Saturday, April 25, 2020


কর্মের ফল
শ্রী শ্রী গুরু গৌরাঙ্গ জয়তঃ
সকল সাধু, গুরু,বৈষ্ণব ভক্তবৃন্দের শ্রী চরণে আমার দণ্ডবৎ প্রণাম।
শ্রীপরশুরাম প্রভুর শুভ আবির্ভাব তিথি 'অক্ষয়তৃতীয়া' এবং চন্দন যাএা উৎসবের কৃষ্ণপ্রীতি শুভেচ্ছা অভিনন্দন।

কর্মের ফল তো ভোগ করতেই হবে -
একটি দৃষ্টান্ত হলো -
কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধে পিতামহ ভীষ্ম, অর্জুনের বাণে ভূমিতে ধরাশায়ী হয়ে প্রচণ্ড বেদনায় ছটফট করছিলেন। একে একে সবাই ওনাকে দেখতে আসছিলেন। একদিন ভগবান শ্রীকৃষ্ণও ওনাকে দেখতে এলেন। শ্রীকৃষ্ণকে দেখে ভীষ্ম বললেন, "হে জনার্দন, আমি পূর্বজন্মে এমন কি পাপ করেছিলাম যে এই জন্মে এত বড় শাস্তি এত কষ্ট আমাকে ভোগ করতে হচ্ছে ?"

ভগবান বললেন, "আপনি তো নিজেই পূর্ব জন্মের কথা স্মরণ করতে পারেন, তাহলে আপনি নিজেই দেখুন না আপনি পূর্ব জন্মে কি পাপ করেছিলেন ? "
ভীষ্ম বললেন, "আমি তো দেখতে দেখতে গত ১০০ জন্মের কর্ম্ম দেখে ফেলেছি, কিন্তু এই ১০০ জন্মের মধ্যে আমি এমন কোনো কর্ম্ম করিনি যেটাতে আমি এত বড় শাস্তি পেতে পারি।''

ভগবান বললেন, " আপনি কৃপা করে এই ১০০ জন্মের ঠিক একটি জন্ম আগে দেখুন ( অর্থাৎ ১০১ নং জন্ম ) উওর আপনি পেয়ে যাবেন।" তখন পিতামহ ভীষ্ম চোখ বন্ধ করে ধ্যান পূর্বক দেখতে লাগলেন - সেই জন্মে তিনি একজন খুবই ধার্মিক রাজা ছিলেন। একদিন তিনি বিশাল সৈন্যদল নিয়ে কোথাও যাচ্ছিলেন। পথের মাঝে একটি সাপ এসে তাদের যাত্রায় বাধা হয়ে দাঁড়ায় এক সৈনিক এসে বললো, "মহারাজ, একটি সাপ রাস্তার মাঝে বসে আছে, কি করবো ? " রাজা বললেন, "তুমি সাপটিকে একটি লাঠিতে বেঁধে পাশের জঙ্গলে ফেলে দাও।" সৈনিক তাই করলো, কিন্তু সাপটি জঙ্গলে একটি বিশাল কাঁটার ঝোপের মধ্যে আটকে গিয়ে প্রচণ্ড যন্ত্রনায় ছটফট করতে করতে অবশেষে পাঁচদিন পর মারা গেল।

পিতামহ ভীষ্ম তখন ভগবান শ্রীকৃষ্ণ কে বললেন,- "দেখলাম আমার পাপ কর্ম্ম, কিন্তু আমিতো সাপটিকে বাঁচানোর জন্য জঙ্গলে ফেলে দিয়েছিলাম, নাহলে তো সাপটি আমার রথের চাকার নীচে চাপা পড়েই মারা যেতো।" ভগবান বললেন,- " কিন্তু আপনিতো সাপটির কি পরিণতি  হলো তা একবারও ফিরে দেখলেন না বা সাপটিকে বাঁচানোর চেষ্টাও করেন নি, তাই আজ আপনার এই পরিণাম। আপনার পুণ্য কর্ম্ম এত বেশী ছিল যে গত ১০০ জন্মেও আপনি কোন পাপের ফল ভোগ করেন নি।"

মানুষ জেনেই হোক বা না জেনেই হোক যে কর্ম্ম করছে তার ফল ভোগ অবশ্যই করতে হবে কেউ এই জন্মে বা কেউ পরের জন্মে ভোগ করছে। কুকুর, ছাগল, বাঘ ইত্যাদি জন্তু জানোয়ারেরা পূর্ব জন্মে এই ধরণের নীচ কর্ম জেনে শুনে করেছে বলেই তারা এই রুপে অনেক যন্ত্রণার শিকার হচ্ছে। তাই বন্ধুরা সাবধানেই প্রত্যেকটি কর্ম্ম করা উচিত। ভগবানের নাম স্মরণ করে সর্ব কর্ম্ম  ওনাতে অর্পণ পূর্বকই করা উচিত।
ভগবান শ্রীকৃষ্ণ প্রতিজ্ঞা করছেন আমরা যদি তার প্রতি 'শরণাগত' হই তাহলে তিনি আমাদের সমস্ত পাপ থেকে মুক্ত করবেন। গীতায় ভগবান বলেছেন,-
''সর্বধর্মান্ পরিত্যজ্য মামেকং শরণং ব্রজ।
অহং ত্বাং সর্বপাপেভ্যো মোক্ষয়িষ্যামি মা শুচঃ।।    (গীতা ১৮/৬৬)

গীতার গানঃ
সর্ব ধর্ম লাগি হও আমার শরণ।
রক্ষিব তোমাকে আমি সদা সর্বক্ষণ।।
কোন চিন্তা না করিবে পাপ নাহি হবে।
আমার শরণে তুমি পরা শান্তি পাবে।।

অর্থাৎ,- সর্বপ্রকার ধর্ম পরিত্যাগ করে কেবল আমার শরণাগত হও আমি তোমাকে সমস্ত পাপ থেকে মুক্ত করব। তুমি শোক করো না।
তাৎপর্যঃ ভগবান শ্রীকৃষ্ণ এখানে বলেছেন,- কেউ যদি সমস্ত পাপ থেকে মুক্ত না হয়েও থাকে, কেবল আমার শরণাগত হওয়ার ফলে তিনি আপনা থেকে সমস্ত পাপ থেকে মুক্ত হবেন। পাপ থেকে নিজেকে মুক্ত করার জন্য অন্যকোন কষ্টসাধ্য প্রচেষ্টার প্রয়োজন নেই। আমাদের উচিত শ্রীকৃষ্ণকে সমস্ত জীবের পরম পরিত্রাতা বলে দ্বিধাহীনভাবে গ্রহণ করা। শ্রদ্ধা ভালোবাসার সঙ্গে আমাদের উচিত তার প্রতি শরণাগত হওয়া।  

যিনি শ্রীকৃষ্ণকে প্রভুরুপে গ্রহণ করেন , তাঁর প্রতি শ্রীকৃষ্ণ বিশেষভাবে যত্নপরায়ন শ্রীকৃষ্ণ স্বয়ং বলেছেন,-
''অনন্যাশ্চিন্তয়ন্তো মাং যে জনাঃ পর্যুপাসতে।
তেষাং নিত্যাভিযুক্তানাং যোগক্ষেমং বহাম্যহম্।।''  গীতা(/২২)
অর্থাৎ,- অনন্যচিত্তে আমার চিন্তায় মগ্ন হয়ে, পরিপূর্ণ ভক্তি সহকারে যাঁরা সর্বদাই আমার উপাসনা করেন, সেই শরণাগত ভক্তের সমস্ত অপ্রাপ্য বস্তু আমি বহন করি এবং তাঁদের প্রাপ্ত বস্তুর সংরক্ষণ করি।

আসুন আমরা বিষয়চিন্তা বাদ দিয়ে হরিনাম নিষ্ঠা সহকারে জপ কীর্ত্তন করি।
হরে"কৃষ্ণ"হরে"কৃষ্ণ"কৃষ্ণ"কৃষ্ণ"হরে"হরে I
হরে"রাম"হরে"রাম"রাম"রাম"হরে"হরে।।
জয় শ্রীরাধাকৃষ্ণের জয়। জয় শ্রীজগন্নাথদেবের চন্দন যাত্রা উৎসবের জয়।।

No comments:

Post a Comment

🌳🌴🪴🌲🦚🍁💐🏵️🌺🌷🌺🏵️💐🍁🦚🌲🪴🌴🌳 🌻🌼 শ্রীবলরামের রাসযাত্রা 🌹 শ্রীকৃষ্ণের বসন্তরাস 🌼🌻 🌳🌴🪴🌲🦚🍁💐🏵️🌺🌷🌺🏵️💐🍁🦚🌲🪴...