Friday, April 24, 2020




তুলসী সেবা
শ্রীমতী  রাধারাণীর তুলসী সেবা
শ্রী শ্রী গুরু গৌরাঙ্গ জয়তঃ
সকল সাধু,গুরু,বৈষ্ণব গৌর ভক্তবৃন্দের শ্রীচরণে আমার দণ্ডবৎ প্রণাম I
‘’হরি - গুরু - বৈষ্ণব তিনিহেঁ স্মরণ।
তিনেহেঁ স্মরণ হইতে বিঘ্ন বিনাশন।।
অনায়াসে হয় নিজ বাঞ্ছিত পূরণ ।।‘’

আজানুলম্বিত - ভুজৌ কনকাবদাতৌ,
সংকীর্ত্তনৈকপিতরৌ কমলায়তাক্ষৌ।
বিশ্বম্ভরৌ দ্বিজবরৌ যুগধর্ম্মপালৌ,
বন্দে জগৎপ্রিয়করৌ করুণাবতারৌ।

একবার রাধাজী সখিকে বললেন, সখি! আমাকে এমন কোনও একটা দেবতার পূজা/ব্রত বল যেমনকি আমি সেই পূজা/ব্রতের মাধ্যমে শ্রীকৃষ্ণকে সন্তুষ্ট করতে পারি আর আমি যেন শ্রীকৃষ্ণের সর্বশ্রেষ্ঠা প্রিয়া হইতে পারি। তারপরে চন্দ্রননা সখী, সমস্ত সখীর মধ্যে যে বেশি বুদ্ধিমতী তিনি মনে মনে এক মুহুর্তের জন্য ভেবে বললেন, "রাধে! পরম সৌভাগ্য অর্জনের জন্য এবং শ্রীকৃষ্ণের প্রাপ্তির জন্যও একটি সর্বশ্রেষ্ঠ উপায় বা ব্রত হল "তুলসী সেবা" আপনার উচিত তুলসী সেবার  নিয়ম গ্রহণ করা। যারা প্রতিদিন নয়টি উপায়ে তুলসীর ভক্তি করেন তারা বহু হাজার বছর ধরে  উত্তম  ফল উপভোগ করেন, মানুষ দ্বারা রোপণ করা তুলসী পৃথিবীতে যতক্ষণ পর্যন্ত শাখা, বীজ, ফুল এবং সুন্দর দলগুলির সাথে বাড়তে থাকে, তাদের বংশে যারা জন্ম নেয় তারা সকলেই এক হাজার কল্প পর্যন্ত শ্রীহরির ধাম বৈকুন্ঠে বাস করেন। যিনি তুলসী মঞ্জরীকে মাথায় রেখে নিজের জীবন উৎসর্গ করেন, তিনি সারা জীবন পাপ কর্মে পূর্ণভাবে লিপ্ত থাকলেও, যমরাজ তাঁর দিকে তাকাতে পারেন না। এইভাবে চন্দ্রননা সখীর থেকে তুলসী সেবার মহিমা শুনে রাসেশ্বরী শ্রীরাধা  শ্রীকৃষ্ণের সন্তুষ্টির জন্য তুলসীর সেবা ব্রতে নিমগ্ন হলেন।

একশ হাত লম্বা বৃত্তাকার জমিতে কেতকী বনে খুব লম্বা এবং খুব সুন্দর শ্রী তুলসীর একটি মন্দির তৈরি করেছিলেন, যার দেওয়ালগুলি সোনায় বেষ্টিত ছিল। পদ্মরাগমণির ধারে, তিনি হীরা মুক্তার সুন্দর পান্না দিয়ে সুসজ্জিত ছিলেন এবং তার চারপাশে প্রদক্ষিণের জন্য একটি রাস্তা তৈরি করা হয়েছিল, যার জমিটি চিন্তামণি দিয়ে আবৃত ছিল। মন্দিরের কেন্দ্রীয় অংশে সবুজ পল্লব সহ একটি সুন্দর তুলসী স্থাপন করে শ্রীরাধা অভিজিৎ মুহুর্ত্তে তুলসী দেবীর সেবা শুরু করেছিলেন। শ্রীরাধা আশ্বিন শুক্লা পূর্ণিমা থেকে চৈত্র পূর্ণিমা পর্যন্ত নবধাভক্তির মাধ্যমে  শ্রীতুলসীর নয়প্রকার সেবা করেছিলেন।

শ্রীরাধা প্রতি মাসে আলাদা আলাদা করে রস দিয়ে শ্রীতুলসীর সেচন করতেন। কার্ত্তিক মাসে 'দুধ', মার্ঘশীষ মাসে 'আখের রস’, পৌষ মাসে 'দ্রাক্ষার রস', মাঘ মাসে বহুবর্ষীয় 'আমের রস', ফাল্গুন মাসে 'মিশ্রির রস' এবং চৈত্রমাসে পঞ্চামৃত দিয়ে শ্রীমতী রাধারাণী,শ্রীতুলসীমহারাণীর নয়প্রকারকি সেবা করে তাঁর সন্তুষ্টি বিধান করেছিলেন এবং বৈশাখ কৃষ্ণ প্রতিপদের দিন উদযাপন করেছিলেন।

শ্রীমতী রাধারাণী দুই লক্ষ ব্রাহ্মণকে স্বাদিষ্ট ভোজন দ্বারা তৃপ্ত করলেন নানা প্রকার গহনা আর কাপড় দক্ষিণা দিলেন তিনি এক লক্ষ ভার স্বর্ণ শ্রীগর্গাচার্যকে দক্ষিণা দিয়ে তৃপ্ত করলেন। সেই সময় আকাশের দেবতারা তুলসী মন্দিরে ফুল বর্ষণ শুরু করলেন। একই সময়ে, সুবর্ণ সিংহাসনে বসে হরিপ্রিয়া শ্রীতুলসী দেবী উপস্থিত  হইলেন। তাঁর চারটি বাহু ছিল, পদ্মের পাতার মতো বিশাল চোখ, ষোল বছর বয়স এবং শ্যাম কান্তি, হেমময় কিরীট কপালে আলোকিত হয়েছিল এবং কাঞ্চনময়ী কুন্দন সুশোভিত হচ্ছিল I সিংহাসন থেকে নেমে তুলসী দেবী শ্রীমতী রাধারাণীকে নিজ হৃদয়ে জড়িয়ে স্নেহ করলেন এবং তার মুখে চুম্বন দিলেন। শ্রীতুলসী বলিলেন, "কলাবতী রাধে! আমি আপনার ভক্তিতে খুব খুশি আর সন্তুষ্ট। আপনি  যে কায়, মন, এবং বুদ্ধি দ্বারা আমার নয় প্রকার সেবা করেছেন আমি তদ্বারা অতি প্রসন্ন,আমি আশীর্বাদ করছি আপনার সমস্ত মনের অভিলাষ পূর্ণ হউক। হরিপ্রিয়া তুলসীর কাছে মাথা নত করে বৃষভানু নন্দিনী শ্রীরাধারাণী বললেন, "দেবী! আমার যেন অহৈতুকী ভক্তি শ্রীগোবিন্দের শ্রীচরণে হউক,আমি যেন জন্মে জন্মে এই শ্রীচরণে দাসী হইতে পারি।"  অতঃপর হরিপ্রিয়া শ্রীতুলসী দেবী তথাস্তু বলে আশীর্বাদ  দিয়ে অন্তর্ধান হইলেন।

সুতরাং, পৃথিবীতে যে কোন ব্যক্তি শ্রীরাধিকার এই অদ্ভুত উপাখ্যানটি শুনবেন বা পাঠ করবেন   তিনি সমস্ত পাপ থেকে মুক্ত হবেন এবং শ্রী তুলসীদেবীর কৃপা প্রার্থী  হবেন। 🙏

শ্রীশ্রী তুলসী আরতি
নমো নমঃ তুলসী ! কৃষ্ণপ্রেয়সী
রাধাকৃষ্ণ-সেবা পাব এই অভিলাসী ৷৷
যে তোমার শরণ লয়, তার বাঞ্ছা পূর্ণ হয়,
কৃপা করি কর তারে বৃন্দাবন বাসী
মোর এই অবিলাস, বিলাস-কুঞ্জে দিও বাস,
নয়নে হেরিব সদা যুগলরূপরাশি ৷৷
এই নিবেদন ধর, সখীর অনুগত কর,
সেবা-অধিকার দিয়ে কর নিজ দাসী
দীন কৃষ্ণদাসে কয়, এই যেন মোর হয়,
শ্রীরাধাগোবিন্দ-প্রেমে সদা যেন ভাসী ৷৷

পরমকরুণাময় গোলোকপতি সচ্চিদানন্দ ভগবান শ্রীকৃষ্ণ তাঁর একান্ত হ্লাদিনী শক্তি শ্রীমতী রাধারাণী এবং সকল বৈষ্ণব ভক্ত-পার্ষদগণের শ্রীচরণকমলে নিরন্তর প্রার্থনা করি, সকলের জীবন যেনো রাধা-কৃষ্ণময়তায় পূর্ণ হয়ে, মঙ্গলময়, কল্যাণময়, ভক্তিময়, সুন্দরময় আর আনন্দময় হয়ে ওঠে।

আসুন আমরা বিষয়চিন্তা বাদ দিয়ে হরিনাম নিষ্ঠা সহকারে জপ কীর্ত্তন করি।
হরে"কৃষ্ণ"হরে"কৃষ্ণ"কৃষ্ণ"কৃষ্ণ"হরে"হরে I
হরে"রাম"হরে"রাম"রাম"রাম"হরে"হরে।।
!!জয় হোক সকল ভক্তদের!! !!জয় শ্রীরাধাকৃষ্ণের জয়!!

No comments:

Post a Comment

🌳🌴🪴🌲🦚🍁💐🏵️🌺🌷🌺🏵️💐🍁🦚🌲🪴🌴🌳 🌻🌼 শ্রীবলরামের রাসযাত্রা 🌹 শ্রীকৃষ্ণের বসন্তরাস 🌼🌻 🌳🌴🪴🌲🦚🍁💐🏵️🌺🌷🌺🏵️💐🍁🦚🌲🪴...