Monday, February 3, 2020


শ্রীরামানুজাচার্য্য
(তিরোভাব)
'বিশ্বকোষে' বর্ণনানুযায়ী জ্ঞাত হওয়া যায় শ্রীল রামানুজ ১০১৭ খ্রিস্টাব্দে দক্ষিণ ভারতের চেঙ্গলপত জেলার অন্তর্গত শ্রী পরম্বদুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেছিলেন।তাঁহার পিতার নাম আসুরি কেশবাচার্য্য,মাতার নাম ভূদেবী বা কান্তিমতী।রামানুজাচার্য্যের পিতাও একজন অদ্বিতীয় পণ্ডিত ছিলেন।পিতারই নিকট রামানুজ পঞ্চদশ বর্ষ পর্য্যন্ত বেদাধ্যয়ন করেন।পরে শ্রীরঙ্গমে গিয়া মহাপূর্ণাচার্য্যের শিষ্য হইয়া তাঁহার নিকট বেদ,বেদাঙ্গ,বেদান্ত প্রভৃতি নানা শাস্ত্র শিক্ষা করিতে থাকিলেন।তাঁহার অসাধারণ ধীশক্তি প্রভাবে এখানে তিনি অল্প দিনের মধ্যেই সকল শাস্ত্রে পাণ্ডিত্য লাভ করিয়াছিলেন।

বিশ্বকোষের বর্ণনানুযায়ী জ্ঞাত হয় যে শ্রীরামানুজাচার্য্য বাল্যকাল হইতেই বিষ্ণুভক্তিতে রুচি ছিলেন। তিনি গুরুদেবের সহিত কাঞ্চীপুরে আসিয়া বরদরাজ স্বামীর মন্দিরে অবস্থান করতঃ বিশিষ্টাদ্বৈতবাদ প্রচার করিয়াছিলেন।উক্ত মন্দিরে দীর্ঘদিন প্রচার করিলে বহু ব্যক্তি তাঁহার শ্রীচরণাশ্রিত হন।এই সময়েই তিনি বেদান্তসূত্রের শ্রীভাষ্য,গীতা ভাষ্যাদি রচনা করিয়া শঙ্করাচার্য্যের কেবলাদ্বৈত মতবাদকে খণ্ডন করিয়া বিশিষ্টাদ্বৈতবাদ স্থাপন করেন। তিনি তিরুপতিতে বেঙ্কটাদ্রির উপরে কিছুদিন তপস্যা করিয়াছিলেন।তিনি বেঙ্কেটেশদেবের পূজা পদ্ধতির ব্যবস্থা করিয়াছিলেন। অতঃপর শ্রীরঙ্গমে আসিয়া বৈষ্ণবধর্ম প্রচার করিলে বহু সহস্রব্যক্তি বৈষ্ণবধর্ম্মাশ্রিত হন।অসংখ্য ব্যক্তিকে বৈষ্ণব ধর্মে দীক্ষিত হইতে দেখিয়া ত্রিশিরা পল্লীর শাসনকর্ত্তা কৃমীকান্ত চোল রামানুজাচার্য্যের প্রতি বিদ্বেষ আচরণ করিয়া রামানুজকে বধ করিবার জন্য লোক নিযুক্ত করিয়াছিলেন। শ্রীরামানুজাচার্য্য শ্রীরঙ্গম ছাড়িয়া মহীশূরের অন্তর্গত যাদবপুরী (মেলকোটে) চলিয়া গেলেন।

 মেলকোটের রাজা জৈন ধর্ম্মাবলম্বী হইলেও উদার স্বভাববিশিষ্ট ছিলেন। রামানুজাচার্য্য মেলকোটের রাজার ব্রহ্মদৈত্যগ্রস্ত কন্যাকে মন্ত্রপ্রয়োগের দ্বারা সুস্থ করিলে বল্লালরাজ জৈনমত পরিত্যাগ করিয়া রামানুজাচার্য্যকে গুরুপদে বরণ করিলেন। রামানুজাচার্য্যের অধিষ্ঠান হেতু মেলকোট বৈষ্ণবগণের প্রধান তীর্থ হইল।দ্বাদশ বৎসর পরে কৃমীকান্ত চোলের মৃত্যু পরে শ্রীরামানুজাচার্য্য শ্রীরঙ্গমে ফিরিয়া আসিলেন।অতঃপর তিনি ভারত বর্ষের সর্ব্বত্র বৈষ্ণবধর্ম্ম প্রচারের জন্য বহির্গত হইলেন। তিনি তিরুপতি,মহারাষ্ট্র,জৈনদিগের প্রধান তীর্থ গির্ণর,দ্বারকাতীর্থ,প্রয়াগ,মথুরা,বারাণসী,হরিদ্বার  প্রভৃতি তীর্থস্থানসমূহে বিশিষ্টাদ্বৈত মতবাদ বিপুলভাবে প্রচার করিলেন। তাঁহার প্রচারফলে বহু জৈনধর্ম্মাবলম্বী শঙ্করমতাবলম্বী বৈষ্ণব হইলেন।রামানুজাচার্য্য গয়াধামে পৌঁছিয়া বৌদ্ধগণকেও বৈষ্ণব ধর্ম্মে দীক্ষিত করিয়াছিলেন।তথা হইতে ক্রমশঃ তিনি পদ্মনাভ,সিংহাচল,কাঞ্চিপুর প্রভৃতি তীর্থস্থান হইয়া তাঁহার প্রিয় শ্রীরঙ্গমে ফিরিয়া আসেন।

রামানুজাচার্য্যের দর্শনে শক্তি বা ঈশ্বরের সাথে তিনটি স্তর বিবেচনা করা হয়েছে - ব্রহ্ম অর্থাৎ ঈশ্বর, চিত অর্থাৎ আত্মা এবং প্রাকৃত অর্থাৎ প্রকৃতি।

প্রকৃতপক্ষে, এই মন ব্রহ্ম বা ঈশ্বরের, অর্থাৎ আত্মা এবং অতীত থেকে পৃথক নয়। যা ব্রহ্ম বা ঈশ্বরের প্রকৃতি। তবে এগুলি ব্রহ্মের দুটি রূপ এবং ব্রহ্ম বা ঈশ্বরের উপর নির্ভরশীল। প্রকৃতপক্ষে, এটি রামানুচার্য্যের বিশিষ্টাদ্বৈত বেদান্তের মূলনীতি।

জীবাত্মা ও পরমাত্মা পৃথক নয় । জীবাত্মা নিজের উদ্দেশ্য সাধনের জন্য যেমন কাজ করে, তেমনি ব্রহ্ম বা ঈশ্বর ব্যতীত মন এবং অমোঘ উপাদানগুলির অস্তিত্বও নেই। এগুলি ব্রহ্ম বা ঈশ্বরের দেহ এবং ব্রহ্ম বা ঈশ্বর তাদের আত্মার মতো।

রামানুজের মতে ভক্তির অর্থ আরাধনা বা কীর্ত্তন - ভজন নয় বরং ঈশ্বরের ধ্যান করা বা প্রার্থনা করা। সামাজিক দৃষ্টিকোণ থেকে রামানুর্য্যের ভক্তিকে বর্ণ ও শ্রেণি থেকে পৃথক এবং সকলের পক্ষে সম্ভব বলে বিবেচনা করেছিলেন।
শ্রীরামানুজাচার্য্য ১২০ বৎসর বয়সে ৪২৩৮ কলিযুগাব্দে শ্রীরঙ্গক্ষেত্রে তিনি অপ্রকট হন। তাঁহার জ্ঞানী ও ভক্ত শিষ্যগণের মধ্যে ৭৪ জন আচার্য্য হইয়াছিলেন।

No comments:

Post a Comment

🌳🌴🪴🌲🦚🍁💐🏵️🌺🌷🌺🏵️💐🍁🦚🌲🪴🌴🌳 🌻🌼 শ্রীবলরামের রাসযাত্রা 🌹 শ্রীকৃষ্ণের বসন্তরাস 🌼🌻 🌳🌴🪴🌲🦚🍁💐🏵️🌺🌷🌺🏵️💐🍁🦚🌲🪴...