যথালাভে সন্তোষ
একটি বিশেষ শিক্ষণীয় গল্প
শ্রী শ্রী গুরু গৌরাঙ্গ জয়তঃ
সকল সাধু,গুরু,বৈষ্ণব ও গৌর ভক্তবৃন্দের শ্রীচরণে আমার দণ্ডবৎ প্রণাম I
''হরি - গুরু - বৈষ্ণব তিনিহেঁ স্মরণ।
তিনেহেঁ স্মরণ হইতে বিঘ্ন বিনাশন।।
অনায়াসে হয় নিজ বাঞ্ছিত পূরণ ।।‘’
গুরবে গৌরচন্দ্রায় রাধিকায়ৈ তদালয়ে।
কৃষ্ণায় কৃষ্ণভক্তায় তদ্ভক্তায় নমো নমঃ।।
একদিন একটি পিপীলিকা রাস্তায় যেতে যেতে দেখতে পেল ''এক ফোঁটা মধু মাটিতে পড়ে আছে। মধুর ঘ্রাণ নাকে পেতেই
থমকে দাঁড়ালো। ভাবলো একটু মধু খেয়ে নেই তার পর যাব। এক চুমুক খেলো, বাঃ! খুব মজাতো! আর একটু খেয়ে নেই। আরেক চুমুক খেলো। তারপর সামনে চলতে লাগলো।হাঁটতে হাঁটতে ঠোঁটে লেগে থাকা মধু চেটে পুঁটে খাচ্ছিল। ভাবলো, এতো মজার মধু আরেকটু খেয়ে নিলে কী হবে ? আবার পেছনে ফিরলো। পূর্বে মধুর একপাশ খেয়েছিল। এবার চিন্তা করলো ভিতরে মনে হয় আরো মজা। এবার আস্তে আস্তে মধুর ফোঁটার উপরে উঠে গেল। বসে বসে মজা করে মধু খাচ্ছে। খেতে খেতে এক
সময়ে পেট ফুলে গেল। ঐদিকে আস্তে আস্তে পা দু'টো মধুর ভেতরে ঢুকে যাচ্ছে। হঠাৎ টনক নড়ল তার। কিন্তু ততক্ষণে দেরী হয়ে গেছে। মধু থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে নেওয়ার জন্য আপ্রাণ চেষ্টা করলো।
কিন্তু …..হায়….. নাঃ! মধুতে তার সমস্ত শরীর মাখা - মাখি
হয়েগেছে। অনেক চেষ্টা করেও নিজেকে আর উদ্ধার করতে সক্ষম হলো না। নাকে ও মুখে মধু ঢুকে শ্বাস
রুদ্ধ হয়ে যেতে লাগল, অবশেষে পিপীলিকাটি মধুর ভেতরে আটকে পড়েই মৃত্যু বরণ করল। এই বিশাল দুনিয়াটাও বড় এক ফোঁটা মধুর মত। যে এই মধুর পাশে বসে অল্পতেই তুষ্ট থাকবে সেই বেঁচে যাবে। আর যে এর স্বাদের মধ্যে ডুব দিতে গিয়ে ন্যায় অন্যায়ের
বাদ - বিচার না করে শুধু খেতে থাকবে, আরেকটু আরেকটু করতে করতে এক দিন সে এর মায়াজালে আটকা পড়েই মারা যাবে। তখন আর কেউই উদ্ধার করতে পারবে না। ধ্বংস অনিবার্য।
মোটকথা লোভ মানুষকে ধ্বংসের পথে পরিচালিত করে।
''লোভে পাপ আর পাপে মৃত্যু''।
‘’অতি দর্পে হত লঙ্কা, অতি মানে চ কৌরবাঃ।
অতি দানে বলির বদ্ধ, সর্বম অত্যন্ত গর্হিতং।।‘’
অর্থাৎ,- অতি অহংকারে রাবন লঙ্কা হারালো, অতি অভিমানে কৌরব নিধন হলো, অতিরিক্ত দান করতে গিয়ে রাজা বলি নিহত হলো।কোনকিছুই অতিরিক্ত ভালো নয়।লোভকারীর ইহ কাল পরো কাল দু'টোই শেষ
হয়। তাই এই পিপীলিকার মত মধুর প্রতি লোভ না করে সময় থাকতে হরেকৃষ্ণ মহামন্ত্র জপ করুন ও সুখী হউন। অন্যান্য যুগের তুলনায় কলিযুগ অত্যন্ত অধঃপতিত। কলিযুগে ধর্মের পতনের ফলে মানুষের যে কি অবস্থা, সেই সম্বন্ধে শ্রীমদ্ভাগবতে(১/১/১০)বলা হয়েছে,-
''প্রায়েণাল্পায়ুষঃ সভ্য কলাবস্মিন্ যুগে জনাঃ।
মন্দাঃ সুমন্দমতয়ো মন্দভাগ্য হ্যপদ্রুতাঃ।।''
অর্থাৎ,- ‘’হে মহাজ্ঞানী ! এই কলিযুগের মানুষেরা প্রায় সকলেই অল্পায়ু। তারা কলহপ্রিয়, অলস, মন্দগতি, ভাগ্যহীন এবং সর্বোপরি তারা নিরন্তর রোগ আদির দ্বারা আক্রান্ত
হয়ে থাকে।‘’
প্রত্যেক যুগে ভগবানকে সন্তুষ্টি বিধানের জন্য আলাদা ভাবে ধর্মানুষ্ঠান করা হত। এ সম্বন্ধে
শ্রীমদ্ভাগবতের (১২/৩/৫২) শুকদেব গোস্বামী পরিক্ষিত মহারাজকে বলেন
‘’কৃতে যদ্ধ্যায়তো বিষ্ণুং ত্রেতায়াং ঘজতো মখৈ। দ্বাপরে পরিচর্যায়াং কলৌ তদ্ধরিকীর্ত্তনাৎ।‘’
অর্থাৎ,- সত্যযুগে বিষ্ণুকে ধ্যান করে, ত্রেতাযুগে যজ্ঞের মাধ্যমে যজন করে এবং দ্বাপর যুগে অর্চন আদি করে যে ফল লাভ হত, কলিযুগে কেবলমাত্র ‘’হরেকৃষ্ণ মহামন্ত্র’’ কীর্ত্তনে সেই সকল ফল লাভ হয়।
কলিযুগের যুগধর্ম হচ্ছে নাম সংকীর্ত্তন। কলিযুগে তিন ভাগ অধর্ম এবং এক ভাগ ধর্ম। মানুষ অল্প আয়ু, অল্প মেধা,কলহ প্রিয়, এবং অধার্মিক। কিন্তু কলি যুগে সবচেয়ে বড় আশীর্বাদ হল খুব অল্পতেই হরিনাম সংকীর্ত্তন করার মাধ্যমে ভগবানকে লাভ করা যায়। চৈতন্যচরিতামৃতে বর্ণনা হয়েছে,-
“কলিকালে নামরূপে কৃষ্ণ অবতার। নাম হৈতে হয় সর্বজগৎ নিস্তার।।”
এই কলিযুগে ভগবানের দিব্যনাম ''হরে কৃষ্ণ মহামন্ত্র’’ হচ্ছে শ্রীকৃষ্ণের অবতার। কেবলমাত্র এই দিব্যনাম গ্রহণ
করার ফলে, যে কোন মানুষ সরাসরিভাবে ভগবানের সঙ্গ লাভ করতে পারেন। যিনি তা করেন তিনি অবশ্যই জড় জগত থেকে উদ্ধার লাভ করেন।
হে আমার প্রাণোধন কৃষ্ণ তুমি আমাদের হৃদয়ে ভক্তির ভাব জাগিয়ে দাও। সবাই একমনে তন্ময় হয়ে শ্রীহরিনাম জপ করুন,-
''হরে কৃষ্ণ হরে কৃষ্ণ কৃষ্ণ কৃষ্ণ হরে হরে।
হরে রাম হরে রাম রাম রাম হরে হরে।।‘’
জয় শ্রীরাধেকৃষ্ণ। জয় ব্রজধাম। জয় শচীনন্দন গৌরহরি ।।
No comments:
Post a Comment