Tuesday, April 21, 2020


শ্রী শ্রী গুরু গৌরাঙ্গ জয়তঃ
সকল সাধু,গুরু,বৈষ্ণব গৌর ভক্তবৃন্দের শ্রীচরণে আমার দণ্ডবৎ প্রণাম I
‘’হরি - গুরু - বৈষ্ণব তিনিহেঁ স্মরণ।
তিনেহেঁ স্মরণ হইতে বিঘ্ন বিনাশন।।
অনায়াসে হয় নিজ বাঞ্ছিত পূরণ I’’

গুরবে গৌরচন্দ্রায় রাধিকায়ৈ তদালয়ে।
কৃষ্ণায় কৃষ্ণভক্তায় তদ্ভক্তায় নমো নমঃ।।

🌻আমরা কি ভাল আছি🌻
''চিররোগী,দুঃখভোগী বিছানায় আছেন শুইয়া।
ভালো আছি বলেন হাসিয়া হাসিয়া।।‘’

কেন এই চিররোগী,ব্যাক্তিটি বলে আমি ভাল আছি ?
🌻একটি গল্পের মাধ্যমে আমরা আলোচনা করি🌻
একদিন এক ব্যক্তি স্বাস্থ্যপরীক্ষা করার জন্য ডাক্তারের নিকট গেলে ডাক্তার রোগীকে পরীক্ষা করে বললেন, আপনার একটি ভাল খবর একটি মন্দ খবর আছে, কোনটি প্রথমে শুনবেন ? রোগীটি প্রথমে খারাপ সংবাদ পরে ভালটি শুনতে চাইল। ডাক্তার বললেন, প্রথমটি আপনার ক্যান্সার হয়েছে আর তিন বছর বাঁচবেন ! আর সু - সংবাদ হল আপনার আরও একটি রোগ হয়েছে যার নাম এলজাইমার। এই অসুখের কারণে আপনি তিন মাস পর স্মৃতিশক্তি হারাবেন, আপনি ভুলে যাবেন যে আপনার ক্যান্সার হয়েছে। আপনি দুঃশ্চিন্তামুক্ত হয়ে রিল্যাক্স ভাবে বাকী বছর গুলকাটাবেন।

আমাদের অবস্থাও কি এইরকম নয় ?
সামনে আরও দুঃখজনক পরিস্থিতি (করোনা) আসছে, কেন ভাবেননা? কে আমাদের ভুলিয়ে রাখে জানেন কি ?
কলিযুগের মায়া তো আছে, তারপর ৩টি দোষ আমাদের সান্ত্বনা দিয়ে রাখে, তারা হল ‘’ ভূমি-দোষ, সঙ্গ-দোষ এবং অন্ন-দোষ।‘’
১। ভূমি - দোষঃ- সাধারনতঃ শ্রীধাম বৃন্দাবন, নবদ্বীপ - মায়াপুর, শ্রীক্ষেত্র অন্যান্য ধাম ব্যতিত , বাহিরের অন্যান্য পরিবেশ দূষিত স্থান, জন্ম ভূমি অন্যান্য দেশের প্রতি আসক্তি ইত্যাদি।

২। সঙ্গ - দোষঃ- সৎসঙ্গে গোলক বাস, অসৎ সঙ্গে সর্বনাশ।
''অসৎসঙ্গ ত্যাগ এই বৈষ্ণব আচার।
স্ত্রীসঙ্গি এক অসাধু কৃষ্ণাভক্ত আর।।''  (চৈতন্য চরিতামৃত)
স্ত্রীসঙ্গ আর স্ত্রীসঙ্গির সঙ্গ হইতে লোকের যে মোহ হয়, সংসার বন্ধনে আবদ্ধ করার মত এইরুপ বস্তু আর নাই। স্ত্রীসঙ্গি মানে যিনি স্ত্রীর প্রতি আসক্ত। আর আছে ভোগী, মোক্ষকামী এবং যারা কৃষ্ণ - অভক্ত (কৃষ্ণকে পরমেশ্বর ভগবান বলে মানেনা) এরাও অসৎসঙ্গ।

৩। অন্ন - দোষঃ- যারা ভগবানকে নৈবেদ্য ভোগ না দিয়ে খাদ্য গ্রহণ করে তারা চোর, তারা বিষয়ভোগী, তারা প্রতি গ্রাসে গ্রাসে পাপ বিষ ভক্ষণ করছেন।
''বিষয়ীর অন্ন খাইলে মলিন হয় মন।
মলিন মনে নাহি হয় কৃষ্ণের স্মরণ।।'' (চৈতন্য চরিতামৃত)
ভীস্মদেব শরশয্যায় দ্রৌপদীকে বলছেন, তোমার বস্ত্রহরণের সময় আমি দুষ্ট দুর্যোধনের মত, বিষয়ের অন্ন খেয়ে মন মলিন থাকার জন্য নিরুত্তর ছিলাম;কারণ আমার সৎজ্ঞান ছিল না। এখন অর্জ্জুনের তীরের দ্বারা সেই কলুষিত রক্ত বিদুরিত হয়েছে, এখন ভগবৎ তত্ত্বজ্ঞান উপলদ্বি করতে পারছি। তাই এখন পঞ্চ - পাণ্ডব কে উপদেশ দিচ্ছি।

আসুন আমরা এই তিন দোষ থেকে মুক্ত হওয়ার জন্য সদগুরুর আশ্রয় গ্রহণ করে কলির যুগধর্ম  ''হরেকৃষ্ণ মহামন্ত্র'' জপ - কীর্ত্তন করি। 
''সর্বে ভবন্তু সুখিন,সর্বে সন্তু নিরাময়া।
সর্বে ভদ্রানি পশ্যন্তু,মা কশ্চিদ দুঃখ মাপ্নুয়াত।।''
ওম শান্তি শান্তি শান্তি। (বৃহদারন্যক উপনিষদ //১৪)

অর্থাৎ সবাই যেন সুখী হয়, সকলে যেন নিরাময় থাকে, সকল মানুষ পরম শান্তি লাভ করুক, কশ্মিনকালেও যেন কেহ দুঃখ বোধ না করেন। সকলে শান্তি লাভ করুন।।

ওঁ শান্তি শান্তি শান্তি তিনবার শান্তি পাঠের প্রয়োজন কেন? 
এর অর্থ হচ্ছে,- "হে ঈশ্বর,আত্মজ্ঞান লাভের সকল বাধাবিঘ্ন দূর করুন" তিন প্রকার বাধা দূর করার জন্য তিনবার শান্তি বলা হয়। তিনটি বাধা হল,---
১। আধ্যাত্মিক - আত্মায় শরীরে অবিদ্যা, রাগ, দ্বেষ, মূর্খতা এবং জ্বর পীড়াদি হয়।
২। আধিভৌতিক - যাহা শত্রু, ব্যাঘ্র এবং সর্পাদি হইতে প্রাপ্ত হওয়া যায়।
৩। আধিদৈবিক - যাহা অতিবৃষ্টি, অতিশীলা, অতিউষ্ণতা এবং মন ইন্দ্রিয় সমূহের অশান্তি হইতে উৎপন্ন হয়।

হে ব্রহ্ম (ঈশ্বর) আপনি আমাদেরকে এই বিবিধ ক্লেশ হইতে দূরে রাখিয়া সর্বদা কল্যাণ কর্মে প্রবৃত্ত করুন। কেননা, আপনিই কল্যাণস্বরূপ সমগ্র জগতের কল্যাণকারী এবং ধার্মিক মুমুক্ষদের কল্যাণদাতা। অতএব তা আপনি স্বয়ং নিজ কৃপায় সকল জীবের হৃদয়ে প্রকাশিত হউন, যেন সকল জীব ধর্মাচরণ করে, অধর্ম পরিত্যাগ করিয়া পরমানন্দ প্রাপ্ত হয় দুঃখ হইতে  দূরে থাকে।

শ্রীমন্মহাপ্রভুর অমৃতবাণী।
১। একমাত্র ভগবৎ প্রেমের মধ্য দিয়েই আসলে মানুষের মুক্তি। মানুষ তখন ভুলে যাবে তার দুঃখ, দারিদ্র জ্বালাযন্ত্রণা।
২। ক্ষমাই পরম ধর্ম।
৩। মিথ্যা মোর মোর করে কেন অনুতাপ কর ? তুমি কি জান কে তোমার ?  তুমি কার ? শ্রী কৃষ্ণের চরণ ছাড়া জীবের গতি নাই।
৪। তৃণের থেকেও অবনত এবং বৃক্ষের মতো সহিষ্ণু হও।
৫। অগ্নি যেমন ধুম্রাছন্ন থাকে, মানুষের জ্ঞানও সেইরূপ রাগ দ্বেষ হিংসারূপ ধুম্রজালে আছন্ন থাকে।
৬। যারা ঈশ্বরকে ভালবাসেন কায় মন বাক্যে শ্রীভগবানের শ্রীচরণে নিজেকে আত্মসমর্পণ করেন, তিনি তাহাদিগকে এই মধুর রূপে দেখা দেন।
৭। সংসারত্যাগী সন্ন্যাসীর পক্ষে রাজদর্শন স্ত্রী দর্শন বিষ খাওয়ার মতই  ক্ষতিকারক
৮। ঘোরতর পাপীও যদি আমাকে আপনজন ভেবে প্রাণ মন উৎসর্গ করে ভালবেসে আমাকেই চায়, আমি তাকে সকল পাপ হইতে মুক্ত করে থাকি।
৯। নির্লিপ্ত হও, কর্মবন্ধনে আবদ্ধ হয়ও না।
১০। নিজের অভিমান ত্যাগ করে অপরকে সম্মান প্রদর্শন করে শ্রীহরির সং কীর্ত্তন  করো।

আসুন আমরা বিষয়চিন্তা বাদ দিয়ে হরি নাম নিষ্ঠা সহকারে জপ কীর্ত্তন করি।
হরে"কৃষ্ণ"হরে"কৃষ্ণ"কৃষ্ণ"কৃষ্ণ"হরে"হরে I
হরে"রাম"হরে"রাম"রাম"রাম"হরে"হরে।।
জয় শ্রীরাধাকৃষ্ণের জয়। জয় শচীনন্দন গৌরহরির জয়।।

No comments:

Post a Comment

🌳🌴🪴🌲🦚🍁💐🏵️🌺🌷🌺🏵️💐🍁🦚🌲🪴🌴🌳 🌻🌼 শ্রীবলরামের রাসযাত্রা 🌹 শ্রীকৃষ্ণের বসন্তরাস 🌼🌻 🌳🌴🪴🌲🦚🍁💐🏵️🌺🌷🌺🏵️💐🍁🦚🌲🪴...