Thursday, April 9, 2020


শ্রীহরিনাম
(বিশেষ পোষ্ট)
শ্রী শ্রী গুরু গৌরাঙ্গ জয়তঃ
সকল সাধু,গুরু,বৈষ্ণব ও গৌর ভক্তবৃন্দের শ্রীচরণে আমার দণ্ডবৎ প্রণাম I
''হরি - গুরু - বৈষ্ণব তিনিহেঁ স্মরণ।
তিনেহেঁ স্মরণ হইতে বিঘ্ন বিনাশন।।
অনায়াসে হয় নিজ বাঞ্ছিত পূরণ ।।‘’

নমস্ত্রিকাল - সত্যায় জগন্নাথ সুতায় চ।
স - ভৃত্যায় স -পুত্রায় স - কলত্রায় তে নমঃ।।

নাম জপের নিয়ম
ভক্তরা প্রায়ই বলে থাকেন, "জপ করার জন্য কোনো ধরা - বাধা নিয়ম নেই। যেহেতু জপের সময় কোনো বিধিনিষেধ নেই, তাই অনেক ভক্তরাই মনে করেন জপ করার সময় ইন্টারনেট সার্ফ করা, গাড়ি চালানো, পাঠ শোনা, শুয়ে থাকা, বাজার করা, ভিডিও দেখায় কোনো সমস্যা নেই। আর তাদের ধারণা যে ঠিক তার প্রমাণ দেয়ার জন্য তারা শিক্ষাষ্টকমের ২য় শ্লোকটি উল্লেখ করেন-

নাম্নামকারি বহুধা নিজসর্বশক্তি-
স্তত্রার্পিতা নিয়মিতঃ স্মরণে কালঃ।
এতাদৃশী তব কৃপা ভগবন্মমাপি
দুর্দৈবমীদৃশমিহাজনি নানুরাগঃ।।২।।
অর্থাৎ,- হে ভগবান! তোমার নামই জীবের সর্বমঙ্গল বিধান করেন। এইজন্য তোমারকৃষ্ণ’, গোবিন্দাদি বহুবিধ নাম তুমি বিস্তার করেছ। সেই নামে তুমি তোমার সর্বশক্তি অর্পণ করেছ এবং সেই নাম স্মরণের কালাদি-নিয়ম (বিধি বা বিচার) কর নি। হে প্রভু! এইভাবে কৃপা করে জীবের পক্ষে তুমি তোমার নামকে সুলভ করেছ, তবুও আমার নামপরাধরূপ দুর্দৈব এমনই প্রবল যে তোমার সুলভ নামেও আমার অনুরাগ জন্মাতে দেয় না।

"ভগবানের দিব্য নাম স্মরণে কোনো প্রকার বাধা-নিষেধ নেই।"
উল্লেখ্য, এখানে শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভু বলেছেন যে ভগবানের নাম 'স্মরণে' বাধা-নিষেধ নেই। তিঁনি বলেননি যে ভগবানের 'নাম জপে' কোনো নিয়ম নেই। উপরোক্ত শ্লোকের মন্তব্যে মহাপ্রভু বলেন,
"খাইতে শুইতে যথা তথা নাম লয়।
কাল দেশ নিয়ম নাহি, সর্বসিদ্ধি হয়।"

মহাপ্রভুর মন্তব্যেকে অপব্যবহার করে অনেক ভক্তরাই উপসংহার টানে, "দেখুন, মহাপ্রভু স্বয়ং বলেছেন যে জপ করার সময় শোয়া, খাওয়া কিংবা অন্য কিছু করাতে সমস্যা নেই।দুঃখিত, এই যুক্তি সম্পূর্ণ ভ্রান্ত। মহাপ্রভু এখানে কেবল দিব্য নামের প্রভাব এবং কার্যক্ষমতার পুনরাবৃত্তি করছেন। জপের সময় শোয়া বা প্রসাদ পাওয়ার জন্য উৎসাহ প্রদান করছেন না। সমগ্র শিক্ষাষ্টকম এবং উপরোক্ত মন্তব্যে মহাপ্রভু শুধুমাত্র ভগবানের দিব্য নামের অচিন্ত্য শক্তি, কৃপা এবং মহিমা কীর্ত্তন করেছেন।মহাপ্রভু বলছেন যে যেকোনো জায়গায়, যেকোনো সময় এবং যেকোনো পরিস্থিতিতে আমরা ভগবানকে স্মরণ অথবা তাঁর নাম নিতে পারি এবং এটাই আমাদের করা উচিত। তাই দিব্য নাম কীর্ত্তনের ক্ষেত্রে মূলত কোনো বাধাধরা নিয়ম নেই। কিন্তু নাম জপের ক্ষেত্রে নিয়ম রয়েছে। যদি আমরা এসব নিয়ম উপেক্ষা করি এবং জপ চালিয়ে যেতে থাকি, তাহলে শুধু অপরাধ বৃদ্ধি পাবে এবং শ্রীরাধাকৃষ্ণ প্রতি বিশুদ্ধ ভালোবাসা অর্জন করতে পারব না।

নাম জপের জন্য ৬টি সাধারণ নিয়ম-
১। দশবিধ নাম অপরাধ বর্জন।
২। প্রতিদিন নির্দিষ্ট সংখ্যক মালা জপ করা।
৩। তুলসী মালায় জপ করা।
৪। তুলসী গুটিকাগুলো গোলাকার হবে এবং মালায়
গুটিকাগুলো বড় থেকে ক্রমান্বয়ে ছোট- এই
অনুসারে সাজানো থাকব
৫। অপরিষ্কার হাতে কিংবা অপবিত্র অবস্থায় (স্নান না করে, অপরিষ্কার কাপড় পরিধান করে অথবা বিছানায়) জপ করা উচিত নয়।
৬। জপ করার সময় কথা বলা, শুয়ে থাকা, হাঁটা এবং হাই তোলা উচিত নয়। হরিভক্তি বিলাসে (১৭। ১৩২-)

মালায় নাম জপের নিয়ম বর্ণনা-
মালা গোপনে রাখিয়া ভজনের জন্য নতুন কাপড়ের একটি থলি প্রস্তুত করিয়া তন্মধ্যে মালা রাখিতে হয়। থলির মধ্যে দক্ষিণ হস্ত প্রবেশ করাইয়া তর্জ্জনী অঙ্গুলিকে ছিদ্র দিয়া থলির বাহিরে রাখিতে হইবে। কারণ তর্জ্জনী দ্বারা স্পর্শ করিতে নাই। মোটা মালার দিক হইতে জপ আরম্ভ করিতে হয় এবং সমস্ত মালা একবার জপ শেষ হইলে ঘুরাইয়া লইয়া সরু দিক হইতে পুনরায় জপ করিতে হয় ; যেহেতু মেরুলঙ্ঘন করিয়া জপ করিতে নাই, করিলে তাহা বিফল হয় মধ্যমাঙ্গুলির মধ্যভাগের উপর মালা রাখিয়া অঙ্গুষ্ঠ দ্বারা এক একটি মালা আকর্ষণপূর্ব্বক এক একবার শ্রী হরিনাম মহামন্ত্র জপ করিতে হয়। 

এইরুপ ১০৮ টি মালা সব একবার জপ হইলে এক ফেরা হয় ।এরুপ 4 ফেরায় এক গ্রন্থি হয়  ১৬ গ্রন্থিতে লক্ষ নাম জপ হয় লক্ষ নাম জপের নিয়ম করা পরম সৌভাগ্যের বিষয় থলির বাহিরে চারটি ক্ষুদ্র মালা বাঁধিয়া ফেরার সংখ্যা রাখিতে হয় এবং এক গ্রন্থির অধিক জপ করতে হইলে প্রয়োজনানুযায়ী আরও গোটাকতক ক্ষুদ্র মালা পৃথক বাঁধিয়া গ্রন্থির সংখ্যা করিতে হয় এক গ্রন্থির কমে নাম জপের নিয়ম করিতে নাই দীক্ষিত জন বীজ মন্ত্র বা গায়ত্রী দশবার হস্তের পর্বে বা মালায় জপ করিয়া, মহামন্ত্র ষোড়শী হরি নাম ১০৮ বার মালায় জপ করিবেন।

মালা জপের সময় নাম স্মরণ মন্ত্রঃ-
''নাম চিন্তামণি-রুপং নামৈব পরমা গতিঃ।
নাম্নঃ পরতরং নাস্তি তস্মান্নাম উপাস্মহে।।''
অর্থাৎ,- শ্রীহরি নাম চিন্তামণি পরমা গতি, নাম হইতে শ্রেষ্ঠ(উপাস্য) বস্তু আর কিছুই নাই। তাই শ্রী নামের স্মরণ নিলাম।

নামের মধ্যে দিয়াই শ্রীকৃষ্ণের ধ্যান-
''ত্রিভঙ্গ-ভঙ্গিম-রুপং বেনুরন্ধ্র-করাঞ্চিতং।
গো, গোপ, গোপী মণ্ডল-মধ্যস্থং শোভিতং নন্দ নন্দনং।।''
অর্থাৎ,- গো, গোপ, গোপীগণ মধ্যস্থ বেনুরন্ধ্রে করে যুক্ত, বাদনরত ত্রিভুজঙ্গ ভঙ্গিম শ্রীনন্দের নন্দন শ্রীকৃষ্ণকে ধ্যান করিতেছি। নাম জপের প্রথমে শেষে শ্রীকৃষ্ণকে প্রণাম করিবেন।

শ্রীকৃষ্ণকে প্রণাম মন্ত্রঃ-
'নমো নলিন-নেত্রায় বেণু বাদ্য-বিনোদিনে।
রাধা ধর সুধা পান শালিনে বন মালিনে।।'

মালা জপ আরম্ভের মন্ত্রঃ-
'অবিঘ্ন করু মালে, ত্বং হরি নাম-জপেষু চ।
শ্রীরাধা কৃষ্ণয়োর্দাস্যং দেহি মালে, তু প্রার্থয়ে।।'
অর্থাৎ,- হে মালে তোমাতে হরি নাম জপ করিতেছি আমার সর্ব্ব বিঘ্ন দূরকর এবং শ্রীরাধা কৃষ্ণের দাস্য দান কর, এই প্রার্থনা করিতেছি।

মালা জপান্তে নিন্মরুপ জপ সমর্পণ করিতে হয়ঃ-
‘’গুহাতিগুহ গোপ্তা ত্বং গৃহাণাস্মং কৃতং জপং
সিদ্বি ভবতু-মে দেব ত্বৎ প্রসাদাৎ জনার্দ্দন।।‘’

অর্থাৎ,- হে পরম দেব, পরম অভিষ্ঠ, পরমপ্রিয় শ্রীকৃষ্ণ তুমি গুহ্য অতি গুহ্য বস্তুকে রক্ষা কর। অতএব আমার এই নাম জপ তুমি গ্রহণ কর। হে দেব তোমার প্রসাদে আমার সর্ব সিদ্ধি লাভ হয়।

ক্ষমা প্রার্থনা মন্ত্রঃ-
'নমো যদরং পরিভ্রস্টং মাত্রা হিনঞ্চ যদ ভবেৎ।
পূর্নং ভবতু তৎ সর্বং ত্বৎ প্রসাদাত জনার্দ্দন।।'
অর্থাৎ,- আমার উক্ত কার্যে যদি কোন আচার বাদ যাইয়া থাকে বা মাত্রা বিবর্তিত থাকে হে ভগবান তোমার অনুগ্রহে তা পূর্ণত্ব প্রাপ্ত হউক।
বিদ্রঃ- ভ্রমক্রমে বা কোনও অনিবার্য কারণবশতঃ কোন দিন মালা জপ বন্ধ থাকিলে তৎপর দিন তার প্রায়শ্চিত্তস্বরুপ চতুর্গুণ জপ করিয়া পরে দৈনিক নিয়মের জপ করিবেন।

কত সাধনার ফলে
এমন সাধের মানব জনম পেলে,
দু'দিন বাদেই সবাই চলে যাবে
এই হরিনাম তুমি গাইবে কবে ?

সংসার মায়ায় পড়ি অভিনয়,
মানুষে মানুষে শুধু পরিচয়।
হরি নাম ভজ
নামেতেই শান্তি পাবে।।

কি সুখ পেলে তুমি দুনিয়ায়,
দুঃখেরি আগুনে পুড়ে হলে ছাই।
হরি নাম ছাড়া আর
কি আছে ভবে।।

সমীরণের গান শুধু সাধনা,
আপনাদের চরণে আমার বাসনা।
গঙ্গাধরের গান শুধু সাধনা
আপনাদের চরণে আমার বাসনা।।

সুন্দর দেহটা পুড়ে ছাই হবে(এই)।।

কত সাধনার ফলে
এমন সাধের মানব জনম পেলে
দু'দিন বাদেই সবাই চলে যাবে
এই হরিনাম তুমি গাইবে কবে ?

হে আমার প্রাণোধন কৃষ্ণ তুমি আমাদের হৃদয়ে ভক্তির ভাব জাগিয়ে দাও। সবাই একমনে তন্ময় হয়ে শ্রীহরিনাম জপ করুন,-
''হরে কৃষ্ণ হরে কৃষ্ণ কৃষ্ণ কৃষ্ণ হরে হরে।
হরে রাম হরে রাম রাম রাম হরে হরে।।‘’
জয় শ্রীরাধেকৃষ্ণ। জয় ব্রজধাম। জয় শচীনন্দন গৌরহরি ।।

No comments:

Post a Comment

🌳🌴🪴🌲🦚🍁💐🏵️🌺🌷🌺🏵️💐🍁🦚🌲🪴🌴🌳 🌻🌼 শ্রীবলরামের রাসযাত্রা 🌹 শ্রীকৃষ্ণের বসন্তরাস 🌼🌻 🌳🌴🪴🌲🦚🍁💐🏵️🌺🌷🌺🏵️💐🍁🦚🌲🪴...