Saturday, February 8, 2020

*চরণচিহ্ন*
অঙ্কুশ অম্বর কুলিশ কমল জব ধুজা ধেনুপদ
শঙ্খ চক্র স্বস্তিক জম্বুফল কলস সুধা হ্রদ।।
অর্ধচন্দ্র ষট্ কোন মীন বিন্দু উরধ রেখা।
অষ্টকোন ত্রয়কোন ইন্দ্রধনু পুরুষ বিশেষা।।
সীতাপতি পদ নিত বসত এতে মঙ্গলদায়কা।
চরণচিহ্ন রঘুবীর কে সন্তনি সদা সহায়কা।।

ভগবানের চরণে এই সমস্ত চিহ্নগুলি সাধুদের সব সময় রক্ষাকারী।

শ্রীচরণচিহ্নের তাৎপর্য্য।

ধ্যেয় মধ্যে জীবের কর্তব্য কোন ধ্যান?
রাধাকৃষ্ণ-পদাম্বুজ ধ্যান-প্রধান
ধ্যানের মধ্যে কার ধ্যান করা জীবের কর্তব্য?”
শ্রীল রামানন্দ রায় উত্তর দিলেন, “রাধাকৃষ্ণের শ্রীপাদপদ্মের ধ্যান করাই জীবের প্রধান কর্তব্য।
-
চৈ. . মধ্য. /২৫৩

সেই রাধাকৃষ্ণ মিলিত তনু এবার শ্রীগৌরাঙ্গ মহাপ্রভু।

ব্রজলীলায় শ্রীকৃষ্ণ বিষয় ,শ্রীরাধিকা আশ্রয়। নদীয়া লীলায় শ্রীগৌরাঙ্গ মহাপ্রভু বিষয় তত্ত্ব শ্রীনিত্যানন্দ প্রভু আশ্রয় তত্ত্ব। তাই সর্বপ্রথম শ্রীমন্নিত্যানন্দ প্রভুর চরণচিহ্ন ধ্যান।

নিতাই কৃপা বিনে ভাই,রাধাকৃষ্ণ পাইতে নাই,
দৃঢ় করি ধর নিতাই পা(চরণ)
চরণ চিহ্নের স্মরণ। ভব বন্ধ বিনাশন।।

*
শ্রীমন্নিত্যানন্দপ্রভুর চরণচিহ্ন।*
দক্ষিণ চরণ : “আমি শ্রীনিত্যানন্দ প্রভুর দক্ষিণ চরণতলের বারোটি অপূর্ব সুন্দর শুভচিহ্নের ধ্যান করি, যা সর্বাভীষ্ট পূর্ণ করে।প্রভুর চরণের একেবারে শীর্ষে বৃদ্ধাঙ্গুষ্ঠের ঠিক নীচে একটি পূর্ণ-চিত্রিত শঙ্খ রয়েছে, যা সম্ভাব্য সমস্ত ধরণের জ্ঞান প্রকাশ করে। শঙ্খের নীচে রয়েছে চক্র, যা মানবজীবনের ছয়টি শত্রু বা রিপু- কাম, ক্রোধ, লোভ, মোহ, মদ, মাৎসর্য- কে ধ্বংস করে। চক্রের নীচে রয়েছে লাঙ্গল। লাঙ্গলের নীচে চারটি শর, শরগুলির নীচে ছিলাবিহীন একটি ধনু। ধনুর নীচে অর্দ্ধ চন্দ্র এবং তারও নীচে ঠিক গোড়ালিতে রয়েছে জাম্বুফল-একটি কালোজাম-চিহ্ন। চরণের উপরিভাগে মধ্যমার নীচে রয়েছে যবশীষের চিহ্ন। অনামিকা পদাঙ্গুলির ঠিক নীচে রয়েছে একটি সুন্দর প্রস্ফুটিত রক্তপদ্ম। রক্তপদ্মের নীচে চরণের প্রান্তভাগে রয়েছে একটি জয়াধ্বজ, যার অর্থ, নিত্যানন্দ প্রভুর চরণ ভক্তির সকল বিঘ্ন পরাভূত করে। ধ্বজের নীচে রয়েছে একটি বজ্র, যা ভক্তের সকল দুর্দশা দারিদ্র্য নাশ করে। বজ্রের নীচে এবং অর্ধচন্দ্রের ঠিক পাশে রয়েছে একটি যজ্ঞবেদী।

বাম চরণ : “আমি শ্রীনিত্যানন্দের বাম চরণতলের বারোটি শুভ চিহ্নের ধ্যান করি, যা সকল ধরনের সুখ প্রদান করে।প্রভুর চরণের বৃদ্ধ পদাঙ্গুলির ঠিক নীচে রয়েছে যজ্ঞবেদীর রেখাচিহ্ন। তার নীচে একটি ছত্র। ছত্রের নীচে রয়েছে একটি সুসজ্জিত শক্তি (বর্শার মতো অস্ত্র), আর তার পাশে গরুর খুরের চিহ্ন। গো-খুরের নীচে চারটি পূর্ণ-কুম্ভ, এবং গোড়ালিতে রয়েছে একটি মৎস্য-চিহ্ন। মধ্যমাঙ্গুলির নীচে দুটি সমকেন্দ্রিক বৃত্ত রয়েছে, যা অন্তরাকাশ (মানবদেহের অভ্যন্তরে) এবং বহিরাকাশের সূচক। অনামিকা পদাঙ্গুলির নীচে রয়েছে একটি পদ্ম, আর পদ্মের নীচে রয়েছে সুসজ্জিত একটি গদা। কনিষ্ঠাঙ্গুলির নীচে রয়েছে অঙ্কুশ। অঙ্কুশের নীচে প্রভুর চরণের বহি:প্রান্তে রয়েছে আরেকটি পুষ্প। পুষ্পের নীচে রয়েছে একটি আকর্ষণীয় নবোন্মীলিত কুসুম-লতা।আমি নিরন্তর নিত্যানন্দ প্রভুর পাদপদ্মের চব্বিশটি শুভচিহ্নের ধ্যান করি, যা মনকে শীতল করে এবং হৃদয়কে কোটিচন্দ্রের কিরণপ্রভায় ¯স্নিগ্ধ করে।

*
শ্রীচৈতন্যমহাপ্রভু* রাধাকৃষ্ণের মিলিততনু, যুগলাবতার, এবং একটি আকর্ষণীয় বিষয় হচ্ছে রাধা কৃষ্ণ উভয়ের পাদপদ্মে যে-সমস্ত মূল চিহ্নগুলি রয়েছে, তা সবই শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভুর পাদপদ্মে রয়েছে।

দক্ষিণ চরণ : “শ্রীগৌরসুন্দরের চরণাম্বুজদ্বয়ের দক্ষিণ চরণতলের শোভাবর্ধনকারী ষোলটি শুভ চিহ্ন আমি নিরন্তর স্মরণ করি।বৃদ্ধ পদাঙ্গুলির নীচে রয়েছে একটি যব-দানার চিহ্ন, তার নীচে রয়েছে একটি ছত্র। ছত্রের নীচে রয়েছে একটি শক্তি(বর্শার মতো অস্ত্র) দক্ষিণ চরণতলে একটি সরু ভাগ্যরেখা রয়েছে, যা চরণের মধ্যস্থল থেকে শুরু হয়ে বৃদ্ধাঙ্গুলি তার পাশের বড় আঙ্গুলের মধ্যবর্তী স্থানে গিয়ে শেষ হয়েছে। বড় আঙ্গুলের ঠিক নীচে রয়েছে একটি পর্বত। পর্বতের নীচে একটি ধ্বজযুক্ত রথ, রথের নীচে গোড়ালিতে রয়েছে একটি অষ্টভ কীলক, আর কীলক বেষ্টন করে চারটি মূল দিকে রয়েছে চারটি স্বস্তিকা চিহ্ন। স্বস্তিকাগুলির প্রত্যেক জোড়ার মধ্যে একটি কালো জাম-ফলের চিহ্ন রয়েছে। কনিষ্ঠ পদাঙ্গুলির নীচে রয়েছে অঙ্কুশ, আর অঙ্কুশের নীচে বজ্র। বজ্রের নীচে একটি যজ্ঞবেদী। আর তার নীচে রয়েছে কর্ণকুণ্ডল।

বাম চরণ : “মন, শ্রীগৌরহরির বাম চরণতলের শোভাবর্ধনকারী ষোলটি শুভ-চিহ্ন নিরন্তর স্মরণ কর।বৃদ্ধ পদাঙ্গুলির নীচে রয়েছে একটি শঙ্খ, এবং তার নীচে একটি চক্র। মধ্যমাঙ্গুলির নীচে রয়েছে দুটি সমকেন্দ্রিক বৃত্ত এবং তার নীচে একটি ছিলাবিহীন ধনু। ধনুকের নীচে একটি রত্নখচিত কঙ্কন। কনিষ্ঠাঙ্গুলির নীচে চরণের প্রান্তদেশে রয়েছে একটি সুদৃশ্য কলস-চিহ্ন। কলসের নীচে চরণের মধ্যবর্তী স্থানে রয়েছে গো-খুর চিহ্ন। তার নীচে রয়েছে চারটি পূর্ণকুম্ভ-বেষ্টিত একটি দ্বিভুজ। ত্রিভুজের ঠিক নীচে রয়েছে একটি অর্ধচন্দ্র। গো-খুরের নীচে চরণতলের বহিঃপ্রান্তে রয়েছে একটি সুন্দর ধ্বজ, আর ধ্বজচিহ্নের নীচে একটি পুষ্প। পুষ্পের নীচে একটি পল্লব। পল্লবের নীচে গোড়ালির মধ্যস্থলে রয়েছে একটি সুন্দর কূর্ম এবং তার নীচে মাছ। কূর্মের উপরে চরণের ভিতরের প্রান্তে রয়েছে একটি অপূর্ব সুন্দর পুষ্পমাল্য।

*
শ্রীরাধাচরণ চিহ্ন*
দক্ষিণ চরণ : “আমি শ্রীরাধার চরণাম্বুজদ্বয় আরাধনা করি, যাঁর নয়নরম্য সুকোমল দক্ষিণ চরণ অষ্ট শুভচিহ্নে শোভিত।বৃদ্ধ পদাঙ্গুলির নীচে শঙ্খ। দ্বিতীয় মধ্যমাঙ্গুলের নীচে রয়েছে একটি পর্বত। পর্বতের নীচে গোড়ালির কেন্দ্রের দিকে রয়েছে একটি রথ, আর গোড়ালির উপরে রয়েছে একটি মাছ। রথের পাশে চরণের ভিতরের প্রান্তদেশে রয়েছে একটি গদা। কনিষ্ঠ আঙ্গুলের নীচে রয়েছে যজ্ঞবেদী এবং যজ্ঞবেদীর নীচে একটি রত্নকূল।

বাম চরণ : “আমি শ্রীরাধার আরাধনা করি, যাঁর অপরূপ বাম চরণতল একাদশ শুভচিহ্নে শোভিত।বৃদ্ধপদাঙ্গুলির নীচে রয়েছে একটি যব-দানা-চিহ্ন। যবদানার নীচে চক্র। চক্রের নীচে ছত্র, আর নীচে রয়েছে কঙ্কন। একটি বক্র ভাগ্যরেখা চরণের মধ্যভাগ থেকে উপরে উঠে দ্বিতীয় মধ্যমাঙ্গুলের মধ্যস্থানে গিয়ে শেষ হয়েছে। মধ্যমার নীচে রয়েছে একটি পদ্ম। পদ্মের নীচে একটি ধ্বজ। ধ্বজের নীচে একটি পুষ্প এবং তার নীচে রয়েছে একটি পল্লব। গোড়ালির উপরে রয়েছে একটি সুন্দর অর্ধচন্দ্র। কনিষ্ঠাঙ্গুলির নীচে রয়েছে একটি অঙ্কুশ। এভাবে শ্রীমতী রাধিকার চরণকমলে মোট ঊনিশটি শুভচিহ্ন নিত্যকাল বিদ্যমান।।

*
শ্রীকৃষ্ণ চরণচিহ্ন*
দক্ষিণ চরণ: “আমি শ্রীকৃষ্ণের দক্ষিণ চরণতলে শোভমান একাদশ শুভ-চিহ্নের ধ্যান করি।বৃদ্ধপদাঙ্গুলের নীচে একটি যবদানা রয়েছে, তার নীচে রয়েছে একটি চক্র, এবং চক্রের নীচে ছত্র। চরণতলের মধ্যবর্তী স্থান থেকে একটি বক্ররেখা শুরু হয়ে বৃদ্ধাঙ্গুল দ্বিতীয় আঙ্গুলের নীচে শেষ হয়েছে। মধ্যমাঙ্গুলের নীচে রয়েছে একটি সুন্দর পদ্মফুল। পদ্মের নীচে একটি প্রসারিত ধ্বজচিহ্ন। কনিষ্ঠ আঙ্গুলের নীচে রয়েছে অঙ্কুশ, অঙ্কুশের নীচে বজ্র। গোড়ালিতে রয়েছে একটি অষ্টভূজ কীলক, এবং তার চারটি প্রধান দিকে রয়েছে চারটি স্বস্তিকা-চিহ্ন। প্রত্যেক দুটি স্বস্তিকার মধ্যে রয়েছে একটি করে কালো জাম-ফল।

বাম চরণ : “আমি শ্রীকৃষ্ণের বাম চরণতলে শোভিত অষ্ট শুভচিহ্নের ধ্যান করি।বৃদ্ধাপদাঙ্গুষ্ঠের নীচে রয়েছে একটি শঙ্খ। মধ্যমাঙ্গুলির নীচে রয়েছে দুটি সমকেন্দ্রিক বৃত্ত, আর তার নীচে স্থিত রয়েছে ছিলাবিহীন ধনু। ধনুর নীচে রয়েছে দুটি সমকেন্দ্রিক বৃত্ত, আর তার নীচে স্থিত রয়েছে ছিলাবিহীন ধনু। ধনুর নীচে গোখুর-চিহ্ন। তার নীচে রয়েছে চারটি জলপূর্ণ কলস-বেষ্টিত ত্রিভুজ। ত্রিভুজের নীচে অর্ধচন্দ্র, আর গোড়ালিতে রয়েছে একটি মাছ। আমাদের মন শ্রীকৃষ্ণের চরণকমলে বিভূষণকারী ঊনিশটি শুভচিহ্ন অনুধ্যানে নিমগ্ন হোক।

সৌভাগ্যানাং সদ্রুচাং সদগুণানাং সম্পত্তিনাং প্রাকৃতাপ্রাকৃতানাম্।
লীলাগারং দাতৃচ্চ ধ্যাতামাক্রং সর্বস্বং নঃ কৃষ্ণপদাব্জমস্তু
কেবল কৃষ্ণচরণাম্বুজ ধ্যান করার মাধ্যমে ধ্যানকারী চিন্ময় জড় সকল সৌভাগ্য, শোভা, সদ্গুণাবলী এবং সম্পদ প্রাপ্ত হয়। কৃষ্ণপদাব্জ লীলাবলীর নিলয়স্বরূপ। সেই চরণযুগল আমার সর্বস্ব হোক।
-
গোবিন্দলীলামৃত ১৬/

No comments:

Post a Comment

🌳🌴🪴🌲🦚🍁💐🏵️🌺🌷🌺🏵️💐🍁🦚🌲🪴🌴🌳 🌻🌼 শ্রীবলরামের রাসযাত্রা 🌹 শ্রীকৃষ্ণের বসন্তরাস 🌼🌻 🌳🌴🪴🌲🦚🍁💐🏵️🌺🌷🌺🏵️💐🍁🦚🌲🪴...