Thursday, April 23, 2020


শ্রীল গদাধর পণ্ডিত গোস্বামী
আবির্ভাব
‘’গদাধরমহং বন্দে মাধবাচার্য্য - নন্দনম।
মহাভাব - স্বরুপং শ্রীচৈতন্যাভিন্নরুপিণম।।
গান্ধর্বিকা - স্বরূপায় গৌরাঙ্গ - প্রেমসম্পদে।
গদাধরায় মে নিত্যং নমোস্তু হে কৃপালবে।।‘’

''শ্রীরাধা প্রেমরূপা যা পুরা বৃন্দাবনেশ্বরী।
সা শ্রীগদাধরো গৌরবল্লভঃ পণ্ডিতাখ্যকঃ।।
নির্ণীতঃ শ্রীস্বরুপৈর্যো ব্রজলক্ষ্মীতয়া যথা।
পুরা বৃন্দাবনে লক্ষ্মীঃ শ্যামসুন্দরবল্লভা।
সাদ্য গৌরপ্রেমলক্ষ্মীঃ শ্রীগদাধর পণ্ডিতঃ।।
রাধামনুগতা যওল্ললিতাপ্যনুরাধিকা।   
অতঃ প্রবিশদেষা তং গৌরচন্দ্রোদয়ে যথা।।'' (গৌর গণোদ্দেশ দীপিকা)

কৃষ্ণলীলায় যিনি রাধিকা,গৌরলীলায় তিনি গদাধর পণ্ডিত গোস্বামী।গৌরনারায়ণের শক্তি,- লক্ষ্মীপ্রিয়া,বিষ্ণুপ্রিয়া, গৌরকৃষ্ণের শক্তি শ্রীগদাধর পণ্ডিত গোস্বামী।

বারেন্দ্র ব্রাহ্মণ বংশে ১৪০৮ শকাব্দে বৈশাখী অমাবস্যা তিথিতে চট্টগ্রাম বেলেটিগ্রামে (অধুনা বাংলাদেশ) শ্রীগদাধর পণ্ডিত গোস্বামী আবির্ভূত হন।পিতার নাম শ্রীমাধব মিশ্র,মাতা শ্রীরত্নাবতী দেবী। কনিষ্ট ভ্রাতার নাম শ্রীবাণীনাথ।কাশ্যপ গোত্র।১২ বৎসর পর্য্যন্ত বেলেটিগ্রামে অবস্থান করার পর তিনি নবদ্বীপে আসেন। শ্রীগদাধর পণ্ডিত আকুমার ব্রহ্মচারী ছিলেন। শৈশবকাল হইতেই শ্রীগদাধর পণ্ডিত গোস্বামীর বিষয় - বিরক্তি দর্শন করিয়া শ্রীল ঈশ্বর পুরীপাদ তাঁহার প্রতি পরম স্নেহা সিক্ত হইয়া নিজরচিত 'কৃষ্ণলীলামৃত' গ্রন্থ অধ্যয়ন করাইয়াছিলেন।

জয় জয় নিত্যানন্দ গদাধরের জীবন।
জয় জয় অদ্বৈতাদি ভক্তের শরণ।।

''গদাধরের জীবন,- শ্রীগদাধর পণ্ডিত গোস্বামী শ্রীমন্মহাপ্রভুর অন্তরঙ্গ ভক্তগণের মধ্যে সর্ব্বপ্রধান শক্তিতত্ত্বের আকর বলিয়া তিনি শ্রীনবদ্বীপ - লীলা নীলাচল - লীলা উভয়ত্রই কথিত। শ্রীনবদ্বীপ নগরে তাঁহার বাসস্থান ছিল,পরে নীলাচলে ক্ষেত্র সন্ন্যাস করিয়া সমুদ্রোপকূলে টোটায় বা উপবনাভ্যন্তরে বাস করেন। শুদ্ধভক্ত সম্প্রদায় শ্রীরাধাগোবিন্দের মধুর রসের ভজনে শ্রীগদাধরকে আশ্রয় করিয়াই শ্রীগৌরের অন্তরঙ্গ ভক্ত নামে কথিত হন। যাঁহারা মধুর রসে ভগবদ্ভজনে উৎসাহ বিশিষ্ট নহেন তাঁহারা শ্রীনিত্যানন্দ প্রভুর আনুগত্যেই শুদ্ধভক্তিতে অবস্থিত হন। শ্রীনরহরি প্রমুখ শ্রীগৌরের কতিপয় ভক্ত শ্রীগদাধর পণ্ডিতের অনুগত ছিলেন।তাঁহারা শ্রীগৌরসুন্দরকে শ্রীগদাধরের প্রিয় সেব্যজ্ঞানে তাঁহার আশ্রয় গ্রহণ করিয়াছিলেন। কেহ কেহ শ্রীমন্মহাপ্রভুকে 'নিত্যানন্দের জীবন ' এবং অপর কেহ তাঁহাকে 'গদাধরের জীবন' বলিয়া থাকেন।

শ্রীমন্মহাপ্রভু গদাধরকে লক্ষ্য করিয়া বলিতেন,-
‘’প্রভু বলে,- গদাধর ! তুমি সে স্বীকৃতি।
শিশু হইতে কৃষ্ণেতে করিয়া দৃঢ় মতি।।
আমার সে হেন জন্ম গেল বৃথা - রসে।
পাইনু অমূল্য নিধি,গেলা দৈব দোষে।।''

শ্রীমন্মহাপ্রভু যখন  প্রেমোন্মত্ত হইয়া উঠিতেন,গদাধর পণ্ডিত গোস্বামী তাঁহাকে বুঝাইয়া শান্ত করিতেন। একদিন গদাধর পণ্ডিত শ্রীমন্মহাপ্রভুকে বলিলেন,- 'তোমার প্রাণনাথ কৃষ্ণ তোমার বক্ষে আছেন।' শ্রীমন্মহাপ্রভু উহা শুনিয়া সঙ্গে সঙ্গে বক্ষ বিদারণ করিবার জন্য প্রস্তুত হইলেন। গদাধর পণ্ডিত শ্রীমন্মহাপ্রভুকে নিবৃত্ত করিলেন।উহা দেখিয়া পুত্রস্নেহাতুরা শচীমাতা গদাধর পণ্ডিতকে সর্ব্বদা শ্রীমন্মহাপ্রভুর সঙ্গে থাকিবার জন্য বলিলেন।

শ্রীগদাধর পণ্ডিত গোস্বামী প্রভু শ্রীমন্মহাপ্রভুর চিরসঙ্গী ছিলেন।
জগাই - মাধাই উদ্ধারের পর শ্রীমন্মহাপ্রভুর সহিত জলক্রীড়া,শ্রীচন্দ্রশেখর আচার্য্যভবনে শ্রীমন্মহাপ্রভুর ব্রজলীলাভিনয়,শ্রীবাস অঙ্গনে মহাপ্রকাশ, কাজী উদ্ধার,সন্ন্যাসলীলা,নীলাচল গমন,গুণ্ডিচা - মন্দির - মার্জ্জন,পুরীতে শ্রীনরেন্দ্র সরোবরে জলকেলী প্রভৃতি সর্ব্বলীলায় তিনি শ্রীমন্মহাপ্রভুর সঙ্গী ছিলেন।

শ্রীচন্দ্রশেখর আচার্য্যের গৃহে যখন শ্রীমন্মহাপ্রভু ব্রজলীলাভিনয় করিয়াছিলেন,সেই সময়ে প্রথম প্রহরে শ্রীহরিদাস কোটালবেস, শ্রীবাস পণ্ডিত নারদের বেস শ্রীমন্মহাপ্রভু রুক্মিণীর বেস ধারণ করিয়াছিলেন এবং দ্বিতীয় প্রহরে শ্রীগদাধর রমাবেসে প্রবেশ করিয়াছিলেন।শ্রীগদাধরের রমাবেসে  নৃত্য দর্শনে সকলে প্রেমোন্মত্ত হইলেন। সেই সময় শ্রীমন্মহাপ্রভু শ্রীগদাধরকে সম্বন্ধে বলিয়াছিলেন,- ''গদাধর মোর বৈকুন্ঠের পরিবার''।পরে শ্রীমন্মহাপ্রভু আদ্যাশক্তিবেস ধারণ করতঃ জগজ্জননী ভাবে ভক্তগণকে আনন্দ প্রদান করিলেন।
শ্রীগদাধর পণ্ডিত গোস্বামী শ্রীপুরুষোত্তম ধামে ক্ষেত্রসন্ন্যাস গ্রহণ করিলে শ্রীমন্মহাপ্রভু তাঁহাকে টোটা - গোপীনাথের সেবা প্রদান করতঃ যমেশ্বরটোটায় তাঁহার বাসস্থান নির্ণয় করিয়া দিলেন।

শ্রীমন্মহাপ্রভু বৃন্দাবনে যাইবার অত্যন্ত দৃঢ়তা প্রকাশ করিলে ভক্তগণের ইচ্ছাক্রমে বিজয়াদশমীদিবসে শ্রীমন্মহাপ্রভু বৃন্দাবন যাত্রা করিলেন। শ্রীগদাধর পণ্ডিত গোস্বামী শ্রীমন্মহাপ্রভুর বিচ্ছেদ সহ্য করিতে না পারিয়া মহাপ্রভুর সঙ্গে চলিলেন। তখন মহাপ্রভু তাঁহাকে 'ক্ষেত্র সন্ন্যাস' ব্রত ছাড়িতে নিষেধ করিলেন। গদাধর পণ্ডিত মহাপ্রভুকে বলিলেন,-
‘’যাহা তুমি, সেই নীলাচল।
ক্ষেত্রসন্ন্যাস মোর যাউক রসাতল।‘’
শ্রীমন্মহাপ্রভু পুনঃ গোপীনাথের সেবা ছাড়িতে নিষেধ করিলেন। গদাধর পণ্ডিত বলিলেন,- মহাপ্রভুর পাদপদ্ম দর্শনেতেই কোটী গোপীনাথের সেবা হইবে। 'গোপীনাথের সেবা ছাড়িলে দোষ হইবে' শ্রীমন্মহাপ্রভু এই কথা বলিলে গদাধর পণ্ডিত বলিলেন প্রতিজ্ঞাভঙ্গ সেবাত্যাগের সমস্ত দোষের ভাগ তাঁহার,তিনি মহাপ্রভুর সঙ্গে যাইয়া মহাপ্রভুকে কষ্ট দিবেন না, একাকী যাইবেন শচীমাতাকে দেখিতে। শ্রীগদাধর পণ্ডিত গোস্বামীর অদ্ভুত গৌরাঙ্গপ্রীতি মহাপ্রভুর অন্তরঙ্গ পার্ষদ ব্যতীত কেহই বুঝিতে সমর্থ নহেন। অনুরাগ মার্গের প্রেম সহজ - বোধগম্য নহে।

শ্রীমন্মহাপ্রভুর অন্তর্দ্ধানের পর শ্রীগদাধর পণ্ডিত গোস্বামী মাত্র ১১ মাস প্রকট ছিলেন। শ্রীগৌরাঙ্গের বিরহে শ্রীগদাধরের যে নিদারুণ অবস্থা হইয়াছিল তাহা অবর্ণনীয়।শ্রীনিবাস আচার্য্যকে  মাত্র দর্শন দিবার জন্যই তিনি জীবনধারণ করিয়া অবস্থান করিতেছিলেন।

১৪৫৬ শকাব্দে জ্যেষ্ঠ মাসের অমাবস্যা তিথিতে পুরীধামে শ্রীগদাধর পণ্ডিত গোস্বামী অপ্রকট হন।

No comments:

Post a Comment

🌳🌴🪴🌲🦚🍁💐🏵️🌺🌷🌺🏵️💐🍁🦚🌲🪴🌴🌳 🌻🌼 শ্রীবলরামের রাসযাত্রা 🌹 শ্রীকৃষ্ণের বসন্তরাস 🌼🌻 🌳🌴🪴🌲🦚🍁💐🏵️🌺🌷🌺🏵️💐🍁🦚🌲🪴...