Wednesday, June 10, 2020


শ্রীল বক্রেশ্বর পণ্ডিত
আবির্ভাব
শ্রীকৃষ্ণলীলায় যিনি চতুর্ব্যূহান্তর্গত অনিরুদ্ধ তিনিই গৌরলীলায় শ্রীবক্রেশ্বর পণ্ডিতরূপে আবির্ভূত হইয়াছে। শ্রীরাধিকার প্রিয় সখী শশিরেখা  শ্রীবক্রেশ্বর পণ্ডিতে অন্ত প্রবিষ্ট আছে। তাঁহার আবির্ভাব স্থান ত্রিবেণীর নিকট গুপ্তিপাড়াতে বলিয়া অনেকে বলে। আষাঢ় কৃষ্ণাপঞ্চমী তিথিতে তিনি আবির্ভূত হইয়াছিলেন।
শ্রীবক্রেশ্বর পণ্ডিত একভাবে চব্বিশ প্রহর অর্থাৎ তিনদিন পর্য্যন্ত নৃত্য করিয়াছিলেন।

''বক্রেশ্বর পণ্ডিত - প্রভুর বড় প্রিয়ভৃত্য।
একভাবে চব্বিশ প্রহর যার নৃত্য।।
আপনে মহাপ্রভু  গাহেন যাঁর নৃত্যকালে।
প্রভুর চরণ ধরি' বক্রেশ্বর বলে।।
'দশ সহস্ত গন্ধর্ব্ব মোরে দেহ চন্দ্রমুখ।
তারা গায়, মুঞি নাচি, তবে মোর সুখ'।।
প্রভু বলেন, - 'তুমি মোর পক্ষ এক শাখা।
আকাশে উড়িয়া যাঙ, পাঙ আর পাখা।।  (চৈঃ চঃ ১০। ১৭ - ২০)

শ্রীবক্রেশ্বর পণ্ডিত শ্রীবাস অঙ্গনে শ্রীচন্দ্রশেখর ভবনে মহাপ্রভুর সংকীর্ত্তনকালে নৃত্য করিতে। ইনি শ্রীমন্মহাপ্রভুর এইরূপ প্রিয় ছিলেন যে শ্রীদেবানন্দ পণ্ডিত শ্রীবক্রেশ্বর পণ্ডিতের পরিচর্য্যার দ্বারা শ্রীমন্মহাপ্রভুর কৃপার ভাজন হইয়াছিলে এবং শ্রীবাস পণ্ডিতের চরণে তাঁহার যে অপরাধ হইয়াছিল সেই বৈষ্ণব অপরাধ হইতে নিষ্কৃতি লাভ করিয়াছিলেন। শ্রীমন্মহাপ্রভু স্বয়ং শ্রীবক্রেশ্বর পণ্ডিতের মহিমা দেবানন্দ পণ্ডিতের নিকট বর্ণন করিয়াছে।

''প্রভু বলে - তুমি যে সেবিলা বক্রেশ্বর।
অতএব হইলা তুমি আমার গোচর।।
বক্রেশ্বর পণ্ডিত - প্রভুর পূর্ণশক্তি।
সেই কৃষ্ণ পায়, যে তাঁহারে করে ভক্তি।।
বক্রেশ্বর হৃদয়ে কৃষ্ণের নিজ ঘর।
কৃষ্ণ নৃত্য করেন নাচিতে বক্রেশ্বর।।
যে তে স্থানে যদি বক্রেশ্বর - সঙ্গ হয়।
সেই স্থান সর্ব্বতীর্থ শ্রীবৈকুন্ঠময়।।''

শ্রীমন্মহাপ্রভু দেবানন্দ পণ্ডিতের অপরাধ ক্ষালন হইলে তাঁহাকে স্নেহার্দ্রচিত্তে উপদেশ প্রদানমুখে বলেন,- পণ্ডিতাভিমানী দাম্ভিকগণ ভাগবত অর্থ বুঝিতে পারে না, শরণাগতের নিকটেই ভাগবতার্থ প্রকাশিত হয়, ভাগবতের প্রতিপাদ্য একমাত্র শুদ্ধভক্তি, গ্রন্থ ভাগবতকে ভক্ত ভাগবতের সহিত অভিন্ন জানিয়া ভাগবত কীর্ত্তন করিলে পরম মঙ্গল লাভ হয়।

''ভাগবত বুঝি হেন যার আছে জ্ঞান।
সেই না জানয়ে ভাগবতের প্রমাণ।।
অজ্ঞ হই' ভাগবতে যে লয়ে শরণ।
ভাগবত - অর্থ তা' হয় দরশন।।
প্রেমময় ভাগবত - শ্রীকৃষ্ণের অঙ্গ।
তাহাতে  কহেন যত গোপ্য - কৃষ্ণ - রঙ্গ।।
বেদ - শাস্ত্র - পুরাণ কহিয়া বেদব্যাস।
তথাপি চিত্তের নাহি পায়েন প্রকাশ।।
যখনে শ্রীভাগবত জিহ্বায় স্ফুরিল।
ততক্ষণে চিত্তবৃত্তি প্রসন্ন হইল।।''

শ্রীবক্রেশ্বর পণ্ডিত যখন পুরুষোত্তমধামে ছিলেন, তখন টোটাগোপীনাথে শ্রীমন্মহাপ্রভু, শ্রীঅদ্বৈতাচার্য্য প্রভু এবং অন্যান্য গৌরপার্ষদগণের সহিত তিনিও শ্রীগদাধর পণ্ডিত গোস্বামীর নিকট ভাগবত শ্রবণ করিতেন। ভক্ত ভাগবতের নিকটেই গ্রন্থ ভাগবত শ্রবণীয়। গোপালগুরু শ্রীবক্রেশ্বর পণ্ডিতের শিষ্য ছিলেন।

পুরীতে রথাযাত্রাকালে যখন রথাগ্রে সাতসম্প্রদায়ের কীর্ত্তন হইত তন্মধ্যে চতুর্থ সম্প্রদায়ের মূল কীর্ত্তনীয়া ছিলেন গোবিন্দ ঘোষ, নর্ত্তক ছিলেন শ্রীবক্রেশ্বর পণ্ডিত। আষাঢ় শুক্লা ষষ্ঠী তিথিতে শ্রীবক্রেশ্বর পণ্ডিত তিরোধান লীলা করেন।

No comments:

Post a Comment

💐🏵️💞🌺🌷🌺💞🏵️💐 🌷বৈষ্ণবের ব্যাস পূজা🌷 💐🏵️💞🌺🌷🌺💞🏵️💐 শ্রী শ্রী গুরু গৌরাঙ্গ জয়তঃ সকল সাধু, গুরু, বৈষ্ণব ও গৌর ভক্তবৃন্দ...