💐যোগিনী একাদশী 💐

♥♥শুভ একাদশী 💐💐 শুভ একাদশী♥♥

হরে কৃষ্ণ, আজ ১৭/০৬/২০২০ ইং রোজ - বুধবার যোগিনী একাদশী I

(পারণ - পরদিন পূর্ব্বাহ্ন ০৯।১২ মিঃ মধ্যে একাদশীর পারণ)

আপনি নিজে একাদশী ব্রত পালন করুন ও অন্যকে পালনে উৎসাহিত করুন।

নমস্ত্রিকাল - সত্যায় জগন্নাথ সুতায় চ।

স - ভৃত্যায়   স -পুত্রায়   স - কলত্রায় তে নমঃ।।

‘’আরাধ্যো ভগবান্ ব্রজেশতনয়স্তদ্ধাম বৃন্দাবনং।

রম্যা কাচিদুপাসনা ব্রজবধূবর্গেণ যা কল্পিতা।।

শ্রীমদ্ভাগবতং প্রমাণমমলং প্রেমা পুমর্থো মহান্।

শ্রীচৈতন্যমহাপ্রভোর্মতমিদং তত্রাদরঃ ন পরঃ।।‘’ (চৈতন্যমত্তমঞ্জুষা)

অর্থাৎ,- আরাধ্য ভগবান হচ্ছেন ব্রজেন্দ্রনন্দন শ্রীকৃষ্ণ এবং তাঁর ধাম হল বৃন্দাবন। ব্রজবধু ব্রজগোপিকারা যে ভাবে শ্রীকৃষ্ণের আরাধনা করেছিলেন সেটিই হচ্ছে সর্বশ্রেষ্ঠ। সমস্ত পুরুষার্থ বা সিদ্ধির চরম সিদ্ধি হচ্ছে কৃষ্ণপ্রেম। আর তার প্রমাণ হচ্ছে অমল পুরাণ শ্রীমদ্ভাগবত। এটিই হচ্ছে শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভুর মত। আমাদের সাদরে সেটিই গ্রহণ করা উচিত।

''কৃষ্ণ ভুলি যেই জীব অনাদি বহির্মুখ ।

অতএব মায়া তারে দেয় সংসার দুঃখ।।''   চৈতন্যচরিতামৃত( মধ্য ২০/১১৭)

শ্রীকৃষ্ণকে ভুলে জীব অনাদিকাল ধরে জড় প্রকৃতির প্রতি আকৃষ্ট রয়েছে। তাই মায়া তাকে এ জড় জগতে নানা প্রকার দুঃখ প্রদান করছে। পরম করুণাময় ভগবান, কৃষ্ণস্মৃতি জাগরিত করতে মায়াগ্রস্ত জীবের কল্যাণে বেদপুরাণে আদি শাস্ত্রগ্রন্থাবলী দান করেছেন।

একাদশীব্রত মাহাত্ম্য

পুরাকালে গালব নামে এক মহান মুনি নর্মদা নদীর তীরে বাস করতেন। তাঁর ভদ্রশীল নামে এক বিষ্ণুভক্ত পুত্র ছিল। সে ছোটবেলা থেকে বিষ্ণুমূর্তি বানিয়ে পূজা করত। বালক হয়েও লোককে বিষ্ণুপূজার উপদেশ ও একাদশী পালন করতে নির্দ্দেশ দিত, নিজেও তা পালন করত। পিতা একদিন জিজ্ঞাসা করেন,- আচ্ছা ভদ্রশীল! তুমি অতি ভাগ্যবান। তুমি বলো তো, রোজ শ্রীহরির পূজা করা, একাদশী তিথি পালন করা, এরূপ ভক্তি কিভাবে তোমার উদয় হল?"

উত্তরে ভদ্রশীল বলতে লাগল,- বাবা! আমি পূর্বজন্মের কথা ভুলিনি। আগের জন্মে যমপুরীতে গিয়েছিলাম। সেখানে যমরাজ আমাকে এ বিষয়ে উপদেশ করেছিলেন। পিতা অত্যন্ত বিস্মিত হয়ে বললেন ভদ্রশীল, তুমি পূর্বে কে ছিলে? যমরাজ তোমাকে কি বলেছিল, সব কিছুই আমাকে বলো।

ভদ্রশীল বলল,- বাবা! আমি পূর্বে চন্দ্রবংশের এক রাজা ছিলাম। তখন আমার নাম ছিল ধর্মকীর্তি। ভগবান দত্তাত্রেয় আমার গুরু ছিলেন। নয় হাজার বছর আমি পৃথিবী শাসন করেছিলাম। বহু ধর্ম-কর্ম করেছিলাম। পরে যখন আমার অনেক ধনসম্পদ হল তখন আমি পাগলের মতো অধর্ম করতে লাগলাম। কতগুলি পাষণ্ড ব্যক্তির সঙ্গে আলাপ করতাম আর কেবল কথা আলাপের ফলেই আমার বহু দিনের অর্জিত পুণ্য নষ্ট হয়ে গেল। আমিও পাষণ্ডী হয়ে গেলাম। তাদের কুযুক্তি নিয়ে যাগযজ্ঞ আদি পুণ্যকর্ম বন্দ করে দিলাম। ফলে আমার সব প্রজারাও অধর্ম করতে লাগল।  প্রজাদের প্রত্যেকের অধর্মের ছয় ভাগের এক ভাগ রাজাকেই গ্রহণ করতে হয়।

তারপর একদিন আমি সৈন্যদের সঙ্গে নিয়ে বনে মৃগয়া করতে গেলাম। বহু পশু বধ করলাম। তারপর আমি ক্ষুধা তৃষ্ণায় কাতর ও ক্লান্ত হয়ে রেবা নদীর তীরে গেলাম। প্রখর রোদ্রে তপ্ত হয়ে নদীতে স্নান করলাম। কিন্তু স্নান শেষে দেখি নদীর তীরে কোনো সৈন্য নেই। তারপর আমার কোন সেনাকে দেখতে না পেয়ে চিন্তিত ও অতিশয় ক্ষুধার্ত হলাম। অন্ধকার হয়ে এল, আমি পথ ঠিক করতে পারলাম না। তারপর এক জায়গায় গিয়ে কয়েকজন তীর্থবাসীকে দেখলাম। জানলাম তারা একাদশী ব্রত করছে। তারা সারাদিন কিছু খায়নি, জলপান পর্যন্তও করেনি। আমি তাদের সঙ্গে পড়ে রাত্রি জাগরণ করলাম। কিন্তু ক্ষুধা পিপাসায় কাতর হয়ে রাত্রি জাগরণের পর আমার মৃত্যু হল।

আমি দেখলাম বড় বড় দাঁত বিশিষ্ট দুজন ভয়ংকর যমদূত এসে আমাকে দড়ি দিয়ে বাঁধল। আর ক্লেশময় পথ দিয়ে আমাকে টেনে নিয়ে চলল। তারপর যমপুরীতে পৌঁছলাম। যমরাজও দেখতে তখন ভয়ংকর। যমরাজ চিত্রগুপ্তকে ডেকে আমাকে দেখিয়ে বললেন,- পণ্ডিত! এই ব্যক্তির পাপ ও পুণ্যাদি কর্ম্ম ফল কি তুমি তা বলো। চিত্রগুপ্ত কিছুক্ষণ বিচার করে ধর্মরাজ যমকে বললেন,- হে ধর্মপাল! এই ব্যক্তি পাপকর্মেই রত ছিল সত্য, কিন্তু তবুও একাদশীর উপবাস জন্য সমস্ত পাপ থেকে মুক্ত হয়েছে। তীর্থবাস ও রাত্রি-জাগরণও করেছে। তাই ওর সব পাপ নষ্ট হয়েছে।

চিত্রগুপ্ত এই কথা বললে যমরাজ খুব চমকে উঠলেন, তিনি ভয়ে কাঁপতে কাঁপতে ভূমিতে দণ্ডবৎ প্রণাম জানিয়ে আমাকে পূজা করতে লাগলেন। তারপর তাঁর দূতদের আহ্বান করে বলতে লাগলেন,- হে দূতগণ! তোমরা ভাল করে আমার কথা শোনো। তোমাদের মঙ্গলজনক কথা আমি বলছি। যে সব মানুষ ধর্মরত, তোমরা তাদেরকে এখানে আনবে না। যাঁরা শ্রীহরির ভক্ত, পবিত্র, একাদশী ব্রত পরায়ণ, জিতেন্দ্রিয় এবং যাঁদের মুখে সর্বদা 'হে নারায়ণ, হে গোবিন্দ, হে কৃষ্ণ, হে হরি' উচ্চারিত হয়; যাঁরা সকল লোকের হিতকারী ও শান্তিপ্রিয়, তাদেরকে তোমরা দূর থেকেই পরিত্যাগ করবে। কারণ, সেই সব ব্যক্তিকে আমার শাসন করা অধিকার নাই। যাঁরা সর্বদা হরিনামে আসক্ত, সর্বদা হরিকথা শ্রবণে আগ্রহী, যাঁরা পাষণ্ডগণের সঙ্গ করে না, ভক্তদের শ্রদ্ধা করে, সাধুসেবা অতিথিসেবা পরায়ণ, তাঁদেরকে পরিত্যাগ করবে।

হে দুতগণ! তোমরা শুধু তাদেরকেই আমার কাছে ধরে আনবে, যারা উগ্রস্বভাব, ভক্তদের অনিষ্ট করে, লোকদের সঙ্গে কলহ বাধায়, একাদশী ব্রত পালনে একান্ত অনিহা, পরনিন্দুক, ব্রাহ্মণের ধনে লোভ পরতন্ত্র, হরিভক্তি বিমুখ, যারা ভগবদ্ বিগ্রহ দেখে শ্রদ্ধাবত হয় না, মন্দির দর্শনে যাদের আগ্রহ নেই, অন্যের অপবাদ করে বেড়ায়, তাদের সবাইকে বেঁধে এখানে নিয়ে আসবে।'

যমরাজের মুখে এসব কথা শুনে আমি আমার পাপকর্মের জন্য অত্যন্ত অনুশোচনা করতে থাকি। তারপর আমি সূর্যের মতো উজ্জ্বল দেহ লাভ করলাম। একটি দিব্য বিমানে চড়িয়ে আমাকে যমরাজ দিব্যলোকে পাঠিয়ে দিলেন। কোটি কল্পকাল সেখানে অবস্থান করার পর ইন্দ্রলোক, স্বর্গে নেমে আসি। সেখানে বহুকাল যাবৎ অবস্থান করার পর এই পৃথিবীতে এসে সদাচারী মহান ব্রাহ্মণকুলে জন্মগ্রহণ করেছি।

আমার জাতিস্মরতা হেতু এসব ঘটনা আমার হৃদয়ে জাগ্রত আছে। আমি পূর্বে একাদশী ব্রত মাহাত্ম্য জানতাম না। অনিচ্ছাকৃত ভাবে যখন একাদশী পালনে এত ফল লাভ করেছি। তাহলে ভক্তি সহকারে একাদশী ব্রত উপবাস করলে কি প্রকার ফল লাভ হয় তা জানি না। তাই বৈকুণ্ঠধামে ফিরে যাওয়ার ইচ্ছায় আমি পবিত্র একাদশীব্রত ও প্রতিদিন বিষ্ণুপূজা করব এবং অন্যদেরও এসব পালন করতে উৎসাহী করব।

পুত্রের কথা শুনে গালব মুনি অতি সন্তুষ্ট হয়ে ভাবলেন, আমার বংশে এই পরম বিষ্ণুভক্তের জন্ম হয়েছে, তাই আমার জন্ম সফল, বংশও পবিত্র হল।

রাধিকা - চরণরেণু,             ভূষণ করিয়া তনু,

অনায়াসে পাবে গিরিধারী।

রাধিকা - চরণাশ্রয়,            যে করে সে মহাশয়,

তাঁ'রে মুঞি যাঁও বলিহারী।।

জয় জয় 'রাধা' নাম,           বৃন্দাবন যাঁর ধাম,

কৃষ্ণসুখ - বিলাসের নিধি।

হেন রাধা - গুণগান,           না শুনিল মোর কান,

বঞ্চিত করিল মোরে বিধি।।

তাঁ'র ভক্ত - সঙ্গে সদা,        রসলীলা প্রেমকথা,

যে করে সে পায় ঘনশ্যাম।

ইহাতে বিমুখ  যেই,             তা'র কভু সিদ্ধি নাই,

নাহি যেন শুনি তা'র নাম।।

কৃষ্ণনাম - গানে ভাই,         রাধিকা - চরণ পাই,

রাধানাম - গানে কৃষ্ণচন্দ্র।

সংক্ষেপে কহিনু কথা,        ঘুচাও মনের ব্যথা,

দুঃখময় অন্য কথা - দ্বন্দ্ব।  

                      ( নরোত্তম দাস ঠাকুর )

♥জয় শ্রীকৃষ্ণের জয়♥জয় শ্রীএকাদশী মহাব্রতের জয়♥