Tuesday, April 28, 2020


সুদুর্লভ মানব জনম
শ্রী শ্রী গুরু গৌরাঙ্গ জয়তঃ
সকল সাধু,গুরু,বৈষ্ণব ও গৌর ভক্তবৃন্দের শ্রীচরণে আমার অনন্ত কোটি সাষ্টাঙ্গ দণ্ডবৎ প্রণাম I
‘’হরি - গুরু - বৈষ্ণব তিনিহেঁ স্মরণ।
তিনেহেঁ স্মরণ হইতে বিঘ্ন বিনাশন।।
অনায়াসে হয় নিজ বাঞ্ছিত পূরণ ।।‘’

আজানুলম্বিত - ভুজৌ কনকাবদাতৌ,
সংকীর্ত্তনৈকপিতরৌ কমলায়তাক্ষৌ।
বিশ্বম্ভরৌ দ্বিজবরৌ যুগধর্ম্মপালৌ,
বন্দে জগৎপ্রিয়করৌ করুণাবতারৌ।

অল্পবয়সে সাধু হওয়া কি ভাল ?
আমরা সংসারী জীব, আমরা শৈশব থেকেই জেনেছি আগে লেখাপড়া শিখতে হবে, তারপর অনেক পাশটাশ করে একটি চাকুরী কিংবা ব্যবসায় প্রতিষ্ঠিত হইতে হবে। এবার বিয়ে করে সংসার প্রতিপালন করতে হবে, সন্তানাদিকে মানুষ করে তাদেরকে প্রতিষ্ঠিত করতে হবে এবং তাদের বিয়ে দিয়ে বৃদ্ধ বয়সে ধর্ম্মে কর্ম্মে মন দিতে হবে। আমরা আমাদের পূর্বপুরুষদেরও এইভাবে চলতে দেখেছি, তাদের বৃদ্ধ বয়সে ধর্ম্ম কর্ম্ম, তীর্থযাত্রা করতে দেখেছি। কিন্তু বৃদ্ধ বয়সে   কি ধর্ম্ম কর্ম্ম হয় ?

বৃদ্ধ বয়সে শরীর জরাজীর্ণ হয়, বায়ু, পিত্ত, কফ দেহ কে ঘিরে ধরে। দেহের কষ্টে মন সকল সময় দেহময় থাকে, তাছাড়া সংসারের প্রতিও অত্যধিক আকর্ষণ থাকে তাই সাধন ভজন হয় না।
‘’লব্ধা সুদুর্লভমিদং বহুসম্ভবান্তে,
মানুষ্যমর্থদমনিত্যমপীহ ধীরঃ।
তূর্ণং যতেত পতেদনুমৃত্যু যাব-
ন্নিঃশ্রেয়সায় বিষয়ঃ খলু সর্বতঃ স্যাৎ।।‘’ (ভাগবত ১১//২৯)
অর্থাৎ,- বহু জন্ম-মৃত্যুর পর জীব এই মনুষ্যদেহ লাভ করে, যা অনিত্য হওয়া সত্ত্বেও জীবকে পূর্ণসিদ্ধি লাভের সুযোগ প্রদান করে। অতএব ধীর ব্যক্তির কর্ত্তব্য হচ্ছে অবিলম্বে এই পূর্ণসিদ্ধি লাভের জন্য প্রযত্ন করা এবং কখনই জন্ম-মৃত্যুর চক্রে পতিত হওয়া উচিত নয়। ইন্দ্রিয় ভোগের বিষয় তো জঘন্যতম প্রজাতিদের মধ্যেও সুলভ, পক্ষান্তরে কৃষ্ণভাবনামৃত শুধু মানব-জীবনেই লাভ করা সম্ভব।

‘’নৃ্দেহমাদ্যং সুলভং সুদুর্লভং,
প্লবং সুকল্পং শুরুকর্ণধারম্।
ময়ানুকূলেন নভস্বতেরিতং,
পুমান্ ভবাব্ধিং তরেৎ আত্মহা।।‘’ (ভাগবত ১১/২০/১৭)
অর্থাৎ,- সমস্ত প্রকার সুফলের মূলস্বরূপ সুদুর্লভ এই মনুষ্যজন্ম প্রকৃ্তির নিয়মে সুলভে লাভ করা যায়। এই মনুষ্যদেহ এক সুপরিকল্পিত নৌকার মতো, গুরুদেব হচ্ছেন সুদক্ষ কর্ণধার এবং পরমেশ্বরের বাণী হচ্ছে অনুকূল বায়ু। এত সুযোগ সত্ত্বেও যে মানুষ এই মনুষ্য-জন্মের সদ্ব্যবহার করে না সে আত্মঘাতী।

‘’কৌমার আচরেৎ প্রাজ্ঞো ধর্মান্ ভাগবতানিহ
দুর্লভং মানুষং জন্ম তদপ্যধ্রুবমর্থদম্ ।।‘’ (ভাগবত //)
অর্থাৎ পরম ভগবদ্ভক্ত প্রহ্লাদ মহারাজ বলেছেন, প্রজ্ঞাবান ব্যক্তি মানব জন্ম লাভ করে এই জাগতিক অনিত্য সুখের প্রয়াস বাদ দিয়ে কুমার বয়সেই ভগবতধর্ম্মের অনুষ্ঠান করবে। কারণ সংসারে মানবজন্ম অতি দুর্লভ তা আবার ক্ষনিক কিন্তু ক্ষনস্থায়ী হলেও ভগবদ্ভক্তি সাধনায় এই জীবন পরম অর্থপূর্ণ হয়ে ওঠে। এর পরবর্তী শ্লোকগুলিতে বর্ণনা করা হয়েছে যে, মানুষ তার দুর্লভ জীবনটা কিভাবে নষ্ট করছে। মুগ্ধ বা অজ্ঞান অবস্থায় শৈশবের দশটি বৎসর কেটে যায়

কুমার অবস্থায় দশটি বৎসর খেলাধূলায় কেটে যায়। জড়বিদ্যায় কৈশোর অতিবাহিত হয় তারপর দুঃখ কাম মোহে সংসার সুখ ভোগে আসক্ত থেকে কর্তব্য সন্ধান শূন্য অবস্থায় আরও দশ বৎসর পেরিয়ে যায়। সন্তান স্ত্রীর প্রতি আসক্ত চিত্ত ব্যক্তি দৃঢ় স্নেহ পাশে বদ্ধ থাকে। সে অজিতেন্দ্রিয় ভোগী ব্যক্তিরা নিজেদের কোন সদগতির চিন্তা করতে পারে না। তারপর তারা নিছক ইন্দ্রিয় তৃপ্তির উদ্দেশ্যে প্রিয়তম প্রাণকেও বিপন্ন করে টাকা পয়সা উপার্জনের জন্য যত্ন করে। যৌবন প্রৌঢ় অবস্থায় এইভাবে আয়ুক্ষয় হয়। এইসব সংসার ভোগাসক্ত ব্যক্তিরা সমস্ত দেশে সমস্ত কালে, আদিদৈবিক, আদিভৌতিক  আধ্যাত্মিক আদি সমস্ত দুঃখের মধ্যে ক্লিষ্ট হইতে থাকেন। নানা দুঃখে জর্জরিত হয়ে চিত্ত বিক্ষিপ্ত হয়ে যায়। তখন নানারকমের পাপ কাজে তারা অগ্রসর হয়। তখন তারা জেনে শুনেও পাপকর্মে লিপ্ত হয়। হিতাহিত জ্ঞানশূন্য অবস্থায় তারা গতানুগতিক পদ্ধতিতে জীবন ক্ষয় করতে থাকে।

শ্রীপ্রহ্লাদ মহারাজ বলেছেন,- এটা আমার ওটা আমার এরূপ ভাব পোষন করে পণ্ডিত ব্যক্তিও অতি আসক্ত হয়ে কুটুম্ব পরিবার পালন করতে করতে আত্ম বিষয়ক শুভ পরামর্শ নিতে সমর্থ হয় না। কিন্তু অতি মুর্খের মত অজ্ঞানতাই লাভ করে এবং কোন দেশে কোন কালে জ্ঞানহীন ভগবত বিমুখ ব্যক্তি নিজেকে ভবচক্র থেকে মুক্ত করতে পারে না। অর্থাৎ জন্মজন্মান্তর ধরে নানা দুঃখপূর্ণ জড় জীবন গ্রহণ করতে থাকে। শ্রীমদ্ভাগবতে পরবর্তী শ্লোকে বলা হয়েছে,- কাম লম্পট ব্যক্তি স্ত্রীদের খেলার হরিণের মত হয়ে পড়ে মুর্খতা বশতঃ পুত্র পৌত্র ইত্যাদির প্রতি আসক্তিও তারা ছাড়তে পারে না। (শ্রীমদ্ভাগবতের //১৭)

সাধারণ কাণ্ডজ্ঞানেও বোঝা যায় মানুষ তার জীবনের আয়ুর অর্দ্ধাংশ ঘুমিয়েই কাটিয়ে দেয়। দিন হিসাবে কারো বয়স যদি সত্তর বৎসর হয়, তবে প্রায় পয়ত্রিশ বৎসর সে ঘুমিয়েই কাটিয়েছে। এবং বাদবাকি তথাকথিত জাগ্রত অবস্থায় সে নানা প্রজল্প, নানা রাজনীতি, কূটনীতি, অনর্থক শয়তানি চিন্তায় কাটিয়ে দেয়। মৃত্যুর দরজায় উপনীত হওয়াকে বার্ধক্য বলে। সেই হিসাবে একটি শিশুও বৃদ্ধ। কেননা যে কোন মূহুর্তেই আমাদের মৃত্যু হতে পারে। আমরা সবাই মৃতুর দরজায় দাঁড়িয়ে আছি। ভবিষ্যতকে বিশ্বাস নেই। আমারও অকালমৃত্যু হইতে পারে। বার্ধক্য সবার ভাগ্যে জোটে না

অনেকে মনে করেন, এখন যা হচ্ছে তাই করা যাক পরে যখন চুল পাকবে সব কিছু সমস্যা জটিল হয়ে পড়বে। মেজাজ খিটখিটে হবে দাঁত পড়ে যাবে। চোখে ছানি পড়বে, কানে কালা হবে , হাত-পা পক্ষাঘাত গ্রস্থ হবে। যখন বিছানায় মলমূত্র ত্যাগ করব এবং কফ - পিত্ত - বায়ুতে এই দেহ পিণ্ডটা ভর্ত্তি হবে সকলের অবজ্ঞা বিড়ম্বনার কারণ হয়ে দাঁড়াব তখন খুব করে নেচে গেয়ে ভগবানের নামকীর্ত্তন সাধন ভজন করব। সেইসব কাম পাগলা ব্যক্তি আত্মঘাতী, আত্মপ্রবঞ্চক ছাড়া আর কিছু নয়।

তাই হরিভজন একমাত্র মানব জীবনের জন্যই এবং তাই শিশুকাল থেকেই বৈদিক পন্থায় জীবন গঠন করতে হয়। তারপর ব্রহ্মচারী কিংবা গৃহস্থ কিংবা সন্ন্যাসী যাই হন না কেন, সর্বদা কৃষ্ণভক্তির অনুকূলে থাকাই মূল কথা।
‘’হরি হরি !   বিফলে জনম গোঙাইনু।
মনুষ্য - জনম পাইয়া,    রাধাকৃষ্ণ না ভজিয়া,
জানিয়া শুনিয়া বিষ খাইনু।।'' (নরোত্তম দাস ঠাকুর, প্রার্থনা)
অর্থাৎ,- হে শ্রীহরি! বৃথাই এই জন্ম কাটালাম। এই দুর্লভ মনুষ্যজন্ম পেয়েও শ্রীশ্রীরাধা-কৃষ্ণের ভজনা না করে আমি শুধু জেনে শুনে বিষ পান করলাম।

জয় নিতাই গৌরহরিবোল দণ্ডবৎ প্রণাম সকল গৌরভক্তবৃন্দের শ্রীচরণকমলে। আমি অতি মূর্খ, আত্মঘাতী, আত্মপ্রবঞ্চক, অতিশয় কামাতুর ব্যক্তি। আত্মশ্লাঘা নিয়ে জীবন কাটিয়ে মৃত্যুর দ্বারে উপনীত হয়েছি। এখন দিন হারিয়ে দিনের কথা মনে করি। হে পতিত পাবন বৈষ্ণবগণ আপনাদের চরণ ধূলিই আমার শেষ ভরসা কৃপা করে শ্রীচরণতলে ঠাঁই দিবেন এই জীবধমে।
🙏👣👏👏👏👏👏👏👏👏👏👏👏👣🙏

No comments:

Post a Comment

🌳🌴🪴🌲🦚🍁💐🏵️🌺🌷🌺🏵️💐🍁🦚🌲🪴🌴🌳 🌻🌼 শ্রীবলরামের রাসযাত্রা 🌹 শ্রীকৃষ্ণের বসন্তরাস 🌼🌻 🌳🌴🪴🌲🦚🍁💐🏵️🌺🌷🌺🏵️💐🍁🦚🌲🪴...