Monday, April 20, 2020


ষড়রিপু
শ্রী শ্রী গুরু গৌরাঙ্গ জয়তঃ
সকল সাধু,গুরু,বৈষ্ণব ও গৌর ভক্তবৃন্দের শ্রীচরণে আমার দণ্ডবৎ প্রণাম I
‘’হরি - গুরু - বৈষ্ণব তিনিহেঁ স্মরণ।
তিনেহেঁ স্মরণ হইতে বিঘ্ন বিনাশন।।
অনায়াসে হয় নিজ বাঞ্ছিত পূরণ । I’’

গুরবে গৌরচন্দ্রায় রাধিকায়ৈ তদালয়ে।
কৃষ্ণায় কৃষ্ণভক্তায় তদ্ভক্তায় নমো নমঃ।।

আমাদের জীবনের বহু বড় বড় শত্রু ; কিন্তু তাদের আজও চিনতে পারিনি কে কে এরা ?

কাম, ক্রোধ, লোভ, মোহ, মদ, মাৎসর্য এই ছয়জন আমাদের জীবনের সবচেয়ে বড় শত্রু। এদের রিপু বলা হয়। আমাদের প্রতিপক্ষ বা প্রতিদ্বন্দ্বিকে নিজের শত্রু বলে মনে করি এবং তার থেকে দুরে থাকার চেষ্টা করে তাকে হরানোর চেষ্টাও করি। শত্রু আমাদের বিপথগামী করতে পারে বিপথে চলার মন্ত্রণাও দিয়ে থাকে। এই ছয় রিপু বিপথগামী করে এবং মন্ত্রণা দেয় এরা দুরে থাকেনা নিজের ঘরে বাস করে। নিজের হৃদয়ে অবস্থান করে নিজের অজান্তেই নিজেকে নাশ করে। আমরা তাকে বশ করার কোন চেষ্টাই করিনা। রিপু মানব জীবনের অপরিহার্ষ অংশ,এর নেতিবাচক - ইতিবচক (ভাল-মন্দ) উভয় দিক- আছে। এই ষড়রিপু কে মহৎ উদ্দেশ্যে ব্যবহার করে যেমন বড় বড় মহৎ কার্য সম্পাদন করা যায় এবং মানব জীবনের চরম উদ্দেশ্য ঈশ্বর প্রাপ্তি, সেই ঈশ্বর প্রাপ্তিও সম্ভব হয়; তেমনি রিপুর বশীভূত হয়ে রিপুর দাসত্ব করলে মানব জীবনে নেমে আসে চরম অধঃপতন। ছয় রিপু বিজিত পুরুষের বহির্জগতে কোন শত্রু নেই এমনকি হিংস্র জন্তু পর্যন্ত না।

পঞ্চইন্দ্রিয় দ্বারা আমরা রূপ, রস, গন্ধ, শব্দ, স্পর্শ এ পঞ্চগুণের উজ্জীবিত ও সজিব জীবনের উপস্থিতি লাভ করি আমাদের মানব জীবনে। এই রূপ, রস, গন্ধ, শব্দ, স্পর্শ দ্বারা জীবনের সকল সুখ খুঁজে বেড়াই, পূরণ করার চেষ্টা করি ষড়রিপুর দাবীসমুহকে। ‘সংযম শিক্ষার মাধ্যমে নিজ পঞ্চ ইন্দ্রিয়কে নিয়ন্ত্রণ করার শিক্ষা লাভ করে আমরা সবাই 'ষড়রিপুকে দমন করে একটি সুন্দর এবং সুস্থ মানব জীবন গড়ে তুলতে পারব।
এই ছয় রিপু প্রথমে বিবেকের উপর আঘাত করে। বিবেক বর্জিত লোক প্রথমে কাম’ দ্বারা পিড়িত হয়ে কামান্ধ হয় এবং কামনার আগুনে পুড়ে শেষ হয়। যে কারণে ভগবান শ্রীকৃষ্ণ গীতায় বলেছেন,---
‘’কর্মণ্যেবাধিকারস্তে মা ফলেষু কদাচন।
মা কর্মফলহেতুর্ভূর্মা তে সঙ্গোহস্ত্বকর্মণি।।‘’ (গীতা /৪৭)
অর্থাৎ,- স্বধর্ম বিহিত কর্মে তোমার অধিকার আছে, কিন্তু কোন কর্মফলে তোমার অধিকার নেই। কখনও নিজেকে কর্মফলের হেতু মনে করো না, এবং কখনও স্বধর্ম আচরণ না করার প্রতিও আসক্ত হয়ো না।, কর্ম কর কিন্তু ফলের আশা করনা , অর্থাৎ নিষ্কাম কর্মকর ভগবানের খুশীর জন্য কর্ম কর।

'ক্রোধ' ধ্বংসের দিকে নিয়ে যায়। ক্রোধ শুধু দ্বণ্ড দিতে চায় কিন্তু ক্ষমা করতে পারে না।ক্রোধী ব্যক্তির কাছে ধর্ম থাকেনা।কিন্তু ক্ষমা ধর্ম্ম, সত্য সুন্দর। প্রতিশোধ ক্রোধের পরিসমাপ্তি হতে পারেনা। ক্রোধ নিয়ন্ত্রণ করতে হলে ক্ষমা করার শক্তি অর্জন করা উচিৎ। কিন্তু কখনও সার্বিক হিতের জন্য সমাজ রক্ষার জন্য, ধর্ম রক্ষার জন্য শত্রু প্রতিহত করার জন্য এবং শান্তির সমস্ত দ্বার বন্ধ হলে বিশেষ পরিস্থিতিতে ক্রোধ প্রয়োগ ধর্মের কল্যাণ বয়ে আনে।

'লোভ' হচ্ছে চরিত্র হননকারী। যে ব্যক্তির চরিত্র ঠিক নেই তার ব্যক্তিত্ব, মর্যাদা , মনুষ্যত্ব বিবেক-বিচার বোধ পথের ধুলায় লুন্ঠিত হওয়া সত্যেও সে জীবিত অবস্থায় মৃত লোভী কখনও সুখ শান্তি পায়না ।লোভকে বৈরাগ্য দ্বারা সংযত করা যায় বা আয়ত্বে রাখা যায়। তাই গীতায় ভগবান শ্রী কৃষ্ণ বলেছেন, কাম- ক্রোধ-লোভ এই তিন নরকের দ্বার।

'মোহ' হচ্ছে হৃদয়ের দুর্বলতা। কোন কিছুর লাভ বা ক্ষতিতে হৃদয় যখন ভারাক্রান্ত হয় বা দুর্বল হয় তখন তা মোহ সৃষ্টি করে প্রকৃত পক্ষে কোন কিছু আমার নয় এবং কখনও আমার ছিলো না। না আমি সঙ্গে এনেছি না আমি সঙ্গে নিয়ে যাব। চিরদিন কারও সঙ্গে আমার সম্পর্ক স্থায়ী হবেনা এই তবে কেন অনিত্য বস্তুতে নিত্য সম্পর্ক তৈরির প্রচেষ্টা। তাই নিত্য সম্পর্ক একমাত্র ইষ্ট বিনা হতে পারেনা। অতএব ভগবানের সঙ্গে নিত্য সম্পর্ক স্থাপন করে তাঁর প্রেমময়ী সেবায় যুক্ত হয়ে বিষয় সংসার মোহমুক্ত হওয়ার একমাত্র পথ।

'মদ' হচ্ছে মিথ্যা অহংকার। এই জড় শরীরের উপাধি মাত্র আমি ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার, কবি , চাষি, ব্রহ্মচারী, গৃহস্থ, সন্ন্যাসী, ব্রাহ্মণ, ধননবান রুপবান ইত্যাদি এগুলি সবই মিথ্যা অহংকার । কিন্তু আমিত এই শরীর নই আমি ভগবানের নিত্য অবিচ্ছেদ্য অংশ চিন্ময় আত্মা এবং ভগবানের নিত্যদাস।
''জীবের স্বরূপ হয় সর্বদা নিত্যকৃষ্ণ দাস।
সেই দাসত্ব বরণ করে জীব করে আনন্দে অভিলাষ।।'' 
এটাই আমার প্রকৃত পরিচয়। যখন কেউ ভগবানের দাসত্য স্বীকার করে তার আর মিথ্যা অহংকার থাকেনা।

'মাৎসর্য' হল অন্যের ভাল দেখতে না পাওয়া বা পরশ্রী কাতরতা। কেউ ভালো খেলে ভালো পরলে সহ্য হয়না। তখন মনের ভীতরে একটা যন্ত্রনা অনুভব করে তার অনিষ্ট করার চেষ্টা করা। তাতে সে কোন ভাবেই সুখী হয়না। নিজের নাক কেটে অন্যের যাত্রা ভঙ্গ করা। অন্যকে গর্তে নামানোর আগে থেকে নিজেই গর্তে নামে। তাই নরোত্তম দাস ঠাকুর বলেছেন,---

'কাম' কৃষ্ণ কর্মার্পণে, 'ক্রোধ' ভক্তদ্বেষী জনে,
'লোভ' সাধু সঙ্গে হরিকথা।
'মোহ' ইষ্ট লাভ বিনে, 'মদ' কৃষ্ণ গুন গানে
নিযুক্ত করিব যথাতথা।।

হরিনামের বাধা জড়বিদ্যা, জ্ঞান।
ধন, রুপ, যশ, কুল অহংকার মান।।
কৃষ্ণকৃপা বিনে নহে দুঃখের মোচন।
থাকিল বা বিদ্যা, কুল, কোটি-কোটি ধন।।
বহু জন্ম করে যদি শ্রবণ,কীর্ত্তন।
তবু না পায় কৃষ্ণপদে প্রেমধন।।
                                      ---চৈতন্যচরিতামৃত
>>>> জয় শ্রীকৃষ্ণ <<<<

মানস, দেহ, গেহ, যো কিছু মোর।
অর্পিলুঁ তুয়া পদে, নন্দকিশোর !॥১॥

সম্পদে - বিপদে জীবনে - মরণে।
দায় মম গেলা, তুয়া ও - পদ বরণে॥২॥

মারবি রাখবি যো ইচ্ছা তোহারা।
নিত্যদাস প্রতি তুয়া অধিকারা॥৩॥

জন্মাওবি মোএ  ইচ্ছা যদি তোর।
ভক্তগৃহে জনি জন্ম হউ মোর॥৪॥

কীটজন্ম হউ যথা তুয়া দাস।
বহির্ম্মুখ ব্রহ্মজন্মে নাহি আশ॥৫॥

ভুক্তি - মুক্তি - স্পৃহা - বিহীন যে - ভক্ত ।
লভইতে তাঁ'ক সঙ্গ অনুরক্ত ॥৬॥

জনক, জননী দয়িত, তনয়।
প্রভু, গুরু, পতি - তুহুঁ সর্ব্বময়॥৭॥

ভক্তিবিনোদ কহে, শুন কান !
রাধানাথ ! তুহুঁ হামার পরাণ॥৮॥

আসুন আমরা বিষয়চিন্তা বাদ দিয়ে হরি নাম নিষ্ঠা সহকারে জপ কীর্ত্তন করি।
হরে"কৃষ্ণ"হরে"কৃষ্ণ"কৃষ্ণ"কৃষ্ণ"হরে"হরে I
হরে"রাম"হরে"রাম"রাম"রাম"হরে"হরে।।

জয় পরমেশ্বর ভগবান শ্রীকৃষ্ণের জয়♣♣জয় শচীনন্দন গৌরহরির জয়

No comments:

Post a Comment

🌳🌴🪴🌲🦚🍁💐🏵️🌺🌷🌺🏵️💐🍁🦚🌲🪴🌴🌳 🌻🌼 শ্রীবলরামের রাসযাত্রা 🌹 শ্রীকৃষ্ণের বসন্তরাস 🌼🌻 🌳🌴🪴🌲🦚🍁💐🏵️🌺🌷🌺🏵️💐🍁🦚🌲🪴...