Thursday, February 20, 2020


শ্রীল জগন্নাথদাস বাবাজী মহারাজ
(তিরোভাব)
হরে কৃষ্ণ, আগামী ২৪/০২/২০২০ ইং রোজ - সোমবার পরমহংস শ্রীল জগন্নাথ দাস বাবাজী মহারাজের শুভ তিরোভাব তিথি বিরহ মহামহোৎসব।
‘’শ্রীগৌরাবির্ভাবভূমেস্ত্বং নির্দ্দেষ্টা সজ্জনপ্রিয়ঃ।
বৈষ্ণব-সার্ব্বভৌম শ্রীজগন্নাথায় তে নমঃ II’’

সমগ্র বৈষ্ণব সমাজ সমাদৃত এবং ভগবান শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভুর আবির্ভাব স্থলী তাঁহার দিব্যদর্শনে নির্দ্দেশক বৈষ্ণব সার্বভৌম শ্রীল জগন্নাথ দাস বাবাজী মহারাজকে আমি আমার সশ্রদ্ধ প্রণতি নিবেদন করি।

সচ্চিদানন্দ শ্রীল ভক্তিবিনোদ ঠাকুর মহাশয়ের শিক্ষাগুরু এবং শ্রীল মধুসূদন দাস বাবাজী(সূর্য্যকুণ্ডে ‘সিদ্ধ বাবাজী’ নামে প্রসিদ্ধ) মহারাজের পারমহংস্যবেষ - শিষ্য গৌড়ীয় বৈষ্ণব সমাজে বৈষ্ণব সার্বভৌমসিদ্ধ মহাজনরূপে পূজিত বৈষ্ণব প্রিয় চূড়ামণি নিত্যলীলা প্রবিষ্ট ওঁ বিষ্ণুপাদ পরমহংস শ্রীল জগন্নাথ দাস বাবাজি মহারাজের শুভ তিরোভাব তিথি বিরহ মহামহোৎসব।

শ্রীল জগন্নাথদাস বাবাজী মহারাজ বাংলাদেশের ময়মনসিংহ জেলার টাঙ্গাইল মহকুমার কোনো এক গ্রামে প্রায় দুইশত চৌদ্দ বছর পূর্বে এক সম্ভ্রান্ত বংশে আবির্ভূত হন।কারো কারো মতে তিনি পাবনা জেলার তড়াস গ্রামে বারেন্দ্র কায়স্থকুলকে ধন্য করিয়া আবির্ভূত হয়েছিলেন।তার পিতৃমাতৃকূলের পরিচয় অপরিজ্ঞাত। তিনি শ্রীরাধাকুণ্ডে রূপানুগ ভজন পদ্ধতি অনুসরণ করে শ্রী শ্রী
রাধাগোবিন্দের অষ্টকালীন প্রেমসেবা করেছিলেন।সুদীর্ঘ দেড়শতাধিক বছরব্যাপী তাঁহার প্রকটলীলা। বর্দ্ধমান জেলার প্রান্তবর্ত্তী পুরুণীয়াবাসী শ্রীল রাসবিহারী গোস্বামী শ্রীল জগন্নাথদাস বাবাজী মহারাজের দীক্ষিত শিষ্য ছিলেন।

১৮৮০ খৃষ্টাব্দে শ্রীধাম বৃন্দাবনে শ্রীল জগন্নাথদাস বাবাজী মহারাজের সঙ্গে শ্রীল ভক্তিবিনোদ ঠাকুরের প্রথম সাক্ষাৎ হয়।১৮৯১ খৃষ্টাব্দে বর্দ্ধমান জেলার  আমলাজোড়া নামক স্থানে বাবাজী মহারাজের সঙ্গে ভক্তিবিনোদ ঠাকুর দ্বিতীয়বার মিলিত হন। আমলাজোড়ায় ভক্তিবিনোদ ঠাকুর হরিবাসর - তিথিতে বাবাজী মহারাজের সহিত অহোরাত্র গৌরকৃষ্ণ কথায় অতিবাহিত করিয়াছিলেন।শ্রীল মহারাজ এখানে ভক্তিবিনোদ ঠাকুরকে গৌরনাম ও  গৌরধাম প্রচারে উৎসাহ প্রদান করিয়াছিলেন।

শ্রী বিহারীদাস বাবাজী নামে এক বলিষ্ঠ ব্রজবাসী শ্রীল জগন্নাথ দাস বাবাজি মহারাজের সেবক ছিলেন।তিনি বাবাজী মহারাজকে একটি চুপড়ীতে উঠিয়ে এক স্থান হইতে অন্য স্থানে নিয়ে যেতেন। বাবাজী মহারাজ অতি বৃদ্ধ হইলেও তাঁহার দৃষ্টিশক্তি অটুট ছিল,কেবল ভ্রূ নীচে নামিয়া চক্ষু আবৃত করিত,ভ্রূ উঠাইলেই দেখিতে পাইতেন।এইরূপ শ্রুত হয় বিহারীদাস বাবাজী যখন বাবাজী মহারাজকে চুপড়িতে মহাপ্রভুর আবির্ভাবস্থলী যোগপীঠে লইয়া আসিলেন,তখন বাবাজী মহারাজ 'জয় শচীনন্দন  গৌরহরি' বলিয়া উদ্দণ্ড নৃত্য করিয়াছিলেন।বৃদ্ধ বাবাজীকে ঐপ্রকার উদ্দণ্ড নৃত্য করিতে দেখিয়া সকলে বিস্মিত হইলেন। বাবাজী মহারাজ দিব্যদর্শনে শ্রীমন্মহাপ্রভুর জন্মস্থান এবং পরে খোলভাঙ্গার ডাঙ্গা শ্রীবাস - অঙ্গন নির্দ্দেশ করিলেন।১২৯৯ বঙ্গাব্দে,১৮৯২ খৃষ্টাব্দে শ্রীমন্মহাপ্রভুর আবির্ভাব দিবসে ২০ শে ফাল্গুন বৃহস্পতিবার বাবাজী মহারাজ কুলিয়ার নবদ্বীপ হইতে সংকীর্ত্তন শোভাযাত্রাসহ শ্রীমায়াপুর যোগপীঠে শুভাগমন করিয়া মহাপ্রভুর আবির্ভাব স্থান জগন্নাথ মিশ্রের আলয় নির্দ্দেশ করেন। শ্রীল জগন্নাথ দাস বাবাজী মহাশয় শেষে এই অভিপ্রায় প্রকাশ করিলেন যে,জন্মস্থানে শ্রীজগন্নাথ মিশ্র ও শ্রীশচীদেবী এক গৃহে এবং শ্রীবিষ্ণুপ্রিয়া ও লক্ষ্মীদেবী দুইপার্শ্বে শ্রীমন্মহাপ্রভুর কৈশোর মূর্ত্তি অন্যঘরে স্থাপিত হউক।শ্রীবাসঙ্গনে পঞ্চতত্ত্ব স্থাপিত হউক।

১৮৯৩ খৃষ্টাব্দে শ্রীল জগন্নাথদাস বাবাজী মহারাজ শ্রীগোদ্রুমে সংকীর্ত্তন উৎসবে এবং শ্রীমায়াপুর দর্শন উৎসবে বহু বৈষ্ণবসহ যোগ দিয়াছিলেন। জগন্নাথদাস বাবাজী মহারাজ ১৩০১বঙ্গাব্দ ১৪ই  ফাল্গুন, ১৮৯৫ খৃষ্টাব্দে ২৫শে ফেব্রুয়ারি সোমবার শুক্ল - প্রতিপদ তিথিতে সকাল ১০টায় অপ্রকট হন।

শ্রীল জগন্নাথ দাস বাবাজী মহারাজের উপদেশামৃতঃ-
) কখনো বিষয়ীর অন্নগ্রহণ করিও না, গ্রহণ করিলে বিষয়ী হইয়া যাবে।
) সাংসারিক অমঙ্গলকে ভগবানের দয়া বলিয়া জানিবে।
) 'সেবা করিয়াছি' বলিয়া ঢাক পিটাইয়ো না, তখন আর ইহাকে 'সেবা' বলা যাইবে না।
) গৌরধাম কৃপা করিলেই ব্রজবাস হয়।
) কখনো মর্কটবৈরাগীর (বিরক্তবেষী কপট সাধু) সহিত মিশিও না।
) অন্তরে ঐকান্তিক কৃষ্ণসেবার জন্য অনুরাগ না আসিলে বাহিরে বেষগ্রহণ করিলে তাহাকে পরমহংস বলা যায় না।
) নির্জন ভজনের ছলনায় অলস হইও না।
) অপরাধের সহিত লক্ষ লক্ষ মালা টানিবার চেয়ে বৈষ্ণব সেবার জন্য বাগানে চাষ গাছে জল দেওয়া অধিক মঙ্গল জনক। বৈষ্ণব সেবার ফলে শ্রীহরিনামে অকপট রুচি আসিবে।
) বৈষ্ণবের অনুকরণ করিও না, পুড়িয়া মরিবে। তাঁহার অকপট সেবা যাচনা কর। ১০) যিনি হরিসেবার অর্থ ভোগ করেন, তিনি মহাপাষণ্ডী।
১১) সাধারণ চোরের কখনো কখনো মঙ্গল হইয়া থাকে, কিন্তু গুরু-বৈষ্ণবের নামে অর্থ ভোগকারীর কখনোই মঙ্গল হয় না
১২) অন্যাভিলাষের সহিত গুরু-বৈষ্ণবের সেবা করলে তাঁহারা সেবকাভিমানীকে লাভ-পূজা-প্রতিষ্ঠা দিয়া সরে পড়েন।
১৩) আনুগত্যময় আচরণই সদাচার, স্বতন্ত্রতাই কদাচার।
১৪) কৃত্রিম অষ্টকালীন লীলা স্মরণপদ্ধতি রূপানুগ ভজনরীতি নহে,শ্রীনাম - কীর্ত্তন যোগে স্মরণই গোস্বামীগণের সিদ্ধান্ত।

No comments:

Post a Comment

🌳🌴🪴🌲🦚🍁💐🏵️🌺🌷🌺🏵️💐🍁🦚🌲🪴🌴🌳 🌻🌼 শ্রীবলরামের রাসযাত্রা 🌹 শ্রীকৃষ্ণের বসন্তরাস 🌼🌻 🌳🌴🪴🌲🦚🍁💐🏵️🌺🌷🌺🏵️💐🍁🦚🌲🪴...