💐★💐রথযাত্রা💐★💐

🏵️💐🌺🏵️💐🏵️💐🌺🏵

বিশেষ পোষ্ট

শ্রী শ্রী গুরু গৌরাঙ্গ জয়তঃ

সকল সাধু, গুরু, বৈষ্ণব ও গৌর ভক্তবৃন্দের শ্রীচরণে আমার অনন্ত কোটি সাষ্টাঙ্গ দণ্ডবৎ প্রণাম I শ্রীজগন্নাথদেবের বিশ্ব প্রসিদ্ধ রথযাত্রার তিথির অগ্রীম কৃষ্ণপ্রীতি শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন।

হরে কৃষ্ণ, আগামী ২৩ /০৬ /২০২০ ইং রোজ - মঙ্গলবার শ্রীজগন্নাথদেবের বিশ্বপ্রশিদ্ধ রথযাত্রা। কোরোনাভাইরাস সংক্রমণ বিস্তার থেকে ‘জনস্বাস্থ্য ও নাগরিকদের সুরক্ষার কথা বিবেচনা করেই এ বছর পুরীধামে বিশ্বপ্রশিদ্ধ শ্রীজগন্নাথদেবের রথযাত্রার অনুমতি দিল না ভারতের সুপ্রিম কোর্ট।

আজকে সকালে শ্রীদিব্যসিংহদেব গজপতি মহারাজ, মুখ্যমন্ত্রী নবীন পট্টনায়েক কে চিঠি লিখে পাঠান যে শ্রীজগন্নাথদেবের বিশ্ব প্রসিদ্ধ রথযাত্রা পালিত করার জন্য সুপ্রিম কোর্টকে পুনঃ নিবেদন করারজন্য।  কবিড - ১৯ বৈষয়িক মহামারীকে পরিচালন করে কিভাবে রথযাত্রা হইতে পারে তাহা বিষয়ে সুপ্রিম কোর্টের সঙ্গে পুনঃ আলোচনা করার জন্য। এখন শ্রী জগন্নাথ দেবের কৃপার আমরা সবাই অভিলাষী। তাঁর কৃপা হলে সবকিছুই সম্ভব।

৪৫২ বৎসরের ইতিহাসের মধ্যে পুরীর জগন্নাথের রথযাত্রা ৩২ বার বন্ধ  হয়েছে !😭😭😭

রথযাত্রা কি? কটি রথ ব্যবহৃত হয় ? কারা থাকেন এই রথ তিনটিতে?

হিন্দুধর্মের অন্যতম বিখ্যাত উৎসব হল রথযাত্রা। আষাঢ় মাসের শুক্লপক্ষের দ্বিতীয়া তিথিতে আয়োজিত এই উৎসবটির কেন্দ্রস্থল ওড়িষ্যা রাজ্যের পুরীধামে  হলেও পশ্চিমবঙ্গেও এই রথযাত্রা যথেষ্ট জাঁকজমক সহকারে অনুষ্ঠিত হয়। রথযাত্রা আসলে হিন্দু দেবতা জগন্নাথ, বলরাম ও সুভদ্রার তিনটি সুসজ্জিত রথে চেপে মাসির বাড়ি যাত্রাকে বোঝায়। পুরীতে এই রথযাত্রা (Car Festival) দেখতে সারা পৃথিবী থেকে পর্যটকরা ভিড় করেন। লক্ষ লক্ষ মানুষের আগমনে এই রথযাত্রার শুরু হয় জগন্নাথ, বলরাম ও সুভদ্রার প্রায় ২ কিমি দূরে অবস্থিত গুণ্ডিচা মন্দিরে (যা জগন্নাথের ‘মাসির বাড়ি' হিসেবে খ্যাত) যাওয়াকে কেন্দ্র করে এবং সাতদিন পর মাসির বাড়ি থেকে জগন্নাথের ‘মৌসিমা মন্দিরে’ তাঁর প্রিয় ‘পোড়া-পিঠা’ খেয়ে আবার বাড়ির পথে ফিরে আসার মাধ্যমে এই উৎসবের সমাপ্তি ঘটে, যা ‘উল্টোরথ’ নামে প্রসিদ্ধ ।

রথযাত্রা কখন শুরু হয়েছিল ?

‘উৎকলখণ্ড’  এবং ‘দেউল তোলা’  নামক ওড়িষ্যার প্রাচীন পুঁথিতে জগন্নাথদেবের রথযাত্রার ইতিহাস প্রসঙ্গে বলা হয়েছে যে এই রথযাত্রার প্রচলন হয়েছিল প্রায় সত্যযুগে। সে সময় আজকের ওড়িষ্যার নাম ছিল মালবদেশ। সেই মালবদেশের অবন্তীনগরী রাজ্যে ইন্দ্রদ্যুম্ন নামে সূর্যবংশীয় এক পরম বিষ্ণুভক্ত রাজা ছিলেন, যিনি ভগবান বিষ্ণুর এই জগন্নাথরূপী মূর্তির রথযাত্রা শুরু করার স্বপ্নাদেশ পেয়েছিলেন। পরবর্তিকালে রাজা ইন্দ্রদ্যুম্ন পুরীর এই জগন্নাথ মন্দির নির্মাণ ও রথযাত্রার প্রচলন করেন।

জগন্নাথের মূর্তিগুলো হাত-পা বিহীন, বড়বড় চোখ এবং অদ্ভুত দর্শন কেন?

বৈষ্ণবীয় দর্শন মতে, একদা দ্বারকায় রুক্মিণী ও সমস্ত মহিষীগণ রোহিণী মাতাকে জিজ্ঞাসা করলেন, ভগবান শ্রীকৃষ্ণকে আমরা এত সেবা করার পরেও তিনি যেন শ্রীদাম-সুদাম, কখনও মা যশোদা-নন্দ বা কখনও ব্রজবাসীগণ বলতে মুর্ছা যান আর রাত্রে ঘুমিয়ে থাকার সময় রাধা রাধা চিৎকার করেন। আমরা জানতে চাই এ রাধা কে আর কেন তিনি ব্রজবাসীগণ ও গোপীগণকে এখনও মনে করে কান্না করেন কি তার কারণ ?

মাতা রোহিণী বলিলেন এ বিষয়ে আমি কিছু জানিনা। কিন্তু বারম্বার রুক্মিণী ও সমস্ত মহিষীগণ রোহিণী মাতাকে জিজ্ঞাসা করার ফলে রোহিণী মাতা বাধ্য হয়ে বলিলেন এ বড় গোপনীয় বিষয়। আমি আপনার সমস্ত প্রশ্নের উত্তর দিতে পারি কিন্তু এক সমস্যা হচ্ছে যে, যদি এই গোপনীয় রহস্যময় বিষয় বলার সময়ে কৃষ্ণ ও বলরাম ব্রজবাসীগণের এই বিরহ গাথা শোনেন তাহলে বড় বিপদ ঘটতে পারে। রুক্মিণীদেবী রোহিণীমাতাকে আশ্বাস দিলেন যে সে ইহার উপযুক্ত ব্যবস্থা করবেন।   

রুক্মিণী, সত্যভামা ও সমস্ত মহিষীগণ মিলে সুভদ্রাকে বললেন, হে সুভদ্রে আমরা সবাই ঘরে ভেতরে এক গোপনীয় বিষয়ে রোহিণীমাতা সঙ্গে আলোচনা করব; তুমি একটু দরজার বাইরে দাঁড়িয়ে থাকো। যতক্ষণ আমরা না বলি তুমি ঘরে ভেতরে কাউকে আসতে দেবেনা। সুভদ্রাকে বাইরে রেখে মাতা রোহিণী মহিষীদেরকে বলতে লাগলেন কৃষ্ণ বিরহে  বৃন্দাবনের তরু-লতা-পশু-পাখি কিভাবে হা কৃষ্ণ!  হা কৃষ্ণ! বলে কাঁদছেন, কিভাবে মূর্ছা যাচ্ছেন নগরবাসীরা। সখাগণ অনাহারে অনিদ্রায় কালাতিপাত করছেন। মা যশোদা, পিতা নন্দ প্রতিদিন ছানা-মাখন নিয়ে গোপাল গোপাল বলে কাঁদতে কাঁদতে অন্ধ হয়ে গেছেন। কৃষ্ণ বিরহে ব্রজগোপীগণ প্রাণান্ত প্রায়।

 এদিকে ভগিনী সুভদ্রা দেবীকে একটি কক্ষের দ্বারে দেখতে পেয়ে কৃষ্ণ এবং বলরাম তাঁর নিকটে এসে দাঁড়ালেন। কক্ষাভ্যন্তর থেকে ভেসে আসা ধ্বনি, রোহিনী মাতা কর্তৃক বর্ণিত ব্রজবাসীদের কৃষ্ণ-বিরহ কথা শ্রবণ করতে করতে কৃষ্ণ, বলরাম এবং সুভদ্রা বিকারগ্রস্ত হইতে লাগলেন। তাদের হস্ত-পদ শরীরাভ্যন্তরে প্রবিষ্ট হইতে লাগল, চক্ষুদ্বয় বিস্ফারিত হইতে লাগল। এমতাবস্থায় সেখানে নারদ মুনি উপস্থিত হয়ে সেই রূপ দর্শন করলেন। তখন নারদ মুনি ভগবান শ্রীকৃষ্ণের নিকট প্রার্থনা করলেন, হে ভগবান! আমি আপনার যে রূপ এখন দর্শন করলাম, যে ভক্ত বিরহে আপনি স্বয়ং বিকারগ্রস্ত হয়ে থাকেন, সেই করুণার মূর্তি জগতবাসীর কাছে প্রকাশ করুন। নারদ মুনির প্রার্থনায় ভগবান শ্রীকৃষ্ণ প্রীত হয়ে প্রতিশ্রুতি দিলেন যে, কলিকালে দারুবৃক্ষ (জগন্নাথ) রূপে শ্রীক্ষেত্রধামে আমি এই রূপে আবির্ভূত হবো।

পুরীর রথযাত্রা উৎসব হচ্ছে বড় ভাই বলরাম বা বলভদ্র ও বোন সুভদ্রাকে সঙ্গে নিয়ে শ্রীকৃষ্ণের বৃন্দাবন যাত্রার স্মারক। তিন জনের জন্য আলাদা আলাদা তিনটি রথ। রথযাত্রা উৎসবের মূল দর্শনীয় হল এই রথ তিনটি।

প্রথমে থাকে বলরামের রথ I

বলরামের রথের নাম-তালধ্বজ বা হলধ্বজ বা লাঙ্গলধ্বজ। রথে বলরামের সঙ্গী হন রামকৃষ্ণ। তালধ্বজের উচ্চতা ৪৪ ফুট। চাকার সংখ্যা ১৪টি। ৭৬৩টি কাঠের টুকরো দিয়ে গড়া এই রথ সাজানো হয় মূলত লাল ও সবুজ কাপড়ে। বলরামের রথের দড়ির নাম ‘বাসুকি নাগ’।তালধ্বজের সারথির নাম মাতালি। রক্ষীর নাম বাসুদেব। রথের মাথায় পতাকার নাম উন্যানী।বলরামের রথেও নয়টি দেবতা থাকেন যাঁরা হলেন,- কার্ত্তিক, গণেশ, সর্বমঙ্গলা, মৃত্যুঞ্জয়, মুক্তেশ্বর, প্রলম্বরী, হলায়ুধ, নতম্বর ও  শেষদেব । তালধ্বজেও থাকে চারটি ঘোড়া যাদের নাম- তীব্র, ঘোর, দীর্ঘশ্রম, ও স্বর্ণলাভ।

তারপর যাত্রা করে সুভদ্রার রথ।

সুভদ্রার রথের নাম দর্পদলন বা দেবদলন বা পদ্মধ্বজ। রথে সুভদ্রার সঙ্গী হন সুদর্শন I দর্পদলনের উচ্চতা ৪৩ ফুট। চাকার সংখ্যা ১২টি। ৫৯৩টি কাঠের টুকরো দিয়ে গড়া এই রথ সাজানো হয় মূলত লাল এবং কালো কাপড়ে। দর্পদলনের রথের দড়ির নাম ‘স্বর্ণচূড়া নাগুনি’। দর্পদলনের সারথির নাম অর্জুন। রথের মাথায় পতাকার নাম নদম্বিকা। সুভদ্রার রথে সাতজন দেবী অধিষ্ঠান করেন,- এঁদের মধ্যে আছেন চণ্ডী, চামুণ্ডা, বনদুর্গা, শুলিদুর্গা, শ্যামাকালী, মঙ্গলা ও বিমলা। দর্পদলনেও থাকে চারটি ঘোড়া- রচিকা, মচিকা, জিতা ও অপরাজিতা। সুভদ্রার রথে একজন রক্ষীও থাকে যার নাম জয়দুর্গা।

সর্বশেষে থাকে শ্রীজগন্নাথদেবের রথ।

জগন্নাথের রথের নাম নন্দীঘোষ বা কপিধ্বজ বা গরুড়ধ্বজ। রথে জগন্নাথের সঙ্গী হন মদনমোহন। নন্দীঘোষের উচ্চতা ৪৫ ফুট। চাকার সংখ্যা ১৬টি। ৮৩২টি কাঠের টুকরো দিয়ে গড়া হয় এই রথ সাজানো হয় মূলত লাল ও হলুদ কাপড়ে। জগন্নাথের রথ নন্দীঘোষের সারথির নাম দারুক। রথের মাথায় থাকা পতাকার নাম ত্রৈলোক্যমোহিনী। এই রথের সামনে চারটি ঘোড়া থাকে যাদের নাম,- শঙ্খ, বলাহক, শ্বেতা, ও হরিদাশ্ব। জগন্নাথের রথের দড়ি বা রশিটির নাম ‘শঙ্খচূড়া নাগুনি’। জগন্নাথের রথে আরও নয় দেবতা অধিষ্ঠান করেন, যাঁরা হলেন,- গোবর্ধন, কৃষ্ণ, নরসিংহ, রাম, নারায়ণ, হনুমান, রুদ্র, বরাহ, ত্রিবিক্রম। জগন্নাথের রথে একজন রক্ষীও থাকে যার নাম গরুড়।

রথযাত্রার মোক্ষ বা পূণ্য কি?

আষাঢ় মাসের শুক্ল পক্ষের দ্বিতীয়া তিথিতে অনুষ্ঠিত এই রথযাত্রা কিংবা পুনর্যাত্রা অর্থাৎ উল্টোরথ, রথোপরি ভগবান জগন্নাথ, বলদেব ও সুভদ্রাদেবীকে দর্শন করলে এই জগতে আর পুর্নজন্ম হবে না।

💞জয় পতিতপাবন পরম করুণাময় শ্রীজগন্নাথদেবের জয়💞