Wednesday, February 19, 2020


শ্রীল ঈশ্বরপুরী
আজ শ্রীল ঈশ্বরপুরীপাদের শুভ তিরোভাব তিথি বিরহ মহামহোৎসব।

শ্রীপাদ মাধবেন্দ্রপুরীর অন্তরঙ্গ প্রিয় শিষ্য ছিলেন  শ্রী ঈশ্বরপুরীজী। লৌকিক লীলাতে শ্রীমন্মহাপ্রভুর তিনি দীক্ষা গুরু।

কুমারহট্ট হালিশহর গ্রাম নিবাসী রাঢ়দেশীয় কুলীন ব্রাহ্মণ বংশে শ্রীশ্যামসুন্দর আচার্যের ঘরে ঈশ্বরপুরীপাদের জন্ম হয়। শাস্ত্র অধ্যয়ন করা ফলে তিনি সংসার যে অসার এই জেনে গৃহ ত্যাগ করিয়াছিলেন তীর্থ ভ্রমণের সময় তার দেখা হয় শ্রীমাধবেন্দ্রপুরীর সাথে। তাঁর কাছে ঈশ্বরপুরীপাদ সন্ন্যাস গ্রহণ করেন। মাধবেন্দ্রপুরীপাদ সন্ন্যাসের পর তাঁর নাম দিয়েছিলেন ঈশ্বরপুরী।

একদিন নবদ্বীপে ঈশ্বরপুরীর আগমন ঘটে। তিনি পরম বৈষ্ণব, ব্রজবাসীদের শুদ্ধ সাত্ত্বিক প্রেম যাঁর মধ্যে পাওয়া যায়। তিনি শ্রীঅদ্বৈতাচার্যের বাসভূমিতে পদার্পণ করলেন। তিনি অদ্বৈতাচার্য্যকে দর্শন করেন ভাবলেন- ইনিই চৈতন্য আবির্ভাবের মূল আচার্য। তেজস্বী সন্ন্যাসীকে দেখে সীতানাথ নমো নারায়ণ বলে করলেন দন্ডবৎ। কিন্তু বৈষ্ণব কাছে কিছু লুকিয়ে থাকে না। বার বার শ্রীঅদ্বৈতঠাকুরও শ্রীপুরীপাদের দিকে তাকাছেন। তারপর জিজ্ঞাসা করলেন,-"মহাশয়! আপনার পরিচয়?" শ্রীঈশ্বরপুরীপাদ বললেন-- "আমি এক ক্ষুদ্র অধম জীব, আপনার চরণ দর্শন করতে এসেছি।‘’

বৈষ্ণব এবং পরম কৃষ্ণ ভক্তের পরিচয় হল, সে কৃষ্ণ লীলা গান, কৃষ্ণ প্রেম লুকিয়ে রাখতে পারে না।এজন্য সেই সময় অদ্বৈত আচার্য ইশারা করল আর শ্রী মুকুন্দ ততক্ষণই শ্রীকৃষ্ণ লীলাময় গান আরম্ভ করল। শ্রবণ করতেই শ্রীপুরীপাদের চোখ দিয়ে প্রেমাশ্রু ধারা বহিতে লাগিল। শ্রী পুরীপাদ ধরণীতে মুচ্ছিত হয়ে পরলেন শ্রীঅদ্বৈতাচার্য ওনাকে ধরে সামলালেন।।তখন সবাই জানতে পারলেন উনি কৃষ্ণ প্রেমাবিষ্ট শ্রীঈশ্বরপুরীপাদ।

একদিন শ্রীমহাপ্রভু ছাত্রদের পড়িয়ে ঢুকছেন, রাস্তাতে শ্রীপুরী পাদের সাথে দেখা। তাঁকে দেখে শ্রীগৌরসুন্দর শ্রীপুরীপাদকে প্রণাম করলেন।
শ্রীঈশ্বরপুরীপাদ অপলক শ্রীগৌরসুন্দরের দিকে তাকাতে থাকলেন যেন মহাপ্রভু রূপ মাধুরী তিনি পান করছেন শ্রীমহাপ্রভু শ্রীপুরীপাদকে নিমন্ত্রণ করে আর বড় আদর করে নিজ ঘরে নিয়ে গেলেন। শ্রীশচীমাতা শ্রদ্ধাপূর্বক শ্রীকৃষ্ণ প্রসাদ পাওয়ালেন শ্রীপুরীপাদকে। এই রকম শ্রীপুরীপাদজী প্রায় অনেক মাস নবদ্বীপে শ্রীগোপীনাথ আচার্যের ঘরে। ওনার দর্শন করতে মহাপ্রভু নিত্য ভক্তদের সাথে যেতেন।

একদিন শ্রীঈশ্বরপুরীপাদ বললেন, "গৌরাঙ্গ আমি শ্রীকৃষ্ণ লীলামৃত নাম এক গ্রন্থ লিখেছি তার মধ্যে কিছু অশুদ্ধ থাকলে তুমি ঠিক করে দিও।"
শ্রীগৌরহরি বললেন, "প্রভু, যে ভক্তের বাণীর মধ্যে অশুদ্ধতা দেখে সে স্বয়ং অশুদ্ধ হয়। শ্রীভগবান তো ভাবগ্রাহী, যে ব্যাকরণ জানে না সে বলছে"বিষ্ণায় নমঃ" বলে আর যে বিদ্বান সে বলছেন, "বিষ্ণবে নমঃ।" কিন্তু শ্রীভগবান তো ভক্তের ভাব গ্রহণ করে। তিনি দুই জনের প্রতি কৃপা করেন।"

মুর্খৈ বদতি বিষ্ণায় ধীরৈ বদতি বিষ্ণবে।
উভয়ৈস্তু সমঃ পুণ্যং ভাবগ্রাহী জনার্দনঃ II

শ্রীমহাপ্রভু পিতৃ শ্রাদ্ধ করতে গয়া যান। সেখানে চক্রবেড় স্থানে 'শ্রীবিষ্ণুচরণ' দর্শন করেন। সেই সময় গৌরহরি প্রেমবিষ্ট হয়ে উঠে। অশ্রু-কম্প-পুলক সাত্বিক বিকার প্রভু শ্রীদেহে উদয় হয়।ঐ প্রথমবার মহাপ্রভু মধ্যে প্রেম প্রকাশিত হয়ে ছিল। স্থান দিব্য যোগে শ্রী ঈশ্বরপুরীজী পৌছাল। শ্রীচরণ দর্শন করে, শ্রীপুরীপাদকে দেখে মহাপ্রভুর প্রণাম করলেন। পরদিন মহাপ্রভু শুভক্ষণে ঈশ্বরপুরীর নিকট মন্ত্র গ্রহণ করেন। দশাক্ষর মন্ত্রে কৃষ্ণ অধিষ্ঠান। গৌরাঙ্গ কৃষ্ণমূর্তির দর্শন প্রত্যক্ষ করলেন। পুরীরাজকে মহাপ্রভু বলেন- বড় কৃপা করে আমাকে আজ তুমি উদ্ধার করলে। পুরী বলেন তুমি সকল তত্ত্বই জান। জীবের শিক্ষার জন্যই তুমি ধরায় অবতীর্ণ হয়েছো। তুমি স্বতন্ত্র ঈশ্বর, চিদানন্দ ময়।

যিনি কৃষ্ণ তিনি জগতশিক্ষার জন্য নিজেই মন্ত্র দীক্ষা নিলেন।

যে সময় মহাপ্রভু গৌড়দেশে ভ্রমণ করছিলেন সেই সময় শ্রীঈশ্বর পুরীপাদের জন্মস্থান কুমারহটে গেলেন আর সেখানে থেকে রজ বহিবাসে বেঁধে আনেন।

‘’প্রভু বোলে ঈশ্বরপুরীর জন্মস্থান।
মৃত্তিকা আমার জীবন ধন প্রাণ।।
হেন ঈশ্বরের প্রীতি ঈশ্বরপুরীরে।
ভক্তেরে রাড়াতে প্রভু সেইশক্তি ধরে।।
প্রভু বোলে গয়া করিবারে আইলাম।
সার্থক হইল ঈশ্বরপুরী দেখিলাম।।
আর দিনে নিভৃতে ঈশ্বরপুরী স্থানে।
মন্ত্রদীক্ষা চাহিলেন মধুর বচনে।।
পুরী বোলে মন্ত্র বা বলিয়া কোন কথা।
প্রাণ আমি দিতে পারি তোমারে সর্বথা।।
তবে তান স্থানে শিক্ষাগুরু নারায়ণ।
করিলেন দশাক্ষর মন্ত্রের গ্রহণ।।
তবে প্রভু প্রদক্ষিণ করিয়া পুরীরে।
প্রভু বোলে দেহ আমি দিলাম তোমারে..।।
(“শ্রীচৈতন্যভাগবত”- পঞ্চদশ অধ্যায়)
আজ এই তিরোভাব তিথিতে শ্রী ঈশ্বরপুরীপাদের চরণের কোটি কোটি প্রণাম।
জয় গৌরহরি।

No comments:

Post a Comment

🌳🌴🪴🌲🦚🍁💐🏵️🌺🌷🌺🏵️💐🍁🦚🌲🪴🌴🌳 🌻🌼 শ্রীবলরামের রাসযাত্রা 🌹 শ্রীকৃষ্ণের বসন্তরাস 🌼🌻 🌳🌴🪴🌲🦚🍁💐🏵️🌺🌷🌺🏵️💐🍁🦚🌲🪴...