Saturday, April 11, 2020


প্রকৃত শান্তি
শ্রী শ্রী গুরু গৌরাঙ্গ জয়তঃ
সকল সাধু,গুরু,বৈষ্ণব ও গৌর ভক্তবৃন্দের শ্রীচরণে আমার দণ্ডবৎ প্রণাম I
''হরি - গুরু - বৈষ্ণব তিনিহেঁ স্মরণ।
তিনেহেঁ স্মরণ হইতে বিঘ্ন বিনাশন।।
অনায়াসে হয় নিজ বাঞ্ছিত পূরণ ।।‘’

আজানুলম্বিত - ভুজৌ কনকাবদাতৌ,
সংকীর্ত্তনৈকপিতরৌ কমলায়তাক্ষৌ।
বিশ্বম্ভরৌ দ্বিজবরৌ যুগধর্ম্মপালৌ,
বন্দে জগৎপ্রিয়করৌ করুণাবতারৌ।।

কিভাবে ভগবানকে ভালবাসব ?
‘’শ্রবণং কীর্ত্তনং বিষ্ণোঃ স্মরণং পাদসেবনম্।
অর্চনং বন্দনং দাস্যং সখ্যমাত্মনিবেদনম্।।
ইতি পুংসার্পিতা বিষ্ণুর্ভক্তিচেৎ নবলক্ষণা।
ক্রিয়েত ভগবতীহদ্ধা যন্মন্যেহধীতুত্তমম্।।‘’ (ভাগবত //২৩-২৪)

অর্থাৎ,- শ্রীকৃষ্ণের নাম লীলা শ্রবণ, কীর্ত্তন, স্মরণ, পাদসেবন, অর্চন, বন্দন, দাস্য, সখ্য, আত্মনিবেদন- এই নয়টি লক্ষণযুক্ত ভক্তি শ্রীকৃষ্ণে অর্পিত হয়। এই ভক্তি সাধিত হলে ভগবানের কাছে প্রেমভক্তিমূলক মনোভাব এবং সর্বসিদ্ধি লাভ হয়। নবধা ভক্তি অঙ্গের প্রথম লক্ষণ হচ্ছে শ্রবণ, এই শ্রবনাঙ্গ ভক্তিই যাবতীয় ভক্তি অঙ্গ যাজনের ক্ষমতা আনয়ন করেন। যত প্রকার শ্রবণ আছে তন্মধ্যে আবার শ্রীহরিকথামৃত সুধা শ্রবণ অন্যতম।যস্য শ্রবণ মাত্রেণ মুক্তি করতলেস্থিতা’ এমন যে মহাক্ষমতাশালী ভক্ত্যঙ্গ শ্রবণ ভক্তি তাকে কোন কারণে অবহেলা করতে নাই। ঢোকে ঢোকে পান করতে হবে। সে অমৃত পান বিনে, খায় যদি অন্নপানে, তবু ভক্তের বিফল জীবন।

ভাবুক রসিক তাই বলেন - শুক মুখে হরি কথা শোন সবে শোন রে।। শ্রবণং মঙ্গলম্। আর এভাবেই আমাদের সমস্ত কার্যকলাপে ভগবানকে যুক্ত করার মাধ্যমে আমরা প্রকৃত শান্তি লাভ করতে পারি।

 গীতায় শ্রীকৃষ্ণ বলেছেন,---
ভোক্তারং যজ্ঞতপসাং সর্বলোকমহেশ্বরম্।
সুহৃদং সর্বভূতানাং জ্ঞাত্বা মাং শান্তিমৃচ্ছতি।। গীতা (/২৯)

অর্থাৎ,- আমাকে সমস্ত যজ্ঞ তপস্যার পরম ভোক্তা, সর্বলোকের মহেশ্বর এবং সমস্ত জীবের সুহৃদরূপে জেনে যোগীরা জড় জগতের দুঃখ -দুর্দশা থেকে মুক্ত হয়ে শান্তি লাভ করেন।

প্রকৃত শান্তি লাভ করতে হলে, এই শ্লোক থেকে তিনটি সত্যকে আমাদের গ্রহণ করতে হবে। প্রথমটি হলো- “ভোক্তারংঅর্থাৎ তিনি সবকিছুর পরম ভোক্তা। কিন্তু, আমরা যদি তাঁকে বাদ দিয়ে স্বাধীনভাবে ভোক্তা হতে চাই, তাহলে আমাদের বারবারই হতাশাগ্রস্ত হতে হবে। কারণ, আমাদের ভোগ তাঁর ভোগের উপর নির্ভরশীল। তিনি সন্তুষ্ট হলে আমরাও সন্তুষ্ট হতে পারি।ঠিক যেমন- একটি গাড়ির সকল সুবিধা (এ.সি, মিউজিক প্লেয়ার ইত্যাদি) যে পরিমাণে গাড়ির মালিক ভোগ করেন, সমপরিমাণ সুবিধা গাড়ির চালক ভোগ করেন।কিন্তু, গাড়ি চালকের ভোগ স্বতন্ত্র নয়, বরং তা মালিকের উপর নির্ভরশীল।

দ্বিতীয়টি হল ‘’সর্বলোকমহেশ্বরম্’’  অর্থাৎ জগতের স্থাবর জঙ্গম সবকিছুর নিয়ন্তা মালিক হলেন তিনিই।
এবং তৃতীয়টি হল ‘’সুহৃদং সর্বভূতানাম্’’,অর্থাৎ তিনি সকলের পরম সুহৃদ বা বন্ধু।

তুমি সর্ব্বেশ্বরেশ্বর,ব্রজেন্দ্রকুমার।
তোমার ইচ্ছায় বিশ্বে সৃজন - সংহার।।
তব ইচ্ছামত ব্রহ্মা করেন সৃজন।
তব ইচ্ছামত বিষ্ণু করেন পালন।।
তব ইচ্ছামত শিব করেন সংহার।
তব ইচ্ছামতে মায়া সৃজে কারাগার।।
তব ইচ্ছামতে জীবের জনম - মরণ।
সমৃদ্ধি - নিপাত দুঃখ - সুখ - সংঘটন।।
মিছে মায়াবদ্ধ জীব আশাপাশে ফিরে।
তব ইচ্ছা বিনা কিছু করিতে না পারে।।
তুমি ত' রক্ষক আর পালক আমার।
তোমার চরণ বিনা আশা নাহি আর।।
নিজ - বল - চেষ্টা - প্রতি ভরসা ছাড়িয়া।
তোমার ইচ্ছায় আছি নির্ভর করিয়া।।
ভকতিবিনোদ অতি দীন অকিঞ্চন।
তোমার ইচ্ছায় তা'র জীবন - মরণ।।

হে আমার প্রাণোধন কৃষ্ণ তুমি আমাদের হৃদয়ে ভক্তির ভাব জাগিয়ে দাও। সবাই একমনে তন্ময় হয়ে শ্রীহরিনাম জপ করুন,-
''হরে কৃষ্ণ হরে কৃষ্ণ কৃষ্ণ কৃষ্ণ হরে হরে।
হরে রাম হরে রাম রাম রাম হরে হরে।।‘’

জয় শ্রীরাধেকৃষ্ণ। জয় ব্রজধাম। জয় শচীনন্দন গৌরহরি ।।

No comments:

Post a Comment

🌳🌴🪴🌲🦚🍁💐🏵️🌺🌷🌺🏵️💐🍁🦚🌲🪴🌴🌳 🌻🌼 শ্রীবলরামের রাসযাত্রা 🌹 শ্রীকৃষ্ণের বসন্তরাস 🌼🌻 🌳🌴🪴🌲🦚🍁💐🏵️🌺🌷🌺🏵️💐🍁🦚🌲🪴...