বৈশাখ মাস
শ্রী শ্রী গুরু গৌরাঙ্গ জয়তঃ
সকল সাধু,গুরু,বৈষ্ণব ও গৌর ভক্তবৃন্দের শ্রীচরণে
আমার দণ্ডবৎ প্রণাম। শুভ নববর্ষের সবাইকে জানাই কৃষ্ণপ্রীতি শুভেচ্ছা।
''হরি - গুরু - বৈষ্ণব তিনিহেঁ স্মরণ।
তিনেহেঁ স্মরণ হইতে বিঘ্ন বিনাশন।।
অনায়াসে হয় নিজ বাঞ্ছিত পূরণ ।।‘’
আজানুলম্বিত - ভুজৌ কনকাবদাতৌ,
সংকীর্ত্তনৈকপিতরৌ কমলায়তাক্ষৌ।
বিশ্বম্ভরৌ দ্বিজবরৌ যুগধর্ম্মপালৌ,
বন্দে জগৎপ্রিয়করৌ করুণাবতারৌ।।
বৈশাখ মাসের মাহাত্ম্য:---
দেশের সরকার যেমন দেশের জনগণের কল্যাণের জন্য বিভিন্ন দপ্তর খুলে রেখেছে । আমরা যদি এই সমস্ত দপ্তর গুলি সম্মন্ধে খোঁজ খবর না রাখি তবে আমরা সরকারী সুবিধা গুলো ভোগ করতে পারবো না,এবং সরকারের উদ্দেশ্যও সফল হবে না। ঠিক তেমনি ভগবান শ্রীকৃষ্ণ জগতের প্রতিটি জীবের কল্যাণের জন্য বিভিন্ন দপ্তর (বিভিন্ন নক্ষত্র, রাশি,মাস, তীর্থ, গঙ্গা প্রভৃতি পবিত্র নদী) জগতে প্রকটিত করে রেখেছেন আবার ভগবান স্বয়ং বেদব্যাস রূপে আবির্ভূত হয়ে বিভিন্ন পূরাণে বিভিন্ন উদাহরণ সহযোগে উল্লেখ করেছেন, কোন নক্ষত্রে , কোন রাশিতে, কোন মাসে কোন সময়ে কি কর্ম্ম করলে আমরা সর্বাপেক্ষা বেশি লাভ ওঠাতে পারবো । কিন্তু ভগবানের লেখা সেই পুরাণ গুলি যদি গ্রন্থাগারে পড়ে থাকে এবং আমরা যদি সে সম্বন্ধে না জানি তবে আমরা ভগবান শ্রীকৃষ্ণের দেওয়া সুবিধা গুলো ভোগ করতেও পারবনা এবং ভগবান ও খুশি হবেন না।
বৈশাখ মাসের মহিমা সম্বন্ধে শাস্ত্রে কি বলা হয়েছে জেনে নিন। স্কন্দ পুরাণের বিষ্ণু খণ্ডের বৈশাখ মাহাত্ম্যে ১ম অধ্যায়ে নারদ মুনি অম্বরীষ মহারাজার সংবাদে এই মাসের মাহাত্ম্য বর্ণিত হয়েছে। নারদ মুনি অম্বরীষ মহারাজার প্রশ্নের উত্তরে বললেন,- ''কার্ত্তিক,মাঘ ও বৈশাখ'' - মাস সমূহের মধ্যে ইহারাই শ্রেষ্ঠ, কিন্তু এই মাসত্রয়ের মধ্যে আবার 'বৈশাখ' মাস প্রধান । জননী যেমন স্ব স্ব সন্তান গণের ইষ্ট দান করেন,এই বৈশাখ মাসও তদ্রুপ নিখিল প্রাণীর শুভদায়ক ।এই মাসে দান, যজ্ঞ, ব্রত ও স্নান করিলে সর্ব পাপ বিনষ্ট হয়। ধর্ম,যজ্ঞ ও ক্রিয়াদিতে এই বৈশাখই মাস সমূহের সার ।
যে নর বৈশাখের অরুণোদয়ের পূর্বে স্নানরত হয়, লক্ষীর সহিত ভগবান লক্ষীপতি নারায়ণ তাহার প্রতি প্রসন্ন হন। অন্ন ভোজনে জন্তুগনের যেমন প্রীতি হয়, বৈশাখ স্নানেও ভগবান বিষ্ণুও তদ্রুপ প্রীত হইয়া থাকেন সংশয় নাই। যাহারা বৈশাখ স্নান মত মানুষ কে দেখিয়া হৃষ্ট হয়, সে মহাপাতক নিচয় হইতে বিমুক্ত হইয়া বিষ্ণু লোকে বাস করে।যে মানুষ মেষসংস্থ-দিবাকরে অর্থাৎ বৈশাখে প্রতিদিন প্রাতস্নান ও পূজাদি করে সে পাপ বিমুক্ত হইয়া বিষ্ণুর সাযুজ্যমুক্তি
লাভ করে । যে মানুষ বৈশাখ মাসে প্রাতঃস্নানার্থ এক পাদ নিক্ষেপ করে, তাহার অযুত(১০,০০০) অশ্বমেধ যজ্ঞের ফল হয় ।কূটবুদ্ধি মানবও যদি বৈশাখ মাসে মনে মনে প্রাতঃস্নানের সঙ্কল্প করে, তাহার ও শত যজ্ঞের ফল লাভ হয়, সন্দেহ নাই ।
এই মাসে যে মানুষ প্রাতঃস্নানার্থ ধনুঃপরিমাণ দীর্ঘ পথ গমন করে,সে বিবিধ বন্ধন বিমুক্ত হইয়া বিষ্ণু সাযুজ্যমুক্তি লাভ করিয়া থাকে। হে রাজেন্দ্র ! ব্রহ্মাণ্ডান্তর্গত ত্রিলোকে যে সকল তীর্থ আছে, বৈশাখের ব্রাহ্ম মূহুর্তে তৎসমস্ত তীর্থ স্বল্পমাত্র জলেরও আশ্রয় লয়; হে ভূমিপ ! মানব যত কাল
বৈশাখের ব্রাহ্ম মূহুর্তে স্নান না করে,ততক্ষণই যমপুরে লিখিত তদীয় পাপ সকল গর্জ্জন করিবার অবসর পায়।হে নৃপেন্দ্র! মানবগণের হিত কামনায় ভগবান বিষ্ণুর আদেশে বৈশাখ মাসে তীর্থাদি দেবগণ তীর্থ ভিন্ন সকল জলে আশ্রয় করিয়া সতত সন্নিহিত থাকেন ; সূর্যোদয় হইতে ষষ্টঘটিকা পর্য্যন্তই তীর্থাদি ও দেবতাগণ জলে বাস করেন। হে রাজেন্দ্র! তাবৎকাল মধ্যে যাহারা স্নানার্থ আগমন না করে,তীর্থাদি দেবগণ তাহাদিগকে সুদারুণ অভিসম্পাত প্রদান করিয়া স্বস্থানে চলিয়া যান; অতএব ঐ সময় স্নান করাই কর্ত্তব্য।
বৈশাখ মাসের জন্যে বিশেষভাবে নির্ধারিত হল হরিনাম জপ, মন্দিরে সেবা সম্পাদন, তীর্থে অবগাহন এবং বৈষ্ণবদের ভোজন করানো। পদ্মপুরাণে বর্ণিত এক বিশাল আখ্যান সংক্ষেপে নিম্নে বর্ণিত। একদা এক ব্রাহ্মণ ছিলেন। তিনি ছিলেন দরিদ্র এবং সন্তানহীন। তিনি তাই তাঁর পত্নীকে বললেন, যেহেতু তিনি দরিদ্র, তিনি
অন্যদেশে কোন কাজের সন্ধানে যাবেন এবং কিছু অর্থ প্রেরণ করবেন। কিন্তু তাঁর পত্নী বললেন, ‘এখন আমাদের কোন অর্থ নাই,কেউ সাহায্য করার নাই । কিন্তু আপনি চলে গেলে আমি একা কিভাবে থাকব? আপনি কেন বশিষ্ঠ মুনির নিকট যাচ্ছেন না? তিনি পার্শ্ববর্তী গ্রামেই অবস্থান করছেন।
একদিন ব্রাহ্মণ সেখানে গেলেন এবং বশিষ্ঠ মুনিকে প্রণতি নিবেদন করে প্রশ্ন করলেন, কেন তাঁর অর্থ এবং সন্তানাদি নেই। বশিষ্ঠ মুনি তাঁকে বললেন,- ‘আপনার পূর্ব জন্মে আপনি এক শূদ্র ছিলেন। আপনার অনেক অর্থ ছিল কিন্তু আপনি বেশ কৃপণ ছিলেন এবং আপনার স্ত্রী ও সন্তানদের কিছুই দিতেন না। তাই আপনি বিত্তশালী হওয়া সত্ত্বেও তাঁরা দারিদ্রে দিন অতিবাহিত করছিল। আপনি হঠাৎ করেই দেহত্যাগ করলেন, এবং আপনার সকল অর্থ এক গর্ত্তে লুকিয়ে রাখায় আপনার স্ত্রী - সন্তানাদি জানতে পারেননি কোথায় অর্থ, এবং তাঁরা দরিদ্রাবস্থাতেই দেহত্যাগ করলেন। তাই আপনার সন্তানও নেই, অর্থও নেই। তবে তিনি কিভাবে ব্রাহ্মণ হলেন? তিনি বললেন, বৈশাখ মাসে কেবল তিন দিন আপনি বৈষ্ণবদের সেবা করেছিলেন, তাই আপনি ব্রাহ্মণ হয়েছেন।
‘কিভাবে তবে সম্পদ এবং সন্তান ফিরে পাব?’ ব্রাহ্মণ প্রশ্ন করলেন। মুনি বললেন, কেবল তিন দিনই আপনার ক্ষেত্রে কাজ করেছে। এখনও বৈশাখের সাত দিন বাকি। এই সুযোগ গ্রহণ করুন। তাই কেবল ৭দিন বৈষ্ণব সেবার দ্বারাই তিনি অর্থ এবং সন্তানাদি প্রাপ্ত হলেন। অনেকেই বৈশাখ মাস পছন্দ করেন, কেননা তা কর্মকাণ্ড অনুসারে অভীষ্ট ফল প্রদান করেন। তাই এটি আপনার উপর আপনি কি করতে চান। আপনি পূর্ণোদ্যমে কৃষ্ণভাবনা অনুশীলন করতে পারেন।”
এই পুরাণের সংবাদ সবাইকে জানিয়ে তাদেরকেও বৈশাখ মাসের ব্রাহ্ম মূহুর্তে স্নান ও অন্যান্য পূণ্য কর্ম করিয়ে তাদের সবার কল্যাণ করে সবার পিতা ভগবান শ্রীকৃষ্ণকে প্রসন্ন করার অনুরোধ করি।
💐💐***🙏হরে কৃষ্ণ 🙏 💐💐***💐💐🙏হরে কৃষ্ণ 🙏 ***💐💐
No comments:
Post a Comment