সঙ্গে দেখা করে তার কাছ থেকে ভগবৎ- উপলব্ধির

বিজ্ঞান সম্পর্কে নির্দেশ গ্রহণ করতে বললেন। এ কথা শুনে দেবশর্মা সেই যোগীকে পুনঃপুনঃ প্রণাম নিবেদন করে তৎক্ষণাৎ সোপুরের উদ্দেশ্যে রওনা হলেন।

সোপুরে পৌঁছে উত্তরদিকে তিনি এক সুন্দর বন দেখতে পেলেন। সেই বনেই মিএবন বাস করতেন। বনে প্রবেশ করে দেখলেন যে একটি ছোট নদীর তীরে প্রস্তর খণ্ডের ওপর মিত্রবন বসে আছেন। মিত্রবন খুব সুন্দর এবং সম্পূর্ণ শান্ত স্বভাবশীল দেখতে পেলেন। বনে মৃদুমন্দ বাতাস বইছিল এবং চতুর্দিক থেকে সুন্দর ফুলের সৌরভ নির্গত হচ্ছিল। যত্র-তত্র ছাগলের পাল শান্তিতে ও নির্ভয়ে চরে বেড়াচ্ছিল। কয়েকটি ছাগলকে বাঘ ও অন্যান্য হিংস্র জন্তুর নিকটে নির্ভয়ে বসে থাকতে দেখা গেল। এই দৃশ্য দেখে দেবশর্মার মন শান্ত হল এবং তিনি শ্রদ্ধার সঙ্গে মিত্রবনের

কাছে গিয়ে তার নিকটেই বসলেন। মিত্রবন গভীর ধ্যানমগ্ন ছিল। কিছুসময় পর দেবশর্মা তার কাছে জানতে চাইলেন যে, কি করে তিনি কৃষ্ণভক্তি লাভে সমর্থ হবেন।

প্রশ্ন শুনে মিত্রবন মুহূর্তকাল গভীর চিন্তায় ডুবে গেলেন। তারপর উত্তর দিতে গিয়ে বলিলেন,- হে আমার প্রিয় পণ্ডিত দেবশর্মা! একদা বহু পূর্বে আমি বনে ছাগল চরাচ্ছিলাম, হঠাৎ এক অতি ভয়ঙ্কর বাঘ আমার ছাগলের পালকে আক্রমণ করে। আত্মরক্ষার জন্য সমস্ত ছাগল এদিক-ওদিক পালাতে লাগল। বাঘের ভয়ে আমিও দৌড়াতে লাগলাম। কিছু দূর গিয়ে ফিরে তাকিয়ে দেখি যে নদীর পাড়ে বাঘটি আমার একটি ছাগলকে ধরে ফেলেছে। ঠিক তখনই একটি অদ্ভুত ও আশ্চর্যজনক ঘটনা ঘটল। বাঘটি তার সমস্ত ক্রোধ এবং ছাগ-ভক্ষণের ইচ্ছা হারিয়ে ফেলল। তখন ছাগলটিও নির্ভয়ে বাঘের দিকে ফিরে প্রশ্ন করল, “তুমি তোমার খাদ্য পেয়েও কেন আমাকে ভক্ষণ করছ না? অবিলম্বে আমাকে হত্যাকর এবং মহাতৃপ্তিতে আমার মাংস ভক্ষণ কর। তুমি দ্বিধা করছ কেন?”

বাঘটি বলল, ‘প্রিয় ছাগল! এই স্থানে আসার পর আমার সকল রাগ ও ক্ষুধা-তৃষ্ণা অন্তর্হিত হয়েছে। ছাগল বলল, আমিও বুঝতে পারছি না, কেন আমি এত নির্ভীক ও প্রশান্তি বোধ করছি। এর কারণ কী হইতে পারে ? তোমার জানা থাকলে দয়া করে আমাকে বল। বাঘ বলল, আমি ত জানি না। চল, ওই লোকটাকে জিজ্ঞাসা করা যায়। বাঘ ও ছাগের এরূপ কথোপকথন শুনে আমি অতীব বিস্ময়ান্বিত হলাম। তারপর তারা আমার কাছে এসে এর কারণ জানতে চাইল। আমি লক্ষ্য করলাম নিকটেই গাছের ডালে এক বৃদ্ধ বানর বসে আছে। আমি তখন এই দুজনকে সঙ্গে নিয়ে বানরটির কাছে গিয়ে এর কারণ জানতে চাইলাম।

গভীর শ্রদ্ধার সঙ্গে বানরটি বলল, “শোন, আমি তোমাকে একটা খুব প্রাচীন কাহিনী বলছি। এই বনের সম্মুখেই একটা খুব বড় মন্দির আছে। ভগবান ব্ৰহ্মা সেই মন্দিরে একটি শিবলিঙ্গ প্রতিষ্ঠা করেন। বহু পূর্বে সুকর্মা নামে একবিদ্বান শিবভক্ত এখানে বাস করতেন। তিনি অনেক কঠোর সংযম পালন ও তপস্যা করেছিলেন। প্রতিদিন তিনি বন থেকে ফুল এবং নদী থেকে জল এনে ভগবান শিবের পূজা করতেন। এইভাবে বহু বৎসর তিনি এখানে বাস করেন। একদিন সেখানে এক মুনির আগমন হল। সুকর্মা তখন ফল ও জলের দ্বারা মুনিকে ভোজন করালেন। মুনিবরের ভোজন ও বিশ্রাম গ্রহণের পর সুকর্মা বললেন, “আমি যে কঠোর সংযমের সঙ্গে তপস্যা করে এখানে পড়ে আছি শুধুভগবান শ্রীকৃষ্ণ সম্বন্ধে জ্ঞান লাভের জন্য আজ আপনার সাহচর্যে আমার কৃষ্ণসাধনের ফল লাভ হল।”

সুকর্মার বিনয়পূর্ণ কথা শুনে মুনিবর যথেষ্ট প্রীত হলেন এবং একটি প্রস্তরখণ্ডে শ্রীমদ্ভগবদ্গীতার দ্বিতীয় অধ্যায় লিখে তিনি সুকর্মাকে সেই শ্লোকগুলি প্রতিদিন পাঠকরতে নির্দেশ দিয়ে বললেন অচিরেই তার অভীষ্ট লাভ হবে। একথা বলার পরই মুনিবর সেখান থেকে অন্তর্হিত হলেন আর সুকর্মা শুধুই তাকিয়ে রইলেন। এরপর থেকে প্রতিদিন সুকর্মা সেইমুনিবরের নির্দেশ মতোই সেই শ্লোকগুলি পাঠ ও অনুশীলন করতেন। শীঘ্রই তিনি ভগবান শ্রীকৃষ্ণ সম্বন্ধে পূর্ণ জ্ঞান লাভ করলেন। যেদিন থেকে শ্লোক পাঠ করা শুরু করেছেন সেই দিন থেকেই তার ক্ষুধা-তৃষ্ণার বোধ দূর হয়ে যায়।

‘’এই স্থানে তার সেই কঠোর সংযম ও ভক্তিমূলক ক্রিয়াদি সম্পাদনের জন্য যে কেউ এখানে পদার্পণ করেন, তার ক্ষুধা-তৃষ্ণা বিদূরিত হয় এবং অবিলম্বে সে পূর্ণ শান্তি লাভ করেন।‘’ মিত্রবন বলিলেন, “প্রিয় দেবশর্মা! বানরটি তার অত্যাশ্চর্য কাহিনী শেষ করার পর আমি সেই বাঘ ও ছাগলকে সঙ্গে নিয়ে মন্দিরে গেলাম। সেখানে আমরা পাথরের ওপর শ্রীমদ্ভগবদগীতার দ্বিতীয় অধ্যায়ের শ্লোকগুলি লিপিবদ্ধ আছে দেখলাম। প্রতিদিন আমরা সেই শ্লোকগুলি আবৃত্তি করতে লাগলাম। এইভাবে, আমরাও অচিরেই কৃষ্ণভক্তি লাভ করার যোগ্য হয়েছিলাম।

প্রিয় ব্রাহ্মণ! তুমিও যদি শ্রীমদ্ভগবদগীতার দ্বিতীয় অধ্যায় পাঠ করতে শুরু কর, তবে তুমিও অচিরেই ভগবান শ্রীকৃষ্ণের করুণা লাভ করবে। ভগবান বিষ্ণু বললেন,- প্রিয়ে ! এইভাবেই দেবশর্মা মিত্রবনের কাছ থেকে জ্ঞান লাভ করেন এবং সেই মহাত্মার আরাধনা করে তিনি পুরন্দরপুরে ফিরে গিয়ে প্রতিদিন দ্বিতীয় অধ্যায় অনুশীলন করতে শুরু করেন। তাছাড়া পুরন্দরপুরে যে কেউ গেলেই তিনি তাকে শ্লোকগুলি আবৃত্তি করে শোনান। এইভাবে দেবশর্মা পরম পুরুষ শ্রীকৃষ্ণের শ্রীপাদপদ্ম লাভ করেছিলেন।

🙏🍃হরে কৃষ্ণ🍃🙏🙏🙏 🙏🍃হরে কৃষ্ণ🍃🙏